হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে তা জানা আমাদের প্রত্যেকেরই দরকার । তাই আজকে আমরা আলোচনা করব হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমবেশি কারণে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা অসুবিধা রয়েছে। যদি রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বেশি থাকে সেক্ষেত্রে কিছু সুবিধা রয়েছে আবার কিছু অসুবিধা রয়েছে আবার যদি রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম থাকে সে ক্ষেত্রে অসুবিধা রয়েছে। তো চলুন জেনে নেয়া যাক হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে।
হিমোগ্লোবিন কম থাকার অর্থ কী?
হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে জানার আগে জানব হিমোগ্লোবিন কম থাকার অর্থ কি? রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গে অক্সিজেন কম পৌঁছয়। ফলে দেখা যায় ক্লান্তি, দুর্বলভাব, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, হার্টের দ্রুত স্পন্দন, ফ্যাকাসে ত্বকের মতো উপসর্গ। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা হ্রাস পাওয়ার সমস্যাকে বলে ‘অ্যানিমিয়া’ বা ‘রক্তাল্পতা’।
আরো পড়ুনঃ
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
ক্লান্তি, দুর্বলভাব, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, হার্টের দ্রুত স্পন্দন, ফ্যাকাসে ত্বকের মতো উপসর্গগুলির মধ্যে একটি বা দু’টি দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ‘সিবিসি’ বা ‘টোটাল ব্লাড কাউন্ট’ পরীক্ষাটি করালেই রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বোঝা যায় সহজে।
হিমোগ্লোবিন কম হওয়ার কারণ
মহিলা: একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার প্রতি ডেসিলিটার রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা ১২ থেকে ১৬ গ্রাম।
রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে করণীয়
ফলিক অ্যাসিড
ফলিক অ্যাসিড একপ্রকার ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। এটি লাল রক্তকণিকা তৈরিতে প্রয়োজনীয় উপাদান। সবুজ পাতাযুক্ত সবজি, কলিজা, ভাত, শিমের বিচি, বাদাম, কলা, সবুজ ফুলকপিতে অনেক ফলিক অ্যাসিড পাওয়া যায়।
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার
আয়রনের অভাবে হিমোগ্লোবিন কমে যায়। তাই এ সময় আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। মুরগির লিভার, ডিম, আপেল, বেদানা, ডালিম, তরমুজ, কুমড়োর বীজ, খেজুর, জলপাই, কিশমিশ খেলে হিমোগ্লোবিন বাড়ে ।
ভিটামিন সি
ভিটামিন সি ভিটামিনের অভাবে হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে। আবার ভিটামিন সি ছাড়া আয়রনের শোষণ সম্ভব হয় না। পেঁপে, কমলালেবু, স্ট্রবেরি, গোলমরিচ, সবুজ ফুলকপি, আঙুর, টমেটো, টক ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি খেলে হিমোগ্লোবিন বাড়ে ।
ফল
হিমোগ্লোবিনের অভাব দেখা দিলে ফল খেতে পারেন। স্ট্রেবেরি, আপেল, তরমুজ, পেয়ারা ও বেদানার মতো ফল হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখে। এই ফলগুলো খেলে হিমোগ্লোবিন বাড়ে ।, তেমনই একাধিক শারীরিক ঘাটতি পূরণ হবে। ডাক্তারা প্রতিদিন একটি করে ফল খাবার নির্দেশ দিয়ে থাকেন সকলকে।
শুকনো ফল
খেতে পারেন শুকনো ফল।শুকনো ফল খেলে হিমোগ্লোবিন বাড়ে ।খেজুর ও কিসমিস একত্রে আয়রন ও ভিটামিন সি-এর উপযুক্ত উৎস। অন্যদিকে ডুমুরে রয়েছে যথেষ্ট মাত্রায় আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন এ এবং ফোলেট। প্রতিদিন সকালে তিনটি করে খেজুর, একমুঠো কিসমিস ও শুকনো ডুমুর মিশিয়ে খেলে রক্তাল্পতার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। শরীরে এনার্জিও থাকে চূড়ান্ত। তবে ডায়াবেটিকরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ধরনের খাবার খাবেন না। কাজু, কিসমিস, খেঁজুর খান। এতে রয়েছে আয়রন ও ভিটামিন।
বেদানা
