আপনার বাড়ির ছাদে করার মত ৭টি লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া


বড় বড় শিল্প সাহিত্যিকের কলমের খোঁচায় বারবার কেন জানি ছাদের কথা চলে আসে।  আবেগ ভালোবাসা রোমান্টিকতা সবকিছু যেন ছাদের মধ্যে লুকিয়ে আছে । বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানেও এই ছাদের ব্যবহারের প্রবণতা লক্ষ করা যায় আমাদের প্রানের ঢাকা শহরে। সামাজিক অনুষ্ঠান, বিকেল বেলা চা খাওয়ার রোমান্টিকতা, প্রিয়জনের হাত ধরে ছাদে বসে বসে তারা গোনা ছাড়াও এই ছাদকে অর্থনৈতিকভাবে কাজে লাগানো যায়।

 আপনার বাড়ির ছাদ মনে হয় বেকার পড়ে আছে অথবা ভাবছেন যে আপনার ছাদটিকে একটি বাগানের রূপান্তর করবেন। আজকে আমরা কয়েকটি আইডিয়া আপনাদের সাথে শেয়ার করব যেখানে বাগান ছাড়াও আরও কিছু নতুন আইডিয়া থাকবে।  আপনার বাড়ির কিভাবে ব্যবসায়ী কাজে ব্যবহার করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করব।

এলাকা ভেদে ছাদের আকার-আকৃতি ভেদে ব্যবসায়ীকে ব্যবসার ধরনের পরিবর্তন হতে পারে।  কারণ ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় ব্যবসার ধরন ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।  আপনার এলাকায়  কোন বিষয়টিকে কাজে লাগানো যায় সেটি আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে। গ্রামের বাড়ির ছাদ যে কাজে লাগবে শহরের বাড়ির ছাদ সেই কাজে ব্যবহার করা নাও যেতে পারে।

১. জৈব সার অথবা শাকসবজি ও ফলের বাগান


ক্ষতিকর রাসায়নিক সার এবং কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচার জন্য মানুষ এখন দিনকে দিন জৈব সার ব্যবহারের প্রতি ঝুঁকছেন।  শহরে বসে উৎপাদন করা এবং এর জন্য জায়গা নির্ধারণ করা একটি কঠিন কাজ। আপনার বাড়ি হতে পারে একটি আদর্শ জায়গা জৈব সার উৎপাদনের জন্য।

 এছাড়াও আপনি চাইলে আপনার বাড়ির ছাদ থেকে বিভিন্ন শাক সবজি উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করতে পারেন।  ছাদে উৎপাদন করা যায় এমন শাক সবজির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে টমেটো, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, কাঁচা মরিচ, কলমি শাক, লাউ, কুমড়া, পুঁইশাক, করোল্লা, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি । যদি আপনি এই সবজিগুলো বাজারে বিক্রি করতে চান তাহলে ছাদের আয়তন এর উপর ভিত্তি করে যেকোনো একটি বা দুটির বেশি ফসল করা উচিত হবে না।

ছাদে কিভাবে শাক সবজি চাষ করতে হয় সেটা আমরা অনেক সময় বিভিন্ন টিভি প্রোগ্রামের মধ্যে দেখেছি।  তাই এখানে সে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করার  প্রয়োজন বোধ করছি না। রাসায়নিক সার, কীটনাশক ব্যবহার না করে বরং জৈব সার ব্যবহার করে কিভাবে ফসল উৎপাদন করতে হয় সেটা সম্পর্কে জ্ঞান রাখলে আপনি আরো বেশি লাভবান হতে পারবেন।

শাক সবজি ছাড়া পাশাপাশি আমরা চাইলে বিভিন্ন ফল এবং ফুলের চাষ করেও আমাদের বাড়ির ছাদকে অর্থনৈতিক ভাবে কাজে লাগাতে পারি। আম, লিচু, জলপাই, ডালিম, বাতাবিলেবু, কমলা ইত্যাদি নানারকম ফল চাষ করে বাগানটিকে সাজিয়ে রাখতে পারি। এছাড়াও চাষ করা যেতে পারে গোলাপ জবা গাধা ডালিম চন্দ্রমল্লিকা ইত্যাদি নানান রকমের ফুল।

২. শুরু করুন মাশরুম চাষ 


মাশরুম চাষের একটি উপযোগী স্থান হতে পারে আমাদের বাড়ির ছাদ।  আপনি যদি শাকসবজি চাষ করতে না চান তবে  মাশরুম চাষের ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। কেননা এই ব্যবসাটি লাভজনক বটে। মাশরুম চাষের উপর আমাদের দেশে বেশ কিছু ট্রেনিং এর ব্যবস্থা রয়েছে সেখান থেকে ট্রেনিং নিয়ে আপনি এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। মাশরুম চাষের উপর আমার একটি ভিডিও রয়েছে আপনি চাইলে সেই ভিডিওটি দেখে ধারণা নিতে পারেন কিভাবে মাশরুম চাষের ব্যবসা শুরু করবেন।

মাশরুম চাষের জন্য সাধারণত স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ার প্রয়োজন হয় অর্থাৎ সূর্যের আলো যেখানে নেই সেরকম জায়গায় মাশরুম ভালো হয়।  এজন্য আপনার বাড়ির ছাদটিকে এমনভাবে সাজাতে হবে যেন সূর্যের আলো কোনোভাবে প্রবেশ করতে না পারে। প্রয়োজনে বাঁশের চালা দিয়ে ঘর তৈরি করে সূর্যের আলো প্রতিরোধ করা যেতে পারে। এই ব্যবসাটি শুরু করলে আপনি সারা বছরই মুনাফা অর্জন করতে পারবেন তবে  শীতকালে এবং বর্ষাকালে মাশরুম ভালো জন্মায়।

৩.রুফটপ রেস্তোরাঁ বা ক্যাফে

 

এই ব্যবসাটি মূলত শহরকেন্দ্রিক এলাকাগুলোর জন্য উপযুক্ত। শহর এমনকি মফস্বল এলাকা গুলোতে ও দ্রুত চটজলদি খাবারের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপনার বাড়ির ছাদে যদি যথেষ্ট জায়গা থাকে তাহলে এটাকে রেস্তোরাঁ বা ক্যাফে তে রূপান্তর করতে পারেন। এই ব্যবসাটি শুরু করবে কিনা সেটা নির্ভর করছে আপনার এলাকার পরিবেশের ওপর। আপনার এলাকায় এ ধরনের ব্যবসার চাহিদা রয়েছে কিনা সেটা জানতে হবে।

যদি ব্যবসাটি শুরু করার মনস্থির করেন তাহলে প্রাথমিক অবস্থায় অল্প মেনু দিয়ে শুরু করুন । চিন্তা করুন যে কারা আপনার কৃত হবে।  সেই অনুপাতে মেনু নির্ধারণ করতে হবে।  যদি কম বয়সী ছেলেমেয়েরা আপনার রেস্টুরেন্টের ক্রেতা হয় তাহলে মেনু হবে সেই ধরনের যেগুলো তাদের কাছে পছন্দনীয়। এছাড়াও অন্দরসজ্জা দিকে নজর দিতে হবে এমনভাবে সাজাতে হবে যেন ক্রেতারা সব সময় আনন্দ এবং আরাম অনুভব করে। সব রকমের আবহাওয়ার সাথে যেন খাপ খেয়ে যায় সেই বিবেচনায় করে ইন্ডিয়ার বা অন্দরসজ্জা করতে হবে।

৪. অনুষ্ঠান বা  ইভেন্টের জন্য ভাড়া দেওয়া

আপনার বাড়ির ছাদে যদি একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য যথেষ্ট জায়গা থাকে তবে এটিকে ব্যবসায়িক কাজে লাগানো যায় এভাবে। অর্থাৎ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দিয়েও ব্যবসা করা যেতে পারে। অনেক সময় আমাদের বড় বড় অডিটোরিয়াম ভাড়া করে অনুষ্ঠান পরিচালনা করা সম্ভব হয় না সে ক্ষেত্রে আমরা যদি আমাদের বাড়ির ছাদকে একটি অডিটরিয়ামে হিসেবে ব্যবহার করার উপযোগী করে ভাড়া দিতে পারি তাহলে কিন্তু দারুণ একটা ব্যবসা করা সম্ভব।

ছোট ছোট কনফারেন্স, মিটিং,  অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য আপনার বাড়ির ছাদ হতে পারে একটি আদর্শ স্থান। ছাদের উপর আচ্ছাদনের ব্যবস্থা করে রিহার্সেল স্পেস হিসেবে ভাড়া দেওয়া যেতে পারে, সে দিক থেকে ঘন্টা হিসেবে ভাড়া দিলে আপনি বেশি প্রফিট করতে পারবেন।

এই ধরনের ব্যবসা করতে চাইলে কিছু সতর্কতাঃ মেনে চলতে হবে তা হলো আপনার এই ব্যবসার কারণে যেন প্রতিবেশীর সমস্যা না হয়।  বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাধারণত গানবাজনার প্রচলন রয়েছে । শব্দ সীমা হৈ-হুল্লোড় যেন প্রতিবেশীদের কানে না পৌঁছায় অথবা রাতে নির্দিষ্ট সময়ের পর যাতে অনুষ্ঠান না চলে সেদিকে খেয়াল রাখবেন ।

৫. মধু চাষের ব্যবসা


 আপনার বাড়িটি যদি মফস্বল এলাকায় অথবা গ্রামীণ এলাকায় হয় তবে এই ব্যবসাটি আপনার জন্য উপযুক্ত। কেননা শহরের চেয়ে গ্রামে মৌমাছির আনাগোনা বেশি  এবং মৌমাছির খাবারের যথেষ্ট  ব্যবস্থা  রয়েছে। গ্রামীণ এলাকার বাড়ির ছাদ থেকে মৌমাছি চাষের উপযুক্ত হিসেবে নির্বাচন করে এই ব্যবসাটি পরিচালনা করা যেতে পারে।

 আমাদের দেশে মৌমাছি চাষের উপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।  এছাড়াও চাষের জন্য পর্যাপ্ত সহযোগিতা এবং অর্থায়নের ব্যবস্থা করা হয়। দিপ্ত টিভির কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠানে এক প্রতিবেদনে দেখানো হয় যে কিভাবে মধু চাষ করে সফল ব্যবসায়ী হওয়া সম্ভব। সেই অনুষ্ঠানে মধু চাষের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা মূলক আলোচনা করা হয়েছে।  কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।  আপনার এলাকার কৃষি অফিসারের সাথে যোগাযোগ করে এত বিস্তারিত তথ্য জেনে তারপর এই ব্যবসাটি শুরু করবেন।

৬. সোলার প্যানেল বা সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন


নিজের বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা না থাকলে ছাদে সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজটি সেরে নেওয়া যেতে পারে। এছাড়াও যদি আপনার প্রতিবেশীদের বিদ্যুতের ব্যবস্থা না থাকে তাহলে তাদেরকে সৌর প্যানেল থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে মুনাফা অর্জনের ব্যবস্থা করতে পারেন।  যদিও আমাদের দেশে প্রায় প্রত্যেকটি এলাকাতেই বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে, যদি আপনার এলাকায় না থাকে তবে এই ব্যবসা করা সম্ভব।

আমাদের দেশে অনেক বেসরকারি কোম্পানি রয়েছে যারা সৌর প্যানেল বসিয়ে থাকে।  আপনার একটু খোঁজখবর নিন তাহলেই তাদের সন্ধান পেয়ে যাবেন।  ব্যবসায়িক কাজে নাহোক বরং নিজের বাড়ির বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর জন্য আইডিয়াটি চমৎকার একটি আইডিয়া।

৭. মোবাইল টাওয়ার স্থাপন


 মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করেও আপনি আপনার ছাদ থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।  শহর এলাকাগুলোতে সাধারনত বাড়ির ছাদে মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করা হয় এবং এর জন্য বাড়ির মালিককে বাৎসরিক হারে একটা মোটা অংকের অর্থ প্রদান করা । এছাড়াও মোবাইল টাওয়ারের দেখাশোনা করার জন্য একজন লোক ভাড়া করা হয় যাকে মাসিক হারে একটা উৎকোচ বা টাকা দেওয়া হয়।

যদি কোন সংস্থা আপনার বাড়িতে মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের ইচ্ছা পোষণ করে তবেই এখান থেকে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।  এক্ষেত্রে আপনাকে যা করতে হবে যে কোন কোম্পানি আপনাকে বেশি টাকা দিতে চাচ্ছে।  যদি কোন একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়া সম্ভব হয় তাহলে প্রায় বিনা পরিশ্রমে আপনি অর্থ উপার্জনের পথ খুলতে পারবেন।

উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো ছাড়াও আরও অনেক বিষয় রয়েছে  যেগুলোর মাধ্যমে আপনি ছাদেই ব্যবসা করতে পারবেন।  আপনার এলাকার পরিবেশ, কোন পণ্যের চাহিদা বেশি, কোন ব্যবসা করলে আপনি লাভবান হতে পারবেন আপনাকেই নির্বাচন করতে হবে। আপনার মনে যদি কোন ব্যবসায়িক আইডিয়া থাকে যেটা ছাদের মধ্যে করা সম্ভব তাহলে আমাদেরকে জানান।  নিচে কমেন্ট বক্সে যোগাযোগ করতে পারেন অথবা আমাকে মেইল করতে পারেন।


শাহীন

আমি শাহীন । পেশায় একজন ব্যবসায়ী । পাশাপাশি অনলাইনে কাজ করতে পছন্দ করি। আশা করছি আমার শেয়ারকৃত তথ্য থেকে আপনারা উপকৃত হচ্ছেন আর তা হলেই আমার পরিশ্রম স্বার্থক।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads