যেভাবে দিন দিন খাল আর নদী দখল ও দুষণ হচ্ছে তাতে করে প্রতিনিয়ত মাছের প্রাকৃতিক উৎস ধ্বংশপ্রাপ্ত হচ্ছে। অন্যদিকে সম্প্রসারিত হচ্ছে পুকুর হচ্ছে মাছে চাষ। বাণিজ্যিকভাবে আমাদের দেশে অনেকে মাছ চাষের সাথে সম্পৃক্ত। আবার অনেকের প্রধান পেশা মাছ চাষ। বর্তমানে মাছের সাথে হাস চাষ বেশ লাভজনক একটি প্রযুক্তি। মৎস্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের মতে, পুকুরে হাঁস ও মাছের সমন্বিত চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করলে খুব সহজে বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব।
ঢাকার আশপাশের এলাকা- ধামরাই, সাভার, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জসহ দেশের অনেক স্থানে হাঁস ও মাছের সমন্বিত চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ পদ্ধতিতে অনেক সুবিধা রয়েছে যেমন- এর জন্য পুকুরে তেমন বাড়তি সার ও খাদ্য দিতে হয় না। মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। একই সাথে মাছ, হাঁসও ডিম থেকে সমানে আয় করা যায়।
☛ যেভাবে শুরু করতে পারেন : এ প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে চাইলে আপনাকে ৪০-৫০ শতাংশ আয়তনের একটি পুকুর লাগবে। ১০০- ১৫০টি হাঁস, ১৫০০-১৮০০টি মাছের পোনা, হাঁসের ঘর। এসব পরিকল্পিতভাবে করলে ভালো হয়। পাহারাদারের ঘরটি হাঁসের ঘরের দক্ষিণ পাশে হলে ভালো হয়।
☛ পুকুর তৈরি করুন নিখুঁত ভাবে : আপনাকে সঠিকভাবে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হলে পুকুরের চারপাশের পাড় ভালোভাবে মাটি দিয়ে উঁচু করে বাঁধতে হবে। পুকুরের তলদেশ সংস্কার করতে হবে। পুকুরে চুন প্রয়োগ করতে হবে প্রতি শতকে ১ কেজি হারে। চুন প্রয়োগের পর পানি সরবরাহ করতে হবে। মনে রাখবেন চুন প্রয়োগের ২-৩ সপ্তাহ পর মাছ ছাড়তে হবে। পুকুরে কোনো আগাছা রাখা যাবে না, এমনকি পানা থাকলেও তা পরিষ্কার করে দিতে হবে। পুকুরে পানি কমানো বা বাড়ানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে।
☛ কোন জাতের মাছ নির্বাচন করবেন : হাঁস চাষ করায় পুকুরে মাছের বিভিন্ন প্রকার খাবারের সৃষ্টি হয়। এজন্য ভিন্ন ভিন্ন খাদ্যাভ্যাসের বিভিন্ন জাতের মাছের চাষ করা উচিৎ। তাছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভিন্ন ভিন্ন স্তরের খাবার খায়। মাছের প্রজাতির মধ্যে সিলভার কার্প ও কাতলা-পানির উপরের স্তরে খাদ্য খায় গ্রাস কার্প-পুকুরের জলজ আগাছা ও ঘাস খায়, কমন কার্প- পুকুরে তলদেশের খাদ্য খায় বলে জানালেন মৎস্য বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও মৃগেল, কালিবাউশ, মিরর কার্প, সরপুঁটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাষ করতে পারেন। মাছের সম্ভব্য সংখ্যা: প্রতি শতকের জন্য সিলভার কার্প- ১০-১৫টি, কাতলা/ব্রিগেড- ৬টি, মৃগেল ৬টি, কালিবাউশ ৩টি, গ্রাস কার্প ৩টি, সরপুঁটি ৭-১০টি।
☛ হাঁসের ঘর তৈরি : পুকুর পাড়ে কিংবা পুকুরের ওপর ঘরটি তৈরি করতে হবে। ঘরের উচ্চতা ৫-৬ ফুট হলে ভালো হয়। ঘর তৈরিতে বাঁশ, বেত, টিন, ছন, খড় ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘরটি খোলামেলা হতে হবে এবং সাপ ও ইঁদুর থেকে মুক্ত রাখতে হবে।
☛ উন্নত হাঁসের জাত : হাঁসের জাত নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যে জাতের হাঁস বেশি ডিম দেয় সে জাতের হাঁস নির্বাচন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইন্ডিয়ান রানার ও খাকি ক্যাম্পেবেল নির্বাচন করা যেতে পারে। এ জাতের হাঁস ৫ মাস বয়স থেকে ২ বছর পর্যন্ত ডিম দেয়। বছরে ২৫০- ৩০০টি ডিম দিয়ে থাকে।
☛ হাঁসের খাদ : শুকনা খাদ্য না দিয়ে হাঁসকে সবসময় ভেজা খাদ্য দেয়া উচিত। খাদ্যে আমিষের পরিমাণ ডিম দেয়া হাঁসের ক্ষেত্রে ১৭-১৮ শতাংশ ও বাচ্চা হাঁসের ক্ষেত্রে ২১ শতাংশ রাখা উচিত।
☛ সম্ভব্য আয়-ব্যয় : ৪০-৫০ শতাংশের একটি পুকুরে ১০০টি হাঁসের জন্য এ প্রকল্প শুল্ক করলে সব মিলে খরচ দাঁড়াবে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। সঠিক পরিচর্যা আর যত্ন নিতে পারলে প্রথম বছরে যাবতীয় ব্যয় বাদ দিয়ে ৬০-৯০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব হতে পারে।
☛ কোথায় পাবেন হাঁসের বাচ্চা : দৌলতপুর হাঁস খামার, নারায়ণগঞ্জ হাঁস প্রজনন কেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত হাঁস-মুরগির খামার ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের নিকট থেকে হাঁস বা হাঁসের বাচ্চা সংগ্রহ করতে পারেন।
☛ কোথায় পাবেন মাছের পোনা : এশিয়ার বিখ্যাত হালদা নদীর পোনা সবচেয়ে ভালো। তবে আপনার কাছে সরকারি মৎস্য পোনা উৎপাদন খামার থেকে মাছের পোনা সংগ্রহ করতে পারেন।
রোগমুক্ত, উন্নত জাতের হাঁস আধুনিক পদ্ধতি ও সঠিক নিয়ম অনুযায়ী চাষ করুন। যে কোনো পরামর্শের জন্য আপনার উপজেলা বা জেলা মৎস্য ও পশুসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।