ক্রেডিট কার্ড কী? ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ

ক্রেডিট কার্ড কি

বর্তমান সময়ে লেনদেনের জন্য ক্রেডিট কার্ড বহুল প্রচলিত একটি জনপ্রিয়  পদ্ধতি।  এটি সাধারণত একটি কার্ড।  কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে জানেনা।  তাই আমরা প্রশ্ন করে থাকি ক্রেডিট কার্ড কি।  তাই আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব ক্রেডিট কার্ড কি সম্পর্কে।  যারা ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে জানতে চান তারা আর্টিকেলটি পড়ুন। 

ক্রেডিট কার্ড কি?

ক্রেডিট কার্ড হল মূলত এক ধরনের প্লাস্টিক এর কার্ড যার ভিতরে একটি মাইক্রো চিপ থাকে।  ক্রেডিট কার্ড এর বিতর ব্যবহারকারীর নাম, ক্রেডিট কার্ডের নম্বর, ক্রেডিট কার্ড এর মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ, ক্রেডিট কার্ডের স্বাক্ষর ইত্যাদি থাকে। 

বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ক্রেডিট কার্ড এর সেবা চালু করেছে।  ক্রেডিট কার্ড এর ব্যবহারের অনেকগুলো সুবিধা থাকার কারণে ধীরে ধীরে গ্রাহক সমাজে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।  তাই আজকে আমরা এই আর্টিকেলে আলোচনা করব ক্রেডিট কার্ড কি,  ক্রেডিট কার্ড এর ব্যবহার এবং ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে।  তাই যারা ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে জানতে চান তারা  আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন।  

ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ডের পার্থক্য

ক্রেডিট কার্ড এবং ডেবিট কার্ড প্রত্যেকটির মূলনীতি আলাদা আলাদা।  ডেবিট কার্ড এর মূলনীতি হচ্ছে এটি আপনার ব্যাংক একাউন্টে রাখা সমস্ত অর্থ ব্যবহার করে আপনাকে লেনদেন করতে দিবে।  আপনার ব্যাংক একাউন্টে যদি যথেষ্ট অর্থ না থাকে তবে আপনি ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে লেনদেন করতে পারবেন না।  অন্যদিকে ক্রেডিট কার্ড হচ্ছে আপনি যত টাকা খরচ করেন তার আলাদা হিসাব রাখে এবং বাকি  বা লোন হিসাবে আপনার  আপনার খরচের হিসাব রাখে এবং পরবর্তীতে তা সেবাদাতা ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানকে শোধ করে দিতে হয়।  

আরো পড়ুনঃসবচেয়ে দ্রুত Mobile to Mobile ফাইল ট্রান্সফার

এছাড়া আরেক ধরনের কার্ড পাওয়া যায় তার নাম হচ্ছে প্রিপেইড কার্ড।  প্রিপেইড কার্ডেই মূলত আগে থেকেই টাকা  জমা করে রাখা হয় এবং সেখান থেকে খরচ করা যায়।  তবে যারা প্রিপেইড কার্ড ব্যবহার করে তাদের খরচের সীমাটা সাধারণত কম থাকে।  কারণ প্রিপেইড কার্ড ব্যবহার করে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আগে জমা করতে হয়।  আর যারা ডেবিট কার্ড অথবা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন তারা সাধারণত ব্যবহার করার পর যেহেতু পরিশোধ করেন তাই ব্যবহার করার সময় কি পরিমাণ টাকা খরচ করছেন খুব একটা ধারণা থাকে না বলে খরচ বেশি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।  

ক্রেডিট কার্ড  এর সুবিধা

  • ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে দ্রুত লেনদেন করা যায় 
  • নগদ অর্থ বহনের যে  ঝুঁকি রয়েছে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সেই  ঝুঁকি থাকে না
  • ডেবিট কার্ডের চেয়ে ক্রেডিট কার্ডের সুরক্ষা অনেক ভালো
  • ক্রেডিট কার্ড এর পুরস্কার এর সুবিধা রয়েছে পয়েন্টের ভিত্তিতে
  • সহজেই পরিবহন যোগ্য

ক্রেডিট কার্ড এর অসুবিধা

  • উচ্চমূল্যের লেনদেন    ফি
  • ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে ঋণ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে
  • অজানা কিছু হয়ে যায়
  • ক্রেডিট কার্ড যদি ভুল হয় তাহলে ঋণের বোঝা বাড়ার আশঙ্কা থাকে
  • ক্রেডিট কার্ডের অত্যধিক ব্যবহার

ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা

ক্রেডিট কার্ড নিতে পারবেন যে কেউ যদি তাদের পায়ের উৎসটি শনাক্ত হয় এবং টিআইএন থাকে।  চাকুরীজীবী ব্যবসায়ী বা অন্য যে কোন পেশাজীবী যাদের বৈধ আয় রয়েছে তারা ক্রেডিট কার্ড নিতে পারেন।  নিম্নে ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার জন্য যেসকল যোগ্যতা দরকার তা আলোচনা করা হলো

  • জাতীয় পরিচয় পত্র
  • যারা চাকরিজীবী তাদের সেলারি সার্টিফিকেট এবং তিন মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট
  • ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে সাধারণত ট্রেড লাইসেন্স এবং তিন মাসের ব্যাংক ট্রানজেকশন স্টেটমেন্ট
  • টিআইএন সার্টিফিকেট
  • নূন্যতম বয়স 18 হতে হবে
  • নুনু তম বার্ষিক আয়ের প্রায় 3 লাখ টাকা হতে হবে

এছাড়া কারো ব্যাংকে যদি ফিক্সট ডিপোজিট থাকে এবং সেই ব্যাংক যদি রাজি থাকে তবে  কেউ আবেদন করলে তারা ক্রেডিট কার্ড  দিতে রাজী হতেও পারে।  আপনি আপনার ব্যাংকে ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করে দেখতে পারেন।  

আরো পড়ুনঃবায়োফ্লক (Biofloc) পদ্ধতিতে মাছ চাষ

ক্রেডিট কার্ড লিমিট কি

সাধারণত যারা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে তারা লেনদেন করার সময় অনেক ক্ষেত্রে হিসেব করেন এবং বেশি লেনদেন করে ফেলে তাই যে সকল ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড দিয়ে থাকেন তারা একটা নির্দিষ্ট সীমা দিয়ে দেন যে কত টাকা সে লেনদেন করতে পারবে।  এটা সাধারণত ঠিক করে দেয়া হয় যিনি গ্রাহক তার পায়ের সক্ষমতার উপর।  সেজন্য এইমাত্র টিকে বলা হয় ক্রেডিট লিমিট।  কোন গ্রহীতা যদি ক্রেডিট লিমিট পরিমাণ খরচ করে ফেলে তবে সে এই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে আর খরচ করতে পারবেন না। 

ক্রেডিট কার্ডের জন্য নূন্যতম কত থাকা দরকার

সাধারণত কোন ব্যক্তি যাদের টিআই এন নাম্বার আছে তারা ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন।  ব্যবসায়ী পেশাজীবী মানুষ ও ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন তাদের টিআইএন সার্টিফিকেট আছে।  যারা সর্বনিম্ন মাসিক বেতন 15000 টাকা পর্যন্ত পেয়ে থাকেন তারা ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন।  ক্রেডিট লিমিট হয়ে থাকে সাধারণত বেতনের থেকে প্রায় দুই থেকে তিনগুণ। 

যেখানে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার নিষিদ্ধ

সাধারণত কোন ধরনের জুয়া খেলা,  ক্রিপ্টো কারেন্সি, লটারি টিকেট বা কোন বিদেশী শেয়ার কেনাবেচার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন না। 

আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড কি

সাধারণত যে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা হয় তার পরিসীমা থাকি বাংলাদেশের মধ্যে।   অর্থাৎ বাংলাদেশের বাইরে এই ক্রেডিট কার্ড আপনি ব্যবহার করতে পারবেন না।  কিন্তু এমন কিছু ক্রেডিট কার্ড রয়েছে যারা সাধারণত ডুয়েল কারেন্সি হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে।  এতে সাধারণত কারেন্সি হিসেবে বাংলাদেশী টাকা এবং মার্কিন ডলার অন্তর্ভুক্ত থাকে। 

 এছাড়াও আপনি ব্যাংক ভেদে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ইউরো বা অন্যান্য মুদ্রা ও কারেন্সি হিসেবে নিতে পারেন।  আপনি ক্রেডিট কার্ডের জন্য যখন আবেদন করবেন তখন যদি আপনি আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করেন তাহলেই আপনি আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড পেয়ে যাবেন তবে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার জন্য আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হবে।  আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড বা ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে আপনি বিশ্বের যে কোন দেশে ব্যবহার করতে পারবেন।  আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড সাধারণত বিশ্বের যে কোন দেশে ভ্রমণ করতে গেলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  

ব্যবসায়িক ক্রেডিট কার্ড কি

অনেক ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জন্য ক্রেডিট কার্ড এর ব্যবস্থা করে থাকেন।  সাধারণত এগুলো দেশে ব্যবহার করা হয় এবং সাম্প্রতিক দশকগুলোতে এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।  ব্যাবসায়িক ক্রেডিট কার্ডের জন্য নির্দিষ্ট কিছু অফার করে।  তারা প্রায়ই বিভিন্ন  শিপিং, অফিস সরবরাহ, ভ্রমণ এবং ব্যবসায়িক প্রযুক্তির মতো বিশেষ বিশেষ পুরস্কার অফার করে থাকে।  

আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা

বাংলাদেশ ক্রেডিট কার্ড এর গ্রাহক সংখ্যা

2019 সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে 12 লাখেরও বেশি ক্রেডিট কার্ড গ্রাহক ছিল।  দিনদিন  ব্যবহারের সুবিধা থাকায় ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

ক্রেডিট কার্ডের টাকা পরিশোধ না করলে

কোন গ্রাহক যদি ক্রেডিট কার্ডের খরচ করা প্রতি মাসের টাকা ব্যাংকে জমা করে তাহলে এতে কোন  সুদ  ধরা হয় না।  কিন্তু যদি কেউ ক্রেডিট কার্ডের খরচের প্রতিমাসের টাকা ব্যাংকে জমা না করে তবে ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সদ এর সাথে যোগ করে।  

ক্রেডিট কার্ড মানুষের অর্থনৈতিক লেনদেন সহজ করেছে তাই দিন দিন এর জনপ্রিয়তা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং গ্রাহক ও তেমনি বৃদ্ধি পাচ্ছে।  এমন একটা সময় আসবে যখন হয়তো সবারই  ক্রেডিট কার্ড থাকবে।  ক্রেডিট কার্ড এর অনেক সুবিধা রয়েছে সাথে সাথে এর অনেক অসুবিধা রয়েছে।  তাই আমাদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের প্রতি সর্বোচ্চ সচেতন হওয়া দরকার যেন এর সঠিক ব্যবহার আমরা নিশ্চিত করতে পারি।  


Md.Mahmud

আমার নাম মোঃ মাহমুদুল হাসান বাবু । আমি পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি। এবং ইনফরমেশন টেকনোলজি বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি । আমি বিজ্ঞান এবং টেকনোলজি নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি । আমি আমার কাজের ফাঁকে ফ্রিল্যান্সিং ব্লগে লেখালেখি করি। 01921822498

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads