বুদ্ধিমানেরা বলেন, যদি ব্যবসা করতেই হয় তবে প্রাথমিক অবস্থায় low investment business দিয়ে শুরু করাই ভালো। যদি আমরা প্রাথমিক অবস্থায় কম পুজির ব্যবসা শুরু করি সেখানে লস হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম কেননা এখানে বিনিয়োগের পরিমাণ হয় কম। যেডেতু কম পুজির ব্যবসা শুরু করা একটি বুদ্ধিমানের কাজ সেহেতু আজকে আমরা মাত্র ১০,০০০ টাকা বা তার কম পুঁজিতে কি কি ব্যবসা করা যায় সেই আইডিয়া গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
আগে কিছু কথা বলে নেই। low investment business করতে হলে সবার আগে আপনার মানসিকতাকে পরিবর্তন করতে হবে অর্থাৎ এক্ষেত্রে আপনার ইচ্ছা, সংকল্পবোধ এবং পরিশ্রম করার মানসিকতাই সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। যদি কম পুজির ব্যবসা করতেই হয় তাহলে পুঁজির চেয়ে বুদ্ধি এবং পরিশ্রম করার মানসিকতাকে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। যদি এমনটি করতে পারেন তবে আপনি এই আর্টিকেলটি পুরোটাই পড়তে পারেন। অন্যথায় এই আর্টিকেল পড়ে আপনার কোন কাজে আসবে না।
তো চলুন জেনে নেয়া যাক কিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং লাভজনক কম পুজির ব্যবসার আইডিয়া।
১. অনলাইন শিক্ষকতা
আমরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো বিষয়ে নিজেরা দক্ষ হয়ে থাকি। আমি বা আপনি যে বিষয়ে দক্ষ সেই বিষয়টাকে যদি অন্যকে শেখানোর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা যায় তাহলে কেন আমরা বসে থাকবো। ধরুন আপনি ভালো গান গাইতে পারেন অথবা ভালো নাচতে পারেন এমনও হতে পারে আপনি ভাল রান্না করতে পারেন, আপনি যেটাই পারেন না কেন প্রত্যেকটি বিষয়কে অনলাইনের মাধ্যমে শিখিয়ে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব । ইউটিউব চ্যানেল খুলে অথবা একটি ওয়েবসাইট লঞ্চ করে সেটার মাধ্যমে আমরা আমাদের দক্ষতাকে অন্যকে শিখিয়ে অর্থোপার্জন করতে পারব।বাংলাদেশের অলরেডি এই ব্যবসা করেই অনেকেই সফলতা পেয়েছেন উদাহরণ দিতে গেলে অনেকের নাম চলে আসবে। যেমনঃ টেন মিনিট স্কুল, কুকিং স্টুডিও বাই উম্মি, মিনি ক্রাফট ইত্যাদি বেশ কিছু সুপরিচিত ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে বাংলাদেশ। যারা মূলত দক্ষতা বা সৃজনশীলতাকে অন্যকে শেখানোর মাধ্যমে প্রচুর অর্থ উপার্জন করছে। এখনো আমাদের সামনে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে অনলাইনে শিক্ষকতা পেশায় নিজেকে দাঁড় করানোর জন্য। ইন্টারন্যাশনালিতো প্রচুর অনলাইন একাডেমী রয়েছে যেটার উদাহরণ এখানে না করলেও চলবে যেহেতু আমাদের দেশীয় সফল উদ্যোক্তা রয়েছে।
২. খাবারের হোম ডেলিভারি সার্ভিস
আমাদের বাংলাদেশের ঢাকা শহরের মানুষ প্রচুর কর্মব্যস্ত থাকেন। এদের মধ্যে প্রচুর লোক রয়েছেন যারা ব্যাচেলর হিসেবে জীবনযাপন করছেন। যাদের সব সময় বাড়িতে রান্না করা খাবার মনের মত হয় না। আবার অনেক সময় কর্ম ব্যস্ততার কারণে রান্না করার সুযোগ হয় না অনেকেরই। তাইতো মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় কিছু সুস্বাদু খাবার খেতে। নিজের বাড়িতে রান্না করে পৌঁছে দেন বাড়ি বাড়ি, সময়মত খাবার দিতে পারলে ব্যবসার অভাব হবে না ইনশাআল্লাহ।এই ব্যবসাটি সবচেয়ে ভালো চলবে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সংলগ্ন এলাকাগুলোতে। কারণ দূর থেকে পড়তে আসা এ সকল ছাত্র ছাত্রীরা প্রতিদিন রান্না করে খেতে ভালোবাসে না। আর আপনি এই সুযোগটাকে লুফে নিতে পারেন। যদি আপনি আপনার বাড়ি থেকে সুস্বাদু খাবার রান্না করে তাদেরকে পরিবেশন করতে পারেন তাহলে এই ব্যবসাটি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।
আমাদের দেশে আইডিয়াটা কে কাজে লাগিয়ে বেশ মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে foodpanda.com নামের ওয়েবসাইটটি। তারা কিন্তু নিজেরা রান্না করে না রেস্টুরেন্টের খাবার বাড়ি পৌঁছে দিয়ে অথবা অফিসে অফিসে পৌঁছে দিয়ে ভালোই অর্থোপার্জন করছে। মাত্র ১০ হাজার টাকার মধ্যে ব্যবসা শুরু করতে চাইলে আমার মনে হয় এই ব্যবসাটি আপনার জন্য উপযোগী একটি ব্যবসা হতে পারে।
৩. শুরু করুন অনলাইন বেকারির ব্যবসা
আপনি যদি বিভিন্ন রকমের ডেজার্ট, কেক, কুকিজ বানাতে ভালবাসেন তবে আপনার জন্য একটা দারুণ ব্যবসা অপেক্ষা করছে।বর্তমানে জন্মদিন ছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কেক কেটে অনুষ্ঠান উদযাপন করার একটা প্রবণতা শুরু হয়েছে । সে দিক থেকে বিবেচনা করলে এখানে একটা দারুণ ব্যবসা করা সম্ভব। দারুন দারুন সব কেক বানিয়ে কেক গুলোকে সুন্দর করে সাজিয়ে বিক্রি করার ব্যবস্থা করুন ।বেকারি থেকে কেক কেনার চেয়ে বাড়িতে তৈরি কেকের প্রতি মানুষের দুর্বলতা রয়েছে। তাই কি সম্মত উপায়ে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কেক তৈরি করে মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেন তাহলে আপনার ব্যবসা অনেক দূর এগিয়ে যাবে। এগুলো বিক্রি করার জন্য অনলাইনে ফেসবুকে একটি পেজ খুলে নিতে পারেন। যেখানে আপনি সারা বাংলাদেশ থেকে পণ্যের অর্ডার পাবেন।
৪.ফলের রসের কিওস্ক ব্যবসা
এই ব্যবসাটি করতে হলে প্রথমে আপনাকে একটি সুন্দর জায়গা নির্বাচন করতে হবে। যদি সেটি স্কুল-কলেজ অথবা অফিস পাড়ায় হয় তাহলে বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি বেড়ে যাবে। জায়গা ভাড়া নিয়ে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহ করে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন । মাত্র ১০হাজার টাকার মধ্যেই আপনি প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পেয়ে যাবেন যার মাধ্যমে ব্যবসাটি খুব সহজে করা সম্ভব ।৫. ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা
যদি ভেবে থাকেন যে low investment business করবেন তাহলে ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা টি কোন অংশে খারাপ নয়। আপনি চাইলে মাত্র ১০ হাজার টাকার মধ্যে শুরু করতে পারবেন। ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা । এ সম্পর্কে আমার একটি ভিডিও রয়েছে আপনি চাইলে সে ভিডিওটি দেখে আসতে পারেন। এই ব্যবসাটি করার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে একটি কম্পিউটার, ইন্টারনেট এবং এজেন্ট হওয়ার জন্য অনুমতি। অনেক সময় শুধুমাত্র একটি মোবাইল দিয়ে সম্ভব। যদি আপনি বাড়িতে বসে অল্প পুঁজির মধ্যে একজন ব্যবসা করতে চান তাহলে সবচেয়ে সহজ উপায় হল এজেন্সির সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়া।৬. শুরু করুন ট্যুর গাইড ব্যবসা
বাংলাদেশের প্রচুর দর্শনার্থী বেড়াতে আসে। এমনকি বাংলাদেশীরাও বিভিন্ন এলাকাতে ঘুরতে যেতে ভালোবাসে। বিদেশে অথবা দেশে দর্শনার্থীদেরকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার জন্য সহায়তা করে একটা ব্যবসা করা যায় । ফ্লাইট ট্রেনের টিকিট বুকিং হোটেল বুকিং থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ ট্যুর প্ল্যান করা এবং পরিচালনা করার দায়িত্ব আপনার কাছে থাকবে। কম খরচে অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা এটি । অফিস স্কুল-কলেজের টুর করাতে পারলে সবচেয়ে বেশি লাভ করা সম্ভব। বিদেশি পর্যটকদের কে ট্যুর গাইড এর মাধ্যমে প্রচুর অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।এই ব্যবসাটি করতে হলে আপনাকে একটি ওয়েবসাইটের মালিক হতে হবে। এরপর আপনাকে বিভিন্ন এলাকার হোটেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে জেনে নিতে হবে তাদের ট্রাভেল এজেন্ট কমিশন এর রেট। আকর্ষণীয় এবং নতুন নতুন জায়গা খুঁজে বের করুন তাহলে আপনার ব্যবসা আরো ভালো চলবে। বর্তমানে এটি খুবই লাভজনক একটি ব্যবসা।
৮. কাস্টমাইজ গয়না তৈরির ব্যবসা
আমাদের দেশে গয়না তৈরীর উপকরণ গুলো খুব সহজেই পাওয়া যায়। নিত্যনতুন ডিজাইনের গয়না তৈরি করে দারুণ একটি ব্যবসা দাঁড় করানো সম্ভব। গয়না তৈরি ধারণা পেতে আপনি ইউটিউবে ভিডিও দেখে দেখে নতুন নতুন গয়না তৈরি আইডিয়া জেনারেট করতে পারেন। অল্প টাকার ব্যবসা করতে চাইলে এটি একটি ভালো ব্যবসা। মাত্র ১০ হাজার টাকার কম পুঁজিতে এই ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। চাইলে সেগুলো অনলাইনে অথবা বিভিন্ন পাইকারি দোকানের সাথে যোগাযোগ করে বিক্রি করার ব্যবস্থা করতে পারেন। তবে নিত্যনতুন ডিজাইনের গয়না তৈরি করে অনলাইনে বিক্রি করেও একটা ব্যবসা দাঁড় করা সম্ভব।৯. অনলাইনে হস্তশিল্প সামগ্রী বিক্রি করে ব্যবসা করুন
ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মাঝে কুটির শিল্প অথবা হস্তশিল্প আমাদের দেশে মোটামুটি সুপরিচিত একটি নাম। অল্প টাকায় ব্যবসা করতে চাইলে হস্তশিল্পের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের ঘর সাজানোর সামগ্রী তৈরি করে অনলাইনে অথবা অফলাইনে বিক্রি করে মোটা অংকের অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। ১০,০০০ টাকায় ব্যবসা করতে চাইলে এটিও কোন অংশে কম নয়। কোন প্রত্যন্ত গ্রামে বেকার বসে থাকা নারীদের কে কাজে লাগিয়ে আপনি তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা পাশাপাশি নিজের একটা ভালো ব্যবসা দাঁড় করাতে পারবেন ।১০. দর্জি দোকানের ব্যবসা
মাত্র ১০,০০০ টাকায় একটি ব্যবসা শুরু করতে চাইলে যে দোকানের ব্যবসা টি উল্লেখযোগ্য ব্যবসা। আপনি যদি ভালো রুচিসম্মত পোশাক তৈরি করতে পারেন তবে ঘরে বসেই এই ব্যবসাটি করতে পারবেন। যদি দর্জি কাজের অভিজ্ঞতা না থাকে তাহলে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে যেখান থেকে ট্রেনিং নিয়ে আপনি এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। যেহেতু কম পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করবেন সেহেতু আপনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে অর্ডার নিয়ে এসে তারপর সেটি তাদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। এভাবে করলে আপনার দোকান নেওয়ার বাড়তি খরচ থেকে বেঁচে যাবেন।নতুন নতুন ডিজাইন তৈরি করতে পারলে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সম্ভব হবে এক্ষেত্রে আপনি অনলাইন থেকে নতুন নতুন ডিজাইন শিখে সেগুলো ক্রেতাদের মাঝে হাজির করতে পারেন। যত নিত্য নতুন ডিজাইন কে তাদের সামনে হাজির করবেন ততই আপনার ব্যবসা অগ্রসর হতে থাকবে।
১১. বিউটিশিয়ান বা বিউটি পার্লারের ব্যবসা
যেহেতু এটিও একটি কম্পোজের ব্যবসার মধ্যে ফেলতে চাচ্ছি সে হতো আমরা এখানেও দোকান ছাড়াই ব্যবসা করার বুদ্ধি বের করব। যদি আপনি ক্রেতা বা কাস্টমারের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে সেবা প্রদান করতে পারেন তাহলে আপনার পুঁজির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসবে অথবা খরচের পরিমাণ কমে আসবে। যদি আপনি বাড়িতে বাড়িতে যে ফেসিয়াল পেডিকিওর-মেনিকিওর অয়েল ম্যাসেজ অথবা ওয়াক্সিংএর মত সেবা দিতে পারেন তাহলে অল্পদিনেই মুখে মুখে আপনার নাম ছড়িয়ে পড়বে। এভাবে ব্যবসাটি করতে চাইলে বিউটিশিয়ানের প্রয়োজনীয় উপকরণ গুলো সব সময় আপনার সঙ্গে রাখতে হবে। যদি একটি ওয়েবসাইট বানিয়ে নিতে পারেন তাহলে আপনার গ্রাহকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা খুব সহজ হবে।