আমরা অনেক সময় অনেককে বলতে শুনি যে ব্যবসা করতে টাকা লাগে না । এ কথাটি অনেক সময় আমাদের অনেকের কাছে ভালো লাগে আবার অনেকের কাছে মোটেও ভালো লাগে না। যাদের কাছে এ কথাটি ভালো লাগে না তারা সব সময় বলে ব্যবসা করতে আসলে প্রচুর টাকা লাগে । টাকা ছাড়া ব্যবসা করা সম্ভব নয়। আমরা অনেকেই অজুহাত দিতে ভালবাসি, বলতে পারেন এটি একটি অজুহাত। আপনি হয়তো খেয়াল করে দেখবেন পৃথিবীতে যত বড় বড় ব্যবসায়ী রয়েছে তারা কিন্তু একটা সময় এত টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন নি। বরং খুবই অল্প টাকায় ব্যবসা শুরু করেছিলেন কিন্তু মেধা পরিশ্রম এবং অনুশীলনের মাধ্যমে তারা ঠিক এই পর্যায়ে এসে পৌঁছেছেন।
আসলে সত্যিই কি এমন কোন ব্যবসার রয়েছে বা আইডিয়া রয়েছে যেটার মাধ্যমে আমরা বিনা পুঁজিতে ইনকাম করতে পারব। আজকে কয়েকটি উদাহরণ এর মাধ্যমে বিনা পুঁজিতে কিভাবে ব্যবসা করা যায় তা সবাই মিলে বোঝার চেষ্টা করব। তবে তার আগে আপনাকে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে যে, আপনি প্রচুর পরিমাণে পরিশ্রম করতে ইচ্ছুক। যদি পর্যাপ্ত পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকে তবেই আপনি বিনা পুঁজিতে ব্যবসা করতে পারবেন ।তাহলে এবার দেখে নেয়া যাক কিভাবে বিনা পুঁজিতে ব্যবসা করা যায়।
আরো পড়ুনঃ
ধরুন আপনি কোন পাইকারি বাজারের আশে পাশে বসবাস করেন । যদি আপনি কোন ফলের দোকানে মহাজনের সাথে খাতির করতে পারেন তাহলে তাদের কাছ থেকে বাকিতে ফল নিয়ে সেই বাজারেই অন্য এক পাশে বসে খুচরা দামে বিক্রি করতে পারবেন। এভাবে করে একই বাজারে বসে পাইকারি দোকানদারের কাছ থেকে পণ্য নিয়ে বাজারে অন্য পাশে বসে আপনি খুচরা দরে বিক্রি করতে পারবেন। এটা কোন নতুন আইডিয়া নয়। এই পদ্ধতিতে পাইকারি বাজারগুলোতে অনেকেই ব্যবসা করে ।
গরুর হাটে অনেক সময় আপনারা খেয়াল করে দেখবেন যে কেউ নিজের পালিত গরু নিয়ে এসেছে বিক্রি করতে। আবার কেউ গ্রাম থেকে কিনে শহরে বিক্রি করতে নিয়ে এসেছে। অথবা পাইকাররাও গরু বিক্রি করতে বাজারে নিয়ে আসে। কিন্তু এদের মাঝে এক শ্রেণীর লোক থাকে যারা গরু পালন করেনি এবং পাইকারো নয় কিন্তু বিক্রেতা এবং ক্রেতার মধ্যে একটি সংযোগ স্থাপন করে এখান থেকে অর্থ কামিয়ে নেয়। অর্থাৎ বিক্রেতা এবং তার মধ্যে একটা বনিবনা করে দেয় । যাদেরকে আমরা সাধারণত গরুর দালাল বলে থাকি । এই পেশাটিকে আপনি অবহেলার চোখে দেখবেন না। কারণ যারা এই ব্যবসা করে তারা হাটে যাবার সময় শূন্য পকেট এ হাতে যায় কিন্তু বাড়িতে ফিরে আসার সময় মোটা অঙ্কের কিছু টাকা পকেট ভর্তি করে ফিরে আসে।
এভাবে করে জমি কেনাবেচার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। যে কিনা জমির বিক্রেতার সঙ্গে আগে থেকেই কথা বলে রাখে যে যদি আমি আপনার এই জমিটি বিক্রি করে দিতে পারি তাহলে আপনাকে আমাকে এত অংশ দিতে হবে। এক্ষেত্রে যিনি জমি বিক্রেতার কাছ থেকে চুক্তি করে তার কাছ থেকে অনায়াসেই মোটা অংকের একটা টাকা কামিয়ে নিতে পারে। ঠিক একই কাজ জমি ক্রেতার সাথেও করে থাকে।
এবার আমার দেখা একটি বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা বলছি। আপনি হয়তো খেয়াল করবেন বিভিন্ন বাস স্ট্যান্ড গুলোতে অনেকগুলো লোক ঘোরাঘুরি করে যারা আসলে কোন বাস কোম্পানির লোক নয়। কিন্তু যে সকল বাসে তারা যাতে তুলে দেবে তাদের কাছ থেকে একটা অংশ কমিশন হিসেবে নিয়ে নেয়। এক্ষেত্রে এই লোক গুলো যদি প্যাসেঞ্জার এর কাছ থেকে বেশি ভাড়া নিতে পারে তাহলে অতিরিক্ত পুরো টাকাটাই সে তার পকেটে রেখে দেয় । বুঝার সুবিধার্থে ধরুন আমরা ধরে নিচ্ছি গাবতলী থেকে রংপুর যেতে ভাড়া লাগবে পাঁচশত টাকা। কিন্তু আপনি যার মাধ্যমে কোন একটি গাড়িতে উঠবেন সে ব্যক্তি যদি আপনার কাছ থেকে ৬০০ টাকা নেয় তাহলে অতিরিক্ত ১০০ টাকা তার লাভ। আর এই অভিজ্ঞতা টা আমার নিজের চোখে দেখা।
আপনি যদি মার্কেটিং এ পটু হন তা হলেও বিনা পুঁজিতে ব্যবসা করতে পারবেন। ধরন কোন একটি নতুন পর্নো বাজারে এসেছে কিন্তু মার্কেটিং অভিজ্ঞতার অভাবে সে পণ্যটি ভালোভাবে বাজারজাত করতে করতে পারছে না। যদি আপনার মার্কেটিং এ ভাল দক্ষতা থাকে তাহলে আপনি তাকে অফার করতে পারেন যে তোমার পণ্যগুলো আমি বাজারজাত করে দেব। যদি আপনি তাকে নিশ্চয়তা দিতে পারেন যে এই কাজটি আপনি তার চেয়ে ভালোভাবে করতে পারবেন তাহলে এখান থেকেও ভালো মানের অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
এখনো একটি জ্বলন্ত উদাহরণ দিচ্ছি যেটা পড়ার পর আপনি হতবাক হয়ে যাবেন ভাববেন সত্যিই তো কথাটা অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল যে পুঁজি ছাড়া ও মেধা দিয়ে পরিশ্রম দিয়ে কোটি টাকার মালিক হওয়া যায়। আমাদের দেশে পাঠাও ডট কম নামে যে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস চালু হয়েছে সেটা সম্পর্কে মোটামুটি সবাই অবগত আছেন। তাদের মুল কাজটা কি? কেউ চাচ্ছে প্যাসেঞ্জার আবার কেউ যাচ্ছে সাশ্রয়ী মূল্যে অল্প সময়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে। অর্থাৎ যেহেতু আমাদের ঢাকা শহরে প্রচুর জ্যাম সেহেতু সবাই এমনটা চাইবে যে যেন অল্প সময়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারে । পেসেঞ্জার খোঁজ নে ওয়ালা এবং প্যাসেঞ্জার দুজনের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে এখান থেকে তারা ২০ শতাংশ মুনাফা লুফে নিচ্ছে। অর্থাৎ তারা কিন্তু এখানে দালালি ব্যবসা করছে কিন্তু সেটা একটা স্মার্ট পদ্ধতিতে।
বাংলাদেশ এ ধরণের আরো বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা দুইজনের মাঝে সংযোগ স্থাপন করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। যেমন আপনার বাড়িতে কাজের লোক লাগবে সেটার ব্যবস্থা হচ্ছে, আপনার বাড়িতে ইলেকট্রিশিয়ান লাগবে সেটার ব্যবস্থা হচ্ছে, আবার বাসা বদলানোর জন্য গাড়ি ভাড়া করতে হবে সেটার ব্যবস্থা ও হয়ে গেছে।
এভাবে আমি আরো অনেক উদাহরণ দিতে পারব যে কিভাবে পুঁজি ছাড়া ব্যবসা করা যায়। একটু চোখ কান খোলা রাখলে মনে সাহস থাকলে এবং পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকলে অবশ্যই আপনি কখনো কর্মের অভাবে ভুগবেন না। আপনি যাই করুন না কেন সবার আগে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আপনি সেটি করতে পারবেন। মনের ভয় ভীতি দূর করে আজকেই না হয় শুরু করে দিন একটি ব্যবসা। একটু চেষ্টাই না হয় করলেন পারেন আর না পারেন সেটা তো অনেক পরের কথা। শুরু করার আগেই যদি বলেন আমাকে দিয়ে এই ধরনের কাজ হবে না তাহলে আপনি তো আগেই ফেইল হয়ে গেলেন।
অসাধারণ লিখেছেন । অনেক কিছু জানলাম। অনেক তথ্য বহুল এবং কাজের টিউন
ReplyDelete