এখনই শিখে নিন কিভাবে অনলাইনের মাধ্যমে জিডি করতে হয়!!


 জেনারেল ডায়েরি বা জিডি হল অপরাধ ও অন্যান্য সংবাদবিষয়ক রেজিস্টার। ফৌজদারি কার্যবিধিতে বলা হয়েছে, পুলিশ স্টেশন হল ফৌজদারি জুরিসডিকশনের সর্বনিম্ন ইউনিট। যেখানে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণ তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া বা ঘটতে যাচ্ছে এমন সব ঘটনা সম্পর্কে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।

কিন্তু সব ঘটনার জন্য এজাহার দায়ের করা যায় না। কাউকে কোনো প্রকার হুমকি প্রদর্শন করলে এজাহার না করে তা সাধারণত থানায় রক্ষিত ‘সাধারণ ডায়েরিতে’ লিপিবদ্ধ করা হয়ে থাকে; যাকে সংক্ষেপে জিডি বলা হয়।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা কারণে এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কখনও কোনো হুমকির মুখোমুখি হলে, কোনো কিছু হারিয়ে গেলে বা স্কুলে যাওয়ার পথে বখাটের উত্ত্যক্তের শিকার হলে থানায় জিডি করার কথা ভাবেন। কিন্তু কীভাবে জিডি করতে হয় তা অনেকেই জানেন না।

এই আইনি সহায়তা পেতে একটি বিবরণ লিখিতভাবে থানায় জমা দিতে হয়। প্রাপ্তবয়স্ক যে কোনো ব্যক্তি থানায় জিডি করতে পারবেন। প্রতিটি থানা ও ফাঁড়িতে একটি সাধারণ ডায়েরি থাকে। এটি প্রতিদিন সকাল ৮টায় খুলে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার সংবাদ রেকর্ড করা হয়।

যেসব কারণে জিডি করতে পারবেন: জিডি হল একটি থানার চলমান চিত্ররূপ। বিভিন্ন কারণে জিডি করা হয়। থানায় মামলাযোগ্য নয় এমন ঘটনা ঘটলে, আবার কাউকে ভয়-ভীতি দেখানো হলে বা নিরাপত্তার অভাব বোধ করলে, কিংবা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের আশংকা থাকলে জিডি করা যায়।

এছাড়াও কোনো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, পাসপোর্ট, পরিচয়পত্র, চেকবই বা গুরুত্বপূর্ণ দলিল হারানো; বখাটে, মাদকসেবী বা অপরাধীদের আড্ডা-সংক্রান্ত তথ্য; জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হতে পারে এমন অবৈধ সমাবেশ; গৃহকর্মী, দারোয়ান, নৈশপ্রহরী নিয়োগ বা পালিয়ে যাওয়া; নতুন বা পুরনো ভাড়াটে সংক্রান্ত তথ্য এবং প্রবাসীদের সমস্যা সংক্রান্ত অভিযোগে থানায় যে কেউ জিডি করতে পারেন।

কোথায় এবং কীভাবে করবেন: যে এলাকায় ঘটনা ঘটেছে বা ঘটার আশংকা রয়েছে, সে এলাকার থানাতেই জিডি করা উচিত। নিজের এলাকার থানাকে প্রাধান্য দেয়া উচিত। তা না হলে আইনি সহায়তা নিতে ঝামেলা পোহাতে হয়। নিজের নাম এবং থানার নাম উল্লেখপূর্বক সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করতে হয়। যে বিষয়ে জিডি করতে চান তার নাম উল্লেখ করতে হবে।

(যেমন- হারানোর ব্যাপারে লিখতে পারেন, হারানো সংবাদ সাধারণ ডায়েরিভুক্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন)। বিবরণ অংশে আপনাকে বিস্তারিত লিখতে হবে। যদি আপনাকে কেউ হুমকি দেয়, তার নাম, ঠিকানা, হুমকির স্থান ও তারিখ উল্লেখ করতে হবে। কিছু হারিয়ে গেলে তার বিস্তারিত বিবরণ এবং পারলে তার কোনো নমুনা, যেমন ছবি দরখাস্তের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারেন। সব শেষে নিচে আপনার নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর লিখতে হবে।

জিডির তদন্ত: থানায় জিডি করা হলে তা যদি কোনো আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটন বিষয়ে হয় তবে থানা কর্তৃপক্ষ সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি আমলে নিয়ে অপরাধটি প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেবেন। থানায় যে সব বিষয়ে জিডি করা হয়, সেসব বিষয়ের মধ্যে যেগুলো অধর্তব্য অপরাধ সেগুলোর তদন্ত সম্পর্কে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৫ (২) ধারায় বলা হয়েছে- ‘প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের তদন্তের আদেশ ব্যতীত কোনো পুলিশ কর্মকর্তা আমলযোগ্য নয় এমন মামলার তদন্ত করতে পারবেন না।’ 

উল্লেখ্য, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৭ (বি) ধারায় বলা হয়েছে, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যদি মনে করেন যে, সাধারণ ডায়েরিটি তদন্তের জন্য যথাযোগ্য নয়, তাহলে তিনি তদন্তের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন না।

জিডির গুরুত্ব: আইনগত সহায়তা লাভের জন্য জিডি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেবল একটি জিডির ভিত্তিতেই একটি মামলার শুরু হতে পারে অথবা অপরাধের আশংকা থেকে একটি জিডি করার পর সে অপরাধটি সংঘটিত হলে আদালতে ওই জিডি সাক্ষ্য হিসেবে গৃহীত হয়ে থাকে। তাই জিডির আইনগত গুরুত্ব অনেক। তবে থানায় জিডি করার পর জিডির নম্বরটি নিজের সংগ্রহে রাখতে হবে। প্রয়োজনে জিডির রিসিভ কপি সংগ্রহে রাখতে হবে।

জানা জরুরি: থানার ডিউটি অফিসার জিডি নথিভুক্ত করেন। আপনি যদি লিখতে না পারেন, তবে তাকে আবেদন ফরমটি পূরণ করে দিতে অনুরোধ করুন এবং এ জন্য কোনো টাকা-পয়সা দিতে হবে না। তিনি একটি ডায়েরিতে জিডির নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য লিপিবদ্ধ করবেন। জিডির দুটি কপি করা হয়। একটি থানায় সংরক্ষণ করা হয় এবং অন্যটি জিডির নম্বর, তারিখ এবং অফিসারের স্বাক্ষর ও সিল লাগিয়ে আপনাকে দেয়া হবে এবং জিডিটি নথিভুক্ত হবে।

অনলাইনে জিডি: অনলাইনে জিডি করতে হলে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের ওয়েবসাইটwww.dpm.gov.bd-এ প্রবেশ করলে Citizen Help Request নামে একটি লিংক পাওয়া যাবে। লিংকটিতে ক্লিক করে অনলাইনে জিডি সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করার তালিকা আসবে। যে ধরনের তথ্য দিয়ে জিডি করতে চান তা নির্বাচন করতে হবে।

এবার তথ্য পূরণ করার খালি বক্স আসবে। তথ্যাবলী যথাযথভাবে পূরণ করে সাবমিট করলে সংশ্লিষ্ট থানায় আপনার তথ্যটি পৌঁছে যাবে। আপনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি শনাক্তকরণ নাম্বার পাবেন। নাম্বারটি সংগ্রহ করুন। চাইলে আপনার কোনো মতামত নিয়ে সরাসরি পুলিশের www.police.gov.bd ঠিকানায় মেইলও পাঠাতে পারবেন।


শাহীন

আমি শাহীন । পেশায় একজন ব্যবসায়ী । পাশাপাশি অনলাইনে কাজ করতে পছন্দ করি। আশা করছি আমার শেয়ারকৃত তথ্য থেকে আপনারা উপকৃত হচ্ছেন আর তা হলেই আমার পরিশ্রম স্বার্থক।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads