রোজই নতুন নতুন ব্যবসার আইডিয়া মাথায় আসছে, গিজ গিজ করছে অভিনব সব ব্যবসার ধারণা। ইন্টারনেট ঘেঁটে জেনেও নিচ্ছেন সেই ব্যবসার যাবতীয় খুঁটিনাটি। বন্ধুরাও উত্সাহ দিচ্ছে সব আইডিয়াতেই। প্রতিটি ব্যবসাতেই দেখতে পাচ্ছেন বিপুল লাভের সম্ভবনা। কঠিন হচ্ছে এর মধ্যে একটি নির্দিষ্ট ব্যবসাকে বেছে নেওয়া। আপনিও কী একই সমস্যায় পড়ছেন?
চিন্তা করবেন না, প্রায় প্রত্যেক শুরুয়াতি ব্যবসায়ীই জীবনের একটা পর্যায় এই অবস্থার মধ্যে দিয়ে যান। যেকোনও ব্যবসার লাভজনক হবার একটিই মূল শর্ত, বাজারে সেই পণ্য বা পরিষেবার চাহিদা।
আপাত দৃষ্টিতে একটি ব্যবসাকে লাভজনক মনে হলেও বাস্তববিচারে তার কোনও বাজার মূল্য নাও থাকতে পারে। তাই সব সময়েই ব্যবসা শুরুর আগেই ব্যবসার আইডিয়াটি যাচাই করে নেওয়া উচিত। এতে অযথা অর্থ ও সময়ের অপচয় হয় না। নষ্ট হয় না আত্মবিশ্বাসও।
তাই ব্যবসা শুরু করার কথা ভাবলে প্রথমে নীচের কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে আপনার ব্যবসার আইডিয়াটি যাচাই করে নিন যাতে ব্যবসা শুরু করে কোনও ক্ষতির মুখে পড়তে না নয়।
১. প্রথমেই ব্যবসার আইডিয়াটি লিখে ফেলুন
আমাদের মাথায় নানা ধারণা থাকলেও সেটিকে কাগজ কলমে লিখে ফেললেই প্রাথমিকভাবে একটা স্বচ্ছতা আসে। ব্যবসার পরিকল্পনা লিখতে হবে না। নীচের কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর লিখুন।
ক. আপনার ক্রেতা বা গ্রাহক কারা হবেন?
এই প্রশ্নের উত্তর যদি হয় যে ‘সবাই’, তাহলে বুঝতে হবে আপনার ব্যবসার আইডিয়াতে গলদ রয়েছে। এই আইডিয়াকে আরো ঘষা মাজা করা প্রয়োজন।
আপনার তৈরি পণ্য বা পরিষেবাটি আপনি কাদের জন্য বানাচ্ছেন সে বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা থাকা প্রয়োজন। আপনার ক্রেতা কারা হবেন, তাঁদের বয়স কেমন? তাদের লিঙ্গপরিচিতি কী? তাঁদের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি কী? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা থাকা প্রয়োজন। যেকোনও ব্যবসার প্রাথমিক ধাপ বাজার নির্ধারণ।
খ. কোন সমস্যার আপনি সমাধান করছেন?
যেকোনও পণ্য বা পরিষেবার চাহিদার কারণ হল সেই পণ্য বা পরিষেবার মাধ্যমে গ্রাহকের কোনও না কোনও সমস্যার সমাধান হয়। আপনার পণ্য বা পরিষেবাটি কোন কোন সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম তা লিখুন।
এরপর ভাবুন এগুলো কি আপনার গ্রাহকের কাছে সত্যিই সমস্যা? নাকি আপনি ভেবে নিচ্ছেন যে এগুলো তাঁদের সমস্যা। এবং যদি এটা তাঁদের কাছে সমস্যা হয় তাহলে ভাবুন তারা কী আদৌ এই সমস্যার সমাধানের জন্য পয়সা খরচ করতে ইচ্ছুক? নিজেকে দিয়ে ও নিজের চারপাশ থেকে এই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করুন।
গ. আপনার পণ্য বা পরিষেবা কী ভাবে সেই সমস্যার সমাধান করবে?
সমস্যা চিহ্নিত করার পর নির্দিষ্ট করুন আপনার ব্যবসার আইডিয়াটি কীভাবে সেই সমস্যার সমাধান করবে? আপনার ব্যবসার আইডিয়ায় কোনও ফাঁক থাকলে এই ধাপে তা ধরা পড়বে। আপনার পণ্য বা পরিষেবাটি কী ভাবে আপনার ক্রেতার জীবনের মানকে উন্নত করবে সে বিষয়ে আপনার নিজের পরিষ্কার ধারণা না থাকলে আপনি আপনার ক্রেতাকেও কোনওদিন তা কেনার জন্য রাজি করাতে পারবেন না।
২. গ্রাহক কেন আপনার থেকে এই পণ্য বা পরিষেবাটি নেবেন?
পণ্য বা পরিবেষাটি নির্দিষ্ট হলে পরবর্তী প্রশ্ন হল একজন ক্রেতা কেন আপনার থেকে এটি নিতে চাইবেন। আপনার ব্যবসা কোন সমস্যা সমাধান করবে ও কাদের জন্য সেই সমস্যার সমাধান করবে এই দুটি বিষয়ে চিহ্নিত করার পর দেখুন বাজারে কারা ইতিমধ্যেই সেই সমস্যার সমাধান যোগাচ্ছে।
ভেবে দেখুন, আপনার ব্যবসার আইডিয়ার অভিনবত্ব কী যা আপনাকে আপনার প্রতিযোগীদের থেকে এগিয়ে রাখবে?
যদি এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে না পান তাহলে এমন এক বা একাধিক উপাদান নিয়ে আসুন যা আপনার ব্যবসার আইডিয়াটিকে অভিনব করে তুলবে।
৩. আপনি কেন এই ব্যবসাটি করতে চাইছেন?
পরবর্তী প্রশ্ন হবে আপনি কেন এই নির্দিষ্ট ব্যবসাটি করতে চাইছেন?
সব রকম বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আপনি কী এই ব্যবসাটি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন?
আপনার দক্ষতা ও যোগ্যতা কী এই ব্যবসাটির জন্য উপযুক্ত?
আপনার কী বিষয়টির প্রতি যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে?
এই প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর লিখুন।
যেকোনও অল্প পুঁজির ব্যবসারই প্রাথমিক দিনগুলো কঠিন হতে পারে, এমন কি ব্যবসায় সাফল্যলাভের পরও অনেক সময়ই নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় ফলে বিষয়টি সম্পর্কে যথেষ্ট আগ্রহ থাকা কাম্য।
পাশাপাশি স্বল্প মূলধনের ব্যবসার সাফল্য নির্ভর করে আপনার দক্ষতা ও যোগ্যতার। একজন একই ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে প্রচুর উন্নতি করতে পারে অন্য একজন সেই ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে শুরু করেও ব্যবসায় মার খেতে পারে। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসার জন্য আপনার যথেষ্ট যোগ্যতা ও দক্ষতা রয়েছে কি না তা যাচাই করে নিন।
৪. সম্ভাব্য ক্রেতার সঙ্গে কথা বলুন
আপনার সম্ভাব্য ক্রেতা কারা, তাঁদের কোন প্রয়োজন আপনি মেটাতে চাইছেন সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁদের থেকে মতামত নিন।
সমাজের যে অংশের প্রয়োজন আপনি মেটাতে চাইছেন সেই অংশের মানুষের সঙ্গে কথা বলুন। সে আপনার আত্মীয়, বন্ধু বা তাদের পরিচিত মানুষ হতে পারে।
আপনার ব্যবসার আইডিয়াটি তাদের ভাল লাগছে কি না সেকথা জানতে চাইবেন না, জানতে চান এই পণ্য বা পরিষেবাটি পেতে তারা পয়সা খরচ করতে ইচ্ছুক কি না।
বুঝতে চেষ্টা করুন তাদের সত্যিই এই প্রয়োজন রয়েছে কি না, থাকলে আপনার পণ্য বা পরিষেবার মাধ্যমে তারা সেই প্রয়োজন মেটাতে চাইবেন কি না।
প্রয়োজনে লিখিত প্রশ্নপত্র তৈরি করে সম্ভাব্য ক্রেতার কাছে যান। তারা কী চাইছেন তা বোঝার চেষ্টা করুন। বিভিন্ন প্রাপ্ত উত্তরের মধ্যে তুলনা করে যাচাই করে নিন আপনার ব্যবসার আইডিয়ার বাজার মূল্য কতটা।
প্রয়োজন পড়লে ব্যবসার আইডিয়া পরিমার্জন করুন। জানতে চান এই পরিষেবা বা পণ্যের জন্য কতটা পর্যন্ত দাম তারা দিতে ইচ্ছুক এবং সক্ষম।
৫. আপনার পণ্য বা পরিষেবার দাম নির্ধারণ করুন
সম্ভাব্য ক্রেতাদের উত্তরের ভিত্তিতে নির্ধারণ করুন আপনার পণ্য বা পরিষেবাটির বাজারমূল্য কত হতে পারে। কত টাকা দিয়ে তাঁরা সেই পণ্য বা পরিষেবা কিনতে রাজি আছেন এবং তাদের সেই টাকা খরচ করার সামর্থ্য রয়েছে কি না।
এর পর হিসেব করুন সেই টাকায় বিক্রি করলে আপনার লাভ হবে কি না। আপনার ছোট ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় উপাদানের দাম, আপনার দক্ষতা, পরিশ্রম ও সময়ের দাম সব কিছু হিসেব করে দেখুন আদৌ এই ব্যবসার আইডিয়াটি নিয়ে এগোলে আপনি লাভ করতে পারবেন কি না, আপনার প্রয়োজনীয় উপার্জন এই ব্যবসা থেকে আসবে কি না।
তথ্য সূত্রঃ সরল মানুষ টিম