আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা টাকা-পয়সা থেকেও বা সামর্থ্য রয়েছে তাদের যাকাত দেওয়ার জন্য তবুও তারা যাকাত দিতে চায় না ।কারণ যারা যাকাত দিতে চায় না তারা ভাবে যে আমাদের নিজের রোজগার করার টাকা আমরা কেন অন্য লোকদের কেন দেব। আমাদের মধ্যে অনেক লোক রয়েছে এমন যারা গরিব মিসকিন অসহায় কে দান করতে চায় না বা যাকাত দিতে চায় না তাদের জন্য কঠিন শাস্তি রেখেছে মহান আল্লাহ তা'আলা।
আমাদের মধ্যে যারা যাকাত দিতে চান না তাদের হাশরের ময়দানে তাকে বলা হবে তোমার জান্নাত আছে কিন্তু তুমি সেই জান্নাত তুমি পাবে না কারণ সেই জান্নাতের ট্যাক্স তুমি পৃথিবীতে দিয়ে আসোনি। যার নাম হল জাকাত দেওয়া, আমাদের উচিত যাদের সামর্থ্য রয়েছে বেশি বেশি টাকা রয়েছে তাদের অবশ্যই যাকাত দেওয়ার প্রয়োজন।
আমরা জানি যাকাত দিতে হয় কিন্তু যাকাতের ফজিলত কি তা আমরা হয়তো জানিনা তাই আজকে তাদের যাকাত দেয়া নিয়ম। তাই আপনারা যারা যাকাত দিতে চান না মনে কোন হিংসা বিবাদ না রেখে আপনারা গরিব যাকাত দিতে পারেন।
মেয়েদের ইসলামিক নাম
আমাদের যাদের যাকাত দেওয়া সামর্থ্য রয়েছে সেই সকল মানুষ যেন গরিবের হক তাদেরকে দান করে। হাদীসে রয়েছে আগে জান্নাতে যাবে তাই চেষ্টা যাতে যাকাত দেওয়া দেওয়ার সামর্থ্য যাকাত দেওয়া রয়েছে তা অবশ্য গরিবদের যাকাত করা। আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা যাকাত মানে কি যাকাত দিলে কি হয় যাকাতের ফজিলত ইত্যাদি আজকের এই আলোচনা আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করব যাকাত দেওয়ার নিয়ম যাকাত হিসাব করার নিয়ম এবং যাকাত ফরয করার নিয়ম ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করব আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে।
- যাকাত কাকে বলে
- যাকাত কত হিজরীতে ফরজ করা হয়েছে
- যাকাত কাদের উপর ফরজ করা হয়েছে
- যাকাত দেওয়া কখন ফরজ হয়
- যাকাত কাদের কে দিতে হয়
- যাকাত দেওয়ার সঠিক নিয়ম
- যাকাত হিসাব করার নিয়ম
- যাকাত ক্যালকুলেটর
যাকাত দেওয়ার অর্থ হল পবিত্রতা। যাকাত দেওয়ার প্রধান কারণ হলো আপনার মন পবিত্রতা অর্জন করবে। যাকাত দিলে সম্পদের বৃদ্ধি পায় ও যাকাত দেওয়ার ফলে সম্পদ পরিষ্কার হয়। যাকাত দেওয়া আরো পরিভাষা রয়েছে যেমন. যাকাত হলো আমাদের সম্পত্তির সম্পত্তির ভাগ গরিবদের জন্য নির্ধারণ করে রেখেছেন মহান আল্লাহ তাআলা।
যারা যাকাত দেওয়ার নিয়ম মাফিক যাকাত প্রদান করবেন তাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বাণী এরশাদ করেছেন যেমন যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলা ধন-সম্পদ পরিপূর্ণ করে রেখেছেন সে যদি তার নির্দিষ্ট সম্পদের যাকাত না দেয় তাহলে সেই যাকাত হাশরের ময়দানে তাকে বিষাক্ত সাপ হিসেবে আপনার যাকাত না দেওয়া ফলে আপনাকে অনেক শাস্তি পেতে হবে। তাই শাস্তি থেকে বেঁচে থাকার জন্য আমাদেরকে গরিবদের জন্য যাকাত দিতে হবে।
যাকাত না দেওয়ার কারণে আপনাকে বিষাক্ত সাপ কামড়াবে আর বলবে আমি তোমার মাল ও তোমার সঞ্চয় সম্পদ। সহি বুখারী ১৪০৩
যাকাত কত হিজরীতে ফরজ করা হয়েছে
দ্বিতীয় হিজরির থেকে যাকাতকে ফরজ করা হয়েছে। ওই যুগেও যাকাত দিতে অনেক আগ্রহ বোধ করতেন অনেক মানুষ। যাকাত দেওয়া নিয়ে আমাদের প্রিয়নবী একটি পানিতে বললেন।
সময় থাকতে তোমরা যাকাত প্রদান কর তা না হলে এমন একটি দিন আসবে তখন তুমি টাকা নিয়ে ঘুরে ঘুরে দুনিয়া উল্টাপাল্টা যাকাত দেওয়া মতো একটি লোক আপনি খুঁজে পাবেন না। তাই আমার মাথা সময় মতো সব কাজ সময়মতো করা । যাকাত দেওয়ার জন্য আপনি অনেক লোক খুঁজে বেড়াবে কিন্তু কোন লোক আপনার যাকাত নেবে না কারণ তখন মানুষ বলবে কাল পর্যন্ত আমরা যাকাতের অপেক্ষায় ছিলাম কিন্তু কোন জাগাত পাইনি। তাই তারা বলবে আমি নিজে পরিপূর্ণ। সহি বুখারী১৪১১ সহীহ মুসলিম ১০১১
যাকাত কাদের উপর ফরজ
যাকাত দেওয়ার জন্য কিছু শর্ত বা কিছু নিয়ম রয়েছে। আগে আপনাকে দেখতে হবে যাকাত কাদের উপর ফরজ করা হয়েছে এবং যাকাত ফরয কি কারণে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আপনাকে জানতে হবে। তা চলুন দেখে নে বা পরে নেই কাদের ওপরে যাকাত ফরয করা হয়েছে।
যাকাত দেওয়া মুসলমানদের জন্য ফরজ
মুসলমানদের ধর্মে যাকাত প্রদান করা তৃতীয় স্তম্ভ।সমাজে মুসলমানদের জন্য যাকাতকে ফরজ করা দেওয়া হয়েছে। আপনি যদি নির্দিষ্ট সম্পদের মালিক হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে যাকাত দান করতে হবে।
২: দাসত্বে না থাকা:
আপনি যদি কারো দাস না হয়ে থাকেন তাহলে আপনার উপর যাকাত ফরয করা হয়েছে। এবং আপনি স্বাধীন ব্যক্তি তাহলে আপনার যাকাত দিতে হবে।
৩. নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ থাকা
আপনার যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ থাকে তাহলে আপনি শরিয়তের অনুযায়ী যাকাত প্রদান করতে পারবে। আপনার সম্পর্ক হতে পারে টাকা, রুপা , স্বর্ণ, শসা ও প্রাণী ইত্যাদি ।
৪. ঋণ মুক্ত থাকা
মনে রাখবেন ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির উপর যাকাত কখন ফরজ হয় না। যাকাত কখন ফরজ হবে যখন আপনি সম্পূর্ণ ঋণ মুক্ত থাকবেন এবং নিসাব পরিমাণ সম্পদ আপনার কাছে গচ্ছিত থাকবে। তাই যাকাত শুধুমাত্র তাদের উপরে পড়েছে যারা সম্পূর্ণ ঋণমুক্ত এবং নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক।
যাকাত কখন ফরজ হয়?
যাকাত ফরজ হওয়ার ক্ষেত্রে কতগুলো শর্ত রয়েছে। যাকাত কখন ফরজ হয় তার প্রথম শর্ত হচ্ছে আপনাকে মুসলমান হতে হবে। আরো কিছু শর্ত রয়েছে যেমন আপনি কারোর দাস নন, আপনার কোন ঋণ নেই, শরীয়ত অনুযায়ী যতটুকুই সম্পদের মালিক হওয়ার কথা ততটুকুই সম্পদের মালিক হলে আপনার উপর যাকাত আদায় করা ফরজ। উপরোল্লেখিত শর্তসমূহ যদি আপনার বেলায় মিলে যায় তাহলে আপনাকে যাকাত আদায় করতে হবে। যদি নিচে পরিমাণ সম্পদের মালিক হন এবং উল্লেখিত বিষয়সমূহঃ আপনার সঙ্গে মিলে যায় তাহলে আপনার উপর যাকাত ফরজ।
যাকাত কাদেরকে দিতে হয়?
আমরা মূলত যাকাত এই সমাজের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার জন্য? অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার জন্য যাদের কাছে প্রচুর পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তারা যাদের কাছে সম্পদ নেই তাদেরকে দান করবে। তাহলে একটা সময় সকলের কাছে সমপরিমাণ সম্পদ থাকবে এবং প্রত্যেকেই সমপরিমাণ সুখী মানুষের পরিণত হবে। এই বিবেচনায় যাকাত শুধুমাত্র তাদেরকে যেতে হবে যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। গরীব অসহায় মানুষের যাকাতের অর্থ পাওয়ার অধিকার রাখে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কাদেরকে যাকাত দেওয়া উচিত।
- ১ . যে আপনার কাছে সাহায্য চাইতে আসে যেমন ভিক্ষুক
- ২. এমন লোক যে সাহায্য চাইতে পারে না অথচ প্রচুর পরিমাণে অসহায়।
- ৩. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যে ঋণ থেকে মুক্ত হতে পারছে না।
- ৪. দাস-দাসীদের মুক্ত করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যেতে পারে।
- ৫. এছাড়া মুসাফিরদের কেউ যাকাতের টাকা দিয়ে সাহায্য করা যায়।
কার উপর যাকাত ফরজ?
অনেকের মধ্যে ধারণা আছে যে, শুধুমাত্র যাদের পরিবারের অধিকারে মূল্যবান দ্রব্যাদি যেমন স্বর্ণ-রৌপ্য অলঙ্কারের দামে রত্ন ধরনের জিনিস আছে তারাই যাকাত দিবে। কিন্তু ব্যাপারটা এমন নয়। বিবিসি নিউজ এর একটি সাক্ষাৎকারে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের যাকাত ফান্ড পরিচালক মোঃ হারুনুর রশিদ বলেছেন,
হাতে গচ্ছিত নগদ অর্থ, শেয়ার সার্টিফিকেট, প্রাইজবণ্ড ও সার্টিফিকেটসমূহ, স্বর্ণ-রৌপ্য, মূল্যবান ধাতু ও সোনা-রুপার অলংকার, বাণিজ্যিক সম্পদ ও শিল্পজাত ব্যবসায় প্রতিশ্রুত লভ্যাংশ, উৎপাদিত কৃষিজাত ফসল, পশু সম্পদ—৪০টির ওপরে ছাগল বা ভেড়া, এবং ৩০টির ওপরে গরু-মহিষ ও অন্যান্য গবাদি পশু, খনিজ দ্রব্য, প্রভিডেন্ট ফাণ্ড - এসব কিছুর ওপরই যাকাত দিতে হবে, কিন্তু সেটা নিসাব অনুসারে।
নিসাবএকটি ইসলামি শব্দ। এর মানে হচ্ছে দৈনন্দিন প্রয়োজন পূরণ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী বাদ দেয়ার পর সাড়ে বায়ান্ন তোলা পরিমাণ রূপা অথবা সাড়ে সাত তোলা পরিমাণ স্বর্ণ থাকলে অথবা এর সমমূল্যের ব্যবসায়িক পণ্যের মালিকানা থাকলে তাকে যাকাতের নিসাব বলে।
তিনি জানিয়েছেন, ইসলাম ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী যেসব সম্পদের ওপর যাকাত দিতে হয়না এমন কিছু বিষয় নির্দিষ্ট করা আছে।
এর মধ্যে রয়েছে --- বসবাসের জন্য নির্মিত ঘর, ঘরের ব্যবহার্য আসবাবপত্র ও অন্যান্য দ্রব্য, চাষাবাদে ব্যবহৃত পশু, কাঁচা সবজি ও ফলের যাকাত নেই।
যাকাত দেওয়ার নিয়ম 2022
কোরআন মাজিদে যাকাত দেওয়ার নিয়ম এর পরিপূর্ণ গাইড লাইন দেওয়া রয়েছে। যাকাত দেওয়ার পূর্বে অবশ্যই গাইডলাইন অনুসরণ করে সম্পূর্ণ সম্পদের হিসাব নিকাশ করে তাদের অর্থের পরিমাণ বের করে যাকাত দিতে হয়। যদিও কোরআন কারীমে যাকাত দেওয়ার পরিপূর্ণ গাইড লাইন দেওয়া রয়েছে তার পরেও আমরা সম্পদশালী মানুষেরা বিভিন্ন ধরনের নিয়ম বের করে যাকাত দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু মনে রাখবেন আপনার মন মত নিয়মে যাকাত প্রদান করলে সে যাকাত আদায় হবে না অথবা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। যাকাত দিয়ে সব হাসিলের আশা করার চেয়ে বরং গুনাহের ভাগিদার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । তাই যাদের যাকাত দেওয়ার সামর্থ্য হয়েছে তারা যেন সঠিক নিয়ম টা জেনে তারপর যাকাত দেয়। নিম্নে যাকাত দেওয়ার পরিপূর্ণ নিয়ন ব্যাখ্যা করা হলো।
যে পরিমাণ সম্পদের উপর আপনার যাকাত ফরজ হবে তার চল্লিশ ভাগের একভাগ আপনাকে যাকাতের জন্য বরাদ্দ করে রাখতে হবে। দশভাগের একভাগ বলতে আমরা বুঝি ২.৫ শতাংশ। এই হিসাবের উদাহরণ স্বরূপ যদি আপনার সম্পদের পরিমাণ 100 টাকা হয় তাহলে যাকাত দিতে হবে 2 টাকা 50 পয়সা। ঠিক তদ্রূপ ভাবে যদি সম্পদের পরিমাণ 1000 টাকা হয় তাহলে যাকাত দিতে হবে 250 টাকা। আমরা যতটুকু সম্পদের উপর যাকাত ফরজ হয়েছে তার হিসাব বের করতে পারবো। হিসাব বের করার পর সমপরিমান অর্থ অথবা পণ্য সামগ্রী কোন গরিব মানুষের মাঝে ভাগ করে দিলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে।
যাকাত দেওয়ার নিয়ম এর বেলায় আরেকটা বিষয় শেয়ার করছি, ধরুন আপনার ব্যাংকে আপনি টাকা জমা রেখেছেন হজে যাওয়ার জন্য। যদিও এই টাকা আল্লাহর পথে ব্যয় করার জন্য রেখেছেন কিন্তু যেহেতু এটা জমাকৃত টাকা তাই এই টাকার ওপরে যাকাত ফরজ হবে। অর্থাৎ হজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে টাকা জমিয়ে রাখলেও সেই টাকার জন্য যাকাত দিতে হবে।
একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যত পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তার সবকিছুর উপর যাকাত ফরয হয় না। উদাহরণস্বরূপ একটা ব্যাপার এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার জন্য অনেক ধরনের আসবাবপত্র অথবা মালামালের প্রয়োজন হয় । ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল কিংবা আসবাবপত্রের ওপর কখনো যাকাত ফরয হয় না শুধুমাত্র ব্যবসার মুনাফা অথবা লভ্যাংশ ওপরে যাকাত ফরজ হয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আসবাবপত্র মালামাল বাদ দিয়ে অতিরিক্ত যেই মুনাফার টাকা সঞ্চয় থাকে তা যদি নিসাব পরিমাণ হয় তাহলে সেই সম্পদের উপর যাকাত দেওয়া ফরজ।
আরেকটা কথা যাকাত দেওয়ার একটা নির্দিষ্ট সময় রয়েছে অবশ্যই আমাদেরকে ওই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যাকাত দিতে হবে।