এই ফলটি আয়রন, ক্যালসিয়াম, শর্করা, ফাইবারে সমৃদ্ধ। বেদানা দেহে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। প্রতিদিন একটি বেদানা খান। এমনকি বেদনার জুস পান করলেও সুফল পেতে পারেন।
আপেল
দিনে একটি করে আপেল খেয়ে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে পারেন। আয়রনের উৎস আপেলে আরও নানা প্রকার পুষ্টি উপাদান রয়েছে। প্রতিদিন খোসাসহ একটি আপেল খান। অথবা সমানুপাতে আপেল ও বিটের রস মেশাতে পারেন।
ডালিম
আয়রন, ক্যালসিয়াম, শর্করা ও আঁশ (ফাইবার) সমৃদ্ধ ডালিম রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে দেহে রক্ত চলাচল সচল রাখে। প্রতিদিন মাঝারি আকৃতির একটি ডালিম খাওয়ার চেষ্টা করুন। অথবা এক গ্লাস ডালিমের জুস খান। ডালিমের জুস খেলে হিমোগ্লোবিন বাড়ে ।
ছোলা, সয়াবিন ও বিনস
রোজকার খাদ্যতালিকায় রাখুন ছোলা, সয়াবিন ও বিনস জাতীয় খাবার। এগুলো শরীরের জন্য বেশ উপকারী। এই সকল খাবারে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস সবই থাকে। যা শরীরের সকল ঘাটতি পূরণ করে। সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। রোজ এই ধরনের খাবার ফেলে একদিকে যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে।
বাদাম
বাদাম খেলে হিমোগ্লোবিন বাড়ে। চীনা বাদাম, কাজু বাদাম, আখরোট খান রোজ। এতে রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়বে। সুস্থ থাকতে বাদাম খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
সবজি
নিয়মিত সবজি খান।সবজি খেলে হিমোগ্লোবিন বাড়ে । শরীরের একাধিক ঘাটতি কমাতে আলু, ব্রকলি, টমেটো, কুমড়ো খান। এগুলো শরীরের জন্য উপকারী।
ডার্ক চকোলেট
ডার্ক চকোলেট খাওয়াও উপকারী। ডার্ক চকোলেট খেতে পারেন। ডার্ক চকোলেচ খেলে হিমোগ্লোবিন বাড়বে রক্তে। রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য এটা উপকারী। এটি খেলে স্ট্রেস দূর হবে।
ওটস ও বার্লি
খেতে পারেন ওটল ও বার্লি। এগুলো খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এতে কার্বোগাইড্রেটস ও আয়রন আছে। যা স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। বার্লির শরবত বানিয়ে খেতে পারেন। এমনকী খেতে পারেন ওটসের খিচুড়ি। তাছাড়া, দুধ দিয়ে ওটস বানিয়ে খেলেও উপকার পাবেন।
ডিম
রোজ একটি করে ডিম খান। ডিম খেলে হিমোগ্লোবিন বাড়ে ।সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ডিম খাওয়া জরুরি। এতে হাই প্রোটিন ও আয়রন আছে। থাকে খনিজ ও ভিটামিন। যা একাধিক রোগ থেকে রক্ষা করে সকলকে। তাই রোজ সকালে একটা করে ডিম খান।
বীট
নিয়মিত বীট খান। এই সময় বাজারে বীট পাওয়া যায়। এতে প্রচুর পরিমানে পটাসিয়াম, ফাইবার, ফলিক অ্যাসিড ও আয়রন আছে। এগুলো আমাদের শরীরে লোহিত রক্ত কনিকার মাত্রা বাড়ায়। ফলে বাড়ে হিমোগ্লোবিন। তাই রোজ খান বীট। বীটের জুস খেতে পারেন। খেতে পারেন বীট সেদ্ধ।
বীটরুট
প্রাকৃতিকভাবেই বীটরুটে প্রচুর পরিমাণে লোহা রয়েছে। এছাড়া আছে ম্যাগনেশিয়াম, তামা, ফসফরাস, ভিটামিন বি১, বি২, বি৬, বি১২ এবং ভিটামিন সি। এই ধরনের সব্জি পূর্ণ রয়েছে খনিজ সম্পদ ও ভিটামিন দ্বারা। ফলে নিয়মিত সব্জিগুলি খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। একইসঙ্গে রক্তে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যাতেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়।
সজিনা পাতা
জিঙ্ক, লোহা, তামা, ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজ সহ ভিটামিন এ, বি, সি দ্বারা পূর্ণ সজিনা পাতা। সজিনা শাক প্রতিদিন ভাতের সঙ্গে খাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট বেশি।
সবুজ শাকসব্জি
হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে যদি জনতে চান তহলে বলব। পালং, সর্ষে, ব্রকোলির মতো শাকসব্জিও আয়রনে পূর্ণ। এছাড়া ভিটামিন বি১২, ফোলিক অ্যাসিডও রয়েছে পর্যাপ্ত মাত্রায়। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে চাইলে শাকসব্জিগুলি পাতে রাখা যায়। ব্রকোলির কথা একটু আলাদা করে বলতে হয়। কারণ এই সব্জিতে রয়েছে আয়রন এবং বি কমপ্লেক্স ভিটামিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ফোলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেশিয়াম। একটা কথা মনে রাখতে হবে, সবুজ শাকসব্জিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা হজমে সাহায্য করে। ক্যালোরি কম থাকায় বেশি মাত্রায় খেলেও ওজন বাড়ে না। সবচাইতে বড় কথা, ডায়াবেটিকরা নিশ্চিন্তে শাকসব্জি খেতে পারেন।
তিল
কালো তিলে রয়েছে আয়রন, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, কপার, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম এবং ভিটামিন বি৬, ই এবং ফোলেট।
একটা বাটিতে ১টেবিল চামচ তিল নিয়ে সারা রাত জলে ভিজিয়ে পরদিন সকালে খালি পেটে খেয়ে নিলে রক্তাল্পতার সমস্যা মেটে। এমনকী মধু দিয়ে তিলের নাড়ু করে খেলেও উপকার মেলে। চাইলে ওটমিল এবং ইয়োগার্টেও মিশিয়ে খাওয়া যায় রোস্টেড তিল বীজ।
মাংস
রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ দ্রুত বাড়াতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত প্রাণিজ প্রোটিন। সকল ধরনের লাল মাংস; যেমন গরুর মাংস, খাসির মাংস এবং কলিজা আয়রনের সবচেয়ে ভালো উৎসগুলোর একটি। আয়রন হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্য জরুরি। মুরগির মাংস লাল মাংস না হলেও তাও দেহকে বিশাল পরিমাণে আয়রন সরবরাহ করতে পারে।
সামুদ্রিক খাদ্য
সামুদ্রিক খাদ্যে আয়রন এবং অন্যান্য খনিজ পুষ্টি উপাদান আছে প্রচুর পরিমাণে। সুতরাং অ্যানিমিয়া বা রক্তশুন্যতার রোগীদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অয়েস্টার, ক্লামস এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর সামুদ্রিক খাদ্য রাখতে হবে
কলাই বা শুটিজাতীয় খাদ্য
সয়াবিন, ছোলা এবং বিনজাতীয় খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। সয়াবিন বর্তমানে সবজিভোজীদের জনপ্রিয় একটি খাদ্য। এ থেকে সুস্বাদু সব খাবার তৈরি হয় এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায় দ্রুতগতিতে।
পুর্ণশস্যজাতীয় খাদ্য
চাল, গম, বার্লি এবং ওটস রক্তশুন্যতায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য চমৎকার আয়রন সমৃদ্ধ খাবার। এসব খাবার প্রয়োজনীয় কার্বোহাইড্রেটসও সরবরাহ করে। লাল চাল বিশেষ করে সব বয়সীদের জন্যই আয়রনের একটি সমৃদ্ধ উৎস বলে গণ্য হয়।
আলু
আলু শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে ,শরীরে হিমোগ্লোবিনের অভাব হলে আলু খাওয়া উচিত। এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ভিটামিন-সি থাকে। তাই আলু শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
আয়রনরোধী খাদ্য নয়
শুধু আয়রনসমৃদ্ধ খাদ্য খেলেই হবে না, তার সঙ্গে এমন কিছু খাদ্যগ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে যেগুলি শরীরে আয়রন প্রবেশকে আটকায়। অর্থাৎ পলিফেনলস, ট্যানিন, ফাইটেটস এবং অক্সালিক অ্যাসিডযুক্ত খাদ্যগ্রহণ এড়িয়ে চলতে হবে। তাই চা, কফি, কোকো, সয়া প্রোডাক্ট, ওয়াইন, বিয়ার, কোলাজাতীয় খাদ্য, অ্যালকোহল গ্রহণ সম্পূর্ণভাবে বাদ দিতে হবে।
লৌহযুক্ত খাবার
শরীরে লৌহের ঘাটতি হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে লোহা গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। লৌহসমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে মুরগির কলিজা, ঝিনুক, ডিম, আপেল, বেদানা, ডালিম, তরমুজ, কুমড়ার বিচি, খেজুর, জলপাই, কিশমিশ ইত্যাদি।
হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে সম্পর্কে শেষ কথা
স্বাস্থ্য মানুষের সবচাইতে মূল্যবান সম্পদ। নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। থাকুন সুস্থ থাকুন নিরাপদ থাকুন। উপরে আমরা হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আপনি বুঝতে পেরেছেন হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে। যদি হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টে জানাতে পারেন।