পেট কমানোর উপায় । পেটের মেদ কমানোর উপায়
আজকে আলোচনা করব পেট কমানোর উপায় বা পেটের মেদ কমানোর উপায় সম্পর্কে। পেটের মেদ বা ভুঁড়ি একটি বিরক্তিকর সমস্যা। পেটে চর্বি থাকলে দেখতে খারাপ লাগে। শরীরের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। ছোট ছোট সমস্যার কারণে পেটের অতিরিক্ত জমে যায় ।
পেটের চর্বি বা পেটের মেদ ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। পেট কমানোর উপায় বা পেটের মেদ কমানোর উপায় এর জন্য আমাদের এই পোষ্টের সঙ্গে থাকুন। যদি পেটের চর্বি হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আপনার মারাত্মক রোগের সমস্যা হতে পারে।
- আরো পড়ুনঃ সেক্সে রসুনের উপকারিতা কি?
পেটে অতিরিক্ত পেটের অতিরিক্ত চর্বি হার্টের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি এসব সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পেট কমানোর উপায় বা পেটের মেদ কমানোর উপায় সমূহ জেনে নিন। হরমোন পেটে চর্বি জমাতে ভূমিকা রাখে, কিন্তু ইনসুলিন হলো শরীরের প্রধান ফ্যাট স্টোরেজ হরমোন। পেটে চর্বি জমাতে না চাইলে ইনসুলিনের উৎপাদন কমাতে হবে।
ইনসুলিন উৎপাদন কমানোর সর্বোত্তম উপায় হলো ডায়েট থেকে কার্বোহাইড্রেট কমিয়ে ফেলা এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ফ্যাট ও প্রোটিন খাওয়া। এছাড়া দুশ্চিন্তা কমাতে হবে, বেশি করে ঘুমাতে হবে ও প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসবজি খেতে হবে। পেটের চর্বি কমাতে লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আবশ্যক। পেটের চর্বি কমানোর কিছু কার্যকর উপায় জেনে নিন।
গরম পানিতে লেবুঃ
পেট কমানোর উপায় বা পেটের মেদ কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে লেবু বেশ কার্যকর। লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি , অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করবে। লেবুর রস পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে থাকে। আপনি যদি আপনার পেটের চর্বি বা ভুঁড়ি কমাতে চান তাহলে অবশ্যই গরম পানিতে লেবুর রস খেয়ে নিন। সকালে খালি পেটে গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে তারপর খেয়ে নিন। গরম পানিতে লেবুর রস যদি খেতে না পারে সে ক্ষেত্রে লেবুর রসের সঙ্গে অল্প পরিমাণে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
- আরো পড়ুনঃ পেট ব্যথা কমানোর উপায়
জিরার পানিঃ
জিরা পানি আপনার পেটের চর্বি পেট ফাঁপা দূর করবে পেটের মেদ দূর করবে এবং ভুড়ি কমাতে সাহায্য করবে। তাই অবশ্য এসব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য জিরা পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন।
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খানঃ
পেট কমানোর উপায় বা পেটের মেদ কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে পানি অন্যতম। আপনার শরীরের বাড়তি মেদ বা ভুঁড়ি এবং ওজন কমানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাওয়ার সঙ্গে আপনাকে ভালো খাবার খেতে হবে। যে খাবার গুলোতে চর্বি বুড়ি ওজন কিছুই হচ্ছে না সে খাবারগুলো খাওয়ার অভ্যাস করুন।
মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকুনঃ
আপনি যদি আপনার পেটের চর্বি এবং ওজন কমাতে চান সে ক্ষেত্রে অবশ্যই মানসিক চাপ থেকে মুক্তি থাকতে হবে। অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকলে আপনার হরমোনের সমস্যা দেখা দেবে। বাড়তি ইনসুলিন ওজন বৃদ্ধি করে। বিশেষ পেটের চর্বি জমা সাহায্য করে।
- আরো পড়ুনঃ জয়তুন তেলের উপকারিতা
পর্যাপ্ত ঘুমঃ
চর্বি কমানোর জন্য অন্যান্য যে পদ্ধতি গুলো রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম। গবেষণায় স্লিপ এপনিয়ার রোগীদের পেটে অতিরিক্ত চর্বি পাওয়া গেছে।
আপনি যদি আপনার পেটের চর্বি কমাতে চান তাহলে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে। 7 থেকে 8 ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। আপনি যদি আপনার শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান খুবই দরকার।
খাবারে হলুদ বাড়ানঃ
শরীরের চর্বি কমাতে হলুদ খুবই কার্যকরী। হলুদ আপনার পেটের চর্বি জমতে বাধা সৃষ্টি করে। হলুদ শুধু চর্বি কমাতে সাহায্য করেন না। শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এর বিরুদ্ধে লড়াই করে থাকেন হলুদ।
প্রোটিন খাওয়ার পরিমাণ বাড়ানঃ
পেটের চর্বি কমানোর একটি দ্রুত উপায় হলো প্রোটিন খাওয়ার মাত্রা বাড়ানো ও কার্বোহাইড্রেট কমিয়ে দেয়া। কিন্তু তাই বলে পালিও ডায়েট অনুসরণ করতে বলা হচ্ছে না। শরীরে প্রোটিনের কাজ হলো পেশি গঠন করা ও পেশির ঘনত্ব বাড়ানো। পেশির ঘনত্ব যত বাড়বে, শরীর তত বেশি চর্বি পোড়াতে পারবে। সাদা পাউরুটি ও পাস্তার মতো সরল কার্বোহাইড্রেট বাদ দিয়ে গোটা শস্যের মতো জটিল কার্বোহাইড্রেট, মৌসুমী ফল, মূলীয় সবজি ও স্কোয়াশ জাতীয় সবজি খান।
কোন বেলায় খাবার খাওয়া বাদ দিবেন নাঃ
কিছু কিছু লোক রয়েছেন যারা সকালে কোন খাবার খান না একদম দুপুরে খাবার খান সে ক্ষেত্রে তাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আপনি যদি একবেলা খাবার খাওয়া একদমই বাদ দিয়ে দেন আর একবেলা একদম পেট ভরে খাবার খান সে ক্ষেত্রে আপনার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এগুলো সমস্যার কারণে পেটে প্রচুর পরিমাণে চর্বি জমতে থাকে।
খাবার খাওয়ার সময় আনমনা হয়ে খাবার খাবেন নাঃ
খাবার খেতে বসলে আশেপাশে অন্যদিকে কোনভাবে ব্যস্ত থাকা যাবে না। আপনি যদি খাবার খাওয়ার সময় অন্য কাজে ব্যস্ত থাকেন অন্যদিকে মন দিয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার পেটের চর্বি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
যেমন মোবাইল দেখা, টিভি দেখা, গেমস খেলা, নাটক দেখা ইত্যাদি। খাবার খাওয়ার সময় আপনি যদি অন্য দিকে মনোযোগ দিয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার পেটের চর্বি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আনমনে খাবার খাওয়ার কারণে এবং মনোযোগ দিয়ে খাবার খাওয়ার কারণে অনেক সময় আমরা বেশি খাবার খেয়ে থাকি সেজন্য চর্বি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অনেক লোক রয়েছেন যারা ক্ষুধা পেটে নিয়ে টিভি দেখতে দেখতে অন্য কিছু বাজে বাজে খাবার খেয়ে থাকেন। এই খাবারগুলো আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। যেমনঃ তেল ভাজা খাবার, ভাজাপোড়া, মুড়ি, চানাচুর, বিস্কুট, ইত্যাদি।
সাদা আটা, সাদা চালঃ
সাদা আটা ও সাদা চাল তৈরি করার সময় ফাইবার বা আঁশ সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান ফেলে দেওয়া হয়। ফাইবার খাবারকে আস্তে আস্তে হজম করতে সাহায্য করে। সাদা আটা এবং সাদা চাউল থেকে ফেলে দেওয়ার কারণে খাবারগুলোর দ্রুত হজম হয়ে থাকে এবং রক্ত ব্লাড সুগারের মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে সাদা আটা ও সাদা চাউল প্রক্রিয়াজাত শস্যদানা বেশি খাওয়ার সাথে মেদ জমার সম্পর্ক রয়েছে। অন্যদিকে লাল চাল লাল আটার মধ্যে গোটা শস্যদানা বেশি খাওয়ার সাথে পেটের মেদ কমানোর সম্পর্ক রয়েছে।
লাল আটা ও সাদা চালঃ
লাল চাল বা লাল আটার স্বাদের সাথে অনেকেই অভ্যস্ত নয়, তাই প্রথমে এটি ভালো না-ই লাগতে পারে। কিন্তু এইটা পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করবে এবং স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হবে। তাই আস্তে আস্তে হলেও এগুলো খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। প্রয়োজনে শুরুর দিকে সাদা চাল বা সাদা আটার সাথে কিছুটা লাল চাল বা আটা মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
শুয়ে বসে না থেকে অ্যাকটিভ হোনঃ
অতিরিক্ত শুয়ে বসে না থেকে বরঞ্চ একটু হাঁটাচলা করার অভ্যাস করুন। অতিরিক্ত শুয়ে বসে থাকলে শরীরের মেদ বা ভুঁড়ি দিনে দিনে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আপনার শরীর এর ম্যাথ বা ভুঁড়ি কমানোর জন্য সপ্তাহে 5 দিন 30 হাঁটার চেষ্টা করুন। প্রতি সপ্তাহে মাত্র আড়াই ঘণ্টা ব্যায়াম করুন। রোগব্যাধির সম্ভাবনা কমবে, শরীরের চর্বির পরিমাণও কমবে।
পেট কমানোর উপায় বা পেটের মেদ কমানোর উপায় অনুসন্ধান করে থাকলে উপরের নিয়ম অনুসারে যদি আপনি কাজ করতে পারেন তাহলে আপনার শরীরের বাড়তি ওজন চর্বি যা হয়েছে তা অল্প কিছুদিনের মধ্যে দূর হতে সাহায্য করবে।