তালেবান কি বা কারা ?
তালেবান শব্দের অর্থ ছাত্র। এটি মূলত একটি পশতু শব্দ। ধর্মীয় স্কুল বা মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে মূলত তালেবান বলা হয়ে থাকে। যেহেতু মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে নিয়ে তালেবান বাহিনী গঠন হয়েছিল তাই এটাকে তালেবান বলা হয়। তালেবানরা মূলত দেওবন্দী মতাদর্শের অনুসারী।
তালেবানের উৎপত্তি হলো কিভাবে?
তালেবানের উৎপত্তি সম্পর্কে বলতে হলে আমাদের অনেক পিছনে ফিরে যেতে হবে সেটা প্রায় 1979 সালের কথা । সে সময়ে আফগানিস্তানের জনপ্রিয় কমিউনিস্ট নেতা নূর মোহাম্মদ তারা কি কে হত্যা করা হয়েছিল। আর তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন এ ব্যাপারটা নিয়ে ব্যাপক নাক গলাতে শুরু করে। মূলত আফগানিস্থানের কমিউনিস্টদের নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ লড়াই কে কেন্দ্র করে বিপ্লব সংগ্রাম চলে আসছিল। ওই সময়টাতে বিশ্বমানচিত্রে শক্তিশালী একজন ইসলামী নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন আয়াতুল্লাহ খামেনি। কালের পালাক্রমে একটা সময় তালেবানের উৎপত্তি ঘটে ছিল 1996 সালের কথা। সে সময় মুজাহিদীন সরকারকে হটিয়ে এই তালেবান ক্ষমতা দখল করে। অন্তত 50 জন ছাত্র দিয়েই শুরু হয়েছিল তার যাত্রা। এই সময়টাতে আবার পাকিস্তান থেকে আফগান শরণার্থীরা এসে যোগ দেয় তাদের সাথে। তারা মূলত আফগানি মুজাহিদী দিনের তুলনায় আরও বেশি ধর্মীয় দিক থেকে শক্তিশালী ছিল ।
কেন তালেবানের উৎপত্তি হয়েছিল?
1979 সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন (রাশিয়া) সমাজতন্ত্র রক্ষার নামে দেশটি দখল করে নেয়।
তখন বিদ্রোহী মুজাহিদীনরা সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু করে সরকার বাহিনী ও সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে। 10 বছর যুদ্ধের পর 1989 সালে সোভিয়েত রাশিয়া সৈন্য প্রত্যাহার করলে মুজাহিদীনরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়।
তবে মুজাহিদীনদের মধ্যে ক্ষমতা নিয়ে প্রচুর দ্বন্দ্ব ছিল। ঠিক সে সময় কিছু আফগানিরা কান্দাহারের কাশাক নাখুদ জায়গায় একত্রিত হয়ে আলোচনা করে কিভাবে দেশকে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ ও রক্তপাত থেকে রক্ষা করে দেশে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা যায়। এজন্য তারা বিভিন্ন সামরিক অভিযান শুরু করে তারা দেশের জনগণকে নিরাপত্তা ও শান্তি প্রতিশ্রুতি দেয় এই কারণে তারা দেশের মানুষের সমর্থন পাওয়া শুরু করে। হাজার 1996 সালে তারা ক্ষমতা দখল করে নেয় দেশে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করার জন্য।
তালেবানের উদ্দেশ্য কি?
তালেবানরা সবসময়ই স্পষ্ট করে বলে আসছে তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে আফগানিস্তানে শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনা, সমস্ত বহিঃশক্তির খবরদারি না মানা, সর্বোপরী ইসলামী শরীয়ত কায়েম করা।
তালেবান নারী অধিকার বিরোধী?
নারী অধিকার বলতে আমরা বুঝি নারীকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে দেয়া, বিভিন্ন প্রয়োজনে ঘরের বাইরে আসতে দেয়া, নারীকে কাজের সুযোগ দেয়া, পূর্ববর্তী তালেবান শাসনে আফগানিস্থানে নারীর অধিকার সুরক্ষিত ছিল না এমনই মনে করেন বিশ্বের অধিকাংশ মানবাধিকারকর্মী। এবারেও কি নারীদের প্রতি এরকমই ব্যবহার করবে তালেবান প্রশাসন ? কাবুল দখলের পর এমন প্রশ্নে তালেবানের মুখপাত্র জাবীহুল্লাহ মুজাহিদীন জানিয়েছেন শরিয়া আইন মেনে নারীদের পড়াশোনা এবং কাজের অধিকার দেওয়া হবে এবং প্রয়োজনে ঘরের বাইরেও আসতে পারবে । তিনি আরো বলেন আগামী দিনে আফগান সমাজে নারীদের অবস্থান যথেষ্ট সক্রিয় হবে।
তালেবানের মূলমন্ত্র কি?
তালেবানরা মূলত কট্টর ইসলামপন্থী তারা ইসলামকে সম্পূর্ণরূপে মানতে চেষ্টা করে। তাই জীবনের প্রত্যেকটা সেক্টরে তারা ইসলামকেেই প্রাধান্য দেয়। যেহেতু তাঁরা সম্পূর্ণরূপে ইসলামকে মানতে চায় তাই তাদের মূলমন্ত্র হচ্ছে কোরআন ও হাদিস। কোরআন ও হাদিসে যে বিধান রয়েছে তারা সেটাই কার্যকর করে। এতে করে কোন মানুষ খুশি হোক বা না হোক সে দিকে তাকানোর সুযোগ তাদের নেই। তারা শুধু আল্লাহ রব্বুল আলামীন ও নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে খুশি করার জন্যই কোরআন ও হাদিস কে জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বা মূলমন্ত্র বানিয়ে নিয়েছে।
তালেবান কার জন্য কাজ করে ?
তালেবানরা মূলত ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করে। কেননা ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা হলেই জনগণ সর্বোচ্চ বাক স্বাধীনতা পায়, জান ও মালের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা এবং সব ধরনের ডাকাতি ছিনতাই চুরি ধর্ষণ ইভটিজিং দুর্নীতি ধোঁকাবাজি প্রতারণা ইত্যাদি সব ধরনের অনৈতিক কাজ কর্ম থেকে মানুষ বিরত থাকতে বাধ্য হয় । অন্যভাবে বলতে গেলে তারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুশি করার জন্য কাজ করে।
তালেবানকে কি আফগানিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা বলা যায়?
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তালেবানকে সর্ব প্রথম সারিতে ধরা যায়। কেননা তারা দেশের জন্য এবং ইসলামের জন্য যুগের পর যুগ ধরে বিদেশি শক্তিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। 1979 সাল থেকে 1989 সাল পর্যন্ত এই 10 বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে তারা যুদ্ধ করেছে। 2001 থেকে 2021পর্যন্ত সুপারপাওয়ার আমেরিকা ও ন্যাটো জোট ভুক্ত 32টি দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আসছে। সুতরাং ইতিহাস ঘেঁটে দেখলে আফগানরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অন্যতম।
তালেবানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
তালেবানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের গণ্যমান্য ও গবেষক ব্যক্তিরা মনে করেন তালেবান যেহেতু একটি ইসলামিক দল এবং তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করা সে হিসেবে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হতে পারে সম্পূর্ণভাবে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করা আফগানিদের নিরাপত্তা প্রদান করা দেশকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা এবং সমস্ত বহির্বিশ্বের সব ধরনের চাপ থেকে নিজেদের দেশকে রক্ষা করা।
তালেবানের উৎপত্তির ক্ষেত্রে কে দায়ী বেশি?
1979 সালে যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্থানে আক্রমণ করে তখন মুজাহিদীন নামে সশস্ত্র একটি দল তারা সোভিয়েত ইউনিয়ন রাশিয়ার বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। উদ্দেশ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নকে হটিয়ে নিজের দেশের স্বাধীনতা অর্জন করা এবং ইসলাম করা। দীর্ঘ 10 বছর তারা শ্রমিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আর এই যুদ্ধে মুজাহিদীনদেরকে অস্ত্র ও আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান। এই সময়ে প্রায় 15000 সোভিয়েত সৈন্য নিহত হয় (সূত্র নিউইয়র্ক টাইমস) 1989 সালে সোভিয়েতরা আফগানিস্তান ছাড়তে বাধ্য হয় স্বার্থ রক্ষা হয় আমেরিকার। পরবর্তীতে 1994 সালে তালেবানরা আফগান দখল করে এবং 1996 সালে কাবুলের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন। ঠিক সে সময়টায় তালেবানকে সমর্থন জানায় পাকিস্তান সৌদি আরব সহ আরো কয়েকটি দেশ। এবং কি সমস্ত দেশ থেকে প্রচুর সাহায্য সহযোগিতাও তাদের কাছে আসতে থাকে। বিশ্লেষকরা মনে করেন তালেবানের উৎপত্তির ক্ষেত্রে এককভাবে কোন দেশকে দায়ী করা যায় না তবে বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতার ক্ষেত্রে পাকিস্তান আরব বিশ্ব এগিয়ে রয়েছে আর আমেরিকা রাশিয়াকে হঠাতে মুজাহিদীনদেরকে যে অস্ত্র ও বিপুল অর্থ প্রদান করেছিল সেগুলো এখন তাদের জন্য কিছুটা হলেও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠায় তালেবানের ভূমিকা
তালেবানদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করা ।এই কারণে 1996 সালে তারা কাবুল দখল করার পরেই ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করে | ইসলামী শাসন মানেই চোরের হাত কাটা বা প্রকাশ্যে শাস্তি দেওয়া নয় বরং ইসলামী শাসন এর মধ্যে রয়েছে সব ধরনের শান্তি, বাক স্বাধীনতা ও জান মালের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা এবং সব ধরনের জালিয়াতি দুর্নীতি এবং অন্যায় থেকে জনগণকে বিরত রাখার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ । সর্বোপরি তারা ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে এবং অনেকটা সফল হয়েছিল | বর্তমান তালেবানরাও স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছে তারা অবশ্যই ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করবে এবং এরই মধ্য দিয়ে আফগানিস্থানে শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে।
তালেবান কি ইমাম মাহদীর দল
হযরত ছাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমরা দেখবে, কালো পতাকা গুলো খোরাসানের দিক থেকে এসেছে, তখন তাদের সাথে যুক্ত হয়ে যেও। কেননা তাদেরই মাঝে আল্লাহর খলিফা মাহদী থাকবে। (মুসনাদে আহমদ, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ২৭৭ উম্মা, খন্ড ১৪, পৃষ্ঠা ২৪৬, মিশকাত শরীফ, কেয়ামতের আলামত অধ্যায়,)
অপর বর্ণনায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হারিস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন পূর্ব দিক থেকে (খোরাসান) কিছু লোক বের হয়ে আসবে, ইমাম মাহদীর খিলাফত প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠা করবে। ( সুনানে ইবনে মাজাহ, খন্ড ৩, হাদিস নং ৪০৮৮)
এযাবৎকাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের তালেবান মুজাহিদীনগন সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্রসেডারদের বিরুদ্ধে সরাসরি জিহাদে লিপ্ত রয়েছে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে 10 বছর। আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধে পাঁচ বছর। আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রায় 20 বছর। তাদের হাত ধরেই মুজাহিদগণ আফগানিস্তান থেকে ছড়িয়ে পড়েছে ইয়েমেন, সোমালিয়া, নাইজেরিয়া, মালি, লিবিয়া, ইরাক, মিশর, সিরিয়া, ফিলিপাইন, চেচনিয়া, পূর্ব তুর্কিস্তান, কাশ্মীর সহ পৃথিবীর সব জায়গায়। ইসলামের হারিয়ে যাওয়া জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ তাদের মাধ্যমেই আল্লাহ তাআলা পুনর্জীবিত করেছেন। যদিও তারা খোরাসানের ময়দানে কয়েকটি যুগ পর্যন্ত জিহাদে অটল রয়েছেন, কিন্তু খোরাসানের বাহিনী বা ইমাম মাহদীর বাহিনী যে তারাই হবে এরকম কোন সরাসরি হাদিস নেই।
তালেবানকে মুসলমানদের সহযোগিতা করা উচিত হবে কিনা?
নীতিগতভাবে তালেবানরা যদি সত্যিকার অর্থেই মানুষের উপকারের জন্য কাজ করে থাকে এবং সঠিকভাবে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করে আর এরই মধ্যে দিয়ে যদি আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয় তাহলে অবশ্যই মুসলমান হিসেবে তাদেরকে আমাদের সাহায্য সহযোগিতা করতে হবে। আর যদি তারা কোন অনৈতিক কাজ কর্ম বা সন্ত্রাসীমূলক কাজের সাথে জড়িয়ে যায় যার মাধ্যমে জনগণের ক্ষতি সাধন হয় তাহলে অবশ্যই আমরা তাদেরকে সমর্থন জানাবো না।
তালেবানের নেতৃত্ব দানকারী নেতা কে?
বর্তমান আফগানিস্তানের পেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে তালেবানদের নেতা কে বা কারা। তাই এখানে আমরা কয়েকজন নেতার পরিচয় তুলে ধরবো।
হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদা: বিশ্বস্ত নেতা হিসেবে পরিচিত হাইবাতুল্লাহ বর্তমানে তালেবানের শীর্ষ নেতা। ইসলামী আইনজ্ঞ এই নেতা দলটির রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামরিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী একমাত্র ব্যক্তি।
মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব: তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের 30 বছর বয়সী ছেলে মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। বর্তমানে তালেবানের সামরিক শাখার দায়িত্বে রয়েছেন।
সিরাজ উদ্দিন হক্কানী:বহুল আলোচিত মুজাহিদীন কমান্ডার জালালউদ্দিন হক্কানির ছেলে সিরাজুদ্দিন ’হক্কানী নেটওয়ার্ক’ এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই নেটওয়ার্ক পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে তালেবানের অর্থনৈতিক ও সামরিক কর্মকান্ড পরিচালনা করছে।
মোল্লা আবদুল গনি বারাদারক: মোল্লা আবদুল গনি কে তালেবানের অন্যতম সহ-প্রতিষ্ঠাতা বলে মনে করা হয়। তালেবানের রাজনৈতিক শাখার প্রধান বারাদার বর্তমানে দোহায় বেশ কিছু বৈঠকে মধ্যস্থতার কাজ করেছেন।
শের মোহাম্মদ আব্বাস স্তানিকযাই: তালেবান সরকারের সাবেক উপমন্ত্রী স্তানিকজাই প্রায় এক দশক ধরে দোহায় বসবাস করছেন। সংগঠনের রাজনৈতিক শাখার প্রধান নির্বাচিত হন তিনি।
আব্দুল হাকিম হক্কানী:তালেবান মধ্যস্থতাকারী দলের প্রধান তিনি। তালেবানের সাবেক প্রধান বিচারপতি হক্কানী বর্তমানে ক্ষমতাধর ধর্মীয় কাউন্সিলের প্রধান । তালেবানের শীর্ষনেতা আখুনজাদার বিশ্বাসী সহচরদের মধ্যে তিনি অন্যতম বলে মনে করা হয়।
তালেবানের সরকার গঠন প্রক্রিয়া
শুক্রবার কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবানের রাজনৈতিক দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে যে সব জাতিগোষ্ঠীর নেতাকে অন্তর্ভুক্ত করে আফগানিস্তানের একটি ঐক্যমতের সরকার গঠন করবে তালেবান (আল জাজীরা )
কেয়ারটেকার ধাঁচের এ সরকারে সব পক্ষের অংশগ্রহণ থাকবে। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই তালেবানরা নতুন সরকার গঠন সম্পন্ন করতে চায়। তালেবান সূত্রগুলো বলছে নতুন সরকার গঠনের মধ্যে বারোটি কাউন্সিল থাকবে এবং এই কাউন্সিলের লোকেরাই পুরো দেশকে চালাবে । আমিরুল মুমিনিন নামে একটি পদ থাকবে এই পদের নেতা আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ প্রধান নেতা হিসেবে বিবেচিত হবেন।সকলকে তার কাছেই সব ধরনের জবাবদিহিতা করতে হবে। । মূল কয়েকটি কাউন্সিল বা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে রয়েছে বিচার, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা তথা গোয়েন্দা বিভাগ, প্রতিরক্ষা ,পররাষ্ট্র, শিক্ষা, অর্থ, গণপূর্ত, তথ্য, ও কাবুল বিষয়ক বিশেষ বিভাগ
পৃথিবীর ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো তালেবানের সঙ্গে পারল না কেন?
বিশ্বের বড় বড় রাজনীতি বিশ্লেষক ও কূটনীতিকদের মতে আফগানিস্থানে পৃথিবীর ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো দখলদার হিসাবে অহংবোধের লড়াই করতে এসেছিল যে কিনা ক্ষমতা ও শক্তির গর্বে অন্ধ ছিল। কিন্তু তালেবানের কাছে তা ছিল শীকড় তথা দেশ রক্ষার লড়াই। তাই যতবার আঘাত নেমে এসেছে ভূপাতিত হয়েও বারবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে তারা। গুলি-বোমা একজন তালেবান মারা গেলে তার জায়গায় আরো দশজন এগিয়ে এসেছে। সর্বোপরি তালেবানরা সত্য পথের পথিক ছিল এ কারণে সর্বদাই সৃষ্টিকর্তার সাহায্য তাদের সঙ্গে ছিল এ কারণে কোন শক্তি তাদেরকে হঠাতে পারেনি।
তালেবানের সৈন্য সংখ্যা কত ?
তালেবানের প্রায় 85 হাজার যোদ্ধা আছে বলে মনে করা হয় ।
তালেবানের প্রধান নেতার নাম কি?
হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদা: বিশ্বস্ত নেতা হিসেবে পরিচিত হাইবাতুল্লাহ বর্তমানে তালেবানের শীর্ষ নেতা। ইসলামী আইনজ্ঞ এই নেতা দলটির রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামরিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী একমাত্র ব্যক্তি।
কে তালেবান গঠন করেছিলেন?
আফগান অধিবাসী মোল্লা মোহাম্মদ ওমর 1994 সালে তালেবান সংগঠনটি গঠন করেন।
তালেবানের শক্তি এবং সামর্থ্য
তালেবানের শক্তি ও সামর্থ্য পূর্বে যতটুকু ছিল তার চেয়ে বর্তমানে বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, বলা চলে অঘোষিত সুপারপাওয়ার এখন তালেবান । অধিকাংশ পশ্চিমা সামরিক বিশ্লেষক বলছেন ন্যাটো বাহিনী তালেবানের কোন ক্ষতিতো করতে পারেইনি বরঞ্চ গত 20 বছরের মধ্যে যত অস্ত্র-শস্ত্র আফগান পাঠিয়েছে সবগুলো এখন তালেবানের হাতে।
তালেবানের কূটনৈতিক ক্ষমতা
বর্তমান তালেবানদের কূটনৈতিক ক্ষমতা দেখে পুরো বিশ্ব এখন হা করে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা চীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক করেছে। পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক আগে থেকেই মজবুত। ইরানের সাথে ও তাদের সম্পর্কের কথা শোনা যাচ্ছে। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন বর্তমান তালেবানদের কূটনৈতিক ক্ষমতা অনেক বেশি।
তালেবানের বিজয় এর ক্ষেত্রে আমেরিকানদের ভুল কি ছিলো?
বিশ্লেষকরা মৌলিকভাবে তিনটি ভুলের কথা বলছেন সেগুলোর মধ্যে হল-
১.তালেবানের সক্ষমতা বুঝতে না পারা।
২.পরিস্থিতি কী হতে পারে তা নিয়ে আগাম পরিকল্পনা না থাকা।
৩. আশরাফ গানি সরকারের উপর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস।
যারা অফিশিয়ালি তালেবানকে সাপোর্ট দিয়েছেন
আন্তর্জাতিক মহলে তালেবানকে স্বীকৃতি দিয়েছে চীন, ইরান,আরব,ও পাকিস্তান