পূর্ণ সময়ের চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করে কিছু বাড়তি আয় করতে পারলে মন্দ কী? আর তা যদি করা যায় ঘরের আরামে বসেই, তাহলে তো কথাই নেই। চাকরির নিশ্চয়তাও রইল আবার খানিক বাড়তি টাকাও ঘরে এলো।
চাকরির পাশাপাশি কী কী ব্যবসা করা যায়? আসুন জেনে নিই এমনই কয়েকটি ব্যবসার আইডিয়া, যা শুরু করা যায় নাম মাত্র বিনিয়োগে এবং পূর্ণ সময়ের চাকরির দায়িত্ব কোনও ভাবে অবহেলা না করেই এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সুচারুভাবে।
চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করতে চান? রইলো ১২টি সাইড বিজনেস আইডিয়া
১. এয়ারবিএনবি-এর মাধ্যমে ঘর ভাড়া দেওয়া
বর্তমানে টাকা রোজগারের একটি সহজ উপায় এয়ারবিএনবি-র মাধ্যমে ঘর ভাড়া দেওয়া। আপনার বাড়িতে যদি অতিরিক্ত শোয়ার ঘর থাকে তাহলে সহজেই সেই ঘর ভাড়া দিয়ে মাসে ভাল রকম রোজগার হতে পারে। এমনকি বাইরের বসার ঘরটিকেও খানিক অদলবদল ঘটিয়ে ভাড়া দিতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার বাড়িতেই থাকবেন অতিথি ফলে একেবারে আলাদা কোনও পরিকাঠামোর প্রয়োজন নেই, আবার টাকার লেনদেন যেহেতু হবে এয়ারবিএনবি-র মাধ্যমে ফলে টাকার নিশ্চয়তা নিয়েও ভাবতে হবে না।
তবে আপাতভাবে একদমই বিনা পরিশ্রমে আয় মনে হলেও তা কিন্তু নয়। যে সময়ে অতিথি থাকবে সেই সময়টাতে তাঁর যাবতীয় প্রয়োজনীয়তার খেয়াল রাখতে হবে আপনাকে, দিতে হবে দরকারি পরিষেবা। পাশাপাশিই ঘরের পরিচ্ছন্নতার দিকেও নজর দিতে হবে।
তবে বছরের কোন সময়ে আপনি ভাড়া দিতে চান সেই নিয়ন্ত্রণও আপনারই থাকবে, ফলে নিজের সুবিধে মতো সময়ে ভাড়া দিতে পারেন। বাড়ির এলাকার ওপর অনেকটাই নির্ভর করে অতিথি পাওয়ার হার।
এয়ারবিএনবি-তে ভাড়া দেওয়ার জন্য তাদের সাইটে গিয়ে Become a host এ ক্লিক করে নাম নথিভুক্ত করতে হবে।
২. অনলাইন কোর্স তৈরি
আপনার কোনও বিশেষ বিষয়ের ওপর যথেষ্ট দখল থাকলে অনলাইনে কোর্স তৈরি করে তা থেকে রোজগারের কথা ভাবতে পারেন। সেটি যেকোনও বিষয়েই হতে পারে। আপনার নিজের সময়ে মতো কোর্স তৈরি করে আপলোড করে দিলেই চলবে। ছাত্রছাত্রীরা সেই কোর্স কিনলেই আপনার কাছে টাকা চলে আসবে।
ইউডেমি, স্কিলশেয়ার, লিন্ডা-এর মতো প্ল্যাটফর্মের সাহায্যে এই ব্যবসা করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার কোর্সের কনটেন্ট ও উপস্থাপনা উচ্চমানের হওয়া জরুরি। তাহলেই ছাত্রছাত্রীরা আপনার কোর্স কিনতে উৎসাহী হবে। ভাল মানের কোর্স তৈরি করতে পারলে চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করে ভাল আয় হবে।
৩. অনলাইন শিক্ষকতা
চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা হিসেবে প্রাইভেট টিউশন বরাবরই জনপ্রিয়। কিন্তু এখন ইন্টারনেটের সুবিধা থাকায় আপনি বাড়িতে বসেই অনলাইনেও প্রাইভেট টিউশন করতে পারেন সহজেই।
অনলাইন কোর্সের মতোই আপনি সেই বিষয়ই পড়াবেন যে বিষয় আপনি দক্ষ। সেটা যেমন স্কুল কলেজের পাঠক্রমের কোনও বিষয় হতে পারে তেমনই হতে পারে কোনও কোনও বিদেশি ভাষা অথবা গান, বাদ্যযন্ত্র বাজানো বা রান্না।
বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম রয়েছে যেমন আরবান প্রো, লার্ন পিক বা কিউ ম্যাথ। এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে আপানকে শিক্ষক/শিক্ষিকা হিসেবে নাম নথিভুক্ত করাতে হবে, কোনও ছাত্র বা ছাত্রীর সেই প্রশিক্ষণের চাহিদা থাকলে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হবে। অথবা ছাত্রছাত্রীরা তাদের চাহিদা পোস্ট করলে আপনি আবেদন করতে পারবেন। এই প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে কিউ ম্যাথ শুধুমাত্র অঙ্ক শিক্ষার জন্য বিশেষভাবে তৈরি এবং এখানে শুধুমাত্র অনলাইন শিক্ষারই ব্যবস্থা রয়েছে।
৪. ই-বুক লেখা
আজকের দিনে যে কেউ নিজেই বই লিখে অনলাইনে প্রকাশ করতে পারে। প্রথমেই ঠিক করুন কী বিষয়ে আপনি লিখতে চান, বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা করে নিজের জ্ঞান ও সৃজনশীলতা ব্যবহার করে তৈরি করে ফেলুন বই আর তারপর অ্যামাজন-এর কিন্ডল্ ডিরেক্ট পাবলিশিং মারফৎ তৈরি করে ফেলুন আপনার ই-বুক।
কোনও বিশেষ বিষয়ের ওপর যেমন বই লিখতে পারেন তেমনই নেহাতই গল্পের বইও লিখতে পারেন। তবে বইয়ের বিক্রি বাড়ানোর জন্য আপনাকে নিয়মিত প্রচার চালাতে হবে, যাতে আপনার বই সম্পর্কে পাঠকের মনে যথেষ্ট আগ্রহ তৈরি হয় ও তাঁরা বই কিনে পড়েন।
৫. ফ্রিল্যান্সিং
চাকরির পাশাপাশি ব্যবসার জন্য ফ্রিল্যান্সিং খুবই উপযুক্ত। আপনি আপনার চাকরিস্থলে যে কাজ করেন সেই কাজ করেই খানিক অতিরিক্ত রোজগার করতে পারেন অথবা চাকরিস্থলে যা করতে পারেন না কিন্তু আপনি যা করতে ভালবাসেন ও যা করার দক্ষতা আপনার রয়েছে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে সেই কাজই আপনি করতে পারেন। আজকাল বহু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম রয়েছে যার মাধ্যমে সহজেই ফ্রিল্যান্স কাজ পাওয়া সম্ভব।
৬. অনলাইন রিসেলিং ব্যবসা
অনলাইন রিসেলিং হল উৎপাদকের থেকে পণ্য কিনে অনলাইনে সেই পণ্য বিজ্ঞাপিত করা ও বিক্রি করা। এক্ষেত্রে আপনাকে কোনও পণ্য মজুদ রাখতে হয় না, অর্ডার এলে তবেই আপনি উৎপাদকের থেকে পণ্য সংগ্রহ করে পৌঁছে দেবেন ক্রেতাকে। চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা হিসেবে অনলাইন রিসেলিং একটি অত্যন্ত উপযোগী মাধ্যম, কারণ ঘরে বসেই সহজেই এই ব্যবসা করা যায়। এতে আপনাকে প্রচুর সময়ও দিতে হবে না, মাথাও খাটাতে হবে না বিস্তর।
বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও অ্যাপ অনলাইন রিসেলিং ব্যবসাকে করে দিয়েছে খুবই সহজ। আপনাকে শুধু নতুন নতুন ক্রেতার কাছে পৌঁছতে হবে ও তাঁদের আস্থা অর্জন করতে হবে।
৭. অনলাইন ডোমেইন ফ্লিপিং
বর্তমানের চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা হিসেবে উঠে এসেছে ডোমেইন ফ্লিপিং-এর ব্যবসা। ডোমেইন ফ্লিপিং হল একটি অনলাইন ডোমেইন নেম কিনে রেখে পরবর্তীতে বেশি দামে সেই ডোমেইন বিক্রি করা। তবে এক্ষেত্রে ডোমেইন নেম নিয়ে আগে খানিক পড়াশোনা করে নেওয়া ভাল, তাহলেই অনুমান করা যেতে পারে কোন ডোমেইন নেম-এর পরবর্তীকালে চাহিদা তৈরি হতে পারে।
এই ব্যবসায় খুব বেশি সময় দিতে হয় না, পরিশ্রমও বিশেষ কিছু নেই, তবে খানিকটা বিনিয়োগ রয়েছে। আপনি যদি সঠিক কৌশল নিয়ে ঠিক মতো ডোমেইন কিনে রাখতে পারেন তাহলে ভাল মতো রোজগার হতে পারে। ডোমেইন কেনা বেচার জন্য কয়েকটি ভাল সাইট হল ফ্লিপা, ওয়েবসাইট ব্রোকার, গো ড্যাডি, সেডো ইত্যাদি।
৮. মোবাইল টাওয়ার বসানোর জন্য জায়গা ভাড়া দেওয়া
চাকরির পাশাপাশি আয়ের জন্য মোবাইল টাওয়ার বসানোর জন্য জায়গা ভাড়া দেওয়া একটি লাভজনক উপায়। আপনার যদি এরকম কোনও উপযুক্ত জায়গা থাকে তাহলে সরাসরি কোনও মোবাইল টাওয়ার ইনস্টলেশন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। মোবাইল টাওয়ার বসানোর জন্য নীচের লিঙ্কগুলোতে গিয়ে আবেদন করতে পারেন।
০৯. ইউটিউব চ্যানেল খোলা
চাকরির পাশাপাশি আয় করার আরও একটি সহজ উপায় হল ইউটিউব চ্যানেল। আমরা সারাদিনে হাজারো রকমের ভিডিও দেখি ইউটিউবে। ফলে যেকোনও বিষয়ে ইউটিউব খুলেই লাভ করা সম্ভব।
আপনি যদি ভাল রান্না করতে পারেন, আপনার কাছে থাকে অভিনব সব রেসিপি তাহলে সেটা পুঁজি করেই একটি চ্যানেল খুলে ফেলতে পারেন। এমনকি প্রচলিত সহজ রান্না দিয়েও চ্যানেল খোলা যেতে পারে, কারণ আজ কাল অনেকেই রান্না শেখেন ইউটিউবের ভরসাতেই। ভাল ভাবে উপস্থাপন করতে পারলেই দর্শক পাওয়া যাবে।
এরকমই অন্য যেকোনও দক্ষতাকে পুঁজি করেই ইউটিউব চ্যানেল খুলে লাভ করা সম্ভব। দর্শক সংখ্যা একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের ওপর গেলেই টাকা পাবেন ইউটিউবের পক্ষ থেকে।
১০. প্রাকৃতিক সাবান তৈরি
সমাজের একটা অংশের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা ও পরিবেশ সচেতনা বৃদ্ধি পাচ্ছে আর তাই বিষাক্ত রাসায়নিকের পরিবর্তে প্রাকৃতিক জিনিস ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছেন একটা বড় অংশের মানুষ আর এখান থেকেই তৈরি হচ্ছে ব্যবসার সুযোগ।
আপনার যদি সাবান তৈরি জানা থাকে ও প্রাকৃতিক উপাদান থেকেই বানিয়ে ফেলতে পারেন সুগন্ধি সাবান তাহলে চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করে ভাল রকম আয় করতে পারেন, কারণ হাতে বানানো সাবান ভাল দামে বিক্রি হয় ও পণ্যের মান ভাল হলে ক্রেতা দামে কার্পণ্য করেন না।
১১. নার্সারি তৈরি
বাড়ির ছাদ বা উঠোনেই ছোট বাগান তৈরি করে বাড়তি আয় করা সম্ভব। পূর্ণ সময়ের চাকরির সব দায়িত্ব পালন করার পরও অনায়াসেই নার্সারির দেখভাল করা সম্ভব। তবে এই পার্টটাইম ব্যবসা শুরু করতে চাইলে গাছের প্রতি ভালবাসা ও গাছপাল সম্পর্কে জানা বোঝা থাকা জরুরি। এই নার্সারি থেকে আপনি বিভিন্ন দোকান অথবা ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের কাছে গাছ বিক্রি করতে পারেন।
১২. ট্রান্সক্রাইবিং
ট্রান্সক্রাইব করার অর্থ হল শুনে শুনে হুবুহু সেটাকেই লেখা। অন্য ভাষায় অডিও ফাইলকে লিখিত ফাইলে পরিণত করা। এই কাজের জন্য খুব বেশি কোনও দক্ষতার প্রয়োজন হয় না। ভাল টাইপিং স্পিড ও সঠিক বানানের ধারণা, এই দুটিই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া প্রয়োজন মনযোগ ও খুঁটিনাটির দিকে নজর।
অন্য বাচনভঙ্গীতে ইংরেজি শোনার অভ্যেস থাকলে প্রচুর বিদেশের কাজও পাওয়া সম্ভব। অনলাইনে ঘরে বসেই এই কাজ করা যায়। সাধারণত বিভিন্ন মিটিং বা সাক্ষাৎকারের রেকর্ডিং শুনে তা অনুপুঙ্খ লিখতে হয়। চাকরির পাশাপাশিই এই পার্টটাইম ব্যবসা করে লাভ করা সম্ভব।
নিজের শখকেই সাইড বিজনেস-এ পরিণত করা সব থেকে সুবিধাজনক কাজ, এতে এক দিকে যেমন অতিরিক্ত টাকা রোজগার হবে অন্য দিকে কাজ করতে একঘেয়েও লাগবে না।তাই আজই শুরু করতে পারেন এইসব কাজ।
তথ্যসূত্রঃ সরল মানুষ টিম