কোয়েল-টার্কিতে লিটনের সফলতা
কোয়েল পাখি আর টার্কি মোরগির খামার করে সফলতা পেয়েছেন কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার খামারি মো. দেলোয়ার হোসেন লিটন। উপজেলার রামদি ইউনিয়নের বাজরা-মাছিমপুরের নিজ গ্রামে এ খামার গড়ে তুলেছেন তিনি। শুরুতে মাত্র ৬০০ কোয়েল পাখি আর সাতটি টার্কির বাচ্চা দিয়ে খামার শুরু করলেও বর্তমানে তাঁর খামারে ১০ হাজারেরও বেশি কোয়েল পাখি আছে। প্রতিদিন ডিম উৎপাদিত হচ্ছে পাঁচ হাজার। শুধু ডিম থেকে তাঁর আয় হচ্ছে প্রতিদিন ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। অপরদিকে খামারে নিজস্ব ইনকিউবেটরের মাধ্যমে মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার বাচ্চা ফুটিয়ে বিক্রি করছেন তিনি।
এ সফলতায় বদলে গেছে লিটনের জীবনের চাকা। সংসারে এসেছে সচ্ছলতা। তিনি এখন ওই অঞ্চলের সফলতার রোলমডেল। তাঁকে দেখে উৎসাহিত হয়ে প্রতিদিন আশপাশের গ্রামের বেকার যুবকরা ছুটে আসছে খামারে। পরামর্শ আর সহযোগিতায় গড়ে তুলছেন খামার। বেকারত্ব দূরীকরণে কোয়েল-টার্কির খামার শুধু এই অঞ্চলেই নয়, গোটা বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সফল খামারি লিটনের বিশ্বাস।
মো. দেলোয়ার হোসেন লিটন এনটিভি অনলাইনকে জানান, টিনের সেট বা খাঁচা- দুই পদ্ধতিতেই কোয়েল পালন করা যায়। আকারে ছোট হওয়ায় খুব অল্প পরিসরে অধিক কোয়েল রাখা যায়। সাধারণ ব্রয়লার মুরগির খাবারই কোয়েলের খাবার হওয়ায় এবং রোগ-বালাই না হওয়ায় খরচ হয় খুব কম। দিনে তিন/চারবার খাবার ও পানি দেওয়া আর ডিম সংগ্রহ করা ছাড়া তেমন কোনো পরিচর্চা করতে হয় না। বাজার চাহিদা ও দর দুটোই ভালো হওয়ায় বেশ লাভজনক এই খামার।
একেকটি কোয়েল পাখি ৫৬ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে ডিম দেওয়া শুরু করে। আর টানা ১৪ মাস পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। একশ ডিম খামারেই বিক্রি হয় দুইশ টাকায়। ১৬ মাস বয়সী আড়াইশ গ্রামের একেকটি কোয়েল মাংস হিসাবে ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হয়। আর একদিনের প্রতিটি কোয়েলের বাচ্চার বাজার দর ৮-৯ টাকা।
বর্তমানে লিটনের খামারে ৬০টি বড় টার্কি এবং ৭৯ টার্কির বাচ্চা রয়েছে। কোয়েলের মতো একইভাবে ইনকিবিউটারের মাধ্যমে মাসে ১০০ থেকে ১৫০টি টার্কির বাচ্চা ফুটানো হচ্ছে খামারে। প্রতিটি বিক্রি করছেন ৬০০-৭০০ টাকা করে।
ঘাস ও লতাপাতা টার্কির প্রধান খাবার। সঙ্গে বাজারে প্রচলিত ও সহজলভ্য ব্রয়লার খাবার খায় বলে খরচ হয় খুব কম। এদেরও রোগ-বালাই খুব কম। দেশের বিভিন্ন বাজারে টার্কি মুরগির ব্যাপক চাহিদা। একটি বড় টার্কি সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। একদিনের টার্কির বাচ্চা বিক্রি করা যায় ৬০০-৭০০ টাকায়। ছয় মাস বয়স থেকে টার্কি ডিম দেওয়া শুরু করে। প্রতিটি টার্কি ৮০ থেকে ১০০টি ডিম দেয় বছরে।
লিটন আরো জানান, লেখাপড়া শেষ করে তিনি ১৯৯৭ সাল থেকে মুরগির ব্রয়লার ও লেয়ার খামারের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। কিন্তু কয়েক বছর পর ওইখাতে ক্রমাগত লোকসানে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন। পরে স্ত্রী শাহনাজের পরামর্শে তিনি কোয়েল পাখির খামার গড়ে তোলেন। দুই বছর আগে এর সঙ্গে যোগ করেন টার্কি।
লিটনের অভিমত, কেউ চাইলে এক থেকে দেড় লাখ টাকা খরচে আড়াই হাজার কোয়েল পাখির খামার গড়ে তোলতে পারেন। এ থেকে মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা মুনাফা আসার কথা।
খামারের কোয়েল পাখি আর টার্কির খাবার ও পানি দেওয়া এবং ডিম সংগ্রহের কাজগুলি তদারকি করেন লিটনের স্ত্রী শাহনাজ বেগম। তিনি জানান, কোয়েল পাখির খামারে দিনে চারবার খাবার ও পানি দিতে হয়। ডিম দেওয়া পাখিগুলো প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে ডিম দিতে থাকে। এই খামারে কাজ করে তিনি বেশ আনন্দ উপভোগে করেন বলেও জানান।
অপরদিকে খামারের ইনকিউবিটর অপারেটর কিরণ মিয়া জানান, তারা বর্তমানে ইনকিউবিটরের মাধ্যমে ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোয়েল পাখির বাচ্চা এবং ১০০ থেকে ১৫০টি টার্কির বাচ্চা ফুটাচ্ছেন। ডিমগুলো স্যাটারে ১৫ দিন রাখার পর বাচ্চা ফুটে। পরে সেগুলো হ্যাচারে রাখা হয় দুই থেকে আড়াই দিন। টার্কির বাচ্চাও একই প্রক্রিয়ায় ফোটানো হয় বলে তিনি জানান।
টার্কি ও কোয়েলের খামারকে অত্যন্ত সম্ভবনাময় পেশা হিসেবে উল্লেখ করে কুলিয়ারচর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাইফুল আলম জানান, এ পেশায় নতুন নতুন উদ্যোক্তা আসলে তাঁর কার্যালয় সার্বিক সহায়তা দিয়ে যাবেন। টার্কি ও কোয়েলের রোগ-বালাই কম এবং এর মাংস ও ডিমের পুষ্টিগুণ খুবই বেশি বলে এর বাজার চাহিদাও বেশ ভালো।