আফগানিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নাম কি
বর্তমানে যেহেতু তালিবান আফগানিস্তানের রাজধানী দখল করেছে এবং তারা সরকার গঠন করতে চলেছে তাই তালেবান গোষ্ঠীর সবচেয়ে সম্মানীয় ক্ষমতাধর নেতা যিনি তাকেই প্রধানমন্ত্রী বানানো হবে অথবা আমির হিসেবে নিযুক্ত করা হবে । যেটা আমরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমের শিবাজীর জানতে সক্ষম হয়েছি।
আফগানিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থান
পর্বতময় এবং দক্ষিণ সীমান্তে সমভূমি বৃষ্টিতে আফগানিস্থান মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত।
উত্তর-পশ্চিম, পোস্ট ও দক্ষিণ দক্ষিণ ও পশ্চিম এর সীমান্তবর্তী এলাকা গুলি মূলত মরুভূমি আর পর্বতশ্রেণী দ্বারা বেষ্টিত। উত্তর-পূর্ব দিকে দেশটি ধীরে ধীরে উঁচু হয়ে হিমবাহ আবৃত পশ্চিম হিমালয়ের হিন্দুকুশ পর্বত এর সাথে মিশে গেছে। দৃষ্টির সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে আবু দরিয়া নদী এবং এর উপনদী পাঞ্চ ভূমিকা পালন করেছে। আফগানিস্তানের উত্তর সীমানায় রয়েছে তুর্কমেনিস্থান উজবেকিস্তান এবং তাজিকিস্তান,পূর্ব দিকে রয়েছে চীন এবং পাকিস্তান এর জম্মু ও কাশ্মীর সর্বশেষ দক্ষিণের রয়েছে পাকিস্তান এবং পশ্চিমে ইরান।
আফগানিস্তানের আয়তন কত
আফগানিস্তান আয়তনের দিক থেকে কত বড় কোন দেশ নয়। আয়তনের দিক থেকে বিবেচনা করলে এটা পৃথিবীর 41 তম বৃহত্তম দেশ। ৬,৪৭,৫০০ বর্গকিমি হচ্ছে আফগানিস্তানের মোট আয়তন। আমাদের বাংলাদেশের তুলনায় আফগানিস্তানের আয়তন অনেক বেশি। তবে এই এলাকায় অধিকাংশই পাহাড়বেষ্টিত ।
আফগানিস্তানের প্রদেশ
আফগানিস্তান ভার্সেস প্রশাসনিকভাবে 34 টি প্রদেশ নিয়ে গঠিত । প্রত্যেকটি প্রদেশের নিজস্ব রাজধানী রয়েছে। আর এই প্রত্যেকটা রাজধানী বা প্রদেশ একেকটা বড় মাপের শহর।
নিচে আফগানিস্তানের সবগুলি প্রদেশের নাম দেয়া হল (প্রদেশগুলির ক্রমিক সংখ্যা পাশের মানচিত্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ)।
১. বাদাখশান, ২. বাদগিস, ৩. বাগলান, ৪. বাল্খ, ৫. বামিয়ান, ৬. দাইকুন্ডি, ৭. ফারাহ, ৮. ফারিয়াব, ৯. গজনি, ১০. ঘাওর, ১১. হেলমান্দ, ১২. হেরাত, ১৩. জোওয্জান, ১৪. কাবুল, ১৫. কান্দাহার, ১৬. কাপিসা, ১৭. খোস্ত, ১৮. কুনার, ১৯. কুন্দুজ, ২০. লাগমান, ২১. লোওগার, ২২. নানকারহার, ২৩. নিমরুজ, ২৪. নুরেস্তান, ২৫. ওরুজ্গান, ২৬. পাক্তিয়া, ২৭. পাক্তিকা, ২৮. পাঞ্জশির, ২৯. পারভান, ৩০. সামাংগান, ৩১. সারে বোল, ৩২. তাখার, ৩৩. ওয়ার্দাক, ৩৪. জাবুল
আফগানিস্তানের জেলার সংখ্যা
আফগানিস্তানের বহুবিচিত্র জাতির বসবাস রয়েছে। এদের প্রায় সবাই মুসলমান। এই দেশে রয়েছে এক মিশ্র সংস্কৃতি যেখানে মধ্য এশিয়া, চীন, ভারত উপমহাদেশ এবং ইরানের সংমিশ্রন রয়েছে। এ পর্যন্ত আফগানিস্থানে একটি মাত্র সরকারি আদমশুমারি হয়েছে 1979 সালে। সেই অনুপাতে তখন জনসংখ্যা ছিল দেড় কোটি কিন্তু বর্তমানে 2006 সালের হিসাব অনুযায়ী জনসংখ্যা সাড়ে তিন লাখের মতো। তবে প্রকৃত জনসংখ্যা এখনো পর্যন্ত স্পষ্ট ভাবে জানা যায়নি যেহেতু এখন 2021 সাল চলছে।
আফগানিস্তানের মোট জনসংখ্যার পরিমাণ কত
হাজার 979 সালের সোভিয়েত আক্রমণের ফলে অনেক আবগানিস্থানি দেশের বাইরে পাড়ি জমান। এখানে প্রায় 30 লক্ষ আফগান নাগরিক চলে যান পাকিস্থানে এছাড়াও প্রায় 15 লক্ষ চলে যান ইরানের। ধারণা করা হয় প্রায় দেড় লক্ষ আফগান স্থায়ী ভাবে বিদেশে পাড়ি জমান এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য ও বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশে বসতি স্থাপন করেন। 2001 সালে যখন তালেবানের সরকারের পতন হয় তখন অনেক উদ্ভাসিত দেশে ফেরত আসতে থাকেন। 2002 সালে প্রায় 15 লক্ষ এবং 40 লক্ষ উদ্বাস্তু যথাক্রমে পাকিস্তান এবং ইরান থেকে ফেরত আসেন। যা আফগানিস্তান সরকারের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার ব্যাপারে। 2006 সালে আফগানিস্তানের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ধরা হয়েছিল 2.67%। এখানে বিশ্বের সর্বোত্তম শিশু মৃত্যুর হার রয়েছে বলা হয়ে থাকে প্রায় 1000 জনে 160 জন শিশু জন্মের সাথে সাথে মারা যায়। গড় আয়ুর বেলাতেও আফগানিস্তান অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে এখানে মানুষ গড়ে 43 বছর বেঁচে থাকে। প্রায় 77 শতাংশ লোক গ্রামে বসবাস করে এছাড়াও বাকি শহর বাসের অর্ধেক মানুষ থাকেন রাজধানী কাবুলে।
আফগানিস্তানের মানচিত্র দেখতে কেমন
উইকিপিডিয়া থেকে একটি আফগানিস্তানের মানচিত্র সংগ্রহ করে আপনাকে দেখাচ্ছে। এই মানচিত্রে মোট 34 টি প্রদেশে দেখানো হয়েছে। আফগানিস্তানে মোট 34 টি প্রদেশ রয়েছে এবং প্রত্যেকটি প্রদেশেরই আলাদা করে রাজধানী রয়েছে বা শহর রয়েছে। 34 টি প্রদেশের প্রত্যেকটি একজন করে গভর্নর নিয়োগ করেন। শুধুমাত্র কাবুল শহরে এর ব্যতিক্রম দেখা যায় সেখানে শহরের মেয়র কে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেন এবং শহরটির প্রশাসন কোন প্রদেশ থেকে স্বাধীন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তালেবান যেহেতু ক্ষমতা দখল করেছে এখন তারা যেভাবে সরকার গঠন করবে বা প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে সে অনুপাতে হয়তো পরবর্তীতে আলোচনার মোড় ঘুরে যেতে পারে।
আফগানিস্তানে হিন্দু জনসংখ্যা পরিমাণ
আফগানিস্তান একটা মুসলিম সম্প্রদায়ের দেশ। এখানে প্রায় সবাই মুসলমান। 99 শতাংশ মানুষের মুসলিম ধর্ম অবলম্বী। এদের মধ্যে 84 শতাংশ মুসলমান হচ্ছে এবং 15 শতাংশ মুসলমান হচ্ছে শিয়া মুসলিম । তবে শহরগুলোতে অল্পসংখ্যক হিন্দ, শিখ, পারসিক এবং ইহুদি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে । আফগানিস্তানের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হলেন মোল্লা । যে কোন মানুষ যিনি কোরআন শরীফ মুখস্ত বলতে পারেন তিনি মোল্লা হওয়ার যোগ্য। যারা মহিলা তারা শুক্রবার এর প্রার্থনা, বিয়ে, অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের ক্ষেত্রে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন।
আফগানিস্তানের বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে আফগানিস্থানে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে একসময় তালেবানের হাত থেকে চলে যাওয়ার ক্ষমতা তারা আবার ফিরে পেয়েছে। তালেবান আবারো তাদের দেশে ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে । আবারো পূর্বের ন্যায় তালেবান আফগানিস্তান ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চালাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আফগানিস্তানের ভাষা সম্পর্কে আপনি কতটা জানেন
ভাষা বা রাষ্ট্রভাষা হলো এমন একটি ভাষা যায় কোন নির্দিষ্ট দেশ বারাসতে ব্যবহারের জন্য সাংবিধানিক ভাবে স্বীকৃত এবং বলবৎ হয়। আফগানিস্তানের মূলত দুইটি ভাষার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে তা হচ্ছে দারি ভাষা এবং পশতু ভাষা। দাড়ি ভাষা হচ্ছে আফগানিস্থানে ব্যবহৃত একটি ফারসি ভাষার প্রকার। এই ভাষাকে অনেক পশ্চিমা লেখায় আফগানি ফারসি ভাষা হিসেবে পরিচিত করা হয়। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা-পরিবার ইরানের একটি ভাষা। আফগানিস্তানের প্রায় 10 লক্ষাধিক মানুষ এই ভাষায় কথা বলে। পাকিস্তানেও আরো প্রায় 95 লক্ষ লোক ভাষায় কথা বলে।
আফগানিস্তান ভ্রমণ
ভ্রমণের কথা মাথায় এলে আফগানিস্থানে ভ্রমণ করা বেশ কষ্টসাধ্য একটা প্রকার হয়ে দাঁড়াবে। কারন সে দেশের রাস্তাঘাটের অবস্থা তেমন একটা ভাল নয়। ব্রহ্ম ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য এবং যথাযথ পরিবহন কাঠামো রাবণের আফগানিস্তানের আভ্যন্তরীণ খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। সেখানে প্রায় 24 শতাংশ রাস্তাঘাট একদম কাঁচা। কিছু কিছু রাস্তা শীতকালেও বসন্তকালে বরফ পড়ে বন্ধ হয়ে যায়। শহরগুলিতে তিন চাকার অটোরিকশা সাধারণ যানবাহন। অনেক জায়গায় ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করা হয়। গ্রাম অঞ্চলে পায়ে হেঁটে অথবা গাধার পিঠে চড়ে এছাড়াও ঘোড়া কিংবা মাঝে মাঝে উটের পিঠে চড়ে ভ্রমণ করে থাকে। এ দেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন ভালো নয় বিভিন্ন তথ্য মতে জানা যায় দেশের ভেতরে মাল পরিবহন মূলত সড়কপথে সম্পন্ন হয় কারণ সেখানে কোন সমুদ্র সৈকত নেই।
আফগানিস্তানের যুদ্ধের ভিডিও
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আফগানিস্তানের যুদ্ধ বিগ্রহের ছবি প্রকাশ করা ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে যেহেতু এখন তালেবান গোষ্ঠীর বিজয় অর্জন করেছে সেই সুবাদে হয়তো আপনি বিভিন্ন সোর্স থেকে আফগানিস্তানের যুদ্ধের ভিডিও দেখতে পারবেন। হয়তো তালেবান গোষ্ঠীর তাদের আর্কাইভের মাধ্যমে এই ভিডিওর তথ্য সংরক্ষণ করে রেখেছে সেখান থেকেও ভিডিও সংগ্রহ করে দেখা যাবে।
আফগানিস্তানের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা
সোভিয়েত অধিকৃত এর আগে থেকেই আফগানিস্তানের জীবন যাত্রার মান ছিল খুবই নিম্নমানের। সোভিয়েত আফগান যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ দেশটির অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটে। সে আমলে শহরকেন্দ্রিক বাণিজ্য ও শিল্প সুযোগ-সুবিধা গ্রামীণ অর্থনীতি থেকে শুরু করে আলাদা হয়ে পড়ে। মাদক চোরাচালানের ব্যবসা চরমে পৌঁছে যায়। আফগানরা মূলত কৃষিকাজ এবং পশুপালন কাজের সাথে যুক্ত। বিশ শতকে খুনি এবং ভারী শিল্পের উন্নতি ঘটে কিন্তু স্থানীয় হস্ত শিল্পের গুরুত্ব সব সময় বেশি ছিল।
এখানে রয়েছে শ্রমশক্তি, কৃষির উপর নির্ভরশীলতা, হস্ত শিল্পের প্রসার, এছাড়াও রয়েছে খনন শিল্প, উৎপাদন শিল্প রয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে, প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে ব্যাপক, বৈদেশিক বাণিজ্য অর্জনের ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে আফগানিস্থান।
আফগানিস্তানের অর্থনীতির প্রধান উৎস কি
এখানে অর্থনীতির প্রধান উৎস বলতে কৃষিখাতকে গুরুত্ব দেয়া হয়। তবে আফগানিস্তানের রয়েছে পেট্রোলিয়াম, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং জলবিদ্যুৎ। পেট্রোলিয়াম মূলত ইরান এবং তুর্কমেনিস্তান থেকে আমদানি করা হয়। আফগানিস্তানের নিজস্ব সম্পদ উত্তর কোরিয়ার কাছে অবস্থিত। এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর নির্ভরশীল। হাজার 967 সালের সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় উত্তর আফগানিস্তানের বড় আকারের প্রাকৃতিক গ্যাসের আহরণ শুরু করেছিল যেটা 1980 দশকের ছবি ইউনিয়নে বিপুল পরিমাণে রপ্তানি করা হয়। 2011 সালে আফগানিস্তান সরকার গণচীনের জাতীয় পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন অনুসন্ধানের জন্য 700 কোটি ডলারের চুক্তি সম্পাদন করেন যেখানে দেশের উত্তরাংশে আমুদরিয়া নদীর তীরে তেলক্ষেত্র স্থাপনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল।
এছাড়া আফগানিস্তানের রয়েছে তামা, সোনা, কয়লা, লোহার আকরিক এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থ।
আফগানিস্তানে মুদ্রা এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থা
আফগানিস্তানের মুদ্রার নাম হচ্ছে আফগানি। 100 পুলে হয় এক আফগানি । হাজার 981 সাল থেকে 1994 সাল পর্যন্ত 57 শতাংশ পর্যন্ত মুদ্রাস্ফীতি হয় যার ফলে আফগানিস্তানের ক্ষমতা অনেকটাই কমে যায় যেটা তালেবানের শাসনামলেও বজায় ছিল। 2007 সালে 1 ডলারে প্রায় 50 নতুন আফগানি পাওয়া যেত। অর্থাৎ এক ডলার সমান 50 আফগানি।
1938 সালে আফগানিস্তানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্থাপন হয়। এটি হচ্ছে সে দেশে বৃহত্তম ব্যাংক।
তালিবান আফগানিস্তানের সম্পর্ক
তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দীর্ঘ 20 বছর অক্লান্ত পরিশ্রম বা যুদ্ধের বিনিময় শেষ পর্যন্ত তারা ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। যেহেতু তারা প্রাণপণ চেষ্টা করে তাদের হারানো ক্ষমতাকে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে তাই তালেবানদেরকে আফগানিস্থানের মুক্তিযোদ্ধা বলা চলে।