বাংলাদেশের টাকার ছবি, টাকার ইতিহাস কিভবে এলো টাকা

টাকার ছবি

টাকার ছবি! না....... ভূল বলেছি, টাকা আমাদের প্রত্যেকের জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।  জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত টাকা ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।  এই আধুনিক যুগে টাকা ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ অচল।  আমরা যাই করতে চাই না কেন টাকার প্রয়োজন রয়েছে।  ইচ্ছা  থাকলেও  টাকা ছাড়া একদিনও  অতিক্রম করা সম্ভব নয়। তো যাই হোক আজকে আমরা টাকা নিয়ে কথা বলব । টাকা হচ্ছে একটা মুদ্রার নাম।  মুদ্রা হচ্ছে বিনিময়ের একটা মাধ্যম।  একেক দেশের মুদ্রা কে একেক নামে ডাকা হয়।  উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি:  সাকিব এবং রাকিব 2 টি নাম।  নামের দিক থেকে এরা ভিন্ন কিন্তু পরিচয় থেকে তারা প্রত্যেকেই মানুষ।  ঠিক এমনিভাবে,  ডলার,  রুপি, ইউয়ান,  ইউরো   সবই মুদ্রা। 

বাংলাদেশী টাকার ছবি 

বাংলাদেশী টাকার ইতিহাস

কাগজের মুদ্রা আগে ধাতব মুদ্রার প্রচলন ছিল।  সর্বপ্রথম মুদ্রা চালু করেছিল তুরস্কের এশিয়া মহাদেশের জাতি।  সেই সময় এর কাছাকাছি সময়ে প্রাচীন ভারতের মুদ্রা তৈরি করা হয়েছিল এবং সেটার প্রচলন ছিল।  ধারণা করা হয় মুদ্রার প্রচলন হয় প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে । আমাদের বাংলাদেশের মুদ্রার নাম হচ্ছে টাকা,  স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার এই নামটি কে মুদ্রার সরকারের নাম হিসেবে ঘোষণা করে। এমনকি পাকিস্তান আমলেও পাকিস্তানি রুপি তে টাকা শব্দ টা লেখা থাকতো। 

এছাড়া ভাষা বিজ্ঞানের মত অনুসারে টাকা শব্দটি এসেছে “ টঙ্ক” শব্দ থেকে যার অর্থ মুদ্রা। বাংলার ইতিহাসে অঙ্গরাজ্যে সব সময় টাকা শব্দটিকে যে কোন মুদ্রা অথবা ধাতব মুদ্রা কে বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়ে আসছে। বাঙালিরা যে মুদ্রাকে টাকা বলে সম্বোধন করছে এটা সর্বপ্রথম বুঝতে পেরেছিলেন ইবনে বতুতা।  সেসময় রুপা অথবা শোনাবো মদিনার বলে ডাকা হতো কিন্তু বাংলার জনগণ টাকা বলে ডাকত। 

বাংলাদেশের টাকার প্রচলন 
টাকার প্রতীক হচ্ছে ৳ ।  টাকার ব্যাংক কোড হল BDT. কাগজের টাকা বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রবর্তিত হয়ে থাকে এছাড়া এক টাকা দুই টাকা পাঁচ টাকার নোট এবং ধাতব মুদ্রা যেগুলো রয়েছে সেগুলো বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে প্রচলিত হয়। টাকার ক্ষুদ্রাংশ অথবা ভগ্নাংশ হচ্ছে পয়সা যেখানে এক টাকার 100 ভাগ এর এক ভাগ হচ্ছে এক পয়সা। 

দেশবিভাগের আগে পূর্ব পাকিস্তানের মুদ্রার পিঠে রুপির বদলে টাকা লেখা থাকতো।  মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে মুদ্রা হিসেবে এই ভূখন্ডে পাকিস্তানি রুপি প্রচলন ছিল।  স্বাধীনতার পর 4 মার্চ 1972 সালের সরকারি মুদ্রা হিসেবে “টাকা” কে ঘোষণা করা হয়। স্বাধীনতার বেশ কয়েক মাস পর্যন্ত পাকিস্তানি রুপি বিনিময়ের মাধ্যম ছিল।  কারন তখনও পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের ঘোষিত টাকা সর্বত্র ছড়ায়নি। 

সে সময় পাকিস্তানি রুপি নোট গুলিতে বাংলাতে বাংলাদেশ এবং ইংরেজিতে বাংলাদেশ রাবার স্ট্যাম্প দিয়ে মুদ্রাঙ্কন করা হতো।  এটা একটা বেসরকারি প্রচলিত রীতি ছিল।  8 এ পাকিস্তান সমস্ত রাবার স্ট্যাম্প স্কিনশট বেআইনি ও অবৈধ এবং মূল্যহীন ঘোষণা করে। 

বর্তমানে প্রচলিত বাংলাদেশ টাকা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য 

