যে বদ অভ্যাসগুলো আপনাকে ধনী হতে বাধা দেয় !




 আপনি রোজগার খারাপ করেন না। প্রতি মাসে সংসারের সব খরচ বাদ দিয়েও আপনার হাতে টাকার একটি মোটা অঙ্ক থাকার কথা। তবে সবমিলিয়ে কিছুতেই যেন মাস শেষে পকেটে টাকা থাকছে না। কোনোভাবেই টাকা জমিয়ে বিত্তবান হতে পারছেন না। দিনের পর দিন কষ্ট করে উপার্জন করেও দিন আনি দিন খাই ভাব আপনার মধ্যে।

এখন প্রশ্ন হলো কীভাবে এই দশা কাটিয়ে ছন্দে ফিরবে আপনার পকেট ও ব্যাঙ্ক ব্যালান্স? এজন্য নিজেকে নিয়ে ভাবুন। আর খেয়াল করুন, ২০টি অভ্যাস আপনার মধ্যে আছে কি না, যেগুলো আপনার বিত্তবান হওয়ার পিছনে বড় বাধা হয়ে আছে। চলুন দেখে নেই সেই ২০টি অভ্যাস যেগুলো আপনাকে ধনী হতে দিচ্ছে না।

১. মোবাইলে কেউ ফোন করলে কথা না বলা: আমরা ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনের যুগে বসবাস করছি। প্রায় সব ধরনের কাজেই আমরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করি। কিন্তু কিছু মানুষ মোবাইল ফোনে কথা বলতে চায় না। তাদের অফিসের কলিগ কিংবা ব্যবসায়িক পার্টনার ফোন করলে তারা ফোন রিসিভ না করে কেটে দিয়ে খুদেবার্তা কিংবা ই-মেইল পাঠায়।

কিন্তু ওই সব মানুষ ভেবেও দেখে না তাদের এই অভ্যাসের কারণে তারা জীবনে ধনী হতে পারছেন না। কারণ এমন অভ্যাস আপনার মধ্যে থাকলে আপনাকে পাশের মানুষগুলো অহংকারী ভাববে আর আপনার কাছ থেকে তারা দূরে সরে যেতে থাকবে। এ কারণে আপনি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন। তাই ধনী হতে হলে আপনাকে এই অভ্যাসটি ছাড়তে হবে।

২. পারিপার্শ্বিক অবস্থা চিন্তা না করেই অন্যের কথায় সিদ্ধান্ত নেওয়া: কোনো কাজে হাত দেওয়ার আগে অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ নেওয়া ভালো। ধনী হওয়ার জন্য আমরা অনেক সময়ই আশপাশের মানুষের পরামর্শ নিয়ে থাকি। আমাদের সমাজে একটা বিষয় প্রচলিত আছে, বয়সে বড় মানেই তাঁর কথামতো চলতে হবে। আপনি অবশ্যই বড়দের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করবেন না, কিন্তু তার মানে এই নয় যে, বয়সে বড় হলেই একজন সব বিষয়ে ভালো জানবেন।

আপনি ধনী হতে চাইলে এমন মানুষের কথা মেনে চলুন, যারা নিজেরা ধনী হয়েছেন, অথবা ধনী হওয়ার পথে আছেন। পরামর্শ শুধু তাদের কাছ থেকেই নিন যারা সেই বিষয়ে অভিজ্ঞ। আমাদের আশপাশে এমন অনেক লোকই আছে যারা জীবনে বড় হওয়ার উপদেশ দেয়, কিন্তু নিজেরা আসলে জীবনে কিছুই করতে পারেনি। যখন কারো কাছ থেকে উপদেশ নেবেন, তখন তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা চিন্তা করে পরামর্শ নেওয়া উচিত।

৩. ঘণ্টার হিসাবে টাকা আয় করার চেষ্টা: মানুষ পরিশ্রম কেন করে? অবশ্যই অর্থ উপার্জনের জন্য। সবার মতো আপনিও কাজ টাকার জন্যই করেন। কিন্তু কতটা সময় কাজ করার বিনিময়ে আপনি ধনী হতে পারবেন সেটা নির্ধারণ করা কঠিন। পৃথিবীতে তিন শ্রেণির কর্মজীবী মানুষ আছে। একদম নিচে আছে শ্রমিক শ্রেণির মানুষ। তাঁরা যতটুকু কাজ করেন, সেই কাজের বিনিময়ে টাকা পান। কাজ নেই, টাকাও নেই। এর ওপরে আছে দক্ষ কর্মী ও চাকরিজীবিরা।

প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত হওয়া ও কাজ করার জন্য তাঁদেরকে একটা নির্দিষ্ট পরিমান টাকা দেওয়া হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটা হয় মাসিক বেতন। এছাড়া কাজের ওপরে কিছু বোনাসও থাকে। সবচেয়ে ওপরের ভাগে আছে সেইসব মানুষ, যারা বাকি দুই শ্রেণিকে টাকা দিয়ে থাকে। এরা অন্যের জন্য কাজ না করে নিজের জন্য কাজ করে।

যখন অন্যকে সার্ভিস দেয়, তখনো তারা নিজের জন্যই কাজ করে। তারা মোট যে টাকা আয় করে, সেই আয় থেকেই অন্যদের টাকা দেয়। এ ধরনের মানুষ তাদের আইডিয়া ও দক্ষতা দিয়ে অন্যদের পরিচালনা করে। এই শ্রেণির মানুষ কাজ করার সময় সময়ের তোয়াক্কা করে না। সুতরাং আপনি ঘণ্টার হিসাব করে কাজ করলে অন্যের কর্মচারী হতে পারবেন ঠিকই, কখনো ধনী হতে পারবেন না।

৪. কাজ না করে অলৌকিক কোনো কিছুর জন্য অপেক্ষা করা: আপনি যদি মনে করেন কাজ না করলেও ভাগ্যে থাকলে আপনি এমনিতেই একদিন ধনী হয়ে যাবেন, তবে এই ধারণা থেকে আপনাকে বেড়িয়ে আসতে হবে। এই মানসিকতা থাকলে আপনি জীবনে আর যাই হোন না কেন ধনী হতে পারবেন না। এটা আসলে পরিশ্রম না করার একটা অজুহাত।

অনেকে বলেন, ধনী হতে হলে ধনী হয়ে জন্মাতে হয় অথবা কারো সাহায্য পেতে হয়। কিন্তু সত্যি কথা হলো, আপনি যতক্ষণ না নিজে কিছু করে দেখাতে পারছেন, ততক্ষণ আপনাকে কেউ সাহায্য করবে না। উদাহরণ হিসেবে আপনি আলিবাবা প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মার জীবনীর দিকে তাকান। তিনি একদমই হতদরিদ্র থেকে বিশ্বের সেরা একজন ধনী হয়েছেন। আর এটা সম্ভব হয়েছে শুধু পরিশ্রমের বদৌলতে। আপনার বর্তমান আর্থিক অবস্থা যা-ই হোক না কেন, সঠিক ভাবে পরিকল্পনা ও পরিশ্রম করলে আপনার অবস্থা ঘুরে যাবেই।

৫. কাজের চেয়ে কথা বেশি বলা: কিছু মানুষ আছে যারা বড় বড় স্বপ্ন দেখে, কিন্তু তা পূরণের জন্য যা করা দরকার তা একেবারেই করে না। তারা শুধু স্বপ্ন পূরণের পরিকল্পনা ও কথায় আটকে থাকে। তাই তারা তাদের অবস্থান কখনোই বদলাতে পারে না। অন্যদিকে যারা বেশি কথা না বলে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনামতো কাজ শুরু করে তারাই একদিন সফল হতে পারে। যারা নিজেদের কাজ বাদ দিয়ে শুধু বড় বড় কথায় ব্যস্ত থাকে তাদের স্বপ্নের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে কেবল আপনাকে তাদের পরিকল্পনার কথা শোনাবে। কিন্তু যারা কর্মঠ তারা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্বপ্ন পূরণে অনেকটাই সফল হয়ে যায়।

