কৃষিনির্ভর এই দেশের সিংহভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে। আমরা অনেকেই অভাবের তাড়নায় অথবা কর্মের সন্ধানে ঢাকা শহরে চলে আসি আবার অনেকে বিদেশে পাড়ি জামাই। সবকিছুর পেছনে মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্থ উপার্জন করা। গ্রাম থেকে ঢাকা অথবা গ্রাম থেকে বাংলাদেশের বাইরে অন্য কোন দেশে চলে যাওয়ার একটাই কারণ সেটা হচ্ছে কিভাবে অনেক অর্থ উপার্জন করা সেই অর্থ দিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করা যায়।
অনেক ক্ষেত্রে আমরা এভাবে গ্রাম ছেড়ে কোথাও থেকে পরিবারকে একটা অংকের টাকা পাঠাতে পারি এবং তারা সুখে-শান্তিতে জীবন কাটাতে পারে। যদি আপনার গ্রাম ছাড়তে অথবা বাড়ি ছাড়তে মন না টানে । তাহলে আপনি কি করবেন? আবার অনেকেই বাড়ি ছেড়ে অনেকদিন প্রবাসে অথবা দূরের শহরে বসবাস করতে করতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। ভাবছেন আহা যদি একেবারে চলে যেতে পারতাম। তাহলে বাবা-মা, বউ-বাচ্চা সবার সাথে একসঙ্গে সুখে শান্তিতে থাকতে পারতাম।
আরো পড়ুনঃ
মনের কোনায় সবসময় একটা চিন্তা কাজ করে যে, গ্রামে গেলে কি করে খাব। সেখানে তো কর্মের বড় অভাব। কি সত্যিই আপনি যদি এমনটি ভেবে থাকেন তাহলে বলব যেখানে গ্রামে শতাংশ বসবাস করছে সেখানে সবাই কিছু না কিছু কর্ম করে চলছে। একটু বুদ্ধি খাটিয়ে একটু পরিশ্রম নিয়ে ওরা যদি চলতে পারি তাহলে গ্রামেও অনেক কিছু করা রয়েছে। চলুন আজ আমরা দেখে নেই গ্রামে বসে কি এমন ব্যবসা করা যেতে পারে যেটার মাধ্যমে নিজের ভাগ্য বদল হবে।
১. মাছ চাষের সাথে হাঁস মুরগি পালন
আপনি হয়তো এই ব্যবসাতে সাথে পরিচিত কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটাই প্রয়োগ করে দেখেন নি। আপনি আপনার চারপাশে খেয়াল করলে দেখবেন যারা পুকুরে মাছ চাষ করে তারা শুধুমাত্র মাছই চাষ করে । একটু পরিশ্রম করে যদি আমরা সেই পুকুরের উপর মাচা তৈরি করে হাঁস মুরগি পালনের ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে এখান থেকে এক্সট্রা ইনকাম আসবে। একই জায়গায় আপনি দুইটি ব্যবসা করতে পারছেন।তাহলে যদি আপনি একটি পুকুরের মালিক হন এবং সেখানে মাছ পালন করেন তাহলে বলব এখনই এই পরিকল্পনাটি কাজে লাগাতে পারেন।
২. স্টেশনারি বা লাইব্রেরী ব্যবসা
শহরে যেমন প্রচুর স্কুল রয়েছে এবং সেগুলোতে প্রচুর শিক্ষার্থীও রয়েছে। কিন্তু গ্রামে একটা সময় এত শিক্ষার্থী বা স্কুল ছিল না। কিন্তু এই আধুনিক যুগে গ্রাম এবং শহরের তেমন একটা পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না । অর্থাৎ গ্রামেও এখন শিক্ষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। সেই হিসেবে গ্রামেও এখন প্রচুর কিন্ডারগার্টেন স্কুল চালু হচ্ছে। এর ফলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে আর এটাকে ব্যবহার করে অনেকের ব্যবসা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রামে স্টেশনারী বিজনেস এতটা প্রচলিত নয়। সাধারণত গ্রামের ছেলে মেয়েরা স্টেশনারি পণ্য কেনার জন্য বড় বড় বাজারে চলে যায়। আপনি চাইলে আপনার গ্রামে একটি স্টেশনারি ব্যবসা বা দোকান চালু করতে পারেন। স্টেশনারি পণ্য এখন বিপুল সংখ্যক ক্রেতার রয়েছে।
৩. পোল্ট্রি খামারের ব্যবসা
