ব্যবসা শুরু করতে ও তা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে প্রয়োজন মূলধন আর মূলধনের জন্য অনেক ছোট ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকেই নির্ভর করতে হয় ব্যবসা লোনের ওপর। তবে সঠিক ঋণ প্রকল্পটি খুঁজে পেতে ও সেই ঋণের সুবিধা পেতে প্রায়ই অসুবিধায় পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের। আর এই ক্ষুদ্র ব্যবসার ঋণ পাওয়ার কাজটাই সহজ করছে বিভিন্ন ফিনটেক প্ল্যাটফর্ম।
নানা ধরনের স্বল্পমেয়াদী ক্ষুদ্র ব্যবসা ঋণের হদিশ দেয় এই সব প্ল্যাটফর্ম। নানান ক্ষুদ্র ঋণের মধ্যে তুলনা করে খুঁজে দেয় আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সব থেকে উপযুক্ত ঋণ প্রকল্পটি।
আসুন জেনে নিই এরকমই পাঁচটি ফিনটেক প্ল্যাটফর্মের কথা যারা অল্প সুদে স্বল্পমেয়াদী ব্যবসায়ী লোনের সন্ধান দেবে আপনাকে।
১. মাইলোনকেয়ার
এই অনলাইন মার্কেটপ্লেসটি ঋণগ্রহীতার সঙ্গে উপযুক্ত ঋণদাতার যোগাযোগ ঘটায়। অর্থাত্ ঋণগ্রহীতার প্রয়োজন ও ক্রেডিট প্রোফাইল অনুযায়ী তাঁর জন্য সব থেকে লাভজনক ঋণ প্রকল্পটি খুঁজে দেয় ও সেই ঋণদাতার সঙ্গে তাঁকে যুক্ত করে।
সারা ভারতজুড়ে বিভিন্ন এলাকার মানুষই এই প্ল্যাটফর্মের সুবিধা নিতে পারে। ব্যবসা ঋণের পাশাপাশি গৃহঋণ, ব্যক্তিগত ঋণ, জমি কেনার জন্য ঋণ ও স্বর্ণঋণও পাওয়া যেতে পারে এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে।
বিভিন্ন রকমের ঋণের মধ্যে থেকে ঋণগ্রহীতা বেছে নিতে পারেন তাঁর প্রয়োজনীয় ঋণ ও যোগাযোগ করতে পারেন ঋণদাতার সঙ্গে। এছাড়াও বিভিন্ন অগ্রণী ব্যাঙ্ক ও এনবিএফসি-এর স্বর্ণঋণ প্রকল্পের মধ্যে তুলনা করার সুযোগ করে দেয় এই প্ল্যাটফর্মটি, ফলে আপনি বেছে নিতে পারেন সেই স্বর্ণঋণ যা আপনার জন্য সব থেকে ভাল।
২. কয়েনট্রাইব
ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস কয়েনট্রাইব। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সহজে ও দ্রুত কোনওরকম কোল্যাটারাল ছাড়াই ক্ষুদ্র ব্যবসা ঋণ পাওয়া সম্ভব। যে সমস্ত ব্যবসার বার্ষিক টার্নওভার ১ থেকে ১০০ কোটির মধ্যে তারাই এই সুবিধা পেতে পারে।
বিভিন্ন অগ্রণী ব্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠান ও এনবিএফসি-এর সঙ্গে পার্টনারশিপের ভিত্তিতে কাজ করে কয়েনট্রাইব। এর ফলে ঋণ পাওয়া হয় সহজ ও ঝঞ্ঝাটহীন। শুধুমাত্র ব্যবসা ও ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্বন্ধীয় তথ্য ও ব্যবসার ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট দিয়েই পাওয়া যেতে পারে ঋণ।
৩. হ্যাপিলোনস
গ্রাহকদের নির্দিষ্ট প্রয়োজন মতো ঋণের ব্যবস্থা করে হ্যাপিলোনস। ক্ষুদ্র ব্যবসা ঋণ নেওয়ার জন্য উপযুক্ত এই প্ল্যাটফর্মে মাত্র ২০০০ টাকার ঋণও নেওয়া যেতে পারে, ঋণ নেওয়া যেতে পারে মাত্র ৩০ দিনের জন্য।
ছোট ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পুঁজির প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চায় হ্যাপিলোনস্। তারা নিশ্চিত করতে চায় মূলধনের অভাবে যেন কোন ছোট ব্যবসাকে থমকে যেতে না হয়। ঠিক যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই যেন ঋণ নিতে পারেন ব্যবসায়ীরা। সহজ কিস্তিতে ও কম সুদের হারে সেই ঋণের ব্যবস্থা করে হ্যাপিলোনস।
পাশাপাশিই হ্যাপিলোনস এনেছে একটি অভিনব ঋণ। ট্রায়াল প্যাক নামের এই প্রকল্পে ৭ দিনের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ঋণ পাওয়া যেতে পারে।
৪. মানিট্যাপ
অ্যাপ নির্ভর ক্রেডিটলাইন মানিট্যাপ। মানিট্যাপই ভারতে প্রথম ক্রেডিট লাইনের ধারনা নিয়ে আসে। কোনওরকম কোল্যাটারাল বা সুদ ছাড়াই ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ধার পাওয়া যায় ব্যাঙ্ক থেকে। মানিট্যাপ অ্যাপ ব্যবহার করে ৩,০০০ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ধার নেওয়া সম্ভব ও তা সহজ কিস্তিতে ২ মাস থেকে ৩ বছরের মধ্যে শোধ করতে হবে। শুধুমাত্র ধার করা যে টাকা তারওপরই সুদ বসবে এবং সেই হার মাত্র ১.০৮ শতাংশ থেকে শুরু।
যেকোনও চাকুরিজীবী এই অ্যানরয়েড অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারেন এবং মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে নিজের যাবতীয় তথ্য নথিভুক্ত করতে পারবেন। এর পর অ্যাপটি আপনাকে সুরক্ষিত উপায় ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত করবে ও আপনার ব্যক্তিগত ঋণ নেওয়ার ইতিহাসের ওপর নির্ভর করে তত্ক্ষণাত্ আপনার ঋণ মঞ্জুর হতে পারে।
৫. লেন্ডবক্স
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া থেকে লাইসেন্স প্রাপ্ত এনবিএফসি লেন্ডবক্স। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক, আমানত প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি মধ্যস্থতাকারীদের সরিয়ে সরাসরি ঋণদাতার সঙ্গে ঋণগ্রহীতার যোগাযোগ করিয়ে দেয় লেন্ডবক্স। এর ফলে একদিকে যেমন সুদের হার কমে অন্যদিকে ঋণদাতাও বেশি লাভ করতে পারেন।
ক্ষুদ্র ব্যবসা ঋণের জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত এই প্ল্যাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিভিন্ন আর্থসামাজিক অবস্থার ঋণগ্রহীতারা প্রাতিষ্ঠানিক ও খুচরো, উভয় প্রকার বিনিয়োগকারীর সঙ্গেই যোগাযোগ করতে পারেন।
উপরের পাঁচটি প্ল্যাটফর্ম ছাড়াও আরও একাধিক অনলাইন মার্কেটপ্লেস রয়েছে যারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণ গ্রহণের পথ সহজ করছে। এরকমই আরও কয়েকটি প্ল্যাটফর্ম ইনক্রেড ফিন্যান্স, লোনট্যাপ, ক্যিউবেরা, ফেয়ারসেন্ট ইত্যাদি।
আপনিও যদি ঋণ নিয়ে আপনার ব্যবসাকে গতি দিতে চান অথবা শুরু করতে চান নতুন ব্যবসা তাহলে এর মধ্যে যেকোনও একটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে খুঁজে নিতে পারেন আপনার চাহিদার জন্য উপযুক্ত একটি ঋণ।