চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করার ক্ষেত্রে কিছু পরামর্শ!!

 


চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করতে চাইছেন?

চাকরির পাশাপাশি অনেকেই ছোটখাটো কোনো ব্যবসা করার চিন্তা-ভাবনা করে থাকেন। নিঃসন্দেহে এটি অত্যন্ত ভালো একটি সিদ্ধান্ত। যদিও তা বেশ কঠিন একটি কাজ, তবে অসম্ভব কিছু নয়। এক্ষেত্রে সুন্দর কিছু আইডিয়া ও সঠিক পরিকল্পনা থাকলে যে কেউ তার ব্যবসায় সফল হতে পারবে। তবে ব্যবসা শুরু করার আগে নিজেকে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলো করুন, যা আপনার ব্যবসায়ে সফলতা অর্জনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।

১. ব্যবসা করার মতো যথেষ্ট সময় আছে কি?

যেহেতু আপনি একটি প্রতিষ্ঠানে ফুল-টাইম কর্মী হিসেবে চাকরি করেন সেহেতু সেই প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আপনার উপর অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। এখন কল্পনা করুন, আপনি আপনার অফিসের সবধরনের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করার পর আপনার হাতে যথেষ্ট পরিমাণ সময় আছে কি না? কারণ একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত করতে হলে যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন হয়। এবং ব্যবসাটি যেহেতু আপনার, তাই ব্যবসা শুরু করার মুহূর্তে অবশ্যই আপনাকেই সময় দিতে হবে।

আপনি যেহেতু আপনার চাকরি করেন এবং সেখানে আপনাকে যথেষ্ট দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে কাজ করতে হবে, অতএব সেখান থেকে সময় বের করার কোনো পথ নেই। তাই আপনাকে আপনার অন্যান্য কাজ সমূহ থেকে সময় বের করে নিতে হবে। সেটা হতে পারে আপনার বিনোদনের সময় হতে, বন্ধুদের সাথে আড্ডা কমিয়ে দিয়ে বা অন্য যেকোনোভাবেই হোক। মোট কথা, একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সেখানে আপনাকে যথেষ্ট পরিমাণ সময় ব্যয় করতে হবে নতুবা ব্যবসায় উন্নতি করা সম্ভব না।

২. আপনি কি আপনার ব্যবসায় যথেষ্ট উৎসাহী?

একটি ব্যবসা শুরু করা সহজ কোনো বিষয় না, বিশেষ করে আপনি যখন একটি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরিরত অবস্থায় আছেন, তাই আপনার ব্যবসা শুরু করার একমাত্র উদ্দেশ্যই যদি হয়ে থাকে অর্থ উপার্জন, তাহলে যেকোনো চ্যালেঞ্জে টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি ব্যবসার প্রতি আপনার যথেষ্ট উৎসাহ ও ভালোবাসা থাকতে হবে। নতুবা যেকোনো সমস্যার সম্মুখীন হলেই উৎসাহ ও আত্মবিশ্বাসের অভাবে আপনি থমকে দাঁড়াবেন।

তাই ব্যবসা শুরু করার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি আপনার ব্যবসার প্রতি কতটা উৎসাহী এবং যেকোনো সমস্যায় কতটা উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবেন।

৩. আপনার মূলধন কী এবং আপনার হাতে আর কী কী উৎস আছে?

একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মূলধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস। মূলধন ব্যতীত কোনো ব্যবসাই শুরু করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে মূলধন অর্থ, দক্ষতা, কোনো সম্পদ বা যেকোনো কিছু হতে পারে। কিন্তু ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে অবশ্যই আপনার মূলধন নির্বাচন করতে হবে, যা দিয়ে আপনি আপনার ব্যবসার প্রধান কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারবেন।

এছাড়াও আপনি আপনার অন্যান্য উৎস হতেও ব্যবসায় কাজে লাগাতে পারেন। তবে কোন কাজে কোন উৎসটির সর্বোত্তম ব্যবহার করতে পারবেন, তা পূর্বেই অনুমান করে নির্বাচন করতে হবে। এবং হঠাৎ কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে কোন উৎস হতে সেই সমস্যার সমাধান করবেন, সেটাও পরিকল্পনা করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার ব্যবসায়ের ধরন অনুযায়ী উৎস সমূহকে তালিকাবদ্ধ করে রাখতে পারেন, যাতে তাক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়।

৪. আপনার আদর্শ গ্রাহক কারা?

ব্যবসা শুরু করার আগে আপনার প্রতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হলো, আপনার গ্রাহক কারা? অথাৎ আপনি যে পণ্য বা সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে ব্যবসা শুরু করবেন, সেই পণ্য বা সেবা কাদের জন্য? কারা আপনার সেবা গ্রহণ করবে? আপনার পণ্য বা সেবা কি নির্দিষ্ট কোনো লিঙ্গের জন্য, নাকি সার্বজনীন? কোন বয়সী গ্রাহকদের কাছে আপনি আপনার সেবা পৌঁছাতে চান? মোট কথা, তারা কোন অঞ্চলের অধিবাসী, তাদের সাংস্কৃতিক আচার-ব্যবহার, পছন্দ-অপছন্দ ইত্যাদি যাবতীয় সম্পর্কে ধারণা রাখা জরুরি। তা না হলে আপনার পণ্য বা সেবা সঠিক সময়ে সঠিক গ্রাহকদের কাছে কখনই পৌঁছাতে পারবেন না।

আর আপনি যদি তাতে ব্যর্থ হন, তাহলে আপনার ব্যবসাটিও খুব কম সময়ের মধ্যে ব্যর্থ হয়ে পড়বে। আর হ্যাঁ, গ্রাহকদের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতেও আপনাকে জানতে হবে, আপনার আদর্শ গ্রাহক কারা। মনে রাখবেন গ্রাহক ব্যতীত আপনার ব্যবসার সবকিছুই মূল্যহীন।

৫. কেউ কি এই ধরনের ব্যবসা করেছে? করলে তারা কীভাবে সফল হয়েছে?

একটি ব্যবসা শুরু করার আগে সেটা সম্পর্কে গভীর গবেষণা করা অত্যন্ত জরুরি। আপনি যেহেতু একটি নতুন ব্যবসা শুরু করতে চাইছেন এবং সেই ব্যবসাটি সম্পর্কে আপনার বাস্তব কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তাই ব্যবসায় যেকোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। কিন্তু সেই সমস্যার উৎকৃষ্ট সমাধান কী হতে পারে? সে সম্পর্কে আপনি অবশ্যই অবগত নন? আচ্ছা, আপনি যে ব্যবসাটি শুরু করতে চাইছেন, ঠিক সেরকম কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে গবেষণা করেছেন? তারা কোন সমস্যাটি কীভাবে সমাধান করে থাকে, বা তাদের ব্যর্থতা/সফলতার কারণগুলো গবেষণা করে দেখেছেন কি?

এক্ষেত্রে আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে, কারা ঠিক আপনার মতো বা একই ধরনের অন্য কোনো ব্যবসার সাথে জড়িত, তারা কীভাবে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে, তাদের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি বা ব্যর্থতার কারণগুলো কী কী হতে পারে। এসব গবেষণা করে তালিকাভুক্ত করে রাখবেন, যা আপনার ব্যবসায় সফলতা জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৬. গ্রাহকদের কোন সমস্যাটির সমাধান কীভাবে করবেন?

একটি ব্যবসার উদ্দেশ্যই যেখানে গ্রাহকদের সেবাদান, সেখানে গ্রাহকরা আপনার সেবায় সত্যিই সন্তুষ্ট কিনা, তা যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু আপনি কীভাবে গ্রাহকদের সমস্যা সম্পর্কে অবগত হবেন এবং কীভাবে সমাধান করবেন?

আপনি যদি গ্রাহকদের নিয়ে গবেষণা করে থাকেন, তাহলে তা যাচাই করা খুব সহজ। এক্ষেত্রে আপনি গ্রাহকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করুন। তাদের থেকে জেনে নিন, তারা আপনার সেবা গ্রহণে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কিনা, হলে তারা এর কী ধরনের সমাধান চায়? অতএব আপনি যখন আপনার গ্রাহকদের থেকে সরাসরি কোনো তথ্য পাবেন, তখন সে তথ্য অনুযায়ী খুব সহজেই নির্দিষ্ট কোনো সমস্যার নির্দিষ্ট সমাধান পেয়ে যাবেন। মূলত গ্রাহকদের সন্তুষ্টি অর্জনই আপনার মূল উদ্দেশ্য, আর গ্রাহকরা আপনার সেবায় সন্তুষ্ট হলেই আপনি ব্যবসায় সফল হতে পারবেন।

শাহীন

আমি শাহীন । পেশায় একজন ব্যবসায়ী । পাশাপাশি অনলাইনে কাজ করতে পছন্দ করি। আশা করছি আমার শেয়ারকৃত তথ্য থেকে আপনারা উপকৃত হচ্ছেন আর তা হলেই আমার পরিশ্রম স্বার্থক।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads