বর্তমান বাজারে ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বাড়ছে সেই সাথে বাড়ছে পণ্যের সংখ্যা। এছাড়াও রয়েছে পণ্যের গুণগতমানের তফাৎ কিন্তু সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে তৈরি করতে হবে উন্নত মানের এবং উন্নত গুণসম্পন্ন পন্ন। আর পণ্যের গুণগত মান যদি ভাল হয় তাহলে বর্তমান বিশ্বে বাজার ধরা কোন ব্যাপারই নয়।
তাই আপনি যে ব্যবসাটি করুন না কেন একটা কথা মনে রাখবেন, সবসময় সব পণ্যই গুণগত মান ঠিক রেখে বিক্রি করার চেষ্টা করবেন।
বাজারে অসংখ্য পণ্য আছে, যেগুলোর রয়েছে বিপুল চাহিদা। আর এসব পণ্যের উৎপাদন খুবই সহজ এবং অল্প পুঁজি বিনিয়োগের মাধ্যমে এই সকল পণ্যের ব্যবসায় শুরু করা সম্ভব। এমনই একটি পণ্য হচ্ছে ডিটারজেন্ট। ডিটারজেন্টের উৎপাদন খুবই সহজ এবং স্বল্প ব্যয়সাপেক্ষ কিন্তু এর রয়েছে বিপুল চাহিদা। আজকে এই ব্যবসায়ের খুঁটিনাটি আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
ডিটারজেন্টের প্রকারভেদ: আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মাঝে ডিটারজেন্ট অন্যতম একটি সামগ্রী। কাপড় কাচা থেকে শুরু করে নানা রকম পরিষ্কার কার্যসম্পাদনে এর ব্যবহার ব্যাপক। আমাদের এসব পরিষ্কার কাজের ওপর ভিত্তি করে ডিটারজেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নানা রকমের ডিটারজেন্ট সরবরাহ করে থাকে। এসব ভিন্ন ভিন্ন ডিটারজেন্টের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন বিশেষত্ব এবং ব্যবহার। কাপড় এবং পরিষ্কার কাজের ধরন অনুযায়ী ডিটারজেন্টকে চার ভাগে ভাগ করা যায়।
যেমন,কার্যকর ডিটারজেন্ট পাউডার, হালকা কার্যকর ডিটারজেন্ট পাউডার, ফসফেটমুক্ত ডিটারজেন্ট পাউডার, ফেব্রিক সফট ডিটারজেন্ট পাউডার এসব ভিন্ন ভিন্ন ডিটারজেন্টের ব্যবহার এবং চাহিদার ওপর ভিত্তি করে নির্ণয় করতে হবে আপনি কোন ধরনের ডিটারজেন্ট উৎপাদন করতে চান? এজন্য প্রয়োজন একটি সঠিক পরিকল্পনা।
ডিটারজেন্ট উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল: ডিটারজেন্ট উৎপাদনে বেশ কিছু জটিল কেমিক্যাল ব্যবহার করা হলেও এর উৎপাদন প্রক্রিয়া কিন্তু ততটা জটিল নয়। কয়েকটি কেমিক্যালের সংমিশ্রণ হাতের মাধ্যমেও করা যায়। ডিটারজেন্ট উৎপাদনে প্রায় ১০ ধরনের কেমিক্যাল প্রয়োজন হয়ে থাকে। এসব প্রয়োজনীয় কেমিক্যাল সংগ্রহ করাও খুবই সহজ। খুঁজে দেখলে প্রায় সব গুলোই আমাদের পুরান ঢাকায় পাওয়া যাবে।নিচে ডিটারজেন্ট উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের বাণিজ্যিক নাম ও রাসায়নিক নাম উল্লেখ করা হলো।
সোডিয়াম কার্বোনেট(সোডা অ্যাস), এসএলইএস(সোডিয়াম লরিয়েন্ট সালফেট), এসিড স্লারি (সোডিয়াম বেনজয়ীক সালফোনিক), ব্রাইটনার, টিএসপি (ট্রাইসোডিয়াম ফসফেট), এসটিপিপি (সোডিয়াম ট্রাই পলিফসফেট), সিএমসি(কার্বোক্সি মিথাইল সেলুলোজ), জি-সল্ট (সোডিয়াম সালফেট), পারফিউম, কালার গ্রানুয়েলস। উপরে উল্লেখিত সব গুলো কাঁচামালই যে কাপড়ের ময়লা পরিষ্কার করে থাকে, তা কিন্তু নয়।
এসব কেমিক্যালের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন কার্যকারিতা। যেমন, সোডিয়াম কার্বোনেট কাপড়ের ময়লা পরিষ্কার করে থাকে। আবার এস এল এস ফেনা উৎপাদন করে থাকে। ব্রাইটনার কাপড়ের উজ্জ্বলতা প্রদান করে থাকে। এসিড স্লারি ডিটারজেন্টের শক্তি প্রদান করে থাকে। পারফিউম ময়লা কাপড়ের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি দেয়। কালার গ্রানুয়েলস ডিটারজেন্টকে আকর্ষণীয় করে তোলে। আবার এসব কেমিক্যালের উপাদানের প্রয়োগ কমবেশি করে গুণাগুণ পরিবর্তন করা যায়। নিচে এসব কাঁচামাল প্রয়োগের আনুমানিক মাত্রা দেওয়া হল।
কার্যকর ডিটারজেন্ট প্রস্তুতের জন্য কেমিক্যালের আনুমানিক পরিমাণ: প্রতি ৫ কেজি ডিটারজেন্ট প্রস্তুতের জন্য আনুমানিক কাঁচামাল সোডা অ্যাস- ২৫০০ গ্রাম, এসিড স্লারি- ৫০০ গ্রাম, এসএলএস- ২০০ মিলি, টিএসপি- ৫০০ গ্রাম, এসটিপিপি- ৫০০ গ্রাম, সিএমসি- ১০০ গ্রাম, টিনোপাল- ১০০ গ্রাম, জি-সল্ট- ১০০০ গ্রাম, পারফিউম- ৫০ মিলি, কালার গ্রানুয়েল- পরিমাণ মত।
প্রস্তুত প্রক্রিয়া: উপরে উল্লেখিত কাঁচামাল ক্রমানুসারে একটি পাত্রে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন আপনার কাঙ্ক্ষিত পণ্য। এছাড়া মিক্সিং মেশিনের সাহায্যে খুব ভালোভাবে মিশ্রণটি তৈরি করা যায়। কারণ এর মাধ্যমে প্রতিটি উপাদান খুব ভালো করে মেশানো সম্ভব হয়। তবে হাত দিয়ে মেশানোর সময় অবশ্যই হাতে হ্যান্ড গ্লাভস পরে নিতে হবে। সেই সাথে গায়ে এপ্রোন ও সেফটি মাস্ক ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
কাঁচামাল সংগ্রহে সম্ভাব্য খরচ: উপরে উল্লেখিত কাঁচামালের প্রায় সবগুলোই আমাদের পুরান ঢাকায় পাওয়া যাবে। তবে এসব কাঁচামালের দাম কিছুটা তফাত থাকতে পারে। আনুমানিক প্রতি কেজি ডিটারজেন্ট প্রস্তুতের জন্য কাঁচামালের খরচ প্রায় ৩০-৩৫ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এই ব্যবসায় অন্যতম সুবিধা হচ্ছে, আপনি ঠিক যতটুকু পণ্য উৎপাদন করতে চান, ঠিক ততটুকু কাঁচামাল কিনতে পারবেন।
মোড়ক তৈরিতে সম্ভাব্য খরচ: যেকোনো পণ্যের বাজারজাতকরণের জন্য যে সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখতে হয়, সেগুলোর মাঝে অন্যতম হচ্ছে পণ্যের গুনগত মান এবং পণ্যের আকর্ষণীয় মোড়ক। ক্রেতা আকর্ষণের অন্যতম হাতিয়ার হল পণ্যের মোড়ক। প্রথমত ক্রেতা পণ্যের মোড়কের দেখে আকৃষ্ট হন এবং পরবর্তীতে পণ্যটি ব্যবহার করে পণ্যের গুনগত মান যাচাই করেন। তাই প্রতিটি পণ্য বাজারজাত করার জন্য পণ্যের মোড়ক হতে হবে আকর্ষণীয়। গত কয়েক দিন আগে আমি একটি মোড়ক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে পণ্যের মোড়ক তৈরিতে খরচ সম্পর্কে ধারণা নিয়েছি। এগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।
৫০০ গ্রামের মোড়ক তৈরি করতে সম্ভাব্য খরচ: ডাইস(মোড়কের গ্রাফিক ডিজাইনের ফর্মা) ২০০০০ টাকা প্রতি পিস মোড়কের দাম ২ টাকা (২×৫০০০) ১০০০০ টাকা(৫০০০ এর নিচে অর্ডার নেয় না) মোট: ৩০০০০ হাজার টাকা। ১ কেজি ডিটারজেন্টের মোড়ক তৈরি করতে সম্ভাব্য খরচ ডাইস(মোড়কের গ্রাফিক ডিজাইনের ফর্মা) ৪০০০০ টাকা, প্রতি পিস মোড়কের দাম ৩ টাকা (৩×৫০০০) ১৫০০০ টাকা।(৫০০০ এর নিচে অর্ডার নেয় না) মোট: ৫৫০০০ হাজার টাকা। ৫০০ গ্রাম ও ১০০০ গ্রামের মোড়ক তৈরিতে মোট খরচ হতে পারে প্রায় ৮৫০০০ হাজার টাকা।
বাজারজাতকরণ বা বিপণন: একটি ব্যবসায়ের সফলতা নির্ভর করে সঠিক বাজারজাতকরণের ওপর।। বাজারজাতকরণের মাধ্যমে ভোক্তার দ্বারপ্রান্তে পণ্য পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়। যদিও পণ্য বিক্রয়ে দীর্ঘমেয়াদি সফলতা নির্ভর করে পণ্যের গুনগত মানের ওপর, কিন্তু নতুন পণ্য ক্রেতাদের আকর্ষণে পণ্যের সুলভ মূল্য এবং পণ্যের মোড়ক ও পণ্যের বিজ্ঞাপন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এজন্য প্রথম দিকে লাভের দিকে বেশি মনোযোগ না দিয়ে অল্প লাভে ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছে দিন। এতে করে ক্রেতারা আকৃষ্ট হয়ে পণ্য কিনবেন, তেমনি পণ্য ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্যের গুনগত মান উপলব্ধি করতে পারবেন। এভাবে ক্রেতার সাথে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব হবে।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।