উৎপাদনের সাথে জড়িত ব্যবসা গুলোই পৃথিবীর সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা। প্রাথমিকভাবে এই ব্যবসা গুলো শুরু করতে বেশ ভালই মূলধন বিনোয়োগ করতে হয়। কিন্তু এই ব্যবসা গুলো যদি একবার দাঁড় করানো যায় তাহলে এতে অনেক মুনাফা লাভ করার সম্ভাবনা রয়েছে। যাইহোক, একটি উপযুক্ত ধারণাই হচ্ছে উৎপাদনের সাথে জড়িত ব্যবসার গুলোর মূল চাবিকাঠি।
সারা পৃথিবীতে উৎপাদনের সাথে জড়িত ব্যবসার প্রচুর ধারণা রয়েছে। কিন্তু আমরা আপনাকে যে ধারণা গুলো দেব তাতে আপনি কম বিনিয়োগে সহজে একটি উৎপাদন ব্যবসা শুরু করতে পারবেন এবং ভাল মুনাফা আয় করতে পারবেন। নিচে কম বিনিয়োগে অধিক মুনাফা লাভ করা যায় এমন উৎপাদন ব্যবসার ধারণা দেওয়া হলো।
ডিটারজেন্ট পাউডার উৎপাদন ব্যবসা:
আপনি খুব অল্প পুজিতে শুরু করতে পারেন ডিটারজেন্ট পাউডার তৈরির কারখানা। ডিটারজেন্ট পাউডার তৈরি সকল কাঁচামাল পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলী ও নবাবপুর এরিয়াতে পাওয়া যায়। ইউটিউব একটু সার্চ করে দেখে নিতে পারেন কি কি কাঁচামাল আপনাকে কিনতে হবে আর কিভাবে পাউডার প্রস্তুত করতে হবে। এখন করতে হবে প্যাকেজিং এর কাজ। আকর্ষণীয় করে প্যাকেজিং ডিজাইন করুন কোন অভিজ্ঞ ডিজাইনার দিয়ে। ফকিরাপুল ও আরামবাগ থেকে আপনি প্যাকেজিং এর সকল মালামাল পেয়ে যাবেন। আপনি নিজে নিজে করতে চাইলে প্রথমে একজন সহকারি নিয়ে শুরু করতে পারেন পরে ডিমান্ড অনুসারে আরও লোক নিয়োগ দিয়ে বেশি মালামাল প্রস্তুত করতে পারেন। ডিটারজেন্ট পাউডার এর চাহিদা বেশ ভালো, বিভিন্ন মুদি দোকানি ও স্টেশনারী পণ্য বিক্রেতা আপনার ক্রেতা । তাই প্রথমে নিজের এরিয়া দিয়ে পণ্য বিক্রয় শুরু করাই ভালো। সকল খরচ বাদ দিয়ে এই ব্যবসায় ৪৫% মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।
আসবাবপত্র বা ফারনিচার উৎপাদন ব্যবসা
বাড়ি, স্কুল এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য আসবাবপত্র হচ্ছে একটি অতীব প্রয়োজনীয় উপকরণ। প্রত্যেকেই তাদের নিজের প্রয়োজনে চেয়ার, টেবিল, খাট, সোফা, ওয়্যারড্রোব ইত্যাদি ক্রয় করে থাকে। আপনি একটি কারখানা স্থাপন করে উক্ত আসবাবপত্র গুলো তৈরী করা শুরু করতে পারেন। আপনি আনুমানিক ৭ থেকে ১০+ লাখ টাকার মধ্যে এই কারখানা স্থাপন করতে পারবেন। এটি একটি লাভজনক ব্যবসার ধারণা।
পোশাক উৎপাদন
বর্তমানে সকল বয়সী মানুষের মাঝে ফ্যাশন সচেতনতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই হারে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিভিন্ন রকম পোশাকের চাহিদাও। তবে নিশ্চিত করেই বলা যায় এই চাহিদা কখনোই শেষ হবে না। তাই উৎপাদন ব্যবসার জগতে পোশাক উৎপাদন ব্যবসাটি একটি ফলদায়ক ব্যবসার ধারণা। আপনি একটি কারখানা স্থাপন করে দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ করে পোশাক উৎপাদন শুরু করতে পারেন। আপনার উৎপাদিত পোশাক গুলো দেশি বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করে প্রচুর মুরাফা লাভ করতে পারেন। জেনে নিন- ব্যবসা শুরু করার উত্তম সময় কখন?
চামড়া সম্পর্কিত পন্য উৎপাদন ব্যবসা
চামড়া জাতীয় পণ্য গুলো সবসময়ই একটি বড় চাহিদা সম্পন্ন জিনিস। চামড়া একটি দেশের অনেক বড় জাতীয় সম্পদ। আর এই চামড়া দিয়ে অনেক প্রয়োজনীয় পন্য যেমন ব্যাগ, জুতো, বেল্ট ইত্যাদি পন্য তৈরী করা হয়। আপনি চাইলে সাধারণ যন্ত্রাংশের সমন্বয়ে একটি কারখানা স্থাপন করে এই ধরনের পণ্য গুলো উৎপাদন করা শুরু করতে পারেন। আর এই ব্যবসাটি শুরু করতে আনুমানিক ২-৭ লাখ টাকা বিনিয়োগের প্রয়োজন হতে পারে।
স্কুল বা অফিসের স্টেশনারী পন্য উৎপাদন:
স্কুল বা অফিস গুলোতে প্রতিদিনই বিভিন্ন স্টেশনারী পণ্য যেমন কলম, ফাইল, পেন্সিল, রবার, শার্পনার ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। আপনি চাইলে এই ধরনের স্টেশনারী পণ্য গুলো তৈরী করে একটি উৎপাদন ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এটি একটি উচ্চ চাহিদা সম্পন্ন কম পুজিঁর ব্যবসার ধারণা।
মোটরগাড়ির ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ উৎপাদন:
বর্তমানে সারা বিশে^ মোটরগাড়ির শিল্পকে একটি উদীয়মান শিল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সকল খুচরা যন্ত্রাংশ একত্রিত করে একটি মোটরগাড়ি তৈরি করা হয়। আপনার যদি ভাল ব্যবসা দক্ষতা এবং যথেষ্ট অর্থ থাকে তাহলে আপনি এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। এই ব্যবসায় মোটর গাড়ির সকল যন্ত্রাংশ উৎপাদন করতে হবে এমন কোন কথা নেই। বরং আপনি বিশেষ কিছু যন্ত্রাংশ উৎপাদন করে এই ব্যবসাটি ভাল ভাবে পরিচালনা করতে পারেন। এই ব্যবসাটি শুরু করতে আনুমানিক ১০-২৫ লাখ টাকা পুজিঁ বিনিয়োগ করতে হবে।
সার উৎপাদন:
আমরা যেহেতু একটি কৃষিপ্রধান দেশে বসবাস করি সেহেতু এখানে অধিকাংশ লোকই কৃষির সাথে জড়িত। তাই আপনার যদি বিভিন্ন ঔষধ বা সার সম্পর্কে অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে আপনি একটি সার উৎপাদনের কারখানা স্থাপন করতে পারেন। প্রাথমিকভাবে ক্ষুদ্র পরিসরে এই ব্যবসাটি শুরু করে ধীরে ধীরে প্রসারিত করা যেতে পারে। এই ব্যবসাটি শুরু করতে ৮০,০০০ টাকা থেকে ১,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত প্রারম্ভিক মূলধনের প্রয়োজন হতে পারে।
খেলাধুলা সম্পর্কিত পন্য উৎপাদন:
আমাদের দেশে প্রায় সকল বয়সী মানুষের কাছেই খেলাধুলা একটি জনপ্রিয় বিনোদন মাধ্যম। আপনি চাইলে একটি কারখানা স্থাপন করে খেলাধুলা সম্পর্কিত ছোট পন্য গুলো উৎপাদন করা শুরু করতে পারেন। আপনি টেনিস বল, ব্যাট, ক্যারাম, ফুটবল ইত্যাদি পন্য গুলো উৎপাদন করে এই ব্যবসাটি পরিচালনা করতে পারেন। এটি একটি উত্তম ব্যবসার ধারণা হতে পারে।
খেলনা উৎপাদন:
সকল বাচ্চাদের নিকট খেলনা অত্যন্ত জনপ্রিয়। আপনি চাইলে আপনার কারখানায় বাচ্চাদের এই সব খেলনা প্রস্তুত করে একটি ব্যবসা স্থাপন করতে পারেন। আর আপনার উৎপাদিত পন্য গুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতে পারেন। আপনি কম বিনোয়োগের মাধ্যমে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারবেন। এই ব্যবসায় অধিক মুনাফা লাভের সম্ভবনা রয়েছে।
হাতের তৈরী বিস্কুট এবং চকলেট উৎপাদন:
এমন অনেক লোক আছে যারা নিজের হাতে বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাদ্যদ্রব্য যেমন বিস্কুট, কেক, চকলেট ইত্যাদি তৈরি করতে পারে। আপনি যদি তাদের একজন হয়ে থাকেন তাহলে আপনিও এই সব পণ্য বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন করা শুরু করতে পারেন। চাইলে আপনার কারখানায় বিভিন্ন রকমের বিস্কুট আপনি গ্রাহকদের কাছে তাদের চাহিদা অনুযায়ী এই সব পন্য গুলো সরবরাহ করে এই ব্যবসাটি পরিচালনা করতে পারেন। তাছাড়া আপনি আপনার বাড়িতেও একটি বেকারী স্থাপন করে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন।