আপেল এর উপকারিতা সম্পর্কে কথা বলব আজ। আপেল সবার পরিচিত একটি ফল | আপেল দেখতেও অনেক সুন্দর | আপেলের অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য খুবই দরকারি | এছাড়া দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে আপেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে | আপেলে রয়েছে ফাইটোনিউট্রিএন্টস,ফাইবার, পটাশিয়াম ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ই। চলুন তাহলে আপেল এর উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই।
আপেল এর পুষ্টিগু:
পৃথিবীজুড়ে নানা রঙের, নানা আকারের আপেল দেখতে পাওয়া যায়। আপেলের সবচেয়ে পরিচিত তিনটি রং হলো লাল, হলুদ ও সবুজ। তবে আমাদের বাজারে পাওয়া যায় লাল ও সবুজ আপেল সচরাচর পাওয়া যায় । অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, কোন আপেল বেশি স্বাস্থ্যকর? কোন আপেলটা খাব? লাল আপেল নাকি সবুজ আপেল ? এই নিবন্ধে আপেল এর উপকারিতা, কোন আপেল কেমন পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং কি উপকার হয় আমাদের দেহের জন্য সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
আপেল নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম আপেল এ রয়েছে –
- খাদ্যশক্তি- ৫২ কিলোক্যালরি
- আমিষ ০.২৬ গ্রাম
- শর্করা ১৩.৮১ গ্রাম
- ফাইবার ২.৪ গ্রাম
- চর্বি ০.১৭ গ্রাম
- ভিটামিন এ ৫৪ আইইউ
- ভিটামিন সি ৪.৬ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন ই ০.১৮ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম ১০৭ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম ৬ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম ১ মিলিগ্রাম
- কোলেস্টেরল ০ মিলিগ্রাম
- লৌহ ০.১২ মিলিগ্রাম
- জিংক ০.০৪ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস ১১ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম ৫ মিলিগ্রাম।
আপেল এর উপকারিতা
ওজন কমাতে সাহায্য করে । আপেল এর উপকারিতা
কত মানুষই তো আছেন, যারা অতিরিক্ত ওজনের কারণে জর্জরিত। আবার শুধুমাত্র এই কারণে, নানারকম রোগও শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে। ওজন কমাতে আগ্রহী কিন্তু বেশী খাওয়া কমাতে পারছেন না? তবে সবুজ আপেল খান এবং সবুজ আপেল দিয়ে খিদে কমান কারণ এটা অনেক তাড়াতাড়ি পেট ভরিয়ে দেয়।বৈজ্ঞানিকদের কথা অনুযায়ী, আপনি যদি ওজন কমাতে চান অথবা সুস্থ ওজন ধরে রাখতে চান সেক্ষেত্রে সবুজ আপেল গ্রহণ করতে পারেন | কারণ সবুজ আপেলের মধ্যে ক্যালরির পরিমাণ যথেষ্ট কম | আপেলের ফাইবার হজম হতে অনেক বেশী সময় নেয় এবং পাকস্থলীতে অনেক বেশী জায়গা নেয়। কম ক্যালোরির পরিমাণ ডায়াট বজায় রাখতে সাহায্য করে, জলের অধিক পরিমাণ পেট ভরিয়ে রাখে এবং পলিফেনল ওজন বাড়া নিয়ন্ত্রণ করার সাথে সার্বিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও হজমের উন্নতি ঘটায়।
আপেল ক্যান্সার প্রতিরোধক
আপেল এর উপকারিতা এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্যান্সার রিসার্চ-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আপেল খেলে অগ্ন্যাশয়ে ক্যান্সারের সম্ভাবনা প্রায় ২৩% হারে কমে। কারণ আপেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনল থাকে। এছাড়াও কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা আপেলের মধ্যে এমন কিছু উপাদানের সন্ধান পেয়েছেন, যা ট্রিটারপেনয়েডস নামে পরিচিত। এই উপাদানটি লিভার, স্তন এবং কোলোনের মধ্যে ক্যান্সারের কোষ বেড়ে উঠতে বাঁধা দেয়। আপেলের মধ্যে ট্রিটারপেনয়েডস উপাদান লিভার, স্তন এবং কোলোনের মধ্যে ক্যান্সারের কোষ বেড়ে উঠতে বাঁধা দেয়। তাছাড়া এক গবেষণা থেকে জানা যায় যে, আপেলের মধ্যে যে পরিমাণে ফাইবার থাকে, তা মলাশয়ের ক্যান্সার রোধে সাহায্য করে।
আপেল হার্ট ভালো রাখে
আপেলে রয়েছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট উপাদানসমূহ, যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আপেলের মধ্যে যে ফাইবার থাকে, তা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে হার্টে রক্তচলাচল স্বাভাবিক থাকে। ফলে হৃদযন্ত্রের কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে। হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে আপেল নিয়ে খুব বেশি মাতামাতি হয় না। তবে এর উপকারিতা মোটেই অবহেলার যোগ্য নয়। পাশাপাশি আপেলে থাকা ‘ফ্লাভানয়েড’ ‘স্ট্রোক’য়ের ঝুঁকি কমায় প্রায় ২০ শতাংশ। আবার কোলেস্টেরল কমাতেও আপেলের ভূমিকা তো আছেই।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
আপেল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। আর বর্তমান মহামারীর সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রত্যেকেরই পরম বন্ধু। এখানেও পর্দার আড়ালে কাজ করে ‘কোয়েরসেটিন’, যা প্রদাহ কমাতেও সহায়ক হবে।আপেলের মধ্যে এক ধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে, যা কুয়েরসেটিন নামে পরিচিত। এটি আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এবং আমাদের শরীর ভাল রাখতে সাহায্য করে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, আপেল খোসা ছাড়িয়ে খাওয়া চলবে না। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, কে, আঁশ ও বিভিন্ন খনিজ উপাদানে ভরপুর আপেল। যে কারণে প্রবাদে বলা হয়, দিনে একটি আপেল খেলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া থেকে দূরে রাখে।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়
প্রতি সপ্তাহের কয়েকটি আপেল খাওয়া আপনাকে ডায়াবেটিসের কবল থেকে রক্ষা করতে পারে। আবার প্রতিদিন একটা খেতে পারলে আরও ভালো, এতে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে প্রায় ২৮ শতাংশ, দাবি বিশেষজ্ঞদের।
উচ্চ কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
অনেক গবেষণা থেকেই জানা গেছে যে, সবুজ আপেল হৃদপিণ্ডের সুস্থতা রক্ষায় ভূমিকা রাখে। এতে দ্রবীভূত আঁশ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
‘দ্যা আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন’ থেকে জানা যায়, সবুজ আপেল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় ও স্ট্রোকের ঝুঁকি ৫২ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে সক্ষম। উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগে থাকলে খাবার তালিকায় সবুজ আপেল যোগ করারা কথা ভুলবেন না।
সাদা ঝকঝকে দাঁত
আপেল খেলে দাঁতের দারুণ উপকার হয়। তার কারণ, আপেলে কামড় দিয়ে যখন আমরা চিবোতে শুরু করিই, তখন আমাদের মুখের ভিতর লালার সৃষ্টি হয়। এই পদ্ধতিতে দাঁতের কোণা থেকে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া বেরিয়ে আসে। এর ফলে সেই ব্যাকটেরিয়া আর দাঁতের কোনও ক্ষতি করতে পারেনা। তাই বলে, শুধু আপেল খেয়ে দাঁতের যত্ন নিতে যাবেন না যেন! মনে করে, পেস্ট ব্রাশ ব্যবহার করে দাঁতের যত্ন নেবেন।
হাড়ের সুস্থতা
হাড়ের জন্য ক্যালসিয়াম উপকারী উপাদান। আপেল এর উপকারিতায় সাধারণত, নারীদের হাড় ক্ষয়, সরু হয়ে যাওয়া ও দুর্বলতার সমস্যা বেশি দেখা দেয়। বয়স ত্রিশের পর থেকে হাড়ের ক্ষয় হতে থাকে। মেনোপোজের সময় নারীদের সবুজ আপেল খাওয়া প্রয়োজন এটা ‘অস্টিওপোরেসিস’ বা হাড়-ভাঙা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
গলস্টোন সারাতে সাহায্য করে
পিত্তথলির মধ্যে অতি পরিমাণে কোলেস্টেরল জমে গেলে তখন গলস্টোন হয়। গলস্টোন কমানোর জন্য ডাক্তাররা সব সময় ফাইবার সমৃদ্ধ ফল বা খাদ্য খাওয়ার উপদেশ দেন। সেই সঙ্গে গলস্টোন সারাতে ওজন এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, এই সবকটি কাজ যাতে ঠিক মতো হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে আপেলের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
