সেক্স এডুকেশন বলতে সেক্স সম্পর্কে যাবতীয় অন্ধতা মূর্খতা এবং অজ্ঞানতাকে দূর করার জন্য যে শিক্ষা অর্জন করা প্রয়োজন। সেক্স এডুকেশন টপিকটি যখন আলোচনায় নিয়ে এসেছি তখন এমন একদল লোক আছেন যারা ব্যাপারটি দেখে অন্য কিছু ভাববেন এবং আরেকটি দল আছে যারা অতি উৎসাহী হয়ে অন্য কিছু খোঁজার চেষ্টা করবেন।
সেক্স এডুকেশনের আলোচনায় আসলে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয় সে বিষয়গুলো নিচে তুলে ধরলাম।
- নারী এবং পুরুষের পারস্পরিক সম্পর্ক
- নারী ও পুরুষের ইমোশনাল এচিভমেন্ট
- সেক্সুয়াল বিষয়ক সামাজিক ধারণা
- সেক্সচুয়াল বিষয়ক ধর্মীয় জ্ঞান
- সেক্স সম্পর্কিত স্বাস্থ্য বিষয়ক জ্ঞান
- নিরাপদ সেক্স
- যৌন রোগ
- সেক্স অধিকার
- জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
- নিজের প্রাইভেসি সম্পর্কে ধারনা
- গুড টাচ
- বেড টাচ
উপরে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে সে বিষয়গুলোর সমন্বিত ধারণায় হচ্ছে সেক্স এডুকেশন।
আরো পড়ুনঃ স্কিন এলার্জি থেকে মুক্তির উপায়
বাংলাদেশে সেক্স এডুকেশন
বাংলাদেশের সেক্স এডুকেশন সম্পর্কে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন রকম ধারনা রয়েছে। অনেকে মনে করেন যে সেক্স এডুকেশন সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান সকলের মাঝে থাকা উচিত আবার অনেকে ধারণা করেন যে এই বিষয়টি এড়িয়ে চলা উচিত। যেহেতু কোমলমতি ছাত্রদের নৈতিক দিক বিবেচনা করতে হয় তাই বিদ্যালয়গুলোতে সেক্স এডুকেশন চালু করা হবে কিনা সেই বিষয় নিয়ে যথেষ্ট হয়েছে। কিন্তু ধীরে ধীরে সেক্স এডুকেশনের ব্যাপারটি দেশের অনেক স্কুল এবং অনেক যৌন শিক্ষা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান সামনে নিয়ে আসতে চায়।
সেক্স এডুকেশন কিভাবে শিখব
সেক্স এডুকেশন সম্পর্কে মানুষকে ধারণা দিতে গেলে সেটা খুবই স্মার্টলি উপস্থাপন করার প্রয়োজন হবে। যেহেতু আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম তাই সেক্স এডুকেশন সম্পর্কে মুসলিম রীতি অনুসরণ করার পক্ষে বেশি সমর্থন পাওয়া যাবে। মাদ্রাসাগুলোতে সাধারণত অনানুষ্ঠানিকভাবে সেক্স এডুকেশন সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা দেয়া হয় কিন্তু এ ব্যাপারে খুব বেশি বলাবলি করতে শোনা যায় না। কিন্তু বিদ্যালয়গুলোতে সেক্স এডুকেশন পড়ানো হবে কিনা সে ব্যাপারে আগেই অনেক বেশি আলোচনা চলে এসেছে।
কোমলমতি ছাত্রদের সেক্স এডুকেশন সম্পর্কে ধারণা দিতে গেলে খুব বেশি সতর্ক থাকতে হবে কারণ তারা ব্যাপারটিতে যেন অতি উৎসাহী হয়ে না যায়। তবে তারা যেন ব্যাপারটিকে গুরুত্বের সহিত নেয় এবং এখান থেকে তারা স্বাস্থ্য বিষয়ক যত ধরনের সুবিধার কথা তারা বলেন তার সিংহভাগ পেয়ে থাকে।
সেক্স এডুকেশন এর মাধ্যমে ছোট বাচ্চারা কিভাবে উপকৃত হবে
সেক্স এডুকেশন এর মাধ্যমে ছোট বাচ্চারা তাদের নিজেদের প্রাইভেট পার্টস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বুঝতে পারবে। এবং তারা যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে পারে তবে বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখ ইনফেকশন এর হাত থেকে রক্ষা পাবে।
পরিবার থেকে সেক্স এডুকেশন
পরিবারে যখন একটি ছোট ছেলেমেয়ে লালিত পালিত হয় তখন তার বিভিন্ন বডি পার্টস সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়। এবং সেই বডি পার্টস সম্পর্কে বলা হয়। কিন্তু তার যৌনাঙ্গ বিষয়ে খুব একটা ধারণা দেয়া হয় না। এখন একটি বাচ্চাকে যদি হঠাৎ করে 15 বছর বয়সে তার বাবা-মা তার যৌনতার ব্যাপারে পরামর্শ দিতে যায় তখন তাদের মধ্যে এক ধরনের সংকোচ কাজ করে। কিন্তু এই ধারণাটি যদি ছোটবেলা থেকেই ধীরে ধীরে দিয়ে আসতেও সচেতনভাবে বাবা-মা তবে পনের বছর বয়সে সে ব্যাপারটি তাদেরকে এতো সংকোচ এর মধ্যে ফেলে দিত না।
স্বাস্থ্যগত সেক্স এডুকেশন
সেক্স এডুকেশন এর অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে স্বাস্থ্যগত দিক। একটা মানুষ যে কেউ কে তার সঙ্গী হিসেবে বেছে নিতে পারেন। তবে কেউ যদি চায় তার জন্য একাধিক সঙ্গীর সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। তবে একাধিক ব্যক্তির সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এতে যেমন বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তেমনি সামাজিক সম্পর্কগুলো নষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই একজন মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সে আসলে কার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করবে।
আরো পড়ুনঃ| অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও অপকারিতা
সেক্স এডুকেশন সম্পর্কে বাচ্চাদের যে ভুল গুলো শেখানো হয়
আমরা সেক্স এডুকেশন নিয়ে কথা বলি কিন্তু আমাদের সামনেই অহরহ এমন ঘটনা ঘটে যাচ্ছে যেগুলো উচিত নয়। আমরা সেক্স এডুকেশন এর ব্যাপারটা বাচ্চাদের কাছ থেকে লুকানোর জন্য সেক্স এডুকেশন সম্পর্কে তাদেরকে মিথ্যা বলে থাকি।
যেমন কারো যদি ছোট ভাই বোন হয় তাহলে তাদেরকে অনেক সময় বুঝানোর চেষ্টা করে যে অমুক পাখি এসে দিয়ে গেছে তমুক পাখি এসে দিয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমরা এই সহজ কথাটি তাদেরকে বলি না যে তোমার আম্মুর পেট থেকে হয়েছে।
কারণ ছোটবেলা থেকেই তাদেরকে আমরা সেক্স এডুকেশন থেকে দূরে রাখতে চাই। তবে এটা অনেক ক্ষেত্রে ভালো যে তারা ছোটবেলাতেই যৌনতাকে গোপনীয় বিষয় বলে ভাবতে থাকে। সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু যদি সেক্স এডুকেশন সম্পর্কে তাদের সঠিক ধারণা না থাকে তবে তাদের মধ্যে এক সময় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে এবং ভিন্ন পথে ধাবিত হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ আদার উপকারিতা ও অপকারিতা
বাচ্চাদেরকে যৌন নির্যাতন থেকে বাঁচাতে সেক্স এডুকেশন
বাচ্চাদেরকে যৌন নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে সেক্স এডুকেশন বৃদ্ধি করা উচিত। সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে বাচ্চাদের প্রতি যৌন নির্যাতন রাস পাবে যাকে আমরা চাইল্ড এবিউজ বলে থাকি। মা-বাবার সাথে বাচ্চাদের এই ব্যাপারে কথা বলার সুযোগ থাকলে সে তার প্রতি অন্যায় গুলো মা-বাবার কাছে প্রকাশ করতে পারবে এবং সমাজে শিশুদের প্রতি নির্যাতন কমে আসবে।
কিন্তু শিশু যদি মায়েদের বাবাদের কাছে তাদের প্রতি যৌন অত্যাচার সম্পর্কে বলতে লজ্জাবোধ করে অথবা কুণ্ঠাবোধ করে তবে তাদের ওপর যৌন নির্যাতন ক্রমাগত চলতেই থাকবে। তাই বাচ্চাদেরকে যৌন নির্যাতন থেকে বাজাতে সেক্স এডুকেশনের উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
টিনএজারদের জন্য সেক্স এডুকেশন
যখন শিশুরা কৈশোরে পরিণত হতে থাকে তখন তাদের মধ্যে এক ধরনের কৌতূহল কাজ করে এবং কৌতুহল থেকে তারা বিভিন্ন অন্যায়ের পথে ধাবিত হতে পারে। কিন্তু যদি তাদের সেক্স এডুকেশন সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকে তবে তারা যৌনতা সম্পর্কে ধারণা রাখবে। তারা বুঝতে পারবে কাদের সাথে মেশা উচিত এবং কাদের সাথে মেশা উচিত নয় এবং কতটুকু উচিত।
সেক্স এডুকেশন এর পদ্ধতি
যেহেতু আমাদের মুসলিম সমাজ রক্ষনশীল তাই সেক্স এডুকেশন সমাজে এমন ভাবে প্রয়োগ করতে হবে যেন সেটা ফল হয়। তার জন্য আমাদের সেক্স এডুকেশনের সাথে কি কি সংশ্লিষ্ট বিষয় থাকবে এবং কি কি বিষয় থাকবে না বা কতটুকু থাকবে সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে এবং গবেষণালব্ধ জ্ঞান থেকে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথমেই সেক্স এডুকেশন একটি এলাকায় অথবা একটি সমাজে প্রয়োগ করা যেতে পারে। সেখান থেকে কি ধরনের প্রতিক্রিয়া আসলো এবং কতটুকু উপকৃত হলো অথবা উপকৃত হলো না সকল বিষয় যাচাই-বাছাই করার পর ধীরে ধীরে সেক্স এডুকেশন ডাকে সারাদেশে প্রচলন করা যেতে পারে। তবে সেক্স এডুকেশন সম্পর্কে সিলেবাস প্রস্তুত করতে গেলে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের সাথে ধর্মীয় নেতাদের মতামতের সামঞ্জস্যতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে পরিপূর্ণভাবে সমাজ এর সুফল ভোগ করে।
আরো পড়ুনঃ| পেয়ারা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
স্কুলগুলোতে সেক্স এডুকেশন
এরইমধ্যে যৌন স্বাস্থ্য যৌনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত কয়েকটি গবেষণামূলক ভাবে বাংলাদেশের কিছু কিছু ইস্কুলে সেক্স এডুকেশন চালু করেছে এবং সেখান থেকে তারা ফলাফল গ্রহণ করছে যে কেমন প্রতিক্রিয়া আসে।
আজকে যে পার্টিক্যাল নিয়ে কথা বলাম সেটি হচ্ছে সেক্স এডুকেশন এবং ব্যাপারটি খুবই সেনসিটিভ একটি বিষয়। তাই এখানে মতামত দেওয়ার আগে সুচিন্তিত কথা বলতে হবে। কারণ এমন স্পর্শ কাতর বিষয়ে অনেকের দ্বিমত থাকতে পারে। যেহেতু আমাদের সমাজটা রক্ষনশীল তাই আমি মনে করি রক্ষণশীল পদ্ধতিতেই যদি আমরা সেক্স এডুকেশন কে আমাদের সমাজে ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি তবে আমাদের সমাজ যৌন স্বাস্থ্য এবং যৌন নির্যাতন সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন হবে।