১। শিশুদের ব্যস্ত রাখতে অ্যাপ
কোভিড-১৯ এর কারণে বহু পরিবার ‘সামাজিক দুরত্ব’ মেনে চলছে। এতে শিশুদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে কারণ তারা অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে মেলামেশা বা খেলাধূলা করতে পারছে না। এই কঠিন সময় বহু সংখ্যক শিশু অনলাইনে পড়াশুনা করে এবং অবসর সময়ে মোবাইল ঘেঁটে কাটাচ্ছে। কিন্তু বহু অভিভাবকই চান না যে তাদের ছেলে মেয়েরা মোবাইল স্ক্রীনের সামনে বেশিক্ষণ কাটাক। বেশি মোবাইল নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলে অপরিণত হওয়ার কারণে তাদের মন বিক্ষিপ্ত হতে পারে। কিন্তু তাহলে শিশুদের কিভাবে ব্যস্ত রাখা যাবে? কিভাবে তাদের মনোরঞ্জনের উপায় খুঁজে পাওয়া সম্ভব?
সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছে স্টার্টআপ ‘কিন্সপায়ার’। তাদের তৈরি অ্যাপ শিশুদের অফলাইনে ব্যস্ত রাখার জন্য শয়ে শয়ে এমন কার্যকলাপের সন্ধান দেয় যা বহু শিক্ষক ও অভিভাবকের সমর্থন আদায় করতে পেরেছে।
রব সায়গল, যিনি ‘কিন্সপায়ার’ এর কো-ফাউন্ডার আবার দুই সন্তানের বাবাও বটে, নিজে সমস্যার সম্মুখীন হন যখন তাঁকে তাঁর সন্তানদের জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘেঁটে কার্যকলাপ খুঁজে বার করতে হতো এবং তারপরে তিনি দেখতেন যে তাঁর সন্তানরা সেই কার্যকলাপগুলিতে আগ্রহী নয়। এখান থেকেই এই অ্যাপ তৈরির ভাবনা তাঁর মাথায় আসে যেটি ব্যবহার করে শিশুরা তাদের পছন্দমত কার্যকলাপ বেছে নিতে পারবে।
যখন শিশুরা কার্যকলাপগুলি সম্পূর্ণ করবে যেমন কোন বৈজ্ঞানিক প্রোজেক্ট, মননশীলতার অনুশীলন, ইত্যাদি তখন তারা কিছু ইন-অ্যাপ রিওয়ার্ড পাবে। ভবিষ্যতে ‘অ্যাড অ্যাক্টিভিটি’ ফিচারটির সাহায্যে অ্যাপটিতে আরো কার্যকলাপ যোগ করা যাবে।
২। প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা স্টার্টআপগুলির পোয়াবারো
কোভিড-১৯ এর প্রকোপ শুরু হতে, বিনিয়োগকারীরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন এবং সেটাই স্বাভাবিক কারণ বেশিরভাগ ব্যবসার ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু এখন ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টরা আবার আস্তে আস্তে স্টার্টআপ এর জগতে ফিরে আসছেন। আরেকটি ব্যাপার হল যে চুক্তি নিয়ে আলাপ আলোচনার ক্ষেত্রে আগে যেখানে বছর কেটে যেত এখন তা একমাসের মধ্যেই সারা হয়ে যাচ্ছে। তবে মানিকন্ট্রোল -এর রিপোর্ট অনুযায়ী সম্পূর্ণ অফলাইন নির্ভর স্টার্টআপকে কোন ভেঞ্চার ফান্ড সহায়তা করবে না।
লকডাউনের সময়েও অনলাইন শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং গেমিং স্টার্টআপগুলি ফান্ড পেয়ে যাচ্ছিল আর এখন লকডাউন পরবর্তী সময়ে প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা সব থেকে সহজে ফান্ড পাচ্ছে। ভেঞ্চার ইন্টেলিজেন্সের তথ্য অনুযায়ী প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা স্টার্টআপগুলি এই বছরে রেকর্ড পরিমাণ ১.৮ বিলিয়ন ডলার ক্যাপিটাল যোগাড় করেছে। আর এর মধ্যে বাইজু একাই তুলেছে বিলিয়ন ডলার।
৩। কারও পৌষমাস কারও সর্বনাশ
স্টার্টআপ ‘হোমলেন’ এই মহামারীর সময়েও ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং -এ এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে তাদের নিজস্ব থ্রিডি ডিজাইন টেকনলজি প্ল্যাটফর্ম স্পেসক্রাফ্ট এর সাহায্যে। গ্রাহকরা যে মাপ এবং জায়গা দেন সেই অনুযায়ী এবং তাঁদেরই পছন্দ করা ডিজাইন লেআউট নিয়ে তাতে কিছু মৌলিক ভাবনার মিশেল ঘটিয়ে ‘হোমলেন’ সেই লেআউট তাঁদের সামনে তুলে ধরে যার থেকে গ্রাহকরা বুঝতে পারেন তাঁদের ঘর কেমন দেখতে লাগবে সম্পূর্ণ হওয়ার পর। বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত ‘হোমলেন’ এবং কোম্পানীর কর্ণধার শ্রীকান্ত আয়ার।
ভার্চুয়াল মিটিং এর মাধ্যমে ডিজাইনটি ঠিক হয়ে গেলে ‘হোমলেন’ -এর ডিজাইনাররা গ্রাহকের বাড়িতে যান এবং মাপঝোক নেন। তারপর আসল কাজ শুরু হয়। বর্তমানে কোম্পানীটি বেঙ্গালুরু বা চেন্নাইয়ের মত শহরগুলিতে, যেখানে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে, গ্রাহকদের ঘরে পৌঁছচ্ছেন। মুম্বাই এবং দিল্লির মত শহরগুলিতে, যেখানে মহামারীর প্রকোপ বেশি, কেবল ভার্চুয়াল অর্ডার নেওয়া হচ্ছে। লকডাউন সরে গেলে এই জায়গাগুলিতে কাজ করা হবে।
মহামারীর আগে ‘হোমলেন’ যা অর্ডার পেত তার তুলনায় পরবর্তীকালে তাঁরা ৮০% এর উপর বেশি অর্ডার পেয়েছে।
৪। পাল্টে যাবে ঘরদোর, থাকবে ঘরের মধ্যে বাগান, বাড়বে প্রযুক্তি-নির্ভরতা
মহামারীর জন্য অনেককিছুই পাল্টে গেছে, পাল্টাবে আরো অনেক কিছু। অনেকটা সময়ই সবাইকে একে অন্যের সঙ্গে কাটাতে হচ্ছে। ঠোকাঠুকি যে লাগছে না তা নয় তবে অনেকেই মেনে নিচ্ছেন কারণ নিজের নিরাপত্তা ও সুবিধার্থে তাই প্রয়োজন। আবার অনেকে পরিবারের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে পেরে খুশি। তবে বাড়ি আজ আর নিছক বাড়ি নয়; কখনও কখনও তা হয়ে উঠছে অফিস।
এমন পরিস্থিতিতে দিল্লীর এক ডিজাইন স্টুডিও ‘আর্কিটেকচার ডিসিপ্লিন’ -এর মূখ্য আর্কিটেক্ট আক্শত ভাট মনে করেন যে মানুষ যেহেতু বেশিরভাগ সময়ে বাড়িতেই কাটাচ্ছেন আর তাঁর কাজকর্মের জায়গার প্রয়োজন হচ্ছে তাই পরবর্তীকালে যে বাড়িগুলি তৈরি হবে তার ডিজাইন বদলে যাবে। আক্শত ধারণা করছেন যে বেশিরভাগ পরিবার বড় আয়তনের থাকার জায়গা পছন্দ করবেন যেখানে স্বাভাবিকভাবে আলো বাতাস খেলবে।
প্রশস্ত ব্যালকনিতে লোকেদের আরো বেশি করে বাগান করতে দেখা যাবে। কিন্তু বাগান করার পাশাপাশি বাড়বে প্রযুক্তি নির্ভরতা যেমন ঘরের দরজায় স্মার্ট লকের ব্যবহার। আবার ঘরদোর তৈরি হতে পারে এমন সব বস্তু দিয়ে যা ‘ভাইরাস প্রতিরোধী’।
৫। গাধার দুধের দাম লিটার প্রতি ৭০০০ টাকা
আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্য ও পূর্ব এশিয়ায় বহু বছর ধরে বিক্রি হচ্ছে গাধার দুধ। ভারতে বিক্রি হচ্ছে লিটার প্রতি ৭,০০০ টাকায়। গবেষণায় জানা গেছে গাধার দুধে ফ্যাট কম, উপরন্তু রয়েছে ভিটামিন এ, বি-১, বি-২, বি-৬, ডি, সি, ই। ওমেগা-৬। ওষুধ ও প্রসাধনী সামগ্রী তৈরি করার ক্ষেত্রেও গাধার দুধের কদর আছে কাঁচামাল হিসাবে। এই সময়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী যে কারণে উল্লিখিত দেশগুলিতে এই দুধ কিনতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়।
কেরালার এর্নাকুলামের অ্যাবি বেবি এমন ব্যবসায় নামতে চেয়েছিলেন যেখানে বেশি প্রতিযোগিতা নেই। নেট-বইপত্র ঘেঁটে গাধার দুধের ব্যাপারটা মনে ধরে। শেষে শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে রামমঙ্গলমে গাধার খামার করলেন। গড়লেন ছোট কারখানাও। ২০১৭-তে শুরু ব্যবসা। গাধার দুধ থেকে তৈরি হল ক্রিম ও শ্যাম্পু। আর্থারাইটিসের ক্রিমের দাম ৪,৮৪০ টাকা, এগজিমার ক্রিম ৬,১৩৬। ২০০ মিলিলিটারের মেডিকেটেড শ্যাম্পুও ২,৪০০ টাকার। অ্যাবি বেবি -এর দাবি, গত অর্থবর্ষে সেই ব্যবসার অঙ্ক ছুঁয়েছে প্রায় ১.১৫ কোটি টাকা। আগের অর্থবর্ষের থেকে ৭০% বেশি।