ডিজিটাল মার্কেটিং কি?
এক কথায় ডিজিটাল মার্কেটিং হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করে পণ্য বা সেবা সমূহকে গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছানো।আগেকার দিনে কোন কোম্পানি তাদের পণ্য সমূহকে বিক্রি করার জন্য বিভিন্ন মার্কেটারদের কে নিয়োগ দিতেন। তারা গ্রাহক পর্যায়ে গিয়ে উক্ত পণ্যের গুনাগুনগুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতেন এবং গ্রাহকদেরকে তা কেনার জন্য আকৃষ্ট করতেন। বর্তমানে সেই কাজটিই তথ্যপ্রযুক্তি এবং ইন্টারনেটের কল্যাণে অনলাইনেই করা হয় যেটাকে ডিজিটাল মার্কেটিং বলে।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর সুবিধা
খুব সহজে বিশাল অডিয়েন্সের কাছে পোঁছানো যায় বলে ডিজিটাল মার্কেটিং অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এছাড়াও ডিজিটাল মার্কেটিং এর আরো অনেক সুবিধা বিদ্যমান, চলুন জেনে নেওয়া যাক ডিজিটাল মার্কেটিং এর উল্লেখযোগ্য সুবিধাসমূহ সম্পর্কে।
বিশ্বব্যাপী রিচ
কোনো বিজ্ঞাপন যখন গ্লোবালি টার্গেট করে অনলাইনে পোস্ট করা হয়, তখন বিশ্বের সকল প্রান্তের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীগণ উক্ত বিজ্ঞাপন দেখতে পাবেন। কোনো ব্যবসাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে এই বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
খরচ সাশ্রয়
ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে বিস্তৃত অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায় অনেক কম খরচে। কোনো টিভি বা পেপারে এড দিলে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, সেই তুলনায় কম অর্থ খরচ করে একই বিজ্ঞাপন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া যায় ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবহার করে। তবে সময়ের সাথে সাথে চাহিদা বাড়ায় ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের খরচও বাড়ছে।
আরো পড়ুনঃ
নির্ভরযোগ্য ফলাফল
ডিজিটাল মার্কেটিং এর সবচেয়ে বড় একটি সুবিধা হলো এর থেকে প্রাপ্ত ফলাফল ব্যবহার করে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা যায়। নন-ডিজিটাল মাধ্যমে এই ফলাফল পরিমাপ করে বুঝেশুনে আগানোর কোনো উপায় নেই। অনেকটা অনুমানের উপর থেকে যায় ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এর ফলাফল।ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবহার করে কাস্টমারের পছন্দ, বিহেভিয়র, এক্টিভিটি, ইত্যাদি জানা যায় বেশ সহজে। আবার এই ডাটা পরবর্তী ক্যাম্পেইনে ব্যবহার করে কনভার্সন রেট বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎ ডিজিটাল মার্কেটিং থেকে প্রাপ্ত ডাটা বেশ নির্ভরযোগ্য ও কাজে লাগানো সম্ভব।
পারসোনালাইজেশন
ডিজিটাল মার্কেটিং এর সবচেয়ে সেরা বিষয় হতে হবে পারসোনালাইজেশন এর সুবিধা। ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে টার্গেটেড অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায় তুলনামূলক সহজে। অর্থাৎ আপনার প্রোডাক্টের পোটেনশিয়াল কাস্টমারের কাছে সহজে পোঁছে যেতে পারবেন ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে। সকল গুরুত্বপূর্ণ ডাটা আপনার হাতের নাগালে থাকায় স্বল্প খরচে টার্গেটেড অডিয়েন্স এর কাছে পোঁছানো যায় ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাহায্যে।
কাস্টমারের সাথে যোগাযোগ
ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে কাস্টমারের সাথে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইনের ক্ষেত্রে অডিয়েন্স এর লাইক, কমেন্ট, শেয়ার, ইত্যাদি বিবেচনা করে অডিয়েন্স আপনার প্রোডাক্টকে ব্যক্তিগতভাবে কিভাবে গ্রহণ করেছে, তা জানতে পারবেন। এভাবে কাস্টমারের সংযুক্ততা আপনার ব্র্যান্ডের ইমেজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
ঘরে বসে কিভাবে শিখবেন ডিজিটাল মার্কেটিং?
আপনাকে যদি একজন সফল ডিজিটাল মার্কেটার হতে হয় তাহলে আপনাকে অনলাইন ভিত্তিক সকল প্রযুক্তির সাথে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আপনি যদি এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকেন এবং জানেন যে এই প্লাটফর্ম গুলো কিভাবে ব্যবহার করা উচিত তাহলে কিন্তু আপনার কাজটা অনেক সহজ হয়ে গেল এর মাধ্যমে। আপনার ভেতর যদি কঠোর পরিশ্রম এবং ধৈর্য থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং কে নিজের আয়ত্তে আনতে পারবেন। তাছাড়া ডিজিটাল মার্কেটিং এর আরেকটি সুবিধা রয়েছে সেটি হলো আপনাকে ডিজিটাল মার্কেটিং এ দক্ষ হওয়ার জন্য কোন প্রতিষ্ঠানে কোর্স করতে হবে না।
ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে হলে আপনার মাঝে যে জিনিসটি সবার আগে থাকা প্রয়োজন, তা হলো প্রচুর পরিমাণে ব্লগ পড়া। প্রতিনিয়ত আপনাকে গুগলে সার্চ করতে হবে। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে মার্কেটিং এর নিত্য নতুন আপডেট সম্পর্কে জানতে হবে। আপনি গুগলে সার্চ করতে পারলে এই বিষয়ে পর্যাপ্ত ইনফরমেশন পেয়ে যাবেন খুব সহজেই, যেগুলো আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং শিখার জন্য যথেষ্ট।এজন্য আপনি মার্কেটিং রিলেটেড কিছু ব্লগ নিয়মিত ফলো করতে পারেন।
এখুনি সার্চ করে বের করে ফেলুন বিশ্বের সেরা কয়েকজন ডিজিটাল মার্কেটার দের। যার কথা না বললেই নয়, ডিজিটাল মার্কেটিং এ সফল হতে হলে নেইল প্যাটেল, যিনি বিশ্বের সেরা ডিজিটাল মার্কেটার, তাকে আপনার অবশ্যই ফলো করতে হবে। তাছাড়া বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন ভালো মানের মার্কেটার আছেন যারা নিয়মিত রিসোর্স শেয়ার করে থাকেন সম্পুর্ণ বাংলায়, আপনি তাদের অবশ্যই ফলো করুন।কিছু বিষয়ে আপনি যথেষ্ট সতর্ক না হলে ভুল পথে ধাবিত হবেন। যা আপনার মূল্যবান সময় এবং স্বপ্ন নষ্ট করে দিতে পারে। কে আপনাকে সঠিক গাইডলাইন দিচ্ছে আর কে ভুল গাইডলাইন দিচ্ছে এতটুকু বুঝার মত দক্ষতা আপনার থাকতে হবে।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রকারভেদ
ডিজিটাল মার্কেটিং বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। তবে প্রধানত একে ছয় ভাগে ভাগ করা হয়।
- সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং
- ইমেইল মার্কেটিং
- সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন
- ওয়েব এনালাইটিক্স বা ওয়েব বিশ্লেষণ
- সোশাল মিডিয়া মার্কেটিং
- কন্টেন্ট মার্কেটিং
সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং:
সকল অনলাইন মার্কেটিং সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং জিনিসটার সাথে যুক্ত। তাই একজন নতুন উদ্যোক্তাকে এই বিষয়ে যথেষ্ঠ জ্ঞান অর্জন করে নিতে হয়। কেননা এই জিনিসটা সকল মার্কেটিং এর সাথে বিন্দু মাত্র হলেই যুক্ত রয়েছে। তার জন্য সার্চ ইঞ্জিনে সবার উপরে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
ইমেইল মার্কেটিং:
এখন প্রায় সকলের কাছেই ই-মেইল পরিষেবা রয়েছে এবং এই ই-মেইল মার্কেটিং ব্যবহার করেই অনেক বড় বড় কোম্পানি তাদের বিজ্ঞাপণ চালাচ্ছে। ই-মেইল মার্কেটিং হলো বর্তমান যুগের সেরা মার্কেটিং। যোগাযোগের পাশাপাশি এটা বিজ্ঞাপণের একটা আলাদা স্থান দখল করে নিয়েছে।
সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন:
ইন্টারনেট ব্যবহারে মানুষ এতটাই অভ্যস্থ হয়ে গেছে যে, কোন কিছু কেনার আগে একবার হলেও ইন্টারনেটে সেটা নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করেই ছাড়বে। আশাকরি আপনিও বাদ দেন নাই। তবে হয়ত কেউ কেউ একটু ব্যতিক্রম থাকতে পারেন। তো এই সুযোগে নিজের পেজে ভালো করে এসইও করে ভিজিটর জোগার করতে পারেন। তাছাড়া পেইড পদ্ধতিতেও আপনি সার্চ ইঞ্জিনে বিজ্ঞান বসিয়ে ট্রাফিক পেতে পারেন।
ওয়েব এনালাইটিক্স বা ওয়েব বিশ্লেষণ:
গুগল আমাদের তথ্য প্রতি নিয়ত বিশ্লেষণ করে এবং সেই অনুসারেই বিজ্ঞাপণ দেখায়। গুগলের এনালাইটিক্স নামের একটা প্রোগ্রাম প্রায় অধিকাংশ ওয়েবসাইটে থাকে যা আমাদের তথ্য বিশ্লেষণ করে এবং সেই অনুযায়ী বিজ্ঞাপণ দেখায়।
সোশাল মিডিয়া মার্কেটিং:
ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সংখ্যা পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের একটু বেশি হবে। সেই ব্যবহারকারীদের মধ্যে আবার ৭৫% লোক নিয়মিত সোশাল মিডিয়া ব্যবহার করে। তাই সোশাল মিডিয়া একটা চমৎকার মার্কেটিং স্পেস হিসেবে নিজের একটা যায়গা করে নিয়েছে। এটাই বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং এর জগৎ এ সেরার সেরা স্থান দখল করে আছে। ইউটিউব মার্কেটিং এবং ফেসবুক মার্কেটিং বাংলাদেশে জনপ্রিয় একটি মার্কেটিং।
কন্টেন্ট মার্কেটিং :
কন্টেন্ট মার্কেটিং এর চাহিদা ব্যাপক হারে রয়েছে বাংলায় এর চাহিদা থাকলেও সার্চ ইঞ্জিন বা ইন্টারনেট জগতে তথ্য কম থাকায় এটা একটু সমস্যার বিষয়৷ কিন্তু এখনো যা ইনকাম হয়। তাতে কোন সন্ধেহ নেই৷ কন্টেন্ট মার্কেটিং কতটা কার্যকর। তাছাড়া একটা পন্যের যাবতীয় সুবিধা অসুবিধা লিখে কোন পণ্যে কেনার জন্য উৎসাহী করলে অনেক সুন্দর ফলাফল পাওয়া সম্ভব। এটা প্রামাণিত হয়েছে।
ডিজিটাল মার্কেটিং কিভাবে শিখবেন ?
ডিজিটাল মার্কেটিং শিখে এতে ক্যারিয়ার বানানোর কথা যদি আপনি ভাবছেন, তাহলে এইটা আপনার জন্য অনেক সুন্দর সুযোগ হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে।আজ ইন্টারনেট এবং এর ব্যবহার অনেক বেড়ে গেছে, এবং আসছে সময়ে এর ব্যবহার আরো কয়েক গুনে বেড়ে যাবে।এতে ডিজিটাল মার্কেটিং প্রক্রিয়ার ব্যবহার ও বেড়েযাবে আর তাই এর সাথে জড়িত অনেক কোম্পানি গুলিতে চাকরির সুযোগ অনেক হয়ে উঠবে।যেমন অনেক হোস্টিং কোম্পানি, অনলাইন বিজ্ঞাপনের কোম্পানি, web designing company, email marketing company, Search engine optimization, content marketing, social media marketing আদি এরম অনেক কোম্পানি আছে যেগুলিতে আপনি চাকরি পেতে পারেন যদি আপনার digital marketing এর জ্ঞান বা সার্টিফিকেট (certificate) থাকে।
তাই, এই ইন্টারনেট মার্কেটিং ক্ষেত্রে যদি আপনি ক্যারিয়ার বানানোর কথা ভাবছে তাহলে আমার মতে সেটা অনেক লাভ জনক হবে।এবং, আপনি চাইলে যেকোনো institute থেকে Digital marketing course শিখে certificate নিয়ে নিতে পারবেন।তা ছাড়া, আপনি Google digital garage ওয়েবসাইটের ব্যবহার করে অনলাইন ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে পারবেন।এবং, এর দ্বারা ডিজিটাল মার্কেটিং শিখলে আপনার পরীক্ষা নেয়া হবে এবং শেষে আপনাকে একটি certificate দেয়া হবে যেটা আপনি চাকরির জন্য এপলাই করার সময় দেখতে পারবেন।এর বাইরে, অনেক অনলাইন ওয়েবসাইট এবং ইউটিউবে ভিডিও রয়েছে যেগুলি দেখে বা পরে আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে পারবেন।
মার্কেটিং যাইহোক, যেটাই করবেন একটু চিন্তাভাবনা করে করুন। নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে যদি নিজের কাজ শুরু করতে চান তাহলে আপনি নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন আপনার জন্য কোনটা ঠিক আছে তারপর সেটাকে ব্যবহার করে ডিজিটাল মার্কেটিং জগৎে লেগে পড়ুন। ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে কন্টেন্ট মার্কেটিং দিয়ে নিজের কাজ শুরু করলে আপনি অল্প খরচেই নিজের ব্যবসাকে দ্বাড় করাতে পারবেন। ফেসবুক বা সোশাল মিডিয়াতে ই-কমার্স নিয়ে কাজ শুরু করলে ডিজিটাল মার্কেটিং এর শুরুটা খুব ভালো হয়।