আপেলে প্রচুর পরিমাণে ফ্লেভনয়েড ও পলিফেনল নামক উপাদান আছে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর প্রধান উপাদান । আর এই উপাদান দুটি আমাদের শরীরের DNA এর ক্ষতি রোধ করে এবং ক্যানসারও রোধ করতে সাহায্য করে থাকে।
শরীরের ত্বক ভালো রাখে
আপেলমুখের ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিয়মিত প্রতিদিন আপেল খেলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হয়।
ফুসফুস ভালো রাখে
গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রতিদিন সবুজ আপেল খেলে তা ফুসফুসের ক্ষতির সম্ভাবনা ২৩ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে সহায়তা করে। এতে অ্যাজমার ঝুঁকি কমে। যারা নিয়মিত ধূমপান করেন তাদের ফুসফুসের সুরক্ষাতেও সবুজ আপেল খাওয়া উপকারী।
দৃষ্টি শক্তি উন্নত করা
সবুজ আপেল ভিটামিন এ সমৃদ্ধ যা, দৃষ্টি শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। তাই দৃষ্টি শক্তি উন্নত করতে নিয়মিত সবুজ আপেল খাওয়া উপকারী।
হাঁপানির তীব্রতা কমাতে: আপেল এর উপকারিতা পাওয়ার জন্য নিয়মিত কী পরিমাণ আপেল খাচ্ছেন সেটার ওপর নির্ভর করে হাঁপানির সমস্যা কমে। ‘অ্যাডভান্সেস ইন নিউট্রিশন’ জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রায় ৬৮ হাজার নারীকে নিয়ে করা গবেষণায় দেখা যায়, যারা দিনে একটি আস্ত আপেল গ্রহণ করেছেন অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তাদের হাঁপানির তীব্রতা কমেছে সবচাইতে বেশি। যারা দিনে একটি আপেলের ১৫ শতাংশ খেয়েছেন তাদের রোগের তীব্রতা কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ।
প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করে
আপেল খাওয়ার সময় এর খোসা বা আঁশ ফেলে দেবেন না। আপেলের খোসাও শরীরের জন্য উপকারী। এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। পাশাপাসগি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও ভূমিকা রাখে।
অ্যালার্জি থেকে সুরক্ষা : আপেল এর উপকারিতা পেতে আপেলকে প্রতিদিন খাদ্যাভ্যাসে যোগ করার আগে আপনাকে জেনে নিতে হবে এই ফল বা ফলটির কোনো উপাদানে আপনার অ্যালার্জি আছে কি না। যদিও এমনটা হওয়া বেশ দুর্লভ, তবে সাবধানের মার নেই। আপেল খাওয়ার পর ত্বকের কোথাও ফুলে ওঠা, চুলকানি, জিভ চুলকানো ইত্যাদি দেখা দিলে বুঝতে হবে আপনার অ্যালার্জি আছে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
লিভার ডিটক্সিফায়ার
ক্ষতিকারক টক্সিন বের করে গ্রিন আপেল লিভারকে ডিটক্স করতে সাহায্য করে। এই সব আপেলের মধ্যে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা পিত্তের উৎপাদন বাড়ায় যা লিভারে পৌঁছানোর আগেই টক্সিন বের করে দেয়।
হাড় মজবুত করে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড়ের শক্তি কমে যায় এবং ভেঙে গেলে সেরে ওঠা কষ্টকর। গ্রিন আপেলের ভিটামিন সি কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।গ্রিন আপেল পরোক্ষ ভাবে অস্টিওপোরেসিসের সম্ভাবনা কমায় ঘটনাচক্রে যার অর্থ হল হাড় ভাঙবার সম্ভাবনা কম।
চুলের মান উন্নত করে
শুষ্ক ত্বক থেকেই অধিকাংশ সময়ে খুশকি হয়। গ্রিন আপেল যুক্ত শ্যাম্পু অথবা সবুজ আপেলের পেস্ট লাগালে সেটা ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করার সাথে খুশকি কমায়। তাছাড়াও, আপেলের ভিটামিন সি অস্বাস্থ্যকর, শুষ্ক চুলের মোকাবিলা করতে সাহায্য করে যা প্রধানত ভিটামিন সি-র অভাব থেকে হয়।
সম্ভাব্য গ্যাস এবং ফুলে যাওয়া কমায়
আপনি যদি ফাইবার খাওয়ার অভ্যস্ত না হন তবে হঠাৎ করে প্রতিদিন প্রতিদিন একধরনের আপেল খাওয়ার ফলে অস্বস্তিকর গ্যাস এবং ফোলাভাব হতে পারে। আপনার ডায়েটে ধীরে ধীরে আপেল এবং অন্যান্য খাবারগুলি থেকে একটি ফাইবার যুক্ত করুন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এটি পর্যায়ক্রমে করুন এবং আপনার হজম ক্ষত্রে ফাইবারটি যেতে সহায়তা করার জন্য প্রচুর পরিমাণে জল পান নিশ্চিত করুন।