আজকে একটা দারুন অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো আপনাদের সাথে। আবেগ এবং নিয়ম আসলেই সত্যিকার অর্থে দুটি আলাদা জিনিস যেটা আমি কিছুদিন যাবৎ পড়াতে পড়াতে বুঝতে পারছি। গত মাসে গিয়েছিলাম পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট করার জন্য। ইউটিউবের কল্যাণে খুব সহজে জানতে পেরেছি যে পাসপোর্ট করার জন্য কি কি পদক্ষেপ রয়েছে। পাসপোর্ট করার ঠিক আগ মুহূর্তে বেশ কিছুদিন যাবৎ ভাবছিলাম পাসপোর্ট টা করবো কি করবো না। মনে পড়ে আশা জাগল যে পাসপোর্ট টা করেই ফেলি। সবাই বলে সরকারি কাজে অনেক ঝামেলা শোনা কথায় কান না দিয়ে আমি নিজেই চলে গেলাম পাসপোর্ট করার জন্য কিন্তু এখানে যে এত বেশি পেরেশান সেটা আমার জানা ছিল না। আগে নাকি এর চেয়ে বেশি পেরেশানি হত যদি তেমনটাই হয় তাহলে হয়তোবা রেহাই পেয়েছি।
পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিরম্বনায় মধ্যে আমি পড়েছে যদিও এখানে একটি আবেগজনিত বিড়ম্বনা তবুও সেটা আমি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবই। ঠিকানা লিখতে যাবার ক্ষেত্রে একটা জিনিস ভাবলাম যে আমার তো ঘরবাড়ি নেই, তাহলে আমি স্থায়ী ঠিকানা কি দিব ? তাই যে এলাকাতে এখন বসবাস করছি সেই এলাকার নাম ঠিকানাই পাসপোর্ট এর আবেদন পত্র লিখে দিলাম। প্রথম সমস্যা এটা যে আমি স্থায়ী ঠিকানা লিখিনি আসলে আমার তো স্থায়ী ঠিকানা নেই। আরেকটা কথা উল্লেখ করি আমার জন্ম নিবন্ধন এবং ন্যাশনাল আইডি কার্ড এই ঠিকানাতেই করা হয়। সে অনুযায়ী আমি আমার ঠিকানা দিয়ে দিলাম। আবেদনপত্র জমা দিলাম দীর্ঘ 4-5 ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে। এবং চলে এলাম বাড়িতে অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকলাম কবে নাগাদ পুলিশ ভেরিফিকেশন হবে।
হঠাৎ একদিন পুলিশ সাহেব আমাকে ফোন দিলেন বললেন আপনি তো ঠিকানা ভুল করেছেন। তো সরল মনে বলে দিলাম আমার ঘরবাড়ি নেই তাই ঠিকানাটা এভাবেই লিখেছি। আবেগের বশবর্তী হয়ে ধরনের কথা বলা আসলে আমার ঠিক হয়নি সেটা এখন বুঝতে পারছি। পুলিশ মশাই বললেন আপনাকে পাসপোর্ট দেওয়া যাবে না যদি আপনি ঠিকানা ঠিক না করে দেন। তো পুলিশ মশাই কে অনেক ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু কোন কাজ হলোনা। প্রথম দফায় আমার পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন ক্যান্সেল হওয়ার কারণে আমাকে আবারো পাসপোর্ট এর আবেদন পত্র জমা দিতে বলা হলো।
তাই আবারো নতুন করে পাসপোর্ট আবেদন পত্র ফিলাপ করে ডাউনলোড করে নিলাম। এক্ষেত্রে ঠিকানা দিলাম যেখানে আমার বংশধররা বসবাস করে সেটা সাথে এই এলাকার ঠিকানা টাও দিয়ে দিলাম অর্থাৎ যেখানে আমি বসবাস করছি। অপেক্ষার প্রহর গুনছি কবে পুলিশ মশায় আমাকে ফোন দেবে অথবা ভেরিফিকেশন করবে।
আমাদের দেশে প্রচুর মানুষ রয়েছে এমন যে তাদের স্থায়ী ঠিকানা নেই তাদের মধ্যে আমিও একজন কিন্তু যদিও আমি বলছি আমার স্থায়ী ঠিকানা নেই কিন্তু আইন তো আর সেটা মানবে না তাই আমার বংশধররা যেখানে থাকে সেটাই ধরে নিলাম আমার ঠিকানা। ঠিকানাহীন এই মানুষটি বহুদিন যাবৎ ঠিকানাহীন ই রয়ে গেলাম। আপনারা দোয়া করবেন খুব শীঘ্রই হয়তোবা আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে একটা ঠিকানা দান করবেন।
মনে একটা আনন্দ আনমনে খেলে যায় সেটা হলো যে আমার স্থায়ী ঠিকানা নেই তাতে কি তবুও তো দালানকোঠায় থাকি। যদিও মাস শেষে একটা মোটা অংকের টাকা গুনতে হয় যা আমার কাছে মোটা অঙ্কের অনেকের কাছে যত্সামান্য টাকা মাত্র। এখনো যদি কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে তোমার বাড়ি কোথায় ওকে আমি বলে দেই আমার তো কোনো বাড়ি নেই ।
পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে আমার দ্বিতীয় বিড়ম্বনারও অভিজ্ঞতাটি হচ্ছে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা। দ্বিতীয়বার যখন আবেদনপত্রটি জমা দিতে গেলাম তখন সকাল সাড়ে আটটার সময় লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম দুপুর দেড়টার সময় বাড়িতে ফিরে আসতে হয়েছে কিন্তু আবেদনপত্র জমা দিতে পারিনি। দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে যদি একটি আবেদনপত্র জমা না দিতে পারি তাহলে বুঝতে পারছেন মনে কতটা কষ্ট নিয়ে বাড়িতে ফিরে এসেছি। তবে পরবর্তী দিন ভোর 5 টায় ঘুম থেকে উঠে পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছিলাম এবং শেষ পর্যন্ত পাসপোর্ট আবেদনপত্র জমা দিতে সক্ষম হয়েছি।
আমার মনে হয় এখানে এত দীর্ঘ লাইন এ মানুষকে দাঁড় করিয়ে না রেখে সিরিয়াল সিস্টেম করা যেতে পারে যে আপনি একদিনে কয় জনের ফরম জমা নিতে পারবেন সেই কয়জনকে সিরিয়াল টোকেন দিয়ে দিন। যার যেদিন সিরিয়াল পড়বে সে সেদিন চলে আসবে বিষয়টা আমার মনে হয় খুব সহজ হয়ে যাবে। সাধারণত দুপুর একটা পর্যন্ত কাগজ জমা নেওয়া হয় কিন্তু দেখা যায় যে একটা সময় অনেকে সে লাইনে দাঁড়াচ্ছে কাগজ জমা দেওয়ার জন্য। যদি এমন কোন ব্যবস্থা থাকত যে আমার কাগজপত্র প্রস্তুত আছে আমাকে একটি সিরিয়াল দিয়ে দিন তাহলে ভদ্রলোকেরা সিরিয়ালটি নিয়ে চলে যেত যেদিন তার সিরিয়ালের সময় আসবে সেদিন সে এসে কাগজটা জমা দিয়ে চলে যাবে তাহলে হয়রানি অনেকটাই কমে আসবে বলে মনে করছি।
যদি কিছু বলতে পারিনা তবুও কতক্ষণ বকবক করলাম। হয়তো এ লেখা কারো কাছে একটুও ভাল লাগবে না তবুও মনের আবেগ আক্ষেপ প্রকাশ করার জন্য এইটুকু লেখার মনোবাসনা ছিল তাই লিখলাম।
শেষ পর্যন্ত একটা জিনিস খুব ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারলাম যে আপনি অসুখী হলেও সুখে থাকার অভিনয়টা সবাইকে দেখে যেতে হবে যেটা আমি পাসপোর্ট কাগজ জমা দেয়ার ক্ষেত্রে করেছি অর্থাৎ স্থায়ী ঠিকানা না থাকা সত্ত্বেও স্থায়ী ঠিকানা আমাকে লিখে দিতে হয়েছে। সবাই ভালো থাকবেন আশা করছি আবারো কোন মনের আবেগ আক্ষেপ আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পারব।