হাজার ৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার স্বাধীনতা অর্জনের পর বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে যে মুদ্রা রয়েছে তার নাম রাখেন টাকা। 
  • বাংলাদেশ সরকার টাকার একটি সাংকেতিক চিহ্ন নির্ধারণ করেন আর তা হচ্ছে এটি “৳”। 
  • 1972 সালের প্রথম কোষাগার নোট ছিল ১৳ টাকা যেটা 1993 সাল পর্যন্ত প্রচলন ছিল। 
  • এক টাকার শতাংশকে পয়সা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।  অর্থাৎ ১ টাকা সমান ১০০ পয়সা। 
  • দুই টাকার কোষাগার ঘোষণা করা হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। 
  • হাজার 972 সালে প্রথম যে নোটগুলোর প্রচলন হয়েছিল তা হচ্ছে৫৳, ১০৳, ১০০৳। 
  • ১৯৯৫ সালে প্রথম ৫০৳ নোট, ১৯৭৭ সালে প্রথম ৫০০৳ নোট এবং ১৯৮০ সালে প্রথম ২০৳ নোটের প্রচলন শুরু হয়। 
  • ১০০০৳ টাকার নোটের প্রচলন শুরু করে 2008 সালে। 
  • বর্তমানে ২০২০ সালের পর থেকে ২০০৳ টাকার নোটের প্রচলন শুরু হয়েছে। 

ভুল ছাপানো ৫০ টাকার নোট

7 মার্চ 2012 তে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সম্বলিত 50 টাকার নোট বাজারে ছাড়া হয় সেটিতে একটি  ভুল ছিল। যেখানে জয়নাল আবেদিনের নামের বানানে ভুল করা হয়।   2.25 কোটি সংখ্যক নোট ছাপা হয়েছিল এই ভুল নিয়ে।  পরবর্তীতে ভুল সংশোধনের মাধ্যমে পুনরায় বাজারে আসে এই নোট। 

স্মারক নোট

 সাধারণ ব্যবহারের পাশাপাশি দেশ এবং বিদেশের সংগ্রহকারী দের আগ্রহের প্রতি লক্ষ্য রেখে স্মারক নোটের প্রচলন করা হয়।  দেশ-বিদেশের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ঘটনা,  বিষয়,  এবং ব্যক্তিত্ব কে স্মরণ করে রাখার জন্য বাংলাদেশ ডাক বিভাগ,  বাংলা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে ডাকটিকিট প্রকাশ করে থাকে।  তাই প্রচলিত নোটের পাশাপাশি কিছু ব্যতিক্রম ধর্মী নোট ইস্যু করা হয় যেটা কে স্মারক নোট বলা হয়। 

স্মারক নোট গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে  ৬০ টাকা,  ৪০ টাকা ২৫ টাকা ১০০ টাকার নোট। 100 টাকার স্মারক নোট এইট বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ছবি অঙ্কিত রয়েছে।  ভাষা আন্দোলনের 60 বছর পূর্তি উপলক্ষে 60 টাকার স্মারক নোট অবমুক্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক।  60 টাকার নোটের ডিজাইন করেন অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য ও সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন চিত্রশিল্পী গণ। 

 2011 সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার 40 বছর পূর্তি উপলক্ষে 40 টাকার স্মারক নোট উম্মোচন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।  এই নোটে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধের এছাড়াও পেছনের পিঠে 6 জন সেনা নায়ক এর ছবি যুক্ত করা হয়। 

এছাড়াও পঁচিশ টাকার স্মারক নোট এর পেছনের রয়েছে একটি গল্প তা হচ্ছে যে সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন এর 25 বছর পূর্তি। 25 টাকার এই নটির রং ছিল, নীল,  বেগুনি এবং লালের সংমিশ্রন।  এই নোটের সামনের পার্টে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ছবি বাংলাদেশের পূর্ববর্তী টাকার ডিজাইন এবং স্ট্যাম্পের ছবি এছাড়াও তিনটি হরিণ এবং একটি দোয়েল পাখির ছবির সংমিশ্রণ ছিল। 

ইন্টারনেটের বিভিন্ন বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট থেকে এই তথ্যগুলো সংগ্রহ করে আপনার সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে।  বাংলাদেশের টাকা সম্পর্কে আজকের আলোচনাটি আশা করছে আপনাকে মুগ্ধ করেছে।  যদি এই লেখাটি ভালো লাগে তবে আপনার বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন। 

শাহীন

আমি শাহীন । পেশায় একজন ব্যবসায়ী । পাশাপাশি অনলাইনে কাজ করতে পছন্দ করি। আশা করছি আমার শেয়ারকৃত তথ্য থেকে আপনারা উপকৃত হচ্ছেন আর তা হলেই আমার পরিশ্রম স্বার্থক।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads