আজকের আলোচনাতে রয়েছে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম । হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ফরজ নামাজের পর সব নফল নামাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম হল তাহাজ্জত নামাজ, যা হলো রাতের নামাজ। মুসলিম তিরমিজি নাহিদ
মহান আল্লাহ তা'আলা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে বিশেষভাবে রাতে তাহাজ্জত নামাজ পড়ার হুকুম করে দিয়েছেন। মহান আল্লাহতালা বলেছেন হে চাদর আবৃতআখিরাতের জামাতের দাড়াও কিছু অংশ ছাড়া। সূরা মুজাম্মিল আয়াত১-২
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ইসলামের প্রাথমিক যুগে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগেই এই নামায আদায়ের নির্দেশ দেন। প্রিয় নবীর প্রতি কিছু সময় নামাজ পরার নির্দেশ ছিল না রাতের কিছু অংশ ছাড়া সারা রাত জেগে তাহাজ্জুদ আদায়ের নির্দেশ ছিল।
একশ্রেণীর লোক রয়েছে যারা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার কারণে এবং যারা যত্ন সহকারে তাহাজ্জোতের নামাজ আদায় করে তারা হিসেবে জান্নাতে যাওয়ার হুকুম পাবেন। তাই আমরা সবসময় চেষ্টা করব তাহাজ্জুতের নামাজ ধৈর্য সহকারে আদায় করার। কুরআনের বিভিন্ন সূরায় এ নামাযের প্রতি তাগিদ দেওয়া রয়েছে। তাই প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সাঃ এর পর থেকে সকল দ্বীনদার পরহেজগার অলি-আওলিয়া তাহাজ্জুতের নামাজ পড়ে রাত কাটিয়ে দিয়েছেন।
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম হচ্ছে এশার নামাজ আদায় করার পর থেকেই সুবহে সাদেকের আগ পর্যন্ত সালাতুল লাইন বা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যায়। তাহাজ্জুদ নামাজ খুব গভীর রাত্রে বা অর্ধেক রাতে পড়তে পারলে বেশি ভালো হবে। তবে শেসে তাহাজ্জত নামাজ আদায় করলে সবচেয়ে বেশি ফজিলত পাওয়া যায়।
তাহাজ্জুদ নামাজ কয় রাকাত
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম । তাহাজ্জুদ নামাজ ২ থেকে ১২ রাকাত পর্যন্ত পড়া জয় বলে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রমাণিত। তবে তা আজও সমাজের বেলায় সর্বনিম্ন 2 রাকাত এবং সর্বোচ্চ 12 রাকাত পর্যন্ত পড়া যায় বলে আমরা জানি। তবে আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাম ৮ রাকাত নামাজ পড়তেন। সে হিসেবে সর্বোত্তম হচ্ছে 8 রাকাত আদায় করা। মনে রাখতে হবে যে 8 রাকাত অবশ্যই পালন করতে হবে এমনটা নয়।
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা দুই রাকাত 12 রাকাত এবং 8 রাকাত নামাজ পড়ে থাকে। তবে যদি সম্ভব হয় তাহলে 12 রাকাত তাহাজ্জুদ আদায় করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তাহাজ্জুতের নামাজ 8 রাকাত আদায় করা উত্তম। তাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে আপনি চার রাকাত পড়তে পারবেন। তাও যদি না পারেন সর্বনিম্ন আপনি দুই রাকাত নামাজ আদায় করুন। এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে তাহাজ্বতের নামাজ কখনো কাযা করা যাবে না।
মহান আল্লাহতালা আমাদের জন্য সুযোগ-সুবিধা করে দিয়েছেন। কারণ হলো তাহাজ্জত নামাজ 12 রাকাত 8 রাকাত চার রাকাত দুই রাকাত যে যত টুকু পারেন তত তাহাজ্বতের নামাজ আদায় করব। করে এত সুযোগ-সুবিধা রেখেও আমরা মহান আল্লাহ তাআলার হুকুম পালন করে না। তাই আমরা চেষ্টা করব তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা। তাহাজ্জুদ নামাজ আমরা কখনো ভুলেও কাজ আর করব না এতে করে আমাদের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত জেনে নিন
نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ رَكَعَتِى التَّهَجُّدِ - اَللهُ اَكْبَر
উচ্চারণঃ “নাওয়াইতুয়ান উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাক’আতাই সালাতিল তাহাজ্জুদ সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা’আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার”
অর্থঃ দুই রাকাত তাহাজ্জুদের নিয়ত করছি…. অতঃপর আল্লাহ হু আকবর বলে নিয়ত বেতের নামাজ পড়া।
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম জেনে নিন
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই দুই রাকাত করে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন।
তাহাজ্জুদ এর নামাজ যে কোন সূরা দিয়ে আপনি করতে পারবেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্বতের নামাজ লম্বা কেরাতে আদায় করতেন। তাহাজ্জুদের নামাজ লম্বা কেরাতে আদায় করা উত্তম। তাই আমরা চেষ্টা করব তাহাজ্জুদ নামাজে লম্বা কেরাত করার জন্য। সুন্নত ও নফল নামাজের মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি নামাজ আছে তাহাজ্জুদের নামাজ। তাজত নামাজ পড়ার অনেক সওয়াব রয়েছে।
তাকবীরে তাহরীমা আল্লাহু আকবার বলে নিয়ত বাধা
অতঃপর ছানা পড়া
সুরা ফাতেহা পড়া
সুরা মিলানো কেরাত পড়া।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক লম্বা কেরাত দিয়ে তাহাজ্জুতের নামাজ আদায় করতেন। অন্যান্য নামাজের ন্যায় রুকু সেজদা আদায় করা। একই রকমভাবে দ্বিতীয় রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা। দোয়া দুরুদ মাসুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পূর্ণ করা।
এই নিয়মে দুই দুই রাকাত করে 8 রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উত্তম।
মহান আল্লাহতালা মুসলিম উম্মতকে যথাযথভাবে রাতের শেষ প্রহরে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার জন্য তাওফিক দান করুন আমিন। আমরা মুসলিমগণ যদি আমরা সারাদিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে পারি তাহলেই তাহাজ্জোতের নামাজ টা আদায় করতে পারবোনা। তাই আমরা মহান আল্লাহ তায়ালার হুকুম আদেশ মেনে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করব।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, যেই স্বামী তার স্ত্রীকে রাতের ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়তে বলে এবং যে স্ত্রী স্বামীকে রাতের ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়তে বলে। এর অর্থ হলো উভয়পক্ষের দুজন-দুজনকে যদি রাতের ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়তে বলে এর জন্য অনেক সওয়াব রয়েছে।
তাদের জন্য মহান আল্লাহতালা বরকত বর্ষিত হয়।
এ জন্য আমাদের সকল মুসলিম গনকে ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে হবে। আমরা সকলেই ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্বতের নামাজ পড়বো । তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে মহান আল্লাহ তায়ালাকে খুশি রাখুন এবং সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। গভীর নির্জন রাতে আপনি যদি তাহাজ্বতের নামাজ পড়ে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন ।
তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত এবং গুরুত্ব
ফরজ নামাজের পর অন্য যে কোন সুন্নত এবং নফল নামাজ অথবা ইবাদতের মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত হচ্ছে তাহাজ্জুদ নামাজ।
এ ব্যাপারে নবীজির সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন, আমাদের প্রভু পরওয়ারদিগার তাবারাকা ওয়া তা’আলা প্রত্যেক রাত্রে দুনিয়ার আসমানে (যা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়) নেমে আসেন যখন রাত্রের এক তৃতীয়াংশ বাকী থাকে । অতঃপর তিনি বলেন, তোমাদের কে আমাকে ডাকবে! আমি তার ডাকে সাড়া দেব । কে আমার কাছে কিছু চাইবে আমি তাকে তা দেব, কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব (মুসলিম, মেশকাত ১০৯ পৃঃ)
নবীজি সাল্লাল্লাহু সাল্লাম আরও বলেন, যে ব্যক্তি রাত্রে ঘুম থেকে জেগে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে এবং সে তার স্ত্রীকেও ঘুম থেকে জাগিয়ে নামায পড়ায় এমনকি সে যদি জেগে না উঠে, তবে তার মুখে খানিকটা পানি ছিটিয়ে দেয় তাহলে তার প্রতি আল্লাহ রহমত বর্ষণ করে থাকেন।
রাসুল (সাঃ) বলেন, আল্লাহর নিকট অতি প্রিয় নামায দাউদ (আঃ) এর নামায। তিনি অর্ধেক রাত ঘুমাতেন এবং রাতেন তৃতীয় ভাগে নামাযে দাঁড়াতেন আর ৬ষ্ঠ ভাগে আবার ঘুমাতেন (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত ১০৯ পৃঃ)
মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম
তাহাজ্জুদ নামাজ এর ব্যাপারে উপরে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। তাহাজ্জত নামাজের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ের বেলায় একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। নারীদের জন্য আলাদা করে কোন নিয়ম দেওয়া হয়নি। নারী অথবা পুরুষ স্বাভাবিকভাবে অন্যান্য নামাজ কিভাবে আদায় করে ঠিক তদ্রূপ নিয়মে এই নামাজ আদায় করতে হবে।
তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল
আমাদের অনেকের মধ্যে একটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করে যে তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল। যেহেতু আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন সেই হিসেবে তাহাজ্জত নামাজ কে সুন্নত নামাজ বলা যায়। এছাড়া তাহাজ্জত নামাজ কে সর্বোত্তম নফল নামাজ হিসেবেও ব্যাখ্যা করা যায়।
তবে যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন তাই আমরা এটাকে সুন্নতি ইবাদত হিসেবে গণ্য করতে পারি।
তাহাজ্জুদ নামাজে কোন সূরা পড়তে হয়
যেহেতু তাহাজ্জুদ নামাজের অনেক বেশি ফজিলত রয়েছে তাই অনেকেই মনে করতে পারেন যে হয়তো তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার জন্য আলাদা কোন সূরায় রয়েছে। কিন্তু ব্যাপারটা এমন নয় তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার জন্য আলাদা কোন সূরা নেই। সূরা ফাতিহার সঙ্গে যে কোন সূরা মিলিয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা যায়।
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম অর্থাৎ অন্যান্য নামাজ আমরা যেভাবে আদায় করি এটাও ঠিক সেভাবেই আদায় করতে হবে। তবে আমাদের নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জত নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে লম্বা কেরাত করে পাঠ করতেন। সেই লম্বা রুকু এবং লম্বা সিজদা করতেন। মোটকথা একনিষ্ঠ এবং দীর্ঘ সময় ধরে তিনি তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন। আমরা যদি তাহাজ্জুতের নামাজ আদায় করি সে ক্ষেত্রে অবশ্যই চেষ্টা করব পরিপূর্ণ মনোযোগ সহকারে দীর্ঘ সময় নিয়ে নামাজ আদায় করতে।
তাছাড়া রমজান মাস হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম মাস। রমজান মাসে সাহায্য আরো বরকত ময় হয়ে ওঠে। যেহেতু আমরা রমজান মাসে রোজা রাখার উদ্দেশ্যে সেহরি খাওয়ার জন্য উঠি তাই আমরা সেহেরির আগে একটু বেশি সময় নিয়ে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতে পারি। যেহেতু বছরের অন্যান্য সময় রাত্রি জাগরন করার মানসিকতা থাকে না তাই এই সুযোগটাকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
যেহেতু আমাদের নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। তাই আমরা কিন্তু এটা কি সুন্নত নামাজে হিসেবে ধরতে পারি তবে অতিরিক্ত হিসেবে ধরলে এটাকে নফল নামাজ বলা যায়। এটা সত্য যে তাহাজ্জত নামাজ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর উপর অতিরিক্ত এবাদত এর দায়িত্ব ছিল। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার পর সর্বোত্তম ইবাদত হচ্ছে তাহাজ্জত নামাজ। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন যে, “ যে সকল ব্যক্তি রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়েছেন, তারাই আধ্যাত্মিক জগতের আল্লাহর নৈকট্য লাভের ঊর্ধ্ব আহরণ করেছেন”।
তাহাজ্জত নামাজ সম্পর্কে কিছু কুসংস্কার
আমাদের সমাজে তাহাজ্জত নামাজ সম্পর্কে কিছু ভ্রান্ত ধারণা বা কুসংস্কারের প্রচলন রয়েছে। যেমন কেউ কেউ মনে করেন তাহাজ্জত নামাজ অন্ধকারে আদায় করতে হবে, অথবা এই নামাজ গোপনে আদায় করতে হবে, তাহাজ্জুদ নামাজের নির্দিষ্ট সময় বা দিন আছে, তাহাজ্জুদ একবার শুরু করলে সব সময় পড়তে হয়। উল্লেখিত যতগুলো ধারণা বর্ণনা করা হয়েছে তার সবগুলোই ভিত্তিহীন। তাহাজ্জুদ নামাজ এ ধরনের কোন ভিত্তিহীন নিয়ম নেই।
আল্লাহর অতি সন্নিকটে বান্দা হিসেবে নিজেকে হাসিল করতে চাইলে আমাদেরকে অবশ্যই তাহাজ্জুদ নামাজে মনোনিবেশ করতে হবে। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে তাহাজ্জত নামাজ এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত আদায় করার তৌফিক দান করুক। আল্লাহ তায়ালার কাছে আকুল আবেদন যেন তিনি আমাদের সকলকে তাহাজ্জত নামাজ আদায় করার জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা করে দেন ।