বিভিন্ন সময় আমাদের ত্বকে ব্রণ হতে পারে। যদিও ব্রণের সাথে বয়সের একটা সম্পর্ক রয়েছে তার পরেও সকল বয়সেই ব্রণ হতে পারে। ব্রণ একটি মারাত্মক উপদ্রব । ব্রণের কারণে আমাদের চেহারার দাগ পড়ে। দেখতে খারাপ লাগার পাশাপাশি ব্যথা অনুভব হয় । শীতে ব্রণের উপদ্রব আরো ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। তাই আজকে শীতে ব্রণ দূর করার উপায় সম্পর্কে বিভিন্ন টিপস নিয়ে আলোচনা করব।
ফেসওয়াশের সঠিক ব্যবহার
শীতকালে ব্রণের উপদ্রব থেকে বাঁচার জন্য ত্বকটাকে কীভাবে পরিষ্কার করছেন সেদিকে একটু খেয়াল রাখুন। শীতে ভুলেও সাধারণ বডি ওয়াশ কিংবা গায়ে মাখার সাবান দিয়ে মুখমন্ডল ধোবেন না। শীতে ত্বকটাকে পরিষ্কার করার জন্য ভালো ব্র্যান্ডের অয়েল ফ্রি ক্লিনজার ব্যবহার করতে পারেন। গরম পানি দিয়ে ভুলেও ত্বক ধোবেন না। সবসময়ে মুখ ধোয়ার জন্য ঠান্ডা পানি ব্যবহার করবেন। ক্ষারমুক্ত ভালো ফেসওয়াশ দিয়েও ত্বক পরিষ্কার করতে পারেন সকালে এবং রাতে।
বাটার মিল্ক ব্যবহার করে শীতে ব্রণ দূর করার উপায়
বাটার মিল্কে থাকে প্রচুর ল্যাকটিক অ্যাসিড। তাই এটি ত্বকের মরা কোষ তোলে সহজেই। সেইসঙ্গে ত্বকের দাগও হালকা করে অনেকটাই। এটি বজায় রাখে ত্বকের পিএইচ লেভেলের ভারসাম্য। ত্বকে বাটার মিল্ক ব্যবহার করার জন্য তাতে কিছুটা তুলা ভিজিয়ে নিন। এরপর সেটি ত্বকে ভালো করে বুলিয়ে নিন। বিশ মিনিট অপেক্ষা করে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
- আরো পড়ুনঃ চোখ লাল হওয়ার কারণ
মশ্চারাইজার ব্যবহার করে শীতে ব্রণ দূর করার উপায়
ত্বককে ব্রণের উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে আরেকটি ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে আপনাকে। আর তা হলো আপনার ত্বকটাকে কীভাবে ময়েশ্চারাইজ করছেন। অনেকেই ব্রণ উঠেছে বলে ত্বক ময়েশ্চারাইজ করতেও ভয় পায়। ফলে ত্বকটা আরো শুষ্ক হয়ে ওঠে এবং ব্রণের সমস্যাও কমে না। হেভি ক্রিম ব্যবহার না করে হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার সবচাইতে ভালো বন্ধু হতে পারে বেবি ক্রিম। ছোট শিশুদের ত্বকের জন্য তৈরি করা হয় বলে ক্ষতিকর কোনো কেমিক্যাল থাকে না এগুলোতে। ফলে আপনার ব্রণের সমস্যাটাকে আরো বাড়িয়ে দেয়ার সম্ভাবনা থাকে না এই প্রোডাক্টগুলোতে।
কমলার খোসা ব্যবহার করে শীতে ব্রণ দূর করার উপায়
শুধু কমলা নয়, কমলার খোসারও রয়েছে অনেক উপকারিতা। তার মধ্যে অন্যতম হলো ত্বকের দাগ-ছোপ দূর করা। কমলার খোসায় আছে প্রচুর স্কিন লাইটনিং উপাদান। এই উপাদান ত্বকের ভেতরে প্রবেশ করে দাগ দূর করে। নিয়মিত কমলার খোসা ব্যবহার করলে দাগ দূর হতে সময় লাগবে না। তাই কমলা খেলে তার খোসা ফেলে না দিয়ে শুকিয়ে গুঁড়া করে রাখুন।
ত্বকে কমলার খোসা ব্যবহার করার জন্য এক টেবিল চামচ গুঁড়া নিন। এরপর তাতে মেশান এক চা চামচ মধু। একটি পেস্টের মতো তৈরি করুন। ব্রণের দাগ যেসব স্থানে আসে, সেসব স্থানে এই পেস্ট ভালোভাবে লাগান। অপেক্ষা করুন শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত। এরপর পরিষ্কার পানিতে মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে তিন দিন এটি ব্যবহার করুন।
পানি পান করে শীতে ব্রণ দূর করার উপায়
শীতকালে অনেকেরই বদঅভ্যাস হলো পানি কম খাওয়া।গ্রীষ্মের তাপে অতিষ্ট হয়ে কিছুক্ষণ পর পর পানি খাওয়া হলেও শীতে পানি খাওয়ার কথা বেমালুম ভুলে যান বেশিরভাগ মানুষ। আর কম পানি পানের ফলেই শীতে দেখা দেয় ব্রণের উপদ্রব। তাই শীতেও প্রচুর পানি পান করুন।অন্তত দিনে ৮ গ্লাস পানি অবশ্যই পান করা উচিত ত্বক এবং শরীর ভালো রাখার জন্য।
কাঁচা হলুদ ও চন্দন কাঠের ব্যবহার করে শীতে ব্রণ দূর করার উপায়
কাঁচা হলুদ এবং চন্দনকাঠের গুঁড়ো ব্রণের জন্য খুবই কার্যকর দুটো উপাদান। সমপরিমাণ বাটা কাঁচা হলুদ এবং চন্দন কাঠের গুঁড়ো একত্রে নিয়ে এতে পরিমাণ মত পানি মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করতে হবে। মিশ্রণটি এরপর ব্রণ আক্রান্ত জায়গায় লাগিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর শুকিয়ে গেলে মুখঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- আরো পড়ুনঃ জরায়ু অপারেশনের খরচ কেমন বাংলাদেশে
আপেল ও মধুর মিশ্রণ এর সাহায্যে শীতে ব্রণ দূর করার উপায়
আপেল এবং মধুর মিশ্রণ হচ্ছে ব্রণের দাগ দূর করার সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘরোয়া পদ্ধতি। প্রথমে আপেলের পেষ্ট তৈরি করে তাতে ৪-৬ ফোঁটা মধু মিশাতে হবে। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করে এরপর মুখ ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
হলুদ বেসন ব্যবহার করে শীতে ব্রণ দূর করার উপায়
হলুদ বেসন- এক টেবিল চামচ বেসনের সঙ্গে এক টেবিল চামচ হলুদ মিশিয়ে নিয়ে তাতে গোলাপ জল টক দই মিশিয়ে ব্রতে লাগিয়ে রাখুন তার পর পনেরো মিনিট পরে সেটি ধুয়ে ফেলুন৷ চিরতরে ব্রণ বিদায় হবে৷
নিম ও গোলাপজরের মিশ্রণ ব্যবহার করে শীতে ব্রণ দূর করার উপায়
নিমপাতা ত্বকে অ্যান্টি-সেপটিক হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে গোলাপজল ত্বক স্নিগ্ধ আর সতেজ রাখে। এজন্য পাতাসহ গোটা পাঁচেক নিমের ডাল ভেঙে নিন। পাতাগুলো ধুয়ে পানিতে ২ মিনিট ফুটিয়ে নিন।
তারপর পানি থেকে পাতা তুলে ব্লেন্ড করে নিন। এবার পাতার মিশ্রণে ২ চা চামচ পরিমাণ গোলাপজল মিশিয়ে ব্রণের উপরে ব্যবহার করে শুকিয়ে গেলে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ব্রণ দ্রুত শুকোবে, ব্যথাও কমবে।
হলুদ মধু ব্যবহার করে শীতে ব্রণ দূর করার উপায়
কিছুটা হলুদ এবং মধু নিয়ে মিশিয়ে প্রতিদিন একবার করে স্নানের আগে ব্রণর জায়গায় লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন৷
গোলাপজল ব্যবহার করে শীতে ব্রণ দূর করার উপায়
গোলাপজলের নিয়মিত ব্যবহারে ব্রণের দাগ কমে যায়। দারুচিনি গুঁড়ার সাথে গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট ব্রণের ওপর লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এতে ব্রণের সংক্রমণ, চুলকানি এবং ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে।
- আরো পড়ুনঃ পেটে জ্বালাপোড়া কমানোর উপায়
নিম হলুদ ব্যবহার করে শীতে ব্রণ দূর করার উপায়
নিম হলুদ- ত্বকের পরিচর্যা করতে অনেকেই মিমের সঙ্গে হলুদ বাটা ব্যবহার করে থাকেন, তবে শুধুমাত্র ত্বককে ফ্রেশ রাখতেই নয় ত্বকের ব্রণ পুরোপুরিভাবে দূর করতে নিম হলুদের গুণাগুণ জুরি মেলা ভার৷
বালিশের কভার পরিষ্কার রাখুন
ত্বকে ব্রণের সমস্যা হওয়ার অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম একটি হলো বালিশের কভার পরিষ্কার না রাখা। চুলের ধুলোময়লা বালিশের কভারে লেগে থাকে এবং তা আপনার ত্বকেও লেগে যায়। ফলে ত্বকে ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। তাই সপ্তাহে অন্তত একবার বালিশের কভারটা বদলে ফেলা উচিত।
মুখের ত্বকে হাত লাগাবেন না
শীতে আপনার হাত কতটুকু ঠান্ডা হয়ে আছে তা অনুভব করার জন্য কিংবা সামান্য উষ্ণতা পেতে অনেকেই হাতগুলোকে গালে লাগিয়ে রাখেন। এতে আপনার হাত থেকে জীবাণু ত্বকে লেগে যায় এবং তা থেকে বেড়ে যায় ব্রণের উপদ্রব। তাই এই অভ্যাসটা ত্যাগ করার চেষ্টা করা উচিত।
ব্রণ দূর করার ইসলামিক উপায়
ইনশাআল্লাহ আপনি যদি মুসাল্লামাতুল লা শিয়াতা ফীহ প্রতিদিন ৪১ বার পড়েন। তাহলে আল্লাহ তাআলা আপনার যত রকম শরীরের দাগ ব্রণের সমস্যা বা যন্ত্রণাদায়ক স্পোর্ট থাকে তাহলে সেটি থেকে আপনাকে মুক্তি দিবেন।