ওযুর নিয়ম ও দোয়া । ওযু ভঙ্গের কারণ, ওযুর ফরজ কয়টি ও ফজিলত

ওযুর নিয়ম ও  দোয়া । ওযু ভঙ্গের কারণ, ওযুর ফরজ কয়টি  ও ফজিলত

আসসালামুআলাইকুম প্রিয় পাঠক মুসলমান ভাই ও বোনেরা আপনাদের জন্য আজকে আমি  ওযুর নিয়ম ওযুর নিয়ত, অযুর দোয়া, অযুর ফরজ কয়টি, ওযু ভঙ্গের কারণ এবং ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব । 

আমরা মুসলিমরা আমাদের সর্বপ্রথম গোসলের আগে ওযু করে নিতে হবে।  ওযু হচ্ছে আমাদের পবিত্রতা তাই আমরা গোসল বা যেকোন পবিত্র কাজ করতে হলে প্রথমে আমরা অজু করে নিব এবং নামাজ পড়তে হলে আমাদেরকে অবশ্যই অজু করে নিতে হয় তাই আমাদেরকে ওযু সম্পর্কে সকল তথ্য জানতে হবে।

 আমরা মুসলিম আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন ওযুর অনেকগুলো নিয়ম রয়েছে এই নিয়মগুলো আমরা অনেকেই হয়তো জানি না তাই আজকে তাদের জন্য আমাদের এই পোস্ট। 

 খুব ধৈর্য সহকারে আপনি আজকে আমাদের এই আলোচনাটি মনোযোগ দিয়ে পড়বেন। কারণ আমাদের অজু সঠিকভাবে যদি না হয় তাহলে আমাদের কোন পবিত্র কাজ আমরা করতে পারবো না কারণ নাপাক অবস্থায় মুসলমানদের কোন কাজ করা ঠিক নয়।  

তাই আমাদেরকে সর্বপ্রথম জানতে হবে আমরা সঠিক ওযু করার নিয়ম এবং যাবতীয় নিয়ম কারণ গুলো জানা খুব জরুরী। আমরা মুসলমান আমাদেরকে সব সময় পবিত্র থাকার জন্য ইবাদত করার জন্য পবিত্রতা অর্জন করার জন্য আমাদেরকে সবসময় অজু করে থাকতে হবে তাই ওযু সম্পর্কে বিস্তারিত জানা খুব জরুরী ।

প্রিয় দর্শক মুসলমান ভাই ও বোনেরা তাহলে চলুন আর দেরি না করে আমরা খুব সহজ উপায় এবং অল্প কিছুক্ষণ সময়ের মধ্যে জেনে নেবো বিস্তারিত। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।আমাদের প্রিয় নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম মেসওয়াক করার কথা বলেছেন ওযুর আগে।  

আমরা মুসলমান আমরা জানি ওযু করার সময় তিনবার মেসওয়াক করা সুন্নত। মেসওয়াক করার পর আপনি তিনবার কুলি করে নেবেন।  এরপর আপনি তিনবার নাকে পানি দিবেন।  তিনবার সমস্ত মুখ মন্ডল  ধুয়ে নেবেন।

সর্বপ্রথম আমরা জানবো ওযুর নিয়ম 

আপনি যদি সঠিকভাবে ওযু করতে চান তাহলে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে ওযুর নিয়ম জেনে নিন।  

সর্বপ্রথম আপনাকে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম ওযুর নিয়ত করতে হবে। 
ওযু শব্দটি হলো আরবি শব্দ।  অর্থ হচ্ছে হাত ধৌত করা। ওযুর নিয়ম ইংরেজিতে এর অর্থ হলো Purify, Clean, Clear Wash, Ablution ইত্যাদি বলা যায়।

আপনার-আমার  সর্বদা পবিত্র থাকার জন্য ইবাদতের উদ্দেশ্যে ইসলামে বর্ণিত ওযুর নিয়ম অনুযায়ী পানির সাহায্যে মুখমন্ডল ধৌত করা এবং মাথা  মাছেহ করাকে ওযু বলা হয়। আমরা সাধারণত নামাজ পড়ার জন্য অজু  করে নেই।  কারণ আমরা যদি ওযু না করে নেই তাহলে নামাজ কোন ভাবে আদায় হবে না। আমাদের হয়তো বিভিন্ন সমস্যার কারণে হাতে-পায়ে আঘাত লেগে থাকে যেমন কাটা বা ক্ষত স্থানে ব্যান্ডেজ করা থাকে।

 এই বিষয়ে কি নিয়ম মেনে ওযু করতে হবে তা বলব।  ওযু করার সময় আপনি আপনার ক্ষত জায়গায় আশেপাশে হালকা করে পানি দিয়ে ধুয়ে করে নিন। 

এবং আপনার ক্ষত জায়গায় যদি ব্যান্ডেজ করা থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনি ব্যান্ডের উপরে হাল্কা করে ওযুর পানি দিয়ে অজু করে নিবেন।  এবং যদি ক্ষত জায়গায় শুকিয়ে যায় তবে অবশ্যই আপনাকে পানি দিয়ে ওযু করতে হবে ক্ষতস্থান সহ। ইতিমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি যে ওযু করার নিয়ম সম্পর্কে।

বিসমিল্লাহ সহকারে অযুর নিয়ত করুন।

(১) নিয়তঃ আমি পবিত্রতা অর্জন করা বা ইবাদত করা অথবা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার জন্য অজু করছি।

(২) প্রথমে উভয় হাতের কবজি পর্যন্ত ধোয়াঃ ডান হাতে পানি নিয়ে ডান হাতের কবজি তিনবার ধৌত করবে। এরপর ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাতের কবজির উপর পানি ফেলে তিন বার ধৌত করবে।

লক্ষণীয়ঃ হাতে নাপাকী থাকলে যে কোন উপায়ে প্রথমে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

(৩) মিসওয়াক করাঃ কুলি করার পূর্বে মিসওয়াক করা সুন্নত। মিসওয়াক অজু শুরু করার পূর্বেও করা যায়। মিসওয়াক না থাকলে কিংবা মুখে ওজর থাকলে বা দাঁত না থাকলে আঙ্গুল দিয়ে হলেও ঘষে নিবে।

(৪) কুলি করাঃ ডান হাতে পানি নিয়ে কুলি করবে। রোজাদার না হলে গড়গড়া করা সুন্নত। তিনবার কুলিকরা সুন্নত। তিনবারের জন্য আলাদা আলাদা তিনবার পানি নিতে হবে।

(৫) নাকে পানি দেওয়াঃ ডান হাতে নাকে পানি দিবে এবং বাম হাত দ্বারা নাক ঝাড়বে। বাম হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়ে নাক পরিস্কার করবে। তাছাড়া কনিষ্ঠ ও বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়েও নাক পরিস্কার করা যায়। তিনবার নাকে পানি দেওয়া সুন্নত। রোজাদার না হলে নাকের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌঁছানো উত্তম। নাকে অলংকার এবং হাতে আংটি থাকলে তা নারা—চাড়া করে নিচে পানি পৌঁছে দেওয়া ওয়াজিব।

(৬) মুখমন্ডল ধোয়াঃ উভয় হাতে পানি নিয়ে সমস্ত মুখমন্ডল ধৌত করবে। অর্থাৎ, কপালের চুলের গোড়া থেকে থুতনীর নিচ এবং উভয় কানের লতি পর্যন্ত এমনভাবে পানি পৌঁছানো, যাতে উক্ত অঙ্গ থেকে পানি ফোঁটা ফোঁটা নিচে গড়িয়ে পড়ে। একবার ধোয়া, তিনবার ফরয, তিন বার ধোয়া সুন্নাত।

(৭) দাড়ি ও গোঁফ : দাড়ি ও গোঁফ খুব ঘন হলে শুধু ধোয়া ফরয। চামড়ায় পানি পৌঁছানো ফরয নয়। দাড়ির ভেতরে আঙ্গুল চালিয়ে খিলাল করে নিবে।

(৮) উভয় হাত কনুই উভয় হাত কনুই সহ ধৌত করবে। একবার ধোয়া ফরয, তিনবার ধোয়া সুন্নাত। হাত ধোয়ার সময় আঙ্গুল খিলাল করবে, যাতে আঙ্গুলের গোড়ায় পানি পৌঁছে যায়। অর্থাৎ এক হাতের আঙ্গুল অপর হাতের আঙ্গুল সমূহের মধ্যে প্রবেশ করাবে। বিঃদ্রঃ কারো আঙ্গুলের মধ্যে যদি ফাঁক না থাকে এবং আঙ্গুলের সাথে অপর আঙ্গুল এমনভাবে লেগে থাকে যার কারণে আঙ্গুলের সাথে পানি না পৌঁছার আশঙ্কা থেকে যায়, এ অবস্থায় খিলাল করা ওয়াজিব।

(৯) মাথা মাসেহ করাঃ মাথার চার ভাগের একভাগ মাসেহ করা ফরয, সমস্ত মাথা মাসেহ করা সুন্নাত।

(১০) মাথা মাসেহের নিয়মঃ বৃদ্ধ ও তর্জনী আঙ্গুলদ্বয় ব্যতীত অবশিষ্ট উভয় হাতের আঙ্গুলের পেট মাথার মধ্যে ভাগে সামনে হতে পিছন দিকে টেনে নিয়ে যাবে। অতঃপর দুই হাতের তালু মাথার দুই পাশে রেখে পেছন দিক থেকে সামনে টেনে নিয়ে আসবে।

(১১) কান মাসেহ করাঃ উভয় হাতের বৃদ্ধ আঙ্গুলের পেট দ্বারা দুই কানের পেছনের অংশ মাসেহ করা। এরপর কনিষ্ট আঙ্গুলের অগ্রভাগ দ্বারা কানের ছিদ্র এবং তর্জনী আঙ্গুলের সাহায্য কানের পাতার ভেতরে অংশ মাসেহ করা সুন্নাত।

(১২) গর্দান মাসেহ করাঃ উভয় হাতের তিন আঙ্গুলের পিঠ দ্বারা গর্দান মাসেহ করবে। গলা মাসেহ করবে না।

(১৩) গোড়ালী ও টাখনুসহ পা ধোয়াঃ ডান হাত দিয়ে পায়ের অগ্রভাগে পানি ঢালা সুন্নাত। বাম হাত দিয়ে পায়ের সামনে পেছনে এবং তলদেশ মর্দন করবে। পা দিয়ে ঘষে এবং বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে পায়ের আঙ্গুলসমূহ খিলাল করে নিবে।

(১৪) অজুর শেষে কালিমায়ে শাহাদাত পড়া মুস্তাহাব।

 এর পরে আলোচনা করব ওযুর নিয়ত কিভাবে করতে হয় তা নিয়ে আজকের এই আলোচনা।

দ্বিতীয়তঃ আমরা জানবো ওযু করার নিয়তঃ

এবার জেনে নিন ওযু করার নিয়ত কিভাবে করতে হয় ।

উচ্চারনঃ নাওয়াইতু আন আতাওয়াজ্জায়া লিরাফয়িল হাদাসি ওয়া ইস্তিবাহাতা লিছছালাতি ওয়া তাকাররুবান ইলাল্লাহি তা’য়ালা।

অর্থ: আমি ওযুর নিয়ত করছি যে নাপাকি দূর করার জন্য বিশুদ্ধরূপে নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্য এবং আল্লাহ তা’য়ালা।

তৃতীয়তঃ আমরা জানবো ওযু করার দোয়াঃ

 বাংলা উচ্চারণঃ ( আলহামদুলিল্লাহি আলা দ্বীন-ই ইসলাম, আলইসলামু-হাক্কু, ওল কুফরে বাতীলুন, ওল ইসলামু নূরুন, ওল কুফরে জুল্বমাত )

 চতুর্থ আমরা জানব ওযুর ফরজ কয়টি ও কি কিঃ

যাহারা পবিত্র থাকে তাদেরকেই মহান আল্লাহতালা ভালোবাসেন।  তাই আমরা মুসলমানরা সকলেই চেষ্টা করব পাক-পবিত্র হয়ে থাকার জন্য। এজন্য আপনাকে সবসময় পবিত্র অবস্থায় থাকতে হবে।  তাই আমাদের খুবই জরুরী ওযু করার সকল বিধান বিস্তারিত  জানা । মহান আল্লাহতালার নামাজ আদায় করার জন্য প্রথমে ওযু ফরজ করেছেন। 

বিনা অজুতে ফরজ ইবাদত করা পাপের কাজ। কোরআন শরীফ স্পর্শ করতে হলে আপনাকে প্রথমে অজু করে নিতে হবে।  যেকোনো পবিত্র কাজ করতে হলে সর্বপ্রথম আপনাকে ওযু করতে হবে।  গোসলের আগেও ওযু করে নিয়ে গোসল করতে হবে।  আর নামাজ পড়তে হলে অবশ্যই আমাদের অজু করে নামাজ পড়তে হবে।  হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ধর্মের অর্ধেক। 

ওযুর ফরজ কয়টি ও কি কি

ওযু করার ফরজ চারটি
অবশ্য করণীয় কাজ রয়েছে যেগুলো না করলে আমাদের ওযু হবে না।  তাহলে চলুন দেখে নেই ওযুর ফরজ কয়টি।
  •   সমস্ত মুখমন্ডল ধৌত করা।
  •   দুই হাতের কুনিসহ ভালভাবে ধৌত করা।
  •   মাথা চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ্ করা।
  •   দুই পায়ের টাকনুসহ ধৌত করা।

পঞ্চম তম আমরা জানব ওযু ভঙ্গের কারণ সমূহঃ

আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে ওযু কিভাবে ভেঙে যায়।  আমাদেরকে মনে রাখতে হবে ওযু ভেঙে গেলে আমাদের ইবাদত হবে না বা অজু থাকবে না এবং কোন ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।  

যদি আপনি ওজু ঠিকঠাক ভাবে ধরে না রাখতে পারেন তাহলে আপনি অপবিত্র থেকে যাবেন।  তাই পবিত্র থাকার জন্য আপনাকে ওযু কে ভালো ভাবে ধরে রাখতে হবে।  এজন্য জানতে হবে ওযু ভঙ্গের কারণসমূহ। তাহলে চলুন দেখি নেই কোরআন কিংবা হাদিসে ওযু ভঙ্গের ব্যাপারে কি বলেছেন তা ।

ওযু ভঙ্গের কারণ হলো সাতটি যথাঃ

নামাজে বসে উচ্চস্বরে হাসি দিলে।
হরযত ইমরান বিন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।  রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এরশাদ করেছেন যে ব্যক্তি নামাজে বসে উচ্চস্বরে   হাসে, সেই ব্যক্তিকে ওযু ও নামাজ আবার নতুন করে আদায় করতে হবে।  হযরত হাসান বিন কুতাইবা (রহ.)তিনি বলেছেন যখন কোন ব্যক্তি উচ্চস্বরে হাসি দেয় সে ব্যক্তি ওযু ও নামাজ আবার নতুন করে আদায় করতে হবে। [সুনানে দারা কুতনি, হাদিস নং-৬১২]

 পাগল, মাতাল, অসচেতন হলে
হযরত হাম্মাদ (রহ.) বলেছেন যখন  একটি পাগল ব্যক্তি সুস্থ হয়। তখন ওই পাগল নামাজের জন্য অজু করতে পারবে। [মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস নং-৪৯৩]

চিৎ .  কাত , হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়া 
হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এরশাদ করেছেন সিজদা অবস্থায় ওযু ভঙ্গ হয়না।  কিন্তু তবে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লে ভেঙ্গে যাবে, কেননা চিৎ বা কাৎ হয়ে শুয়ে পড়লে শরীর ঢিলে হয়ে যায়। [ফলে বাতকর্ম হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে] (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-২৩১৫, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-২০২)

থুতুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বেশি হওয়া।
  হাসান বসরী রাদিয়াল্লাহু আনহু তিনি বলেছেন, তবে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লে ভেঙ্গে যাবে, কেননা চিৎ বা কাৎ হয়ে শুয়ে পড়লে শরীর ঢিলে হয়ে যায়। [ফলে বাতকর্ম হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে] (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-২৩১৫, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-২০২)

 মুখ ভরে বমি করা।
হযরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তির বমি হয়, অথবা নাক দিয়ে রক্ত ঝরে, বা মজি (সহবারের আগে বের হওয়া সাদা পানি) বের হয়, তাহলে ফিরে গিয়ে অজু করে নিবে। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১২২১]

 পুঁজ  রক্ত ও পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা.)-এর যখন নাক দিয়ে রক্ত ঝড়তো, তখন তিনি ফিরে গিয়ে অজু করে নিতেন। [মুয়াত্তা মালিক-১১০]

পেশাব পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হওয়া।
পেশাব পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হওয়া। যেমনঃ বায়ু, প্রসাব পায়খানা, ইত্যাদি।
পবিত্র কোআনে ইরশাদ হয়েছে, ‌তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসলে (নামাজ পড়তে পবিত্রতা অর্জন করে নাও) (সুরা মায়িদা-৬) হযরত আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। 

নিশ্চয় রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, শরীর থেকে যা কিছু বের হয়, তার কারণে অজু ভেঙে যায়...।` (সুনানে কুবরা লিলবায়হাকি, হাদিস নং-৫৬৮)
এই হল আমাদের ওযু ভঙ্গের কারণসমূহ ।

ওযুর ফজিলত সমুহ জেনে নিনঃ

অজু হলো নামাজের চাবি।  নামাজ হলো  বেহেশতের চাবি। অজু নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি ফজিলত জেনে নিন। ওযুর ফজিলত  সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর অসংখ্য হাদিস থেকে একটি তুলে ধরা হলো—
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন আমার উম্মত।কেয়ামতের দিন আমার নিকট উপস্থিত হবে। আর আমি লোকদেরকে তা থেকে হাউস এমনভাবে বিতাড়িত করবো যেভাবে কোনো ব্যক্তি তার উটের পাল থেকে অন্যের উটকে বিতাড়িত হবে।

 লোকেরা বলল হে রাসুল আপনি কি আমাদেরকে চিনতে পারবেন, জবাবে তিনি বললেন হ্যাঁ।  তোমাদের 1 নির্দশন হবে অন্য কারো হবে না। ওযুর প্রভাবে তোমাদের মুখ মণ্ডল ও হাত-পায়ের উজ্জলতা ছড়িয়ে পড়বে। উজ্জল জ্যোতি বিচিত্র হওয়া অবস্থায় তোমরা আমার নিকট উপস্থিত হবে। আর তোমাদের একদল লোককে জোর করে আমার থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। 

ফলে তারা আমার কাছে পৌঁছাতে পারবে না। তখন আমি বলব হে আমার রব এরাতো আমার লোক। ফেরেশতারা আমাকে বলবে আপনি জানেন না আপনার অবর্তমানে তারা কি কি নতুন কাজ  বিদা'আত করেছেন। বুখারী ও মুসলিম

অজু করা ব্যক্তিদেরকে আল্লাহতালা ভালোবাসেন

 অজু হল আমাদের পবিত্রতা আর পবিত্র অর্জনকারী কে মহান আল্লাহ তাআলা অনেক ভালোবাসেন
ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻳُﺤِﺐُّ ﺍﻟﺘَّﻮَّﺍﺑِﻴﻦَ ﻭَﻳُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻤُﺘَﻄَﻬِّﺮِﻳﻦَ “নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তওবাকারীদের এবং পবিত্রা অর্জন কারীদেরকে ভালবাসেন। ” (সূরা বাকারাঃ ২২২) ২) পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গঃ রাসুল (সঃ)  বলেছেনঃ ﺍﻟﻄُّﻬُﻮﺭُ ﺷَﻄْﺮُ ﺍﻹِﻳﻤَﺎﻥِ“পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। ” (মু

যে সময়ে আয়াতুল কুরসি পাঠ করবেন ঋণ থেকে মুক্তি পেতে মহানবী (সা.) যে দোয়া পড়তে বলেছেন ৩) ওজু কারীর জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হয়ঃ 

যেমন -রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি সুন্দর ভাবে ওযু করবে অত:পর ওজুর শেষে নিম্ন বর্ণিত দুআ পাঠ করবে তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেয়া হবে, সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে। ” দু’আটির 

বাংলা উচ্চারণ- “আশহাদুআল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু। আল্লাহুম্মাজআলনী মিনাত্ তাওয়্যাবীনা ওয়াজআলনী মিনাল মুতাত্বহহিরীন। 

 (তিরমিযী) 
৪) ওজু কারীর জন্য জান্নাতের সুসংবাদঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “যে কোন ব্যক্তি সুন্দর ভাবে ওজু করে, একনিষ্ঠতার সাথে দুরাকাআত নামায আদায় করে তার জন্যে জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। ”
 (মুসলিম) 
৫) ওজু এক নামায হতে অন্য নামাযের মধ্যে সংঘঠিত গুনাহের কাফফারাহ স্বরূপঃ রাসুল (সঃ) এরশাদ করেনঃ ﻣَﻦْ ﺃَﺗَﻢَّ ﺍﻟْﻮُﺿُﻮﺀَ ﻛَﻤَﺎ ﺃَﻣَﺮَﻩُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻓَﺎﻟﺼَّﻠﻮَﺍﺕُ ﺍﻟْﻤَﻜْﺘُﻮﺑَﺎﺕُ ﻛَﻔَّﺎﺭَﺍﺕٌ ﻟِﻤَﺎ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻦَّ “যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী পরিপূর্ণ ভাবে অযু সম্পাদন করে, (তার জন্য) ফরয নামাযগুলোর মধ্যবর্তী সময়ে সংঘঠিত গুনাহের কাফ্ফারা হয়ে যায়। ” (মুসলিম) 
৬) ওজুর মাধ্যমে গুনাহ দূর হয়ঃ আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল (সঃ) বলেছেন: “যখন একজন মুসলিম বা মু’মিন ব্যক্তি অযু করে, সে যখন তার চেহারা ধৌত করে পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুর সাথে তার চেহারার গুনাহ সমূহ দূর হয়ে যায় যা তার দৃষ্টি দ্বারা হয়েছে। 

এমনিভাবে সে যখন তার দুহাত ধৌত করে তার হাতের গুনাহ সমূহ যা হাত দিয়ে ধরার মাধ্যমে করেছে তা পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুর সাথে দূর হয়ে যায়। আবার যখন দু’পা ধৌত কওে পায়ের গুনাহ সমূহ যা পা দিয়ে চলার মাধ্যমে হয়েছে তা পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুর সাথে দূর হয়ে যায়। শেষ পর্যন- সে গুনাহ হতে সম্পূর্ণ পবিত্র হয়ে যায়। (মুসলিম)

 ৭) ওজুর অংগ প্রত্যংগ গুলো কিয়ামতের দিন আলোকিত হবেঃ 
আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত তিনি বলেন, সাহাবাগণ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার উম্মত যারা আপনার পরে আসবে তাদেরকে আপনি কিভাকে পরিচয় পাবেন? তিনি বললেন”“আমার উম্মতগণ কিয়ামতের দিন অযুর স্থানগুলো আলোকীত অবস্থায় উপস্তিত হবে। ” (মুসলিম)
 ৮) ঘুমানোর পূর্বে ওজু করা দুআ কবুল হওয়ার কারণঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কোন মুসলিম ব্যক্তি যখন ওজু করে নিদ্রায় যায়, রাত্রিতে জেগে দুনিয়া এবং আখেরাতের কোন কল্যাণের দুআ করলে দুআ কবুল করা হয়। ” (নাসাঈ)সলিম)


শাহীন

আমি শাহীন । পেশায় একজন ব্যবসায়ী । পাশাপাশি অনলাইনে কাজ করতে পছন্দ করি। আশা করছি আমার শেয়ারকৃত তথ্য থেকে আপনারা উপকৃত হচ্ছেন আর তা হলেই আমার পরিশ্রম স্বার্থক।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads