আমরা মানুষ স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি, বিলাসী জীবন যাপন করতে ভালোবাসি? আর তার জন্য প্রয়োজন প্রচুর অর্থের? তাই আমরা প্রচুর অর্থ ইনকাম এর মাধ্যমে ধনী হওয়ার প্রবল ইচ্ছা মনের ভেতর সব সময় পুশে রাখি? ধনী হওয়ার স্বপ্নটাকে পূরণ করতে চাইলে একমাত্র শর্টকাট উপায় হচ্ছে ব্যবসা করা। আমাদের মাঝে একটা ভুল ধারণা রয়েছে যে ধনী হতে হলে অনেক বড় বড় ব্যবসা করতে হয়। কিন্তু কথাটা সব সময় সত্য নয়।
পৃথিবীতে যারা ধনী হয়েছে তারা প্রথমে ধনী ছিল না। এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে যারা একটা সময় ছোট ব্যবসা করত কিন্তু এখন মিলিয়ন মিলিয়ন অর্থের মালিক। ছোট্ট একটা ব্যবসা ভালোবাসা দিয়ে শুরু করতে পারলে সেখান থেকেই প্রচুর অর্থ উপার্জন করে ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হওয়া সম্ভব। আজকে আমরা মোট 15 টা ব্যবসা আইডিয়া শেয়ার করবো যেগুলো খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে শুরু করা সম্ভব।
১.শুরু করতে পারেন স্টেশনারি ব্যবসা
বই-পুস্তক খাতা-কলমে চাহিদা সব সময় সমান হারে বিদ্যমান থাকে। দেশে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, পাশাপাশি অফিস, আদালত, ব্যবসা বাণিজ্য ইত্যাদি দেশের উন্নতির সাথে তাল মিলিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে । এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতি নিয়ত স্টেশনারি পণ্য প্রয়োজন হয়। তাই ক্ষুদ্র পরিসরে স্টেশনের ব্যবসা শুরু করার মাধ্যমে বেকার জীবন থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।
২. মুদি ব্যবসা যা সবাই করতে পারে
মুদি ব্যবসা এমন একটি ব্যবসা যেটা সবসময়ই ভালো চলে। পড়াশোনা কম থাকুক অথবা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধকতা থাকুক তাতে কোন সমস্যা নেই। মনে প্রবল ইচ্ছা থাকলে যে কেউ এই ব্যবসা করে নিজের বেকারত্ব ঘোচাতে পারবে। মুদি দোকানের যেহেতু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় বিক্রয় করা হয় তাই এই ব্যাবসায়ী সব সময় বিক্রি থাকে।
যেকোনো বড় হাটে-বাজারে মুদি দোকান দিলে সবচেয়ে ভালো হয় তবে আরও ক্ষুদ্র পরিসরে শুরু করতে চাইলে বাড়িতেই মুদি দোকান খানা খুলে ব্যবসা করা যায়।
৩. ব্যানার ও সাইনবোর্ডের দোকান
সামান্য কাজ জানা থাকলে প্রায় বিনা পুঁজিতে এই ব্যবসাটা শুরু করা সম্ভব। বেনারস সাইনবোর্ডের ব্যবসা করতে চাইলে আগে কিভাবে ব্যানার সাইনবোর্ড বানায় সেটা শিখে নিতে হবে। তুলি দিয়ে ভালো লিখতে পারলে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন পাশাপাশি ডিজিটাল ব্যানার সাইনবোর্ড তৈরি করার জন্য কম্পিউটারে ডিজাইন শিখে ব্যবসা দিয়ে করা যেতে পারে।
যেহেতু বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রচারণার জন্য সাইনবোর্ড ব্যানার ফেস্টুন লিফলেট এর প্রয়োজন হয় তাই এই ব্যবসার চাহিদা সারা বছরই সমান হারে থাকে। পাশাপাশি নির্বাচনের সময় নির্বাচনী প্রচারণার জন্য প্রচুর পোস্টার ব্যানার ফেস্টুনের প্রয়োজন হয়।
৪. কাঠের ফার্নিচার এর ব্যবসা
মানুষ সামাজিক জীব। আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হওয়ার সাথে সাথে মানুষের বিলাসিতা বৃদ্ধি পায়। আমাদের দেশ ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যাচ্ছে মানুষ আর্থিকভাবে সচ্ছল হচ্ছে তাই সামনে ভবিষ্যতে এই ব্যবসার বিস্তার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই ব্যবসা করতে চাইলেন কিনে দোকানে রাখতে হবে পাশাপাশি কাঠের আসবাবপত্র তৈরি করার জন্য মাসিক বেতনে অথবা কাজের চুক্তিতে সুতার এবং কাঠের কাঠের নকশা খোদাইকারী রাখতে হবে।
৫. কাঠের ব্লক তৈরি ব্যবসা
কাপড় ছাপানোর জন্য কাঠের ব্লক ব্যবহার করা হয়। শাড়ি, পায়জাম জামা, টেবিল ক্লথ, টিভির পর্দা, বিছানা ইত্যাদিতে ব্লক ডিজাইন করা হয়। এইসব জিনিসে প্রতিনিয়ত ডিজাইন পরিবর্তন করতে হয়। নতুন ব্লক এর প্রয়োজন হয়। প্রায় সারাবছরই এই জিনিসের চাহিদা থাকে।
সাধারণত এক রঙের কাপড়ে ব্লক দিয়ে ডিজাইন করলে কাপড়গুলোকে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়। আর এই ব্লগ গুলো তৈরি করা হয় কাঠ দিয়ে । ছোট ছোট কাঠের খোদাই করে এর ডাইস তৈরি করা হয়। বিভিন্ন ডিজাইনের ব্লক ডাইস ডিজাইন তৈরি করে ব্যবসা করে যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারেন।
৬. বই বাঁধানোর ব্যবসা
ব্যবসা বাণিজ্য ও শিল্প কারখানা অফিস-আদালত ব্যাংক হিসাবের খাতা সহ নানা ধরনের বই ও প্রকাশনা সামগ্রী প্রয়োজন হয়। আর এসব জিনিসপত্র বাঁধাই করে রাখতে হয়। মোটামুটি সারাবছরই খাতা এবং বই বাঁধানোর কাজের চাহিদা থাকে। এই ব্যবসা করার আগে কিভাবে বই বাঁধাই করতে হয় সেটা শিখতে হবে এবং কার কাছ থেকে কাজ নিয়ে করবে সেটাও শিখতে হবে। প্রয়োজনের নিজে খাতা বাঁধাই করে বিক্রি করে ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে।
৭. ছবি বাধানোর ব্যবসা
ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ক্ষেত্রে অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় ছবি বাঁধাই করে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখলে অনেক সুন্দর দেখায়। ঘরের দেয়াল কে দৃষ্টিনন্দন করার জন্য পাশাপাশি নিজের ছবিকে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ এর জন্য ছবি বাঁধাই করা হয়। এই কাজটা এক ধরনের শিল্প। সারাদেশ প্রচুর প্রচুর লোক রয়েছে যারা এই পেশার সাথে সম্পৃক্ত। সৌখিন মানুষেরা সাধারণত এই জিনিসগুলোর প্রতি বেশী দুর্বল থাকে । তাই এই ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ উপার্জনের সুযোগ রয়েছে।
৮. হাঁস মুরগির খাদ্য তৈরির ব্যবসা আইডিয়া
গ্রাম কিংবা শহরে পশুপাখি খাদ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে । পোল্ট্রি মুরগি পালন, হাঁস মুরগি পালন, কবুতর পালন, পোষা পাখি পালনের ক্ষেত্রে খাদ্যের প্রয়োজন হয়। হাঁস-মুরগি পশুপাখির জন্য আলাদাভাবে খাদ্য কিনতে পাওয়া যায়। আপনি বেকারত্ব থেকে মুক্তি পেতে চাইলে এ ধরনের একটা ব্যবসা শুরু করতে পারেন। গো খাদ্য তৈরি করার জন্য বিভিন্ন ধরনের মেশিন রয়েছে যেগুলোতে কয়েক পদের খাবার একসঙ্গে মিশিয়ে গো খাদ্য তৈরি করা হয়। বাজারে এসব ব্যবসার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
৯. কাগজের ঠোঙ্গা তৈরির ব্যবসা
পলিথিন ব্যবহার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তাই সরকার এবং পরিবেশ বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত আমাদেরকে কাগজের ব্যবহার বৃদ্ধি করার কথা বলেন। দেশে এবং বিদেশে সাবজেক্টে কাগজের ঠোঙ্গার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বেকারত্ব থেকে মুক্তি পেতে অল্প টাকার মধ্যে চমৎকার এই ব্যবসাটি শুরু করা সম্ভব।
কাগজের ঠোঙা সাধারণত মিষ্টির দোকান, ফার্মেসি, জুতার বক্স তৈরি, শাড়ির বাক্স, বিরিয়ানি বিক্রির বাক্স ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করা হয়। উপরে উল্লেখিত জিনিসগুলো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস তাই এই পণ্যের চাহিদা সারা বছর সমান ভাবেই থাকে। তাই অল্প টাকার মধ্যে ব্যবসা শুরু করতে চাইলে ঠোঙ্গা তৈরির ব্যবসা চমৎকার একটা ব্যবসা হতে পারে।
১০. গুড়া মশলা তৈরি এবং প্যাকেটজাতকরণ
গুঁড়ামসলা হচ্ছে মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্য। তাই প্রতিনিয়ত মানুষের প্রয়োজন হয় । মান সম্মত ভাবে গুঁড়া মসলা উৎপাদন করে বাজারজাত করতে পারলে প্রচুর অর্থ উপার্জন করার সুযোগ রয়েছে। যদি একটা সময় বাটা মসলার চাহিদা ছিল কিন্তু এখন গুঁড়া মসলা ছাড়া গৃহিণীরা বিকল্প কিছু ভাবতেই পারেনা। তাই বেকারত্ব গোছানোর জন্য গুঁড়ামসলা উৎপাদন এবং প্যাকেটজাত করার ব্যবসা টা চমৎকার একটা আইডিয়া হতে পারে ।
১১. শুরু করতে পারেন ফুলের দোকানের ব্যবসা
ক্ষুদ্র ব্যবসার মধ্যে ফলের দোকানের ব্যবসা চমৎকার এবং স্মার্ট একটি ব্যবসা। নানা অনুষ্ঠানে অনেক বেশি পরিমাণে ফুলের প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে শীতকালে বিয়ে বাড়িতে, গায়ে হলুদে, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে এবং সভা-সমাবেশে ফুলের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এই ব্যবসাটা করতে হলে একটা ভালো পজিশনে স্থান নির্বাচন করতে হবে। এমন জায়গায় দোকান দিতে হবে যেখানে প্রচুর লোক সমাগম হয়েছে ।
১২. ফলের দোকানের ব্যবসা
সারা বছর বিভিন্ন সিজনে বিভিন্ন ধরনের ফল পাওয়া যায় । এছাড়া বিভিন্ন বিদেশি ফল রয়েছে যেগুলো সারা বছরই পাওয়া যায়। অল্প টাকায় ব্যবসা শুরু করতে চাইলে ফলের ব্যবসা উল্লেখযোগ্য একটা ব্যবসা। স্কুল, কলে্ বিশ্ববিদ্যালয়, বাস স্ট্যান্্ রেলস্টেশনের কাছে বা হাসপাতালের সামনে ফলের দোকান দিলে ব্যবসা ভালো চলে। এছাড়া বর্তমানে ভ্যানে করে ফল বিক্রি করার একটা প্রচলন সৃষ্টি হয়েছে যেটার মাধ্যমে আরও সহজেই বেকারত্ব থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।
১৩. কাগজের খাম তৈরি করে ব্যবসা করতে পারেন
অফিস-আদালতের বিভিন্ন ডকুমেন্ট পাঠানো, এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের, স্কুল কলেজের জরুরি কাগজপত্র এবং চিঠিপত্র পাঠানোর জন্য খামের প্রয়োজন হয়। এর বাইরে নববর্ষ, ঈদ, পূজা, হালখাতা, বিয়ে অনুষ্ঠান, বিয়ের অনুষ্ঠান জন্মদিন, সেমিনার ইত্যাদির দাওয়াত পত্র ও শুভেচ্ছা কার্ড বিনিময় এর জন্য বিভিন্ন ধরনের খাবার প্রয়োজন রয়েছে। এসব বিবেচনা করলে প্রায় সবসময়ই খামের চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন মাপের খাম তৈরি করে অফিস-আদালত এবং স্টেশনারি দোকানে সরবরাহ করে প্রচুর আয় করা সম্ভব।
১৪. মোমবাতি তৈরির ব্যবসা
দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের উপকরণের মধ্যে মোমবাতি অন্যতম। যদিও বর্তমানে শুধুমাত্র বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মোমবাতির প্রচলন রয়েছে। এটাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে ফেললে ভুল হবে। তবে সৌখিন পণ্য হিসেবে বিবেচনা করে ব্যবসায় মনোনিবেশ করা যেতে পারে। মোমবাতি তৈরি করার ক্ষেত্রে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে । এ ধরনের মম তৈরি করে বিভিন্ন কসমেটিকসের দোকান এবং গিফট আইটেমের দোকানে বিক্রি করে ব্যবসা করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কারণ বর্তমানে মম শুধুমাত্র সৌখিন পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
১৫. প্যাকেজিং এর ব্যবসা আইডিয়া
গ্রাম বা শহর সব জায়গায় শাড়ি, জুতা, মিষ্টি, খাবার প্রভৃতি দোকানে প্যাকেট দরকার হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতির ক্ষেত্রে ভালো প্যাকেজিং খুব বেশি গুরুত্ব রাখে। দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর ইনকাম করার সুযোগ রয়েছে। তাই অল্প ব্যবসা শুরু করে বেকারত্ব থেকে মুক্তি পেতে চাইলে প্যাকেজিং এর ব্যবসা শুরু করলে খুব সহজেই বেকারত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।