৬. জ্ঞানার্জন থেকে দূরে থাকা: পৃথিবীর সব সফল মানুষদের অন্যতম সেরা বিশিষ্ট হলো প্রচুর বই পড়া। তারা প্রতি বছর পরিকল্পনা করে বিশ্ববিখ্যাত বইগুলো পড়ে শেষ করে। আর ওই বই থেকে অর্জিত জ্ঞান নিজের ক্যারিয়ারে কাজে লাগায়। উদাহরণ হিসেবে বিশ্বসেরা ধনী বিল গেটসকে দেখুন, তিনি প্রতি বছর একটি করে বইয়ের তালিকা প্রকাশ করেন যেগুলো তিনি এক বছরে পড়ে শেষ করেন। কিন্তু যারা ধনী হওয়ার জন্য অলৌকিক কিছুর জন্য অপেক্ষায় থাকে তারা কখনোই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলে না।

৭. সম্পদ অর্জনের নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য না থাকা: কোনো কিছু অর্জন করতে হলে তার জন্য নির্দিষ্ট একটি লক্ষ্য ঠিক করতে হয়। আপনার যদি টার্গেট না থাকে, তবে আপনি পরিকল্পনাও করতে পারবেন না। আর পরিকল্পনা না করলে সফল হওয়া খুবই কঠিন। চিকিৎসক হতে গেলে যেমন সেই লক্ষ্যে পড়াশুনা করতে হয়, বড় খেলোয়াড় হতে গেলে যেমন প্রাকটিস করতে হয়।

ধনী হতে হলেও আপনাকে বিশেষ কিছু কাজ করতে হবে। শুধু ‘আমি ধনী হব’ এই লক্ষ্য থাকলেই হবে না। আপনি কত টাকার মালিক হতে চান, কবে হতে চান ‘এসবও ঠিক করে রাখতে হবে। তাহলে নিজেই আপনি সেই পথে চলতে শুরু করবেন। যেদিন যত টাকার মালিক হওয়ার লক্ষ্য ঠিক করবেন, সেদিনই তত টাকা আপনার হবে—ব্যাপারটা এমন নয়। কিন্তু আপনি যদি লক্ষ্য ঠিক না করেন, তবে কাজ শুরু করাই হবে না।

৮. নতুন কিছু শেখার চেষ্টা না করা: সময়ের সঙ্গে যদি নিজেকে আপডেট করতে না পারেন, তবে যেখানে আছেন সেখানেই সারা জীবন থেকে যাবেন। আপনার জ্ঞান ও দক্ষতা যদি সামনের পাঁচ বছর একই রকম থাকে, তবে সামনের পাঁচ বছর আপনার আর্থিক অবস্থাও এমনই থাকবে। বেশির ভাগ মানুষ তাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ হয়ে গেলে ভাবে তাদের শেখা শেষ হয়ে গেছে।

কিন্তু তখন থেকেই আসলে সত্যিকার শেখা শুরু হয়। আপনি যদি অনার্স ও মাস্টার্স শেষ হওয়ার পর পড়াশুনা করা বন্ধ করে দেন, তাহলে হয়তো একটা ভালো চাকরি বা আয়ের রাস্তা পেয়ে যাবেন। কিন্তু নতুন জ্ঞান আর দক্ষতা অর্জন না করলে আপনার আয়ও একটা পর্যায়ে এসে থেমে যাবে।

৯. চাকরি পছন্দ না করা: অনেকেই তাঁদের কর্মক্ষেত্র পছন্দ করেন না। যদি অফিসের বস অপছন্দের হয় তবে, এর মাত্রা অনেক তীব্র হয়। আর এটা হয় সাধারণত নিম্ন পরিমাণ বেতন কাঠামোর কারণে। এমন পরিস্থিতিতে কর্মীরা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে কাজের হিসাব করে। অফিস সময় শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা অফিস থেকে বের হয়ে যায়। এতে তারা ক্যারিয়ারে বেশিদূর এগোতে পারে না। যদি আপনি ক্যারিয়ারে সফল হতে চান তবে সাময়িক সময়ের জন্য আর্থিক অসন্তোষ থাকলেও আপনাকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তাহলে একদিন আপনি সফল হবেনই।

১০. ব্যর্থতাকে অতিরিক্ত ভয় পাওয়া: পৃথিবীতে কেউই ব্যর্থ হতে চায় না। এ কারণেই বেশিরভাগ মানুষ খুব বড় লক্ষ্য ঠিক করতে ভয় পায়। সব সময়ে নিরাপদ থাকতে চায়। আপনার মাঝে যদি ব্যর্থতার ভয় অতিরিক্ত হয়, তবে আপনিও খুব বড় লক্ষ্যের চিন্তা করার সাহস পাবেন না। বড় লক্ষ্যে ঝুঁকিও বেশি, এটা জেনেই বড় লক্ষ্য অর্জনের কাজ করতে হয়।

আপনি যদি ধনী হতে চান, তবে অনেক নিরাপদ ক্যারিয়ারের হাতছানি আপনাকে অগ্রাহ্য করতে হবে। হয়তো উচ্চ বেতনের সরকারি চাকরির সুযোগও ছাড়তে হবে। কিন্তু আপনাকে নিরাপত্তা আর বিরাট ধনসম্পদের সম্ভাবনার একটি বেছে নিতে হবে। আর সত্যি কথা বলতে, আপনি যদি হাল না ছেড়ে চেষ্টা করে যান, তবে এক সময়ে না এক সময়ে আপনি অবশ্যই সফল হবেন।


১১. সব কাজের কাজি: অনেক বিষয়ে দক্ষতা থাকা ক্যারিয়ারে সফল হওয়ার জন্য উপকারী। কিন্তু এটা সব সময় কার্যকর হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আপনাকে নির্দিষ্ট কোনো একটি লক্ষ্য ঠিক করতে হবে এবং সেই লক্ষে অনেক বেশি দক্ষতা বাড়াতে হবে। কারণ একাধিক বিষয়ের ওপর আপনার বিচরণ থাকলে আপনি আপনার লক্ষ্য ঠিক করতে ও সেই লক্ষ পূরণে সফল হতে পারবেন না।

সব বিষয়ে জানার সাধারণ দক্ষতা থাকা ভালো কিন্তু এমন যদি হয় আপনি সব বিষয়েই অল্প অল্প জানেন কিন্তু আপনার নির্দিষ্ট বিষয়ে কোনো গভীর জ্ঞান নেই তবে আপনি সফল হতে পারবেন না। এই কারণে আপনি একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করুন ও সে মোতাবেক এগিয়ে যান।

১২. নিজের ভুল না দেখা: আপনার জীবনে খারাপ কিছু ঘটলেই যদি আপনি নিজের ভুল কোথায় হয়েছে, তা খোঁজার বদলে অন্যের ওপর দোষ চাপানোর পথ খোঁজেন তাহলে নিজের চেষ্টায় ধনী হওয়ার কথা ভুলে যান। এই স্বভাব যাদের মাঝে আছে, তারা আসলে দায়িত্ব নিতে পারে না। আপনার যদি একটা ব্যবসা থাকে ও ব্যবসায় লস হলে আপনি নিজের ভুল না খুঁজে অন্যের দোষ খুঁজতে থাকেন ‘তাহলে সেই অবস্থা থেকে জীবনেও বের হতে পারবেন না।

কোনো সমস্যার সমাধান যদি খুঁজে না পান, তবে নিজের দিকে তাকান। হয়তো সমস্যাটা আপনার নিজের। মার্কেটে আপনার নতুন পণ্য বা সার্ভিস চালাতে পারছেন না, এটা কখনোই মার্কেটের দোষ নয়। আপনি আপনার পণ্য বা সেবা ঠিকমতো প্রচার করতে পারছেন না, অথবা আপনার প্রোডাক্টে কোনো ত্রুটি আছে। বেশিরভাগ মানুষ এটা করতে চায় না, কারণ এতে নিজের চোখে নিজের অনেক ত্রুটি ধরা পড়ে।

১৩. সব সময় যিনি দেরি করেন: ক্যারিয়ারে সফল হতে হলে অবশ্যই আপনাকে সময়ানুবর্তী হতে হবে। আপনি যদি কাজের বেলায় চটপটে ও সময়ানুবর্তী হন তবে আপনি আপনার কাজে সফল হবেন। কিন্তু কিছু মানুষ আছে যারা শুধু ধনী হওয়ার স্বপ্ন দেখেই বসে থাকে। সে অনুযায়ী কাজ করে না। আর তারা যেকোনো কাজ ধীর গতিতে করে। এই ধীর গতির কারণে তারা কোনোদিনই সফল হতে পারে না।

১৪. আয়ের চেয়ে বেশি খরচ করা: দামি মোবাইল থাকা, দামি রেস্টুরেন্টে খাওয়া, বিদেশে ট্যুর দেওয়া—এসব না করলে আজকাল প্রেস্টিজ ধরে রাখাটাই সমস্যা হয়ে গেছে। বিশেষ করে করপোরেট চাকরিজীবীদের মধ্যে এই প্রবণতা মহামারি আকার ধারণ করেছে। এসব আপনি অবশ্যই করতে পারেন, কিন্তু সেটা হতে হবে আয়ের অতিরিক্ত টাকা দিয়ে।

আপনার যখন টাকা উপচে পড়ছে, তখন আপনি এগুলো করতে পারেন, কিন্তু শুধু প্রেস্টিজ রাখার জন্য নিজের বেতনের টাকা খরচ করে, বা এমনকি ক্রেডিট কার্ডের ধার করা টাকা দিয়ে এগুলো করলে আপনার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। এসব অভ্যাস বজায় থাকলে কর্মজীবন শেষে আপনি দারুণ বিপদে পড়তে যাচ্ছেন।

এই বড়লোকি দেখাতে গিয়ে সত্যিকার বড়লোক হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লাখ টাকার ওপরে বেতন পেয়েও অনেকে মাসের শেষে ক্রেডিট কার্ড ভাঙিয়ে চলছে। অথচ তারা ইচ্ছা করলেই ৫০-৬০ হাজার টাকায় চলতে পারে, এবং বাকি টাকাটা বিনিয়োগ করে এক সময়ে নিজেই একটি ভালো ব্যবসার মালিক হতে পারে।

১৫. শৃঙ্খলার অভাব: যদি নিজের চেষ্টায় ধনী হতে চান, তবে আপনাকে কষ্ট করতেই হবে। আর সেই সঙ্গে নিজেকে কঠোর শৃঙ্খলার মাঝে আটকে ফেলতে হবে। রাতারাতি বড়লোক বলতে পৃথিবীতে কিছু নেই। আপনি কি জানেন, ১০% এরও কম লটারি বিজয়ী তাদের টাকা ধরে রাখতে পারে? হঠা‌ৎ‌ করে সাফল্য এলে তা কোনোদিনই স্থায়ী হয় না। সত্যিকার ধনী হতে চাইলে আপনাকে দিনের পর দিন, গভীর মনোযোগ দিয়ে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

আপনার সব কাজ সময়মতো করতে হবে। কাজের সময়ে ঘুমানো, কাজের সময়ে বিনোদন—এসব ভুলে যেতে হবে। আপনি যদি ব্যবসা করে ধনী হতে চান, তবে প্রথমে আপনাকে আপনার পরিশ্রম আর মনোযোগের ওপরই সবচেয়ে বেশি নির্ভর করতে হবে। তারপর ধীরে ধীরে একটু একটু করে নিজের সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে হবে। জ্যাক মা, ইলন মাস্ক বা জেফ বেজোসের মতো বিশ্বের সেরা ধনীরা এভাবেই কাজ করেছেন।

১৬. কাজ শুরু করে শেষ না করা: অনেকে দারুণ সব উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করে। কিন্তু অল্প কিছুদিন করে আবার তা ফেলে রাখে। এমন অভ্যাসের কারণে অনেকেই ক্যারিয়ারে সফল হতে পারে না। এটা বেশি করে নিম্ন আয়ের মানুষ। তারা আজ এক ব্যবসা আবার কাল আরেক ব্যবসা করে। আর এ কারণে কোনো কাজেই মন দিতে পারে না। ফলে তারা বারবার হোচট খায়। এই ধরনের মানুষ অল্পতেই হতাশ হয়ে যায়। আর এ কারণেই তারা নানামুখী ব্যবসা করতে চায় কিন্তু কোনো কাজই শেষ করে না।

১৭. সঠিক বিনিয়োগ না করা: আপনার হাতে কিছু টাকা জমলে হিসাব করে বের করতে হবে যে কোন খাতে বিনিয়োগ করলে এই টাকা থেকে সবচেয়ে বেশি লাভ করা যাবে এবং সেই খাতেই টাকাটি বিনিয়োগ করতে হবে। প্রথমে ছোট ছোট বিনিয়োগ করে বিনিয়োগের অভ্যাস করুন। প্রথমেই বড় ঝুঁকি নেওয়ার দরকার নেই।

সমবায় ব্যবসা, কয়েকজন মিলে জমি কেনা, এই ধরনের ছোট ছোট বিনিয়োগ করতে থাকুন। তারপর ধীরে ধীরে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়াতে থাকুন। বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার ব্যবসায়িক মেধা ও আয়ের পরিমাণও বাড়তে থাকবে। বিনিয়োগ মূলত দুই প্রকার। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিনিয়োগ। প্রত্যক্ষ বিনিয়োগে আপনি সরাসরি কাজ করবেন। আপনার টাকার সাথে এর পেছনে সময়ও দিতে হবে। যেমন নিজের দোকান, ওয়েবসাইট ইত্যাদি।

পরোক্ষ বিনিয়োগে আপনাকে সাধারণত সময় দিতে হবে না। বাড়ি বা ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া পরোক্ষ বিনিয়োগের উদাহরণ, অথবা এরচেয়েও কম টাকা বিনিয়োগ করে আপনি লাভবান হতে পারেন। বিশ্বস্ত কারো ব্যবসায়ে টাকা খাটিয়ে লাভ পেতে পারেন। এটা করার বদলে আপনার অভ্যাস যদি হয় শুধুই টাকা জমিয়ে রাখা, তবে সুদূর ভবিষ্যতেও আপনার সত্যিকার ধনী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

১৮. টাকা জমানোর অতিরিক্ত বাসনা: আয় বুঝে আপনাকে ব্যয় করতে হবে। জীবনে ধনী হওয়ার জন্য এই ফর্মুলা অবশ্যই আপনাকে অনুসরণ করতে হবে। কিন্তু কিছু মানুষ আছেন যারা শুধু টাকা জমিয়েই জীবনের একটা বড় সময় পার করে দেয়। তারা টাকা জমানোর নেশায় এতটাই বুধ হয়ে থাকে যে, ওই টাকা কোথাও বিনিয়োগ পর্যন্ত করে না। আর এ ধরনের মানুষ শুধু টাকা জমিয়েই যায়, কখনো ধনী হতে পারে না।

আপনি হয়তো চাকরি করে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা জমান এবং চাকরি জীবনের শেষে হয়তো তা ৫০ লাখ বা এক কোটিতে গিয়ে ঠেকবে। কিন্তু ২০-৩০ বছর ধরে এক কোটি টাকা জমিয়ে জীবনের শেষে সেই টাকা দিয়ে আপনি আসলে তেমন কিছু করতে পারবেন না। আর ওটাকে সত্যিকার ধনী হওয়াও বলা যায় না। এটা আসলে ধনী হওয়ার চেষ্টা নয়, এটা গরিব না হওয়ার চেষ্টা। মূলত ঝুঁকি নিতে ভয় পাওয়ার কারণেই মানুষ এটা করে।

১৯. হিসাব করতে পছন্দ না করা: আপনি যদি সত্যিকার ধনী হতে চান, তবে আপনাকে অবশ্যই হিসেবী হতে হবে। এখানে হিসেবী হওয়া মানে শুধু হিসেব করে টাকা খরচ করার কথা বলছি না। আপনাকে প্রতিটি টাকা কোথায় যাচ্ছে, এবং কোন খাতে কত টাকা খরচ হচ্ছে, কত টাকা আয় হচ্ছে, কোন খাতে ব্যয় করাটা লাভজনক হবে, এসব বিষয় খুব ভালো করে হিসাব করতে হবে। আর এই হিসাব মনে মনে না— একদম খাতা-কলম ও ক্যালকুলেটর নিয়ে বসে করতে হবে।

অনেকেই আছে, হিসাব করতে পছন্দ করে না। আপনি হয়তো এমন অনেক বড়লোক দেখেছেন, যারা অনেক টাকা থাকার পরও খরচ করার আগে অনেক ভাবে, অনেক কিছু হিসাব করে তারপর খরচ করে। কারণ ধনী হওয়ার আগে থেকেই তাদের মাঝে এই অভ্যাসটি ছিল। অনেকে এটা পছন্দ না করলেও, আসলে তাদের ধনী হওয়ার পেছনে এই অভ্যাসটির অনেক বড় অবদান।

২০. নতুন অভ্যাস গড়ে না তোলা: আপনি যদি জীবনকে বদলাতে চান, তবে কিছু অভ্যাসও বদলাতে হবে। যদি চান যে, ২০১৯ থেকে ২০২০ অন্যরকম হোক, তবে আপনার নিজেকেও অন্যরকম হয়ে উঠতে হবে এবং সেই পরিবর্তনটা হতে হবে ভালো পরিবর্তন। নিজের অভ্যাস না বদলে আর্থিক অবস্থা বদলের আশা করাটা হবে বোকামি।

গত বছর যদি দিনে ছয় ঘণ্টা কাজ করে থাকেন, তবে এই বছর আপনাকে ১০ ঘণ্টা কাজ করতে হবে। যদি বলেন, আপনার হাতে সময় নেই, তাহলে ভুল করবেন। সব খেলোয়াড়ই দিনে ২৪ ঘণ্টা করে পায়, কিন্তু সবাই লিওনেল মেসি কিংবা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো হতে পারে না। কারণ, সবাই মাঠ ছেড়ে চলে গেলেও তাঁরা কয়েক ঘণ্টা একা একা প্রাকটিস করেন। আপনি যদি মধ্যবিত্ত বা গরিব অবস্থা থেকে বড়লোকের কাতারে যেতে চান; তবে ৯টা-৫টা মনোভাব মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন।

অফিসের কাজ শেষে বাসায় ফিরে নিজের কাজ করুন। অথবা সকাল ৮টার বদলে সকাল ৬টায় উঠুন। দেড়-দুই ঘণ্টা সময় নিজের স্বপ্নের পেছনে দিন। পড়াশুনা করুন, অথবা কাজ করুন। অফিস থেকে ফিরেও এই কাজ করুন। এই দেড়-দুই ঘণ্টা এক্সট্রা সময় একদিন আপনাকে এক্সট্রা অর্ডিনারি বানিয়ে দেবে। এভাবে আরো যদি বাজে অভ্যাস থাকে, সেই বাজে অভ্যাস পরিবর্তন করে ফেলুন। 

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।

শাহীন

আমি শাহীন । পেশায় একজন ব্যবসায়ী । পাশাপাশি অনলাইনে কাজ করতে পছন্দ করি। আশা করছি আমার শেয়ারকৃত তথ্য থেকে আপনারা উপকৃত হচ্ছেন আর তা হলেই আমার পরিশ্রম স্বার্থক।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads