মহানবী(সা.)কোরবানির মাংস বন্টন যেভাবে করতেন
আসসালামু আলাইকুম আমাদের প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা। আমাদের বছরে দুইটি ঈদ উদযাপন করা হয়। এই দুইটি ঈদের মধ্যে একটি হচ্ছে ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ। মহান আল্লাহতালা অসীম রহমত আশায় ধর্মপ্রাণ মুসলিম কোরবানির আয়োজন করে থাকেন।
কোরবানির ঈদে পশু কুরবানী গোশত বন্টন বা ভাগ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে আজকে আলোচনা করব । আপনারা আমাদের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়বেন। কোরবানির মাংস বন্টন বা ভাগ করার ক্ষেত্রে না জানার কারণে গোস্ত ভাগের সময় নিজের ইচ্ছাকৃতভাবে গোশত বন্টন আমরা করে থাকি। তাই আজকে আলোচনা করব কোরবানির গোশত ভাগ বা কোরবানির মাংস বন্টন করার ব্যাপার নিয়ে । কিভাবে কোরবানির গোশত বন্টন বা ভাগ করতে হয় তা জেনে নিন।
আমরা যদি কুরবানীর গোশত সঠিকভাবে বন্টন বা কোরবানির মাংস বন্টন করতে না পারি। তাহলে কোরবানি কবুলের শর্ত পূরণ হবে না। তাই আমাদের কুরবানী গরু বন্টন ভালোভাবে করতে হবে। কারণ যদি আমরা কোরবানির গোশত সঠিকভাবে ভাগ না করতে পারি তাহলে আমাদের কুরবানী শর্ত পূরণ হবে না। তাই সকল উদ্দেশ্য করে বলছি আপনার সকলে কোরবান গোশত বন্টন ভাগ করার ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে গোশত বন্টন করবেন ইনশাআল্লাহ।
গোস্ত বন্টনের তিন ভাগ
আপনি যদি ছাগল বা গরু অথবা উট কুরবানী দিয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে সকল পশু কোরবানির গোশত 3 ভাগ করতে হবে। সঠিক পরিমাপ এর জন্য আপনাকে অবশ্যই দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার করতে হবে। সব সময় সব কাজ আমরা সঠিকভাবে পরিমাণ মত করে নেব । গোশত ভাগ হবে তিন ভাগ । প্রথম ভাগ গরিব-দুঃখীদের এতিম তাদের দিতে হবে। দ্বিতীয় ভাগ আত্মীয় ও পাড়া প্রতিবেশী কে দিতে হবে। তৃতীয় ভাগ নিজেদের খাওয়ার জন্য রাখতে হবে।
গোস্ত বন্টনের তিনভাগ এই বিষয় নিয়ে পবিত্র কোরআনের সূরা আল-হজ্ব এর 28 নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে। এই সূরাটি বলেছেন যে তোমরা খাও অবাক অভাবগ্রস্ত দরিদ্র এতিম গরিব গরিব-দুঃখীদের দিতে হবে। এর সাথে কোরবানির মাংস খাওয়ানোর সূরা আল-হজ্ব এর 36 নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে যে, তখন তোমরা তা থেকে খাও আর ও আহার করা এমন দরিদ্র কে যে ভিক্ষা করে এবং এমন দরিদ্র কে যে ভিক্ষা করে। এভাবে আমরা সে গুলোকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছি যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।
সবচেয়ে ভালো পুশুর প্রতিটি অংশের মাংস ইত্যাদি একসঙ্গে মিশিয়ে ফেলা। সবগুলো মাংস একসঙ্গে মিশিয়ে তারপর তিন ভাগ করে সবাইকে দেওয়া ভালো। কোরবানির মাংস তিন ভাগ করা হচ্ছে মুস্তাহাব। তবে আপনার যদি ইচ্ছা করে তাহলে আপনি সবাইকে বিলিয়ে দিতে পারেন। এবং আপনি যদি চান নিজে জন্য পুরোটা তাহলে সেটাও করতে পারবেন।
এখানে আরেকটি কথা রয়েছে যে আমরা কেন গরিব দুঃখী মিসকিন এতিম আত্মীয়-স্বজনের ইত্যাদি তাদের হক কেন মেরে খাবো। আমরা যদি অসহায় গরীব দুঃখীদের কে একটু সাহায্য করতে পারি তাহলে সকলের জন্য মানসিক শান্তি প্রভাব পড়বে। কুরবানীর গোশত এক-তৃতীয়াংশ গরিব মিসকিন কে ও এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী কে দেওয়া উত্তম। তবে যদি পুরো মাংস যদি নিজের জন্য রেখে দেন তাহলে কোন অসুবিধা নেই। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলমগীরী ৫/৩০০
হাদিসের দলিল
কোরবানির মাংসের বিষয়ে সহিহ বুখারিতে সালামা বিন আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (সা.) বলেন, তোমরা খাও, খাওয়াও এবং সংরক্ষণ করে রাখ। এখানে হাদিসে বর্ণিত ‘খাওয়াও’ কথাটি ধনীদেরকে হাদিয়া দেয়া এবং দরিদ্রদেরকে দান করাকে অন্তর্ভুক্ত করবে।
একই সহিহ মুসলিম শরিফে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (সা.) বলেন, তোমরা খাও, সংরক্ষণ করে রাখ এবং দান করো। জানা যায়, ইবনে মাসঊদ (রাঃ) কুরবানির গোশত তিনভাগ করে একভাগ নিজেরা খেতেন, একভাগ যাকে চাইতেন তাকে খাওয়াতেন এবং একভাগ ফকির-মিসকিনকে দিতেন। আবদুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বর্ণিত নবী করীম (সা.)-এর কুরবানির গোশত বন্টন সম্পর্কে বলেন যে, তিনি একভাগ নিজের পরিবারকে খাওয়াতেন, একভাগ গরিব প্রতিবেশীদের দিতেন এবং একভাগ সায়েল-ফকিরদের দিতেন।
চামড়া
কুরবানীর পশুর আরেকটি অংশ হচ্ছে চামড়ার টাকা। কোরবানির পশুর চামড়ার টাকা তে রয়েছে গরিব-দুঃখীদের ও মিসকিনদের হক। কোরবানির পশুর চামড়া টাকা আশেপাশে এতিমখানায় কিংবা আমরা তাদের কাছে দিতে পারেন।
আজকাল এমন অনেক লোক দেখা যায় যে কোরবানির গোশত জমা করে রেখে দেন। সেই জমানো থেকে প্রতিবেশীর গরিব-দুঃখী ইত্যাদি তাদেরকে কিছু কিছু দিয়ে আবার নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। এটি হচ্ছে কুপ্রথা । এর মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পায়।
নিজের জন্য যে অংশটুকু সংরক্ষণ করে রাখা জায়েজ। এমনকি দীর্ঘদিন পর্যন্ত হলে যতদিন পর্যন্ত রাখলে এটি খাওয়া ক্ষতিকর পর্যায়ে পৌঁছাবে না। যদি দুর্ভিক্ষের বছর হয় তাহলে তিন দিনের বেশি সংরক্ষণ করা ঠিক না এবং তা জায়েয নয়।
দলিল হচ্ছে সালামা বিন আকওয়া (রাঃ) এর হাদিস। তিনি বলেন, নবী করীম (সা.) বলেন, তোমাদের যে মধ্যে ব্যক্তি কোরবানি করেছে তৃতীয় রাত্রির পরের ভোর বেলায় তার ঘরে যেন এর কোনো অংশ অবশিষ্ট না থাকে। পরের বছর সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমরা কি গত বছরের মত করব? তখন নবী করীম (সা.) বলেন, তোমরা খাও, খাওয়াও এবং সংরক্ষণ কর। ঐ বছর মানুষ কষ্টে ছিল। তাই আমি চেয়েছি তোমরা তাদেরকে সহযোগিতা কর। এই বিষয়ে সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম শরিফ উভয় হাদীসেই বলা হয়েছে।