বাংলাদেশে সব শ্রেণীর মানুষের পুষ্টির নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য পোল্ট্রি খামারের ব্যবসার প্রচলন আরো আগেই শুরু হয়েছে। এই পোল্ট্রি খামারের ব্যবসা করে গ্রামের অনেক লোকেরাই স্বাবলম্বী হচ্ছে। সামান্য একটু প্রশিক্ষণ এবং পরিশ্রমের মানসিকতা থাকলেই আপনি এই খাতে ব্যবসা করে প্রচুর অর্থের মালিক হতে পারেন। অনেক সময় আপনাকে বিভিন্ন ডিলাররা বিনামূল্যে মুরগির বাচ্চা প্রদান করবে সেগুলো পালন করে দিবেন বিনিময়ে তারা আপনাকে মোটা অঙ্কের মুনাফা দেবে। যেটা হয়তো অনেকেরই জানা আছে।
একটা বিষয় হয়তো খেয়াল করবেন বর্তমান সময়ে মাছের চেয়ে পোল্ট্রি মুরগির দাম কম ফলে লোকেরা পোল্ট্রি মুরগি মাছের তুলনায় বেশি ক্রয় করছেন। এর ফলে যেমন ক্রেতা বৃদ্ধি পাচ্ছে সাথে সাথে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাথে সাথে বাংলাদেশের যে পুষ্টির অভাব তা পূরণ হচ্ছে ।
৪.বিউটি পার্লারের ব্যবসা
বাংলাদেশের শহর এলাকা গুলোতে বিউটি পার্লার এর পরিমাণ একটু বেশি দেখা যায় কিন্তু গ্রামের সেই হারে বিউটিপালার দেখা যায় না। অর্থাৎ ব্যবসার প্রচলন এখনো শুরু হয়নি। আপনি চাইলে যে গ্রামে বসবাস করছেন সেই গ্রামে বিউটি পার্লার চালু করে আপনার আশেপাশের কয়েকটা গ্রামে প্রচার চালিয়ে
ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। শহরের মতো এখন বিভিন্ন অকেশনে সাজতে পছন্দ করে। সাজগোজের দিক থেকে গ্রামের মেয়েরাও এখন অনেকটাই এগিয়ে আছে। বিবাহ অনুষ্ঠান, বিবাহ বার্ষিকী, জন্মদিনের অনুষ্ঠান গুলোতে অংশগ্রনের জন্য মেকআপ করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে । কিন্তু খুব কম সংখ্যক মেকআপ করার কৌশল জানে। যদি আপনি আপনার এলাকায় একটি বিউটি পার্লার করতে পারেন তাহলে খুব সহজেই তাদের আকৃষ্ট করতে পারবেন। অনেক ক্ষেত্রে শহরের তুলনায় বেশি ইনকাম করতে পারবেন।
ব্যবসাটি প্রচারের উদ্দেশ্যে আপনি চাইলে ভিজিটিং কার্ড বানিয়ে সেগুলো আপনার এলাকার প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে মিলাতে পারেন। তাহলে বিভিন্ন বিবাহ অনুষ্ঠানে তারা আপনাকে তাদের বাড়িতে দাওয়াত করে নিয়ে যাবে। এভাবে আপনি প্রতিদিনই কোন না কোন বাড়ি থেকে ডাক পাবেন। এছাড়াও আপনি আপনার দোকানে তো নিয়মিত কাস্টমার পাবেনই।
৫. ফ্লেক্সিলোড এবং বিকাশের দোকান
গ্রামে বসে একটা ব্যবসা করলে অনেক সময় অল্প টাকা আয় করলেও সেটা পর্যাপ্ত মনে হয় কেননা শহরে বসবাসের জন্য যে পরিমাণ খরচ এর প্রয়োজন হয় গ্রামে অনেক ক্ষেত্রে খরচের পরিমাণ কম। আপনি চাইলে আপনার গ্রামের বাজারে একটি ফ্লেক্সিলোড এবং বিকাশের দোকান খুলে ব্যবসা করতে পারেন। যদি এমন হয় যে আপনার বাড়ির পাশের বাজারটিতে ফ্লেক্সি লোড বিকাশের দোকান নেই তবে আজই এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন।
বাংলাদেশের 16 কোটি মানুষের হাতে হাতে এখন মোবাইল ফোন। প্রত্যেকেই একের অধিক সিম ব্যবহার করে। আপনি যদি ইন ব্যবসা শুরু করবেন প্রতিদিনই বুঝতে পারবেন আসলে ব্যবসায় লাভের পরিমাণ কেমন। ফ্লেক্সিলোডের দোকানে আপনি চাইলে মোবাইল ফোনের অ্যাক্সেসরিজ পণ্যগুলো রাখতে পারেন যেমন: হেডফোন, ব্যাটারী, চার্জার, মোবাইল কেস, মোবাইল কভার ইত্যাদি।
৬. কৃষি পণ্যের পাইকারী ও খুচরা ব্যবসা
যেহেতু আমাদের দেশ কৃষি নির্ভর দেশে হত কৃষি নিয়ে ব্যবসা করার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। অনেকেই কিসের উপর নির্ভর করে বেশ সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করছে। আমরা যারা গ্রামে বসে ব্যবসা করার আইডিয়া খুঁজছি তারা চাইলে কৃষি পন্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারি। আপনি হয়তো খেয়াল করবেন গ্রাম থেকে একটা জিনিস শহর পর্যন্ত আসতে আসতে এটার দাম প্রায় 10 গুণ বৃদ্ধি পায়। এই যে গ্রাম থেকে শহরে আসতে আসতে দাম বৃদ্ধি পেয়ে গেল এটার কারণ কি? কারণ যিনি ফসল উৎপাদন করেন তিনি সরাসরি ঢাকা শহরে পণ্যটি নিয়ে আসেন না। বরং একজন কৃষকের হাত থেকে প্রায় দুই তিনটা হাত বদল হওয়ার পর শহরের মানুষের হাতে পৌঁছায়। মাঝখানে যারা ছিল তারা কিন্তু এখান থেকে একটা মোটা অংকের অর্থ ব্যবসা করেছে।
আরো পড়ুন:
আপনি চাইলে এক গ্রামে বসে বিভিন্ন কৃষি পণ্যের পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসা শুরু করতে পারেন। কৃষকের ফসলের জমি থেকে সরাসরি পণ্য সংগ্রহ করে সেগুলো ঢাকা শহরে নিয়ে এসে বিক্রি করে ভালো অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। অথবা সরাসরি কৃষকের কৃষি পণ্য আপনার পাইকারি পাইকারি দরে বিক্রি অথবা খুচরা দরে বিক্রি করতে পারেন।
৭.গ্রামে বসে চা পাতার ব্যবসা করুন
শহরে যেমন তার চা পাতার ব্যবসা খুব জনপ্রিয় ঠিক তেমনি ভাবে গ্রামেও কিন্তু চা পাতার ব্যবসা বেশ জনপ্রিয়। আপনি হয়তো খেয়াল করবেন গ্রামের প্রতিটি মানুষ সারাদিন কাজ শেষে বাজারে যে চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেয়। গ্রামের লোকেরা শহরের লোকেদের তুলনায় বেশি চা খায়। গ্রামের বাজারগুলোতে অন্যান্য দোকানের তুলনায় চায়ের দোকানের পরিমাণ বেশি । যেহেতু চায়ের দোকানের পরিমাণ বেশি সেহেতু আমরা চাইলে এই চায়ের দোকানগুলোতে চা পাতা সাপ্লাই দিতে পারি। ছোটখাটো একটি বেনামী চা পাতা কোম্পানির কাছ থেকে ডিলারশিপ নিয়ে আপনি ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। এখান থেকে ইনকাম হবে তা অন্যান্য ব্যবসার তুলনায় কোন অংশে কম নয়।
৮. সাইকেল রিক্সার গ্যারেজ এর ব্যবসা
শহরের মত গ্রামে সাইকেল গ্যারেজ এর ব্যাপক প্রচলন রয়েছে ।আমরা চাইলে গ্রামে একটি সাইকেল অথবা রিক্সা মেরামতের গ্যারেজ স্থাপন করে ব্যবসা করতে পারি। এই কাজটি করার জন্য তেমন একটা অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় না। সামান্য কিছু প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকলেই আপনি এই ব্যবসাটি করতে পারবেন। এটি একটি হাতের কাজ অর্থাৎ আপনি কাজ করে টাকা নেবেন। কাজ করে টাকা নেয়ার পাশাপাশি আপনার গ্যারেজে আপনি সাইকেল রিক্সার খুচরা যন্ত্রপাতি গুলো রাখতে পারেন। যেমন: টায়ার, টিউব, ব্রেক শো, বেয়ারিং ইত্যাদি । সাইকেল রিক্সা মেরামত করে টাকা তো পাবেনই সাথে সাথে এই সকল খুচরা যন্ত্রপাতি বিক্রি করেও ভালো ইনকাম করা যাবে ।
৯. চায়ের দোকানের ব্যবসা
একটু আগেই বলেছি যে, শহরের মতো গ্রাম এলাকাতেও চায়ের দোকান এর প্রচলন রয়েছে। তবে আমার মনে হয় শহরের চেয়ে বরং গ্রামের লোকেরা চায়ের দোকানে বেশি আড্ডা দেয়। সারাদিন কৃষি জমিতে কাজ শেষ করে রাতের বেলা যখন কোন কাজ না থাকে তখন চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকেনা। তাইতো গ্রামে বসে ব্যবসা করার জন্য চায়ের দোকান হতে পারে একটি বেস্ট আইডিয়া। যেহেতু চায়ের দোকান করার জন্য তেমন একটা পুঁজির প্রয়োজন হয় না তাই আমরা যারা অল্প পুঁজির ব্যবসা করার চিন্তা ভাবনা করছি তারা এই ব্যবসা শুরু করতে পারি।