নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। তাই আজ নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা প্রায় 82 বার নামাজের আলোচনা করেছেন ।
মানুষকে নামাজের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
নামাজ একটি ফরজ ইবাদত। যার গুরুত্ব অপরিসীম | ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ রয়েছে |পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে নামাজ দ্বিতীয় স্তম্ভ। আজকে আমরা নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে জানব।
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন
ইসলামকে পাঁচটি ভিত্তির উপর তৈরি করা হয়েছে | প্রথমটি হলো একথা সাক্ষ্য দেওয়া যে আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত কোন উপাস্য নেই আর দ্বিতীয় হল নামাজ কায়েম করা | কেননা কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব গ্রহণ করা হবে|
রাসূলুল্লাহ (সা) আরও বলেন
কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার যে আমলের হিসাব নেওয়া হবে সেটা হলো নামাজ | একজন মুমিনের জীবনের প্রথম ও প্রধান কাজ হল সময়মত নামাজ আদায় করা | কিন্তু নামাজ আদায় করলে হবেনা বরং শুদ্ধভাবে আদায় করা আবশ্যক | আর শুদ্ধ ভাবে নামাজ আদায় করতে হলে জানতে হবে নামাজ পড়ার নিয়ম |
নামাজের নিয়ম
আমরা সকলে প্রতিদিন নামাজ পড়ি কিন্তু নামাজ পড়ার নিয়ম বা নামাজে কি বলছি কি করছি তা কিছুই জানিনা | অধিকাংশ মানুষই নামাজের সূরা সমূহ পড়েছে কিন্তু তার অর্থ জানে না | এ কারণে নামাজে অমনোযোগী হয়| মনে হয় যে বিদ্যা মুখস্ত করছি |কেননা কি বলছে কিছুই জানিনা |তাহলে নামাজের মাঝে আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা আত্মসমর্পণ আসবে কিভাবে | এই বিষয়ে আল্লাহতালা বলেছেন
“ধবংস ওই নামাজি যে তার নামাজ সম্পর্কে বেখবর।”
নামাজে মনোযোগ আনতে হলে অবশ্যই নামাজে কি কি করছি তার অর্থ ভাল ভাবে জানতে হবে বুঝতে হবে।অর্থ যদি জানা থাকে তা লক্ষ্য করে নামায আদায় করি, তাহলে আমাদের নামায আরো সুন্দর হবে।
নামাজের নিয়াত ও তাক্ বীরে তাহঃরীমা
নামাজ পড়ার নিয়ম এ বলা হচ্ছে নামাজের ইচ্ছা করাই হচ্ছে নামাজের নিয়াত করা।নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা জরুরী নয়, তবে মুস্তাহাব।
নাওয়াইঃতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়া’লা বলে সমস্ত নামাজ শুরু করতে হয়
- (২ রাকাত হলে) রাক্ ‘য়াতাই ছালাতিল
- (৩ রাকাত হলে) ছালাছা রাক্ ‘য়াতাই ছালাতিল
- (৪ রাকাত হলে) আর্ বায় রাক্ ‘য়াতাই ছালাতিল
- (ওয়াক্তের নাম) ফাজ্ রি/ জ্জুহরি/আ’ছরি/মাগরিবি/ইশাই/জুমুয়া’তি
- (কি নামাজ তার নাম) ফারদ্বুল্ল-হি/ওয়াজিবুল্ল-হি/সুন্নাতু রসূলিল্লাহি/নাফলি।
- (সমস্ত নামাজেই) তায়া’লা মুতাওয়াজ্জিহান্ ইলা জিহাতিল্ কা’বাতিশ শারীফাতি আল্ল-হু আক্ বার।
তাকবীরে তাহরীমা
আল্লাহু আক্ বার,[ অর্থ-আল্লাহ মহান ] বলে নামাজ শুরু করতে হবে।
সানা (হাত বাধার পর এই দোয়া পড়তে হয়)
উচ্চারণ :-সুবহা-না কাল্লা-হুম্মা ওয়া বিহাম্ দিকা ওয়াতাবারঅ কাস্ মুকা ওয়াতা’ আ-লা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলা-হা গাইরুক।
অর্থ- হে আল্লাহ ! আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং আপনার মহিমা বর্ণনা করছি। আপনার নাম বরকতময়, আপনার মাহাত্ম্য সর্বোচ্চ এবং আপনি ভিন্ন কেহই ইবাদতের যোগ্য নয় ।
তাআ’উজঃ
উচ্চারণ-আউযুবিল্লা-হি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম ।
অর্থ-বিতারিত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি ।
তাসমিয়াঃ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম । [ অর্থ-পরম দাতা ও দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি ।]
তারপর সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হয়, সূরা ফাতিহা তিলাওয়াতের পর পবিত্র কোরআনের যে কোন জায়গা থেকে তিলাওয়াত করতে হয় ।
রুকুর তাসবীহঃ
উচ্চারণ-সুবহা-না রব্ বি ইঃয়াল্ আ’জ্বীম।[ অর্থ-মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহাত্মতা ঘোষণা করছি ।]
তাসমীঃ
(রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় পড়তে হয়)
উচ্চারণ-সামি আল্লা হুলিমান হামিদাহ,
[ অর্থ-প্রশংসাকারীর প্রশংসা আল্লাহ শোনেন ।]
তাহমীদঃ-(রুকু থেকে দাঁড়িয়ে পড়তে হয়)
উচ্চারণ-রাব্বানা লাকাল হামদ । [ অর্থ-হে আমার প্রভু, সমস্ত প্রশংসা আপনারই । ]
সিজদার তাসবীহঃ
উচ্চারণ-সুবহা-না রাব্বিয়াল আ’লা। [ অর্থ-আমার প্রতিপালক যিনি সর্বশ্রেষ্ট, তারই পবিত্রতা বর্ণনা করছি । ]
দু’সিজদার মাঝখানে পড়ার দোয়াঃ
উচ্চারণ-আল্লাহু ম্মাগ ফিরলী ওয়ার হামনি ওয়ার যুক্কনী ।
[ অর্থ-হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে রহম করুন, আমাকে রিজিক দিন । ]
[হানীফি মাযহাবে এই দোয়া পড়া হয় না, কেউ যদি হানীফি মাযহাব এর হয়ে থাকেন তাহলে এই সময এক তসবী পড়তে যে সময় লাগে , সেই সময় পর্যন্ত বিরতি দিয়ে পুনঃরায় সেজদায় যাওয়া।]
তাশাহুদ বা আত্তাহিয়্যাতুঃ
উচ্চারণঃ-আত্তাহিয়্যাতু লিল্লা-হি, ওয়াছ ছালা-ওয়াতু, ওয়াত-তাইয়্যিবা তু, আচ্ছালা মু আ’লাইকা, আইয়্যুহান নাবিয়্যু, ওয়ারাহ মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, আচ্ছালামু আলাইনা, ওয়া আ’লা ইবাদিল্লা হিছ-ছা লিহীন। আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু ।
[ অর্থঃ-আমাদের সব সালাম শ্রদ্ধা, আমাদের সব নামাজ এবং সকল প্রকার পবিত্রতা একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে। হে নবী, আপনার প্রতি সালাম, আপনার উপর আল্লাহর রহমত এবং অনুগ্রহ বর্ষিত হউক । আমাদের ও আল্লাহর নেক বান্দাদের উপর আল্লাহর রহমত এবং অনুগ্রহ বর্ষিত হউক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই, আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর বান্দা এবং রাসুল ।]
দরুদ শরীফ
উচ্চারণ:-আল্লহুম্মা ছাল্লি আ’লা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আ’লা আ-লি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা আ’লা ইব্রহীমা ওয়া আ’লা আ-লি ইব্রহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজী-দ্ ।আল্লাহুম্মা বারিক্ আ’লা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আ’লা আ’লি মুহাম্মাদিন, কামা বা-রাকতা আ’লা ইব্রহীমা ওয়া আ’লা আ’লি ইব্রহীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ ।
[ অর্থ-হে আল্লাহ, দয়া ও রহমত করুন হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর প্রতি এবং তার বংশধরদের প্রতি, যেমন রহমত করেছেন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও তার বংশধরদের উপর। নিশ্চই আপনি উত্তম গুনের আধার এবং মহান। হে আল্লাহ, বরকত নাযিল করুন হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর প্রতি এবং তার বংশধরদের প্রতি, যেমন করেছেন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও তার বংশধরদের উপর। নিশ্চই আপনি প্রশংসার যোগ্য ও সম্মানের অধিকারী । ]
দোয়ায়ে মাসূরাঃ
উচ্চারন:-আল্লা-হুম্মা ইন্নী জ্বলামতু নাফসী জুলমান কাছীরও ওয়ালা ইয়াগফিরু যুনূবা ইল্লা আনতা ফাগ্ ফিরলী মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা ওয়ার হামনী ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহীম।
[ অর্থ-হে মহান আল্লাহ, আমি আমার নিজের উপর অনেক জুলুম করেছি (অর্থাৎ অনেক গুনাহ/পাপ করেছি) কিন্তু আপনি ব্যতীত অন্য কেহ গুনাহ মাফ করতে পারে না। অতএব হে আল্লাহ অনুগ্রহ পূর্বক আমার গুনাহ মাফ করে দিন এবং আমার প্রতি সদয় হোন; নিশ্চই আপনি অতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু । ]
দোয়ায়ে কুনুতঃ
[ শুধুমাত্র এশার নামাজের ক্ষেত্রে বিতরের নামাজের সময় তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা ও অন্য কিরাত পড়ার পর এই দোয়া পড়তে হয় ]
উচ্চারণ-“আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতা’ঈনুকা ওয়া নাসতাগ ফিরুকা, ওয়া নু’মিনু বিকা ওয়া না তা ওয়াক্কালু আলাইকা ওয়া নুছনি আলাইকাল খাইর। ওয়া নাশকুরুকা, ওয়ালা নাকফুরুকা, ওয়া নাখ লা, ওয়া নাত রুকু মাইয়্যাফ জুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না’বুদু ওয়ালাকা নুছাল্লি ওয়া নাসজুদু ওয়া ইলাইকা নাস’আ, ওয়া নাহফিদু ওয়া নারজু রাহমাতাকা ওয়া নাখ’শা আযাবাকা ইন্না আযা-বাকা বিল কুফফা-রি মুল হিক ।”
[ অর্থ-হে আল্লাহ, আমারা আপনার নিকট সাহায্য চাই। আপনার নিকট গোনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি। আপনার প্রতি ঈমান এনেছি। আমরা কেবল মাত্র আপনার উপরেই ভরসা করি। সর্বপ্রকার কল্যান ও মংগলের সাথে আপনার প্রশংসা করি। আমরা আপনার শোকর আদায় করি, আপনার দানকে অস্বীকার করি না।আপনার নিকট ওয়াদা করছি যা, আপনার অবাধ্য লোকদের সাথে আমরা কোন সম্পর্ক রাখব না-তাদেরকে পরিত্যাগ করব । হে আল্লাহ, আমরা আপনারই দাসত্ব স্বীকার করি। কেবলমাত্র আপনার জন্যই নামাজ পড়ি, কেবল আপনাকেই সিজদা করি এবং আমাদের সকল প্রকার চেষ্টা-সাধনা ও কষ্ট স্বীকার কেবল আপনার সন্ততুষ্টির জন্যই । আমরা কেবল আপনার ই রহমত লাভের আশা করি, আপনার আযাবকে আমাওরা ভয় করি। নিশ্চই আপনার আযাবে কেবল কাফেরগনই নিক্ষিপ্ত হবে। ]
আপনাদের সবার কাছে অনুরোধ রইল যেন দ্রুত তাড়াতাড়ি আরবি পড়তে শিখুন কেননা বাংলা সকল শব্দ আরবি শব্দের মত শুদ্ধ হয়না