গুগল পেনাল্টি এমন একটি প্রতিবন্ধক, যা ওয়েবসাইট থেকে আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো বিপদ সৃষ্টি করে। গুগলের সার্চ রেজাল্টে আপনার ওয়েবসাইটকে না দেখানো মানে এক বিশাল সমস্যা। এতে করে ওয়েবসাইটে ভিজিটর সংখ্যা কমে যায়, ফলে ওয়েবসাইট থেকে আয়ও কমে যায়। গুগল পেনাল্টি কী, কীভাবে দ্রুততার সাথে পেনাল্টি চেক করা এবং গুগল পেনাল্টি থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তা আজকের লেখায় তুলে ধরা হবে।
গুগল পেনাল্টি কী?
গুগলের ওয়েবমাস্টার কোয়ালিটি গাইডলাইন্স (Webmaster Quality Guidelines) অনুযায়ী কতগুলো নীতিমালা রয়েছে। কোনো ওয়েবসাইট এগুলো মেনে না চললে গুগল ব্যবস্থা গ্রহণ করে, এটিই গুগল পেনাল্টি। এতে করে সাইটের কিছু অথবা সব পেজ গুগল সার্চে দেখা যায় না।
যেভাবে বুঝবেন আপনার ওয়েবসাইটটি গুগল পেনাল্টি তালিকায় গেছে
গুগল সার্চ কনসোল (Google Search Console) ব্যবহার করে পেনাল্টি চেক করা যায়। কনসোল অ্যাকাউন্টে গিয়ে ‘ম্যানুয়াল অ্যাকশন্স’ পেজটি ওপেন করলেই পেনাল্টির তালিকায় থাকা পেইজগুলো দেখা যাবে। যদি কোনো গুগল পেনাল্টি না থাকে, তাহলে সবুজ টিক চিহ্ন দেখতে পাবেন।
পেনাল্টি লিস্ট কতদিন কার্যকর থাকে?
যে কারণে গুগল ম্যানুয়াল অ্যাকশন পেনাল্টি দেওয়া হয়েছে, সেটির সমাধান না করা পর্যন্ত এটি ঠিক হবে না। অর্থাৎ কী কারণে এমন হয়েছে, সেটি নির্ণয় করে, সমাধান করে তারপর মূল্যায়ন করার জন্য গুগলের ইউআরএল ইন্সপেকশন টুল (Google’s URL Inspection Tool) ব্যবহার করে রিভিউ রিক্যুয়েস্ট করতে হবে। সমাধান হয়ে গেলে গুগল আপনাকে পরবর্তী কাজ জানিয়ে দেবে।
এখন দেখা যাক, কী কী কারণে গুগল আপনার ওয়েবসাইটকে পেনাল্টিতে ফেলতে পারে। মূলত এ কারণগুলোর জন্যই কোনো ওয়েবসাইটকে গুগল পেনাল্টি দেওয়া হয়। সচেতনভাবে এই ভুলগুলো এড়িয়ে চললে একটি ওয়েবসাইট গুগল পেনাল্টিতে পড়বে না।
১। সাইটে অস্বাভাবিক লিংকের ব্যবহার না করা
গুগল অস্বাভাবিক, কৃত্রিম, বিভ্রান্তিমূলক কিংবা কূট-কৌশলী ধরনের লিংক শনাক্ত করার জন্য প্যাটার্ন খোঁজে। বিভিন্ন ধরনের ব্যাকলিংক (Types of Back-links) সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে, যাতে করে বোঝা যায় কোনটি সাইটের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
২। নিম্নমানসম্পন্ন বা মানহীন কনটেন্টে ভর্তি না করে মানসম্পন্ন কনটেন্ট রাখা
গুগল চায় ব্যবহারকারীর সামনে সবচাইতে মানসম্পন্ন, প্রাসঙ্গিক কনটেন্ট হাজির করতে। যদি আপনার ওয়েবসাইটে থাকা কনটেন্টগুলোর কোনো অনন্য বৈশিষ্ট্য না থাকে, বা ওয়েবসাইটটি নকল করা কনটেন্টে ভরপুর থাকে, তাহলে গুগল পেনাল্টিতে পড়ার বড় ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়াও কোনো সঠিক তথ্য না রেখে ভুল তথ্যে পরিপূর্ণ থাকলেও ওয়েবসাইট গুগল পেনাল্টিতে পড়ে। এজন্য ওয়েবসাইটটি আপডেটেড রাখতে হবে, একইসাথে কনটেন্টের গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে।
৩। কি-ওয়ার্ড স্টাফিং
আপনার ওয়েবসাইট যদি কি-ওয়ার্ড স্টাফিং করে থাকে, তাহলে গুগল পেনাল্টিতে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। কি-ওয়ার্ড স্টাফিং হচ্ছে তালিকার উপরে থাকার জন্য অস্বাভাবিকভাবে নির্ধারিত বিশেষ কি-ওয়ার্ড বহুবার করে ব্যবহার করা। গুগল পেনাল্টি না চাইলে এ ধরনের অস্বাভাবিক ও অপ্রয়োজনীয় কি-ওয়ার্ড স্টাফিং করা যাবে না।
৪। গোপন টেক্সট এবং লিংক ব্যবহার না করা
গুগল যদি আপনার ওয়েবসাইটে লুকানো টেক্সট ও লিংক পেয়ে থাকে, তাহলে গুগল পেনাল্টির নিশ্চিত সম্ভাবনা রয়েছে। সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে সাদা টেক্সট ব্যবহার, ছবির মধ্যে টেক্সট লুকিয়ে রাখা, ফন্ট জিরো করে রাখা এসবের মাধ্যমে সাইট গুগল পেনাল্টিতে পড়ে। কাজেই এ ধরনের কূট-কৌশল করা যাবে না।
৫। কৌশলী ও ছদ্মবেশী রিডাইরেশন বাদ দেওয়া
গুগল যদি ধরতে পারে আপনার ওয়েবসাইট নামের সাথে মিল না রেখে ব্যবহারকারীদের অন্য ওয়েবসাইটে পাঠিয়ে ভিন্ন ধরনের ইউআরএল অথবা কনটেন্ট উপস্থাপন করছে, তাহলে গুগল পেনাল্টির খড়গ নেমে আসবে। কাজেই এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকুন।
৬। ব্যবহারকারী থেকে স্প্যামিং নিয়ন্ত্রণ করা
গুগল যদি দেখতে পায় যে, আপনার সাইটে ব্যবহারকারীদের থেকে স্প্যামিং দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন ফোরাম সেকশনে কমেন্টের লিংকের মাধ্যমে, তাহলে গুগল পেনাল্টি ভোগ করতে হবে। এজন্য খেয়াল রাখতে হবে, যাতে কোনো ইউজার থেকে স্প্যামিং যাতে আপনার সাইটে ছড়াতে না পারে।
৭। ওয়েবসাইটকে ভাইরাস ও ফিশিং মুক্ত রাখা
আপনার ওয়েবসাইটে যদি একাধিক অটোম্যাটিকালি জেনারেটেড পেজ এসে পড়ে, যেগুলো ফিশিং, ভাইরাস অথবা ট্রোজানের সংক্রমণ ঘটায়, তাহলে এগুলো গুগলের কোয়ালিটি গাইডলাইনের শর্ত ভঙ্গ করবে। যার ফলে নিশ্চিত হবে গুগল পেনাল্টি। ওয়েবসাইটটি যতটা সম্ভব ইউজার ফ্রেন্ডলি রাখার কথা ভাবতে হবে। ভিজিটরদের জন্য ক্ষতিকারক কিছু বর্জন করতে হবে।
যেভাবে গুগল পেনাল্টি থেকে ওয়েবসাইট রিকভার করবেন
প্রতিকারের থেকে প্রতিরোধ ভালো। যে কারণগুলোর জন্য গুগল পেনাল্টি হয়, সেগুলো সম্পর্কে সচেতন ও সাবধান থাকাটা সবচেয়ে জরুরি। তারপরও যদি গুগল পেনাল্টি হয়েই যায় তা নিরসনে যা করতে হবে সেগুলো হলো:
ক. গুগল কনসোলকে পেনাল্টি চেকার হিসেবে ব্যবহার করে সমস্যাটি ঠিক কোথায়, তা সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে, জানতে হবে কোন বিশেষ দোষে দোষী হয়েছে আপনার ওয়েবসাইটটি।
খ. গুগলের ম্যানুয়াল অ্যাকশন রিপোর্টে থাকা নির্দেশনাগুলো দেখে নিতে হবে।
গ. গুগলের ইন্সপেকশন টুল ব্যবহার করে রিভিউ রিকোয়েস্ট সাবমিট করুন।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, গুগলের নির্ধারিত কিছু গাইডলাইন মেনে চললে ও সচেতনভাবে ওয়েবসাইটকে ব্যবহারকারীর জন্য নিরাপদ রাখতে পারলে গুগল পেনাল্টির ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।