বাদামের উপকারিতা হচ্ছে আজকের আর্টিকেল এর মূল বিষয়বস্তু । পুষ্টিগুণের কথা ভাবতে গেলে বাদামের বিকল্প কোন কিছু নেই। বাদাম শরীরের জন্য অনেক উপকারী। শরীরে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি ওজন কমাতে বেশ সহায়ক। বাদল পেতে অনেকেই পছন্দ করেন। কিন্তু অনেকেই জানেন না অথবা অনেকেই জানেন যে বাদামের কতটা পুষ্টিগুণে ভরপুর। আজকের আর্টিকেলে আমরা বাদামের উপকারিতা সম্পর্কে জানবো পাশাপাশি বাদামের খারাপ দিকগুলো সম্পর্কেও জানব। তো চলুন বেশি কথা না বলে মল আলোচনা শুরু করি-
কাচা বাদাম নাকি ভাজা বাদাম কোনটি বেশি উপকারী
বাদামের উপকারিতা সম্পর্কে বলতে গেলে কাচা বাদাম কিংবা ভাজা বাদাম দুটোতেই পুষ্টিগুণে ভরপুর রয়েছে। কাচা বাদাম স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি উপকারী কিন্তু কাঁচা বাদামের যেহেতু রোগজীবাণু থাকার সম্ভাবনা রয়েছে তাই হালকা ভেজে খেলে বেশি উপকার পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । বাংলাদেশের জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শক ডাক্তার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির সবাইকে পরামর্শ দেন কাচা বাদাম না খেয়ে বরং ভেজে খেতে। তিনি বাদামের সঙ্গে হালকা ঘি অথবা মাখন দিয়ে ভেজে খাওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ এটি শরীরের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল কমাতে সহযোগিতা করে এবং শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমাতেও অনেক বেশি উপকারী। তাই আমরা বলতে পারি মাখন কিংবা কি দিয়ে বাদাম ভেজে খেলে আমাদের জন্য সেটা বেশি উপকারী হবে।
এগারোটি বাদামের উপকারিতা
হাড়ের গঠন বৃদ্ধিতে সহায়তা করেঃ
বাদামের উপকারিতা সম্পর্কে বেশকিছু গবেষণার ফলাফলে এটা প্রতীয়মান হয়েছে যে বাদামে উপস্থিত ফসফরাস শরীরে প্রবেশ করলে এটা দারুন ভাবে কাজ করে। ভজন শরীরে প্রবেশ করলে হাড়ের গঠনে এমন বেশি প্রভাব ফেলে যেটা হাড়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত প্রতিদিন এক বাটি বাদাম খেলে কোনদিনও হাড়ের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না বললেই চলে। শরীরের হাড় গঠনের অথবা আর জনিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে নিয়মিত বাদাম খাওয়া খুবই জরুরী।
বাদাম মস্তিষ্কের পাওয়ার বৃদ্ধি করেঃ
আমেরিকার অ্যান্ড্রস ইনভারসিটি এক গবেষক দল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাদামের মধ্যে থেকে এমন কিছু উপাদান গেয়েছেন যা মানব শরীরের জন্য খুবই উপকারী । বাদামের উপকারিতা সম্পর্কে তারা বলেন এতে রয়েছে, যা কগনিটিভ পাওয়া, সহজ করলে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে অনেক বেশি কার্যকর। তাই যারা নিজেদের সন্তানদের পড়াশোনা নিয়ে চিন্তিত তাদের বলব, বাচ্চাদেরকে নিয়মিত বাদাম খেতে দিন তাহলে তাদের ব্রেন শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
বাদাম ক্যান্সারের মত রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করেঃ
বাদামের উপকারিতা এর কথা বলতে গেলে হাজার রকমের উপকারিতা বলা সম্ভব যেমন বাদামে উপস্থিত এন্টিঅক্সিডেন্ট ক্যানসারকে প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য বাদামের কোন তুলনা চায়না। এখানেই শেষ নয় আরও কিছু উপকারিতা রয়েছে যেমন এক্সিডেন্ট ট্রেস কমাতে সাহায্য করে, পাশাপাশি ত্বকের এবং শরীরের বয়স কমাতে সাহায্য করে।
বাদাম পুষ্টির ঘাটতি দূর করতে বাদামের তুলনা নাইঃ
বাদাম নামক এই প্রাকৃতিক উপাদান টি শরীরে যাদব পুষ্টিগুণ রয়েছে তা হচ্ছে প্রায় 3.5 গ্রাম ফাইবার, 6 গ্রাম প্রোটিন, চৌদ্দগ্রাম ফ্যাট, এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন ই, ভিটামিন বি টু, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম। এ সকল উপাদান শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই সকল উপাদান শরীরের মারাত্মক ব্যাধি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। উল্লেখ্য যে একমুঠো বাদাম থেকে মাত্র 161 কিভাবে পাওয়া যায়। তাই এই খাবারটি খেলে শরীরের ওজন বাড়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
বাদাম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আমাদের শরীরের জন্য খুবই জরুরী। যদি শরীর থেকে নিজেই রোগ প্রতিরোধ করতে পারি তাহলে আর ওষুধের কি প্রয়োজন। নিয়মিত বাদাম খেলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। নিয়মিত বাদাম খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ট্রেস কমায়, কোষের ক্ষয়রোধ করে , সেই সঙ্গেই শরীর এবং ত্বকের বয়স কমাতে সাহায্য করে।
বাদাম খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়
কোলেস্টরেল শরীরের জন্য ভালো কিন্তু খারাপ কোলেস্টেরল শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বর্তমানে খারাপ কোলেস্টেরলের প্রভাবে মানুষের শরীরে হার্টের প্রবলেম দেখা যাচ্ছে। হার্টের রোগের আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে তাই আমাদের এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া জরুরী। হার্টের রোগ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে প্রতিদিনকার ডায়েট চার্টে বাদাম কে অন্তর্ভুক্ত করুন। তাহলে দেখবেন হার্টের সমস্যা নিয়ে তেমন বেশি ভুগতে হবে না। বদনা কিছু কার্যকরী উপাদান উপস্থিত রয়েছে যেগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার পাশাপাশি হার্টের রোগ প্রতিরোধে সহযোগিতা করে। এছাড়া যেহেতু এটি খারাপ কোলেস্টেরল গুলোকে প্রতিরোধ করে তাই হার্টের রোগীদের জন্য এটা অনেক বেশি উপকারী।
বাদাম ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ
বাদামের যে ম্যাগনেসিয়াম থাকে তা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক বেশী কার্যকর। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে শরীরের ঘাটতি দেখা দিলে অল্প সময়ের মধ্যে ব্লাড প্রেসার মারাত্মক বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অতিরিক্ত রক্তচাপ শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর যেটা আমরা সবাই জানি। উল্লেখ্য চেয়ে অতিরিক্ত রক্তচাপ থাকলে হঠাৎ করে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক কিংবা কিডনিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই শরীরে যাতে কোন সময় ম্যাগনেসিয়াম এর ঘাটতি না দেখা যায় সেদিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
বাদাম খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকেঃ
যদি আমরা বাদামের সঙ্গে মাখন কিংবা ঘি মাখিয়ে ভেজে খায় তাহলে আমাদের ক্ষুধার প্রবণতা কমবে। অতিরিক্ত খোদার প্রবণতা কমে গেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমবে পাশাপাশি ওজনও কমবে। সেইসঙ্গে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত ক্যালোরি ক্ষয় হবে যা মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী।
বাদাম শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকতে সহায়তা করেঃ
সাম্প্রতিক সময়ে একটা গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত বাদাম খান তাদের শরীর থেকে ডায়াবেটিস এর পরিমাণ ২৫ থেকে ৩৮ শতাংশ কমেছে। যদি আপনার পরিবারের ডায়াবেটিস রোগের প্রভাব থাকে তাহলে এখন থেকে বাদাম কে কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন। দেখবেন অল্পদিনেই এটা থেকে উপকৃত পাচ্ছেন। বাদামে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম রক্তে উপস্থিত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। মূলত এ কারণেই ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত বাদাম খাওয়ার দরকার। যেটা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
বাদাম কোষদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
বাদামে যে পরিমাণ ভিটামিন ই থাকে তার শরীরে প্রতিটি কোনায় ছড়িয়ে কোষের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে যদি কোন প্রকার খারাপ ভাব থাকে তা প্রতিরোধে সাহায্য করে। ফলে যদি আপনার বয়স বৃদ্ধি পায় সে ক্ষেত্রেও আপনার রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে।
বাদাম হজমশক্তি উন্নতি ঘটায়
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত জলে ভেজানো কাজুবাদাম খেলে দেহের অন্দরে বিশেষ কিছু এনজাইমের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যার প্রভাবে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটতে শুরু করে। সেই সঙ্গে গ্যাস-অম্বলের প্রকোপও কমে যায়। এবার বুঝেছেন তো খাদ্যরসিক বাঙালি, আমাদের কেন প্রতিদিন একমুঠো করে বাদাম খাওয়া উচিত!
বাদামের প্রকারভেদ
এতক্ষণ আমরা বাদামের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এবার আমরা বাদামের প্রকারভেদ সম্পর্কে জানব। অনেক রকমের হয়ে থাকে এবং প্রত্যেক বাদামের পুষ্টিগুণ রয়েছে। নিচে বাদামের প্রকারভেদ গুলি তুলে ধরা হলো-
- কাঠবাদাম
- চিনাবাদাম
- কাজুবাদাম
- পেস্তা বাদাম
কাঠবাদামঃ
কাঠবাদাম কে আমন্ড বাদাম নামেও ডাকা হয়। এটি সারা বিশ্বব্যাপী খুবই জনপ্রিয় একটি বাদাম এর প্রকার। গোলাকৃতি আকৃতির এই বাদাম টি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে পাশাপাশি হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
চিনাবাদামঃ
চিনাবাদাম অন্যান্য বছরের তুলনায় একটু বেশি পুষ্টিকর। পাশাপাশি এটি অন্যান্য বাদামের চেয়ে বেশি জনপ্রিয়। চিনাবাদাম নিয়মিত সেবন করলে বা খেলে শরীরের ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। এছাড়া ত্বক এবং চুলের জন্য উপকারী। এতে ৪.৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৭.১ গ্রাম প্রোটিন, ১৩.৬ গ্রাম ফ্যাট এবং ১৫৮ ক্যালরি রয়েছে।
কাজুবাদামঃ
কাজুবাদাম সাধারণত বিভিন্ন ধরনের রান্নায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও এই বাগানটিকে রয়েছে পুষ্টিগুণে ভরপুর। বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধে অনেক ভূমিকা রয়েছে। নিয়মিত একমুঠো কাজু বাদাম খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে পাশাপাশি শরীর ফিট থাকবে এবং এমনকি ক্যান্সারের মতো মরণ ব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
পেস্তা বাদামঃ
অন্যান্যবারের মতো পেস্তাবাদাম শরীরের জন্য খুবই উপকারী। পেস্তা বাদামে ৫.৮ গ্রাম প্রোটিন, ১৫৬ ক্যালরি, ২.৯ গ্রাম ফাইবার, ১২.৪ গ্রাম ফ্যট সমৃদ্ধ।