চানাচুর ছোট-বড় সবার কাছে বেশ জনপ্রিয় একটি খাবার । এই খবরটি এতটাই সুস্বাদু যে, কাউকে জিজ্ঞেস করলে এক কথায় বলে দেবে আমার কাছে চানাচুর খেতে খুব ভালো লাগে। তাইতো বাংলাদেশের অনেক নামিদামি কোম্পানিগুলো এই পণ্যটি নিয়ে ব্যবসা করছেন। আমাদের দেশে কত জনসংখ্যা সবার চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে না তবে আপনি যে এলাকায় থাকেন সেই এলাকার একটা নির্দিষ্ট অংশে যদি আপনি এই চানাচুরের চাহিদা পূরণ করতে পারেন তাহলে আপনার ব্যবসা টা বেশ ভালই চলবে। যেহেতু আমরা ক্ষুদ্র পুঁজির ব্যবসার কথা বলছি তাই আপনি আপনার এলাকার নির্দিষ্ট একটা অংশকে টার্গেট করুন তাহলেই আপনি আপনার ব্যবসাটি আপাতত শুরু করতে পারবেন। আজকে আমরা কথা বলবো কিভাবে চানাচুর তৈরির ব্যবসা করা যায় ।
চানাচুরের ব্যবসা করার পদ্ধতি সমূহ:
১. ডিলারশিপ নিয়ে ব্যবসা করা
বাংলাদেশে অনেক নামিদামি কোম্পানি রয়েছে যারা চানাচুর উৎপাদন করে এবং এই চানাচুর বাজারজাত করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় ডিলার নিয়োগ দেয়। অনেকগুলো কোম্পানি থেকে যে কোন একটি কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে আপনি ডিলারশিপ নিয়ে ব্যবসা করতে পারেন। এছাড়াও লোকাল এলাকায় অনেক ছোট ছোট চানাচুর এর কারখানা রয়েছে তাদের সাথে যোগাযোগ করে বাজারজাত করার ব্যবস্থা করতে পারেন। লোকাল কারখানাগুলোর চানাচুর সাধারণত সাধারণ পলিব্যাগে প্যাক করে বিক্রি করা হয়। বাজারে লোকাল চানাচুরের একটা ভালো চাহিদা রয়েছে । আপনি লোকাল অর্থ বা কোয়ালিটি সম্পন্ন যে কোন টি তৈরি করে ব্যবসা করতে পারেন।২. চানাচুর উৎপাদন করে ব্যবসা করেন
যেহেতু উৎপাদনমুখী ব্যবসা গুলোতে সবচেয়ে বেশি লাভ করা যায়। ডিলারশিপ এর চেয়ে বরং উৎপাদনে প্রতিযোগিতাও কম থাকে। আপনি একটু খেয়াল করলে দেখবেন এলাকায় যতগুলো ডিলার রয়েছে ততগুলো উৎপাদন কারখানা নেই। তাই আমার মতে বুদ্ধিমানের কাজ হবে চানাচুর উৎপাদনের ব্যবসা শুরু করা। এখন আমরা কিভাবে চানাচুর উৎপাদনের ব্যবসাটি করা যায় সে সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করব।চানাচুর উৎপাদন পদ্ধতি
উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমরা কয়েকটা পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারি। যেমনঃ ম্যানুয়াল মেশিনে উৎপাদন, সেমি অটোমেটিক মেশিন উৎপাদন এবং অটোমেটিক মেশিন এ উৎপাদন। এই তিনটি পদ্ধতির যে কোন একটি পদ্ধতি অবলম্বন করে চানাচুর উৎপাদনের ব্যবসাটি শুরু করা যায়। যদি বেশি ইনভেস্ট করতে চান তাহলে অটোমেটিক মেশিন কিনে উৎপাদন শুরু করতে পারেন। যেহেতু আজকে আমরা কম পুজির ব্যবসা সম্পর্কে কথা বলবো তাই সেমি অটোমেটিক অথবা মেনুয়েল মেশিন দিয়ে ব্যবসাটি শুরু করলে ভালো হবে।ক.অটোমেটিক মেশিন
অটোমেটিক মেশিন গুলো একটু এক্সপেনসিভ হয়ে থাকে । এই মেশিন গুলো সাধারনত বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি কোম্পানিতে ব্যবহার করা হয়। কারণ বড় বড় কোম্পানিগুলোর বেশি প্রোডাকশনের প্রয়োজন হয়। বাজারে তাদের পণ্যের প্রচুর চাহিদা আর এই চাহিদা পূরণ করার জন্য তাদেরকে অটোমেটিক মেশিনের সম্মুখীন হতে হয়। অটোমেটিক মেশিন গুলোতে প্রয়োজনীয় একপাশে দিয়ে দেবেন অন্যপাশে এটা প্যাকেট হয়ে বেরিয়ে আসবে। বাংলাদেশ চানাচুর মেশিন কিনতে চাইলে বিভিন্ন ডিস্ট্রিবিউটর রয়েছে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। ইউটিউবে অথবা গুগলে সার্চ করলেই তাদের ঠিকানা পেয়ে যাবেন। যেহেতু আমরা আজকে ক্ষুদ্র ব্যবসায় কথা বলছি সে হত এই মেশিনটি নিয়ে আর কথা না বাড়ানোই ভালো।খ. সেমি অটোমেটিক মেশিন
সেমি অটোমেটিক মেশিন গুলো ক্ষুদ্র অথবা মাঝারি আকারের ব্যবসা শুরু করার জন্য সবচেয়ে ভালো। এই মেশিন গুলো বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। আকারভেদে প্রোডাকশন ক্যাপাবিলিটি বেঁধে এই মেশিনের দামের তারতম্য রয়েছে। ইউটিউব এর অথবা গুগলে সার্চ করলে সেমি অটোমেটিক মেশিনের বিভিন্ন ডিস্ট্রিবিউটর কে পেয়ে যাবে তাদের সাথে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন এই মেশিন গুলোর দাম কেমন। তবে আপনি ৫০ থেকে ৮০হাজার টাকার মধ্যে অনেক ভালো মানের মেশিন পেয়ে যাবেন। এই মেশিন গুলোতে খুব সহজে চানাচুর গুলো ভাজতে পারবেন কিন্তু প্যাকেট করার জন্য আপনাকে আলাদা ব্যবস্থা করতে হবে।প্যাকেট করার জন্য একটি ম্যানুয়াল প্যাকেজিং মেশিন কিনে নিতে পারেন। যেটা দিয়ে প্রাথমিকপর্যায়ে প্যাকেজিংয়ের কাজটি সেরে নিতে পারবেন। যখন ব্যবসা ভালো চলবে তখন আরও উন্নত মেশিন কিনে নিতে হবে।
গ. ম্যানুয়াল মেশিন
এই মেশিন গুলো দিয়ে ও চানাচুর তৈরি করা যায় তবে ব্যবসা করার জন্য এটাই যথেষ্ট নয়। তবে যদি আপনার কাছে মোটেই মুলধন না থাকে তবে এই মেশিনটি দিয়েও আপাতত ব্যবসাটি শুরু করতে পারবেন। ১০০০ টাকার ভেতরে আপনি একটি মেনুয়াল মেশিন কিনতে পারবেন। আর এই মেশিনটি কেনার জন্য আপনি daraz.com এ চানাচুর মেকিং মেশিন লিখে সার্চ দিবেন তাহলে পেয়ে যাবেন। এটি দিয়ে কাজ করা একটু কষ্টসাধ্য তবে চেষ্টা এবং সাধনা থাকলে এটি দিয়েও প্রাথমিক পর্যায়ে ভালই লাভ করা যাবে।চানাচুর তৈরির পদ্ধতি
আপনি ইউটিউব থেকে দেখে দেখে চানাচুর তৈরি শিখে নিতে পারেন । দুই একটা ভিডিও দেখলে খুব সহজে বুঝতে পারবেন যে কিভাবে চানাচুর বানাতে হয়। চেষ্টা করবেন সবচেয়ে সহজ এবং কম সময়ে করা যায় এমন একটি পদ্ধতি বেছে নেয়ার জন্য।সংক্ষিপ্ত আকারে বলছি কিভাবে চানাচুর তৈরি করতে হয়। যখন মেশিনে চানাচুর ভাজা হয়ে যাবে অর্থাৎ নুডুলস গুলো ভাজা হয়ে যাবে তখন আমাদেরকে এটার সাথে প্রয়োজনীয় উপাদান গুলো মেশাতে হবে। চানাচুর খাওয়ার সময় এটাতে কি কি উপকরণ পাই সেটা একবার দেখে নিতে পারেন। তাহলে খুব সহজেই বোঝা যাবে যে চানাচুর এ কি কি উপকরণ মেশাতে হবে। সাধারণত বাদাম, চিড়া, বিট লবণ এবং কিছু মশলা একত্র করে চানাচুর মাখানো হয় । যত ভালো ভালো মসলা দিবেন ততই আপনার চানাচুর গুলো সুস্বাদু হবে।
কিভাবে বিক্রি করবেন
বিক্রি করার জন্য অনেক পদ্ধতি রয়েছে। যেহেতু আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করব সেহেতু প্রাথমিক পর্যায়ে আমাদের বাজারো হবে অনেক ছোট। ছোট্ট একটা এলাকাকে টার্গেট করে মার্কেটিং শুরু করুন। আপনার সেই ছোট্ট এলাকাতে যত বড় বড় পাইকারি দোকান রয়েছে তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করুন। যদি বড় কোন পাইকারের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়তে পারেন তাহলে আর আপনাকে এফবিতে ফিরে তাকাতে হবে না। আপনার যতগুলো বড় বড় পাইকারি আছে সেখান থেকে যদি মাত্র পাঁচজন পাইকারি ব্যবসায়ীর সাথে সম্পর্ক করতে পারেন তাহলে যথেষ্ট।এছাড়াও আপনার এলাকাতে প্রচুর মুদি দোকান রয়েছে। সেই মুদি দোকান ওয়ালাদের সাথে যোগাযোগ করুন। এলাকায় যদি ৫০০দোকান থাকে সেখান থেকে ১০০দোকানে নিয়মিত মাল দেওয়ার চেষ্টা করুন। তাহলেই আপনার ব্যবসা মোটামুটি ভালো চলবে। এছাড়াও আপনি চাইলে একজন লোকের সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে পারেন, যে সব সময় আপনার চানাচুর বিক্রির জন্য কাজ করবেন। তাকে আপনি মাসিক বেতনের ভিত্তিতে অথবা বিক্রির উপর কমিশনের ভিত্তিতে চানাচুর দিতে পারেন। যে আপনার পণ্যগুলো বিক্রি করবে তাকেও ভালো লাভ দিতে হবে তা না হলে দুইদিন পরপর লোক চলে যাবে । তখন আপনার সেই প্রোডাক্ট গুলো বিক্রি নিয়ে একটু ঝামেলা হতে পারে।
ভালো পরামর্শ , জাযাকাল্লাহু খায়রান
ReplyDelete