চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ভালো-মন্দ

শিল্প বিপ্লবের ভালো-মন্দ
শিল্প বিপ্লব

শিল্প বিপ্লব

শিল্প বিপ্লব বলতে আমরা শিল্পের উত্তরোত্তর   উন্নয়নকে বুঝি।  মাঝে মাঝে বিশ্বের কোথাও কোথাও খুবই দ্রুত শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটে থাকে।   শিল্পের এই ধরনের উন্নতি কে সাধারণত শিল্প বিপ্লব বলা হয়ে থাকে।  পঞ্চদশ এবং ষোড়শ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে এমন একটা শিল্প বিপ্লবের উদ্ভব ঘটেছিল।  সেসময় সাধারণত পুঁজিবাদের উদ্ভব ঘটেছিল।  এছাড়া অনেক ধরনের আবিষ্কার সেই সময়কে শিল্পের উত্তরোত্তর উন্নতির জন্য দায়ী করা হয়।  তাদের মধ্যে রয়েছে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার, কয়লার খনি আর ইস্পাত এর ব্যাপক ব্যবহার, এবং বিভিন্ন ধরনের কারিগরি দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নগরায়নের প্রসার।

 প্রাণীজগতে মানুষ সভ্যতার শুরু থেকেই টিকে আছেন দুটি শক্তিকে কাজে লাগিয়ে একটি হলো শারীরিক শক্তি একটি হলো মানসিক শক্তি। মানসিক দক্ষতার ক্ষেত্রে মানুষ সকল প্রাণী থেকে বেশি সক্ষম।  কিন্তু শারীরিক দক্ষতা ক্ষেত্রে মানুষ অনেক প্রাণী থেকে এখনো পিছিয়ে আছে। 

আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়টি হচ্ছে শিল্প বিপ্লব সম্পর্কে।  তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক শিল্প বিপ্লব সম্পর্কে কিছু তথ্য। 

শিল্প বিপ্লব শব্দটি আবিষ্কার

এই শিল্প বিপ্লব কথাটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন অগাস্ট ব্ল্যাংকি 1838 সালে। এবং পরবর্তীতে শিল্প বিপ্লব শব্দটির প্রয়োগ করেন সুটআর্ট মিল ও কাল মার্কস।  

শিল্প বিপ্লব কি? 

শিল্প বিপ্লব হল যান্ত্রিক শক্তি আবিষ্কারের ফলে অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি ইউরোপের শিল্পজগতে উৎপাদন ব্যবস্থার যে পরিবর্তন ঘটেছিল তাকে শিল্প বিপ্লব বলে। 1750 থেকে 1850 সাল পর্যন্ত সময়কে শিল্প বিপ্লব বলা হয়। ওই সময় ইউরোপের কলকারখানায় উৎপাদনের ক্ষেত্রে  যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু হয়। যার ফলে মানুষ আস্তে আস্তে পশুর উপর নির্ভর করা কমিয়ে দেয়।  এই যন্ত্রপাতির মাধ্যমে মানুষের কায়িক শ্রম অনেক কমে যায়।  এবং যন্ত্রপাতির ব্যবহারের ফলে কম সময়ে অধিক পরিমাণে পণ্য উৎপাদন সম্ভব হয়। 

শিল্প বিপ্লবের  ভূমিকা

আমরা সকলেই জানি সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষের শারীরিক পরিশ্রম কমিয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি উদ্ভাবনের ধারা বজায় থাকলেও এ ধারাটি বৃহৎ ভাবে রূপ ধারণ  করে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে।  ওই সময় স্বাভাবিকের থেকেও বেশি দ্রুতগতিতে উদ্ভাবিত হতে থাকে নতুন নতুন প্রযুক্তি।  অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল জায়গা হিসেবে কৃষি জমির জায়গা দখল করে  বিভিন্ন ধরনের কল কারখানার মালিক গন।  গ্রাম ছেড়ে কর্মসংস্থানের প্রধান ক্ষেত্র হয়ে ওঠে শহর। 

আরো পড়ুনঃ পায়ের গোড়ালি ব্যথার কারণ ও প্রতিকার

ইংল্যান্ড থেকে শুরু হয় সর্বপ্রথম শিল্প বিপ্লবের প্রভাব। এই প্রভাব পরবর্তীতে ছড়িয়ে পড়ে পুরো ইউরোপ জুড়ে। সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ দুইভাবে অর্থ উপার্জন করে আসছে একটি হল কৃষি পণ্য উৎপাদন করে অর্থ উপার্জন করা, আরেকটি হলো সেই কৃষি পণ্য বিক্রয় করে ব্যবসায় এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা। শিল্প বিপ্লবের ফলে মানুষের যেমন শারীরিক পরিশ্রমের প্রয়োজনীয়তা কমেছে তেমনি অর্থ উপার্জন নতুন একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে শিল্প কারখানা। 

ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম শিল্প বিপ্লব সংঘটিত হয়

ইউরোপের মধ্যে সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব সংঘটিত হয়। কিন্তু অনেক ঐতিহাসিকগণ এই ব্যাপারে এক  না। তাদের মতে জার্মানি, ফ্রান্স, রাশিয়ার, তুলনায় ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব সর্বপ্রথম ঘটেনি এরকম ধারণা করে থাকেন তারা। ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম শিল্প বিপ্লব ঘটে এর পেছনে কিছু কারণ রয়েছে এখন সেই কারণগুলো ব্যাখ্যা করব। 

  • তখনকার সময়ে ইংল্যান্ডের যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় ছিল সেই স্থিতিশীলতা ফ্রান্স ও জার্মানির থেকে ইংল্যান্ড কে এগিয়ে নিয়ে গেছে। 
  • তখনকার ইংল্যান্ডের ভৌগলিক পরিবেশ এবং জলবায়ু শিল্প বিপ্লবের অনুকূল ছিল। 
  • কৃষিকাজে যেই ব্যাপকভাবে উৎপাদন শুরু  হয়েছিল সেই উৎপাদনের মাত্রা শিল্প বিপ্লবের ভিত্তি প্রস্তুত করে।  
  • সেই সময়ে ইংল্যান্ডের উদার সমাজ এবং বহিঃবিশ্বের বাণিজ্যের ব্যাপক প্রবণতা শিল্প বিপ্লবের ক্ষেত্রে অনুকূল ছিল। 
  • ইংল্যান্ডের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সর্বোপরি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার উন্নয়নের সমন্বয়ে শিল্পে ব্যাপক ভাবে পরিবর্তন এনেছে।  
  • একদিকে যেমন এশিয়া, আফ্রিকা, এবং উত্তর আমেরিকায় অবস্থিত ব্রিটিশ উপনিবেশ গুলো যেমন কাঁচামাল এবং মূলধনের জোগান দিয়ে ছিল।  তেমনি ভাবে উৎপাদিত দ্রব্য বিক্রয়ের বাজার হিসেবে ইংল্যান্ডকে সুবিধা প্রদান করেছিল। 

আমরা উপরে যে কারণগুলো ব্যাখ্যা করেছি এই সকল কারণে ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম শিল্প বিপ্লব সংঘটিত হয়।  শিল্প বিপ্লব মানুষের জীবনে অনেক ধরনের সুবিধা এনেছে।  শিল্প বিপ্লবের ফলে শারীরিক পরিশ্রম ছাড়াই বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে পারছে মানসিক দক্ষতার মাধ্যমে।  কেননা মানুষ আগে যেই শারীরিক পরিশ্রম করত।  এখন যন্ত্রের সাহায্যে করা হচ্ছে, যাতে করে মানুষের শারীরিক কিছু হলেও কমেছে। 

এই শিল্প বিপ্লবের কিছু সুফল 

বিলাসবহুল ভাবে জীবনযাপন

আজ এ শিল্প বিপ্লবের ফলে অনেক ধরনের যন্ত্র আবিষ্কার করা হয়েছে।  এই যন্ত্রপাতিগুলো আমাদের জীবনকে করে তুলেছে আরামের ও বিলাসবহুল।  এখন আমরা খুব সহজেই অর্থের বিনিময় সেইসব দ্রব্য ক্রয় করে নিজেদের জীবনকে করে তুলতে পারি সহজ।  এইভাবে শিল্পবিপ্লব আমাদের জীবনকে করে তুলেছে বিলাসবহুল। 

সময় সাশ্রয়

শিল্প বিপ্লবের কারণে কায়িক শ্রমের পরিবর্তে যন্ত্রের দ্বারা অল্প সময়ে অধিক পরিমাণ পণ্য উৎপাদন করা যায়।  যার কারণে আমাদের অনেক সময় সাশ্রয় হয়েছে। 

শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার

শিল্প বিপ্লবের ফলে প্রচুর পরিমানের দ্রব্য সামগ্রী উৎপাদন করা শুরু হয়েছে।  এই উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে।  কেননা এই শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে ইংল্যান্ডের উৎপাদিত দ্রব্য সামগ্রী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বাজারে ছড়িয়ে গিয়েছে।  এখন দেখা যায় শুধু ইংল্যান্ডের দ্রব্যসামগ্রী নয়, বিভিন্ন দেশের দ্রব্যসামগ্রী বিভিন্ন দেশের বাজারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। 

আরো পড়ুনঃ নাজমুল হোসেন শান্ত পরিচয় বাইয়োগ্রাফি

শিল্প বিপ্লবের ফলে নগরায়নের সৃষ্টি

শিল্প বিপ্লবের ফলে সৃষ্টি হয়েছে নতুন নতুন কলকারখানা এবং এই নতুন নতুন কলকারখানার আশেপাশে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন নগর বা শহর।  আর এই সকল কারণেই মানুষ গ্রাম থেকে শহরে চলে এসেছে।  কেননা শহরের এই কলকারখানা থেকে অধিক পরিমাণে অর্থ উপার্জন করা যায়।  যা কিনা গ্রামে সম্ভব না।  তাই আস্তে আস্তে মানুষ শহরের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ে।  ফলে সৃষ্টি হয় নগর কেন্দ্রিক সমাজ ও সংস্কৃতি। 

শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে প্রকৃতিকে জয়

আজ শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা প্রকৃতিকে জয় করতে পেরেছি।  কেননা শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা অনেক আধুনিক যন্ত্র আবিষ্কার করেছি যার ফলে প্রকৃতিতে থাকা খনিজ পদার্থ,কয়লা, তেল এখন আমরা আহরণ করতে পারি। এবং পরবর্তীতে এদের দ্বারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি। 

শ্রম বিভাজন নীতির সৃষ্টি

শিল্প বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার পূর্বে একজন ব্যক্তি নিজে সম্পূর্ণভাবে একটি দ্রব্য সামগ্রী উৎপাদন করত।  যার ফলে তাকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো, এর ফলে তার অনেক বেশি সময় লেগে যেত।  কিন্তু এখন শিল্প বিপ্লবের ফলে একজন মানুষ একা পণ্য উৎপাদন করে না।  কেউ বা সেই দ্রব্য সামগ্রী উৎপাদন করার জন্য কাঁচামাল নিয়ে আসে, কেউবা সেই দ্রব্য সামগ্রী তৈরি করে, এবং অন্য কেউ সেই দ্রব্য সামগ্রী গুলো বাজারজাত করে,এই ভাবেই শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে শ্রম বিভাজন  নীতির সৃষ্টি ঘটে।  

শিল্প বিপ্লবের কিছু কুফল

প্রত্যেকটা জিনিসের যেমন সুফল রয়েছে তেমনি রয়েছে কিছু   কুফলও।  তেমনি করে শিল্প বিপ্লব আমাদের জীবনে সেবন সুফল বয়ে এনেছে তেমনি কুফলও বয়ে এনেছে। 

গ্রাম হয়ে ওঠে জনশূন্য

শিল্প বিপ্লবের ফলে অধিকাংশ মানুষই গ্রাম ছেড়ে শহরে পাড়ি জমায়।  গ্রামের তুলনায় শহরের টাকা উপার্জন করা বেশি সহজ।  তাছাড়া গ্রামের তুলনায় শহুরে টাকা ছিল বেশি।  যার কারণেই মানুষ গ্রামকে  ছেড়ে শহরে বসবাস শুরু করে।  এ কারণে গ্রাম হয়ে ওঠে জনশূন্য। 

কুটির শিল্প ধ্বংসের মুখে

শিল্প বিপ্লবের ফলে সৃষ্টি হয় নতুন নতুন যন্ত্র।  এইসব যন্ত্রের সাহায্যে কলকারখানায় অল্প সময়ে ব্যাপক উৎপাদন করা যায়।  যার ফলে কুটির শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়ে। 

শিল্প বিপ্লবের কারণে শ্রেণী বৈষম্য সৃষ্টি

শিল্প বিপ্লবের ফলে শ্রমিক শ্রেণী এবং মালিক শ্রেণীর মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হয়।  যারা মালিক তারা শ্রমিকদের সাথে ভালো মতন কথা বলে না বা তাদের  ন্যায্য অধিকার দেয় না।  শ্রমিকদের ঢুকিয়ে তারা অধিক পরিমাণ এর অর্থ উপার্জন করে দেয়।  মালিকেরা সর্বদা শ্রমিকদের শোষণ করে তৈরি হয় এবং শ্রমিকরা শোষিত হতে হতে শোষণের শেষ প্রান্তে পৌঁছে যায়।  

আমাদের আজকে আর্টিকেলের বিষয়টি ছিল শিল্প বিপ্লব সম্পর্কে।  শিল্প বিপ্লবের সম্পর্কে এই সকল তথ্য ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা। বিভিন্ন ঐতিহাসিকগণের মতে এ তথ্য গুলোর মধ্যে কিছু পরিবর্তন থাকতে পারে।  আপনাকে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।  

Md.Mahmud

আমার নাম মোঃ মাহমুদুল হাসান বাবু । আমি পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি। এবং ইনফরমেশন টেকনোলজি বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি । আমি বিজ্ঞান এবং টেকনোলজি নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি । আমি আমার কাজের ফাঁকে ফ্রিল্যান্সিং ব্লগে লেখালেখি করি। 01921822498

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads