হাই কি অবস্থা সবার ? স্কুলজীবনে অথবা কলেজ জীবনে আমরা তো ভাষণ দেওয়ার নিয়ম নীতি সম্পর্কে অনেক পড়াশোনা করেছি কিন্তু ভাষণের মত কঠিন কাজটি করার জন্য যখন আমাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয় তখন যেন মাথার উপর পাহাড় ভেঙ্গে পড়ে ।
ভাষণ শেখার জন্য আবার আমরা গুগল অথবা ইউটুবে সার্চ করে থাকি । কিন্তু সেখানে তেমন কোনো কনটেন্ট খুঁজে পাইনা। আমি আপনাকে হতাশ করবো না আজকে কিভাবে ভাষণ দেবেন তার বিস্তারিত বর্ণনা দেব পাশাপাশি একটি নমুনা ভাষণ উপস্থাপন করব । যদিও একটা নমুনা ভাষণ উপস্থাপন করার পরে সেই ভাষণটা অনেকবার কপি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কিন্তু আমি তাতে ভয় পাইনা।
উপস্থিত ব্যক্তিদের সম্ভাষণ মে দিবসের ভাষণে
যেকোনো ভাষণ শুরু করার পূর্বে উক্ত অনুষ্ঠানে যারা অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন তাদেরকে সম্বোধন করতে হবে । উপস্থিত অতিথি এবং উপস্থিত দর্শক শ্রোতা সকলকে সম্বোধন করে সম্মান প্রদর্শন করে বক্তব্য শুরু করতে হবে । যদি ভাষণ দেওয়ার স্থানটি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হয় সেক্ষেত্রে অবশ্যই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক মন্ডলী, অধ্যক্ষ, সহকারী অধ্যক্ষ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি যদি উপস্থিত থাকে এবং যে অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন সেই অনুষ্ঠানে পরিচালনাকারী সভাপতি এবং গণ্যমান্য উপস্থিত অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ কে সমর্থন করে বক্তব্য শুরু করতে হবে।
যেহেতু বক্তব্যটি উপস্থিতি ছাড়া অন্যান্য অথবা দর্শকরাও শুনবে তাই সকলের প্রতি সুদৃষ্টি দেখিয়ে সকলকে সম্মান প্রদর্শন করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বক্তব্য শুরু করতে হবে।
যেমন স্কুলের অনুষ্ঠান হলে বলতে হবে মাননীয় অধ্যক্ষ/ উপস্থিত অতিথিবৃন্দ/ সম্মানিত শিক্ষক মন্ডলী/ প্রিয় ছাত্র ছাত্রী ভাই ও বোনেরা/ এবং সব অভিভাবক ইত্যাদি
স্কুলের বাইরে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে হলে বলতে হবে মাননীয় সভাপতি/ সম্মানিত প্রধান অতিথি/ প্রিয় এলাকাবাসী/ সংগ্রামী বন্ধুরা / সম্মানিত উপস্থিতি দর্শকদের সম্বোধন করা ইত্যাদি নমুনা হিসেবে আমরা বলতে পারি
…দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের সম্মানিত সভাপতি, মাননীয় প্রধান অতিথি, আমন্ত্রিত বিশেষ অতিথি ও মঞ্চের সামনে উপবিষ্ট সুধীমণ্ডলী; সবার প্রতি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা।
বক্তব্যের সূচনা । শ্রমিক দিবসের ভাষণ
সূচনা বক্তব্য আপনি কি সম্পর্কে ভাষণ দিতে চাচ্ছেন সে সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা দিতে হবে। প্রথমে উপস্থিত সকলের প্রতি সম্মান জানিয়ে তারপরে কিছু কথা বলে বক্তব্য শুরু করার। সূচনা বক্তব্যে প্রথম কয়েক বাক্যেই বোঝার সুবিধা হবে যে আসলে আপনি কি সম্পর্কে ভাষণ দিতে যাচ্ছেন। যদি সেখানে কোন মনীষীর বাণী, বিখ্যাত উক্তি, কবিতা দিয়ে শুরু করা যেতে পারে।
এবার মূল বক্তব্য শুরু করুন । শ্রমিক দিবসের ভাষণ
ভূমিকার পর আমাদেরকে এখন বক্তব্য অথবা মূল ভাষণ শুরু করতে হবে। মূল বক্তব্য বা ভাষণ যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন সেটা যে উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে সেটা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করুন । যদি কোন ঐতিহাসিক অথবা জাতীয় দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় তাহলে সেটার ইতিহাস তাৎপর্য, ফলাফল, গুরুত্ব, ইত্যাদি সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করতে পারেন। বিস্তারিত আলোচনা করার সময় অবশ্যই উপস্থিত শ্রোতাদের প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে যে তারা কি আপনার বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শুনছে কিনা। উপস্থিত শ্রোতাদের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য আপনি অন্যরকম কিছু করতে পারেন যার ফলে উপস্থিত শ্রোতাবৃন্দ আপনার প্রতি আকৃষ্ট হতে বাধ্য হবে ।
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বক্তব্য শেষ করার চেষ্টা করুন কারণ মঞ্চে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি উপস্থিত রয়েছে যারা তাদের মূল্যবান সময় দিয়ে আপনার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছে।
এবার বক্তব্য শেষ করুন । মে দিবসের ভাষণ
যে অনুষ্ঠানে যে উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিয়েছেন সেটা মূল কথাগুলো শেষ হয়ে গেলে বক্তব্য শেষ করার জন্য প্রস্তুতি নিন। বক্তব্য শেষ করার সময় আশাবাদ ব্যক্ত করে, সকলের কাছে দোয়া চেয়ে, উপদেশ অথবা অনুরোধমূলক কথা বলে শেষ করুন ।
জাতীয় শ্রমিক দিবস উপলক্ষে একটি নমুনা ভাষণ 2021
মঞ্চে উপস্থিত সম্মানিত মাননীয় সভাপতি উপস্থিত প্রধান শিক্ষক মহোদয় এবং আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক গুরুজন সেই সাথে উপস্থিত সকল শ্রেণী-পেশার শ্রমিক ভাই বোন বন্ধুগণ সকলের প্রতি আমার সালাম আসসালামু আলাইকুম ।
আপনারা জানেন আজ মহান শ্রমিক দিবস। শ্রমিক দিবসের ইতিহাস সম্পর্কে আপনারা সকলেই অবগত আছেন। নতুন করে আমি আর এ বিষয়ে কি বলবো। একটা কথাই বলতে চাই আমরা শ্রমিক এবং মালিক সকলের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে চাই। আমরা চাইনা শ্রমিক এবং মালিক এর মধ্যে কোন ভেদাভেদ থাকুক।
আজ পহেলা মে। বিশ্বের কোটি কোটি শ্রমজীবি মানুষের অধিকার ও দাবি আদায়ের মহান ‘মে দিবস’ আজ। ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা উপযুক্ত মজুরি আর দৈনিক আট ঘন্টা কাজের দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন।
কল-কারখানা তখন গিলে খাচ্ছিল শ্রমিকের গোটা জীবন। অসহনীয় পরিবেশে প্রতিদিন ১৬ ঘন্টা কাজ করতে হতো।
সপ্তাহজুড়ে কাজ করে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য একেবারে ভেঙে যাচ্ছিল। শ্রমজীবি শিশুরা হয়ে পড়েছিল কঙ্কালসার। তখন দাবি উঠেছিল, কল-কারখানায় শ্রমিকের গোটা জীবন কিনে নেয়া যাবে না। ৮ ঘন্টা শ্রম দিনের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনের সময় ওই বছরের ১লা মে শ্রমিকরা ধর্মঘট আহবান করে। প্রায় তিন লাখ মেহনতি মানুষ ওই সমাবেশে অংশ নেয়।
আন্দোলনরত ক্ষুদ্ধ শ্রমিকদের রুখতে গিয়ে একসময় পুলিশ বাহিনী শ্রমিকদের মিছিলে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে পুলিশের গুলিতে ১১ জন নিরস্ত্র শ্রমিক নিহত হন, আহত ও গ্রেফতার হন আরো অনেক শ্রমিক। পরবর্তীতে প্রহসনমূলক বিচারের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত শ্রমিকদের মধ্য থেকে ছয়জনকে আন্দোলনে অংশ নেয়ার অপরাধে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।
এতে বিক্ষোভ আরো প্রকট আকারে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
১৮৮৯ সালের ১৪ই জুলাই ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ১ মে শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী বছর অর্থাৎ ১৮৯০ সাল থেকে ১ মে বিশ্বব্যাপী পালন হয়ে আসছে ‘মে দিবস’ বা ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’।
আমি আমার বক্তব্যকে আর বেশী দীর্ঘায়িত করতে চাচ্ছি না। মন থেকে একটাই কামনা পৃথিবী থেকে যেন শ্রমিক এবং মালিকের মধ্যে পার্থক্য আর না থাকে। প্রত্যেকটা শ্রমিক যেন তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত না হয়। আমাদেরকে প্রত্যেক শ্রমিকের তাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এই আশাবাদ ব্যক্ত করে আজকের মত আমার বক্তব্য শেষ করছি। ধন্যবাদ
আশা করছে রে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের অনেকেরই কাজে আসবে। ভালো লাগলে এই পোস্টে আপনার ফেসবুক পেজে শেয়ার করতে পারেন । যাত্রা আপনার পরিচিত অন্য কেউ এখান থেকে উপকৃত হতে পারে। নিচে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অন্যান্য আইকনগুলো দেওয়া রয়েছে এখানে ক্লিক করে শেয়ার করতে পারেন ।