দেশে বা বিদেশে আপনার একটি আন্তর্জাতিক পরিচয়পত্রের নাম পাসপোর্ট। যে কোনো কারণে যে কোনো সময় আপনার পাসপোর্ট চুরি হতে পারে বা হারিয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে আপনার পাসপোর্ট কীভাবে ফিরে পাবেন? বিশেষত বিদেশে গিয়ে পাসপোর্ট হারালে দেশে ফিরে আসাটাই অনেক সময় বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। তবে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। দেশে বা বিদেশে পাসপোর্ট হারালেও দ্রুত পাসপোর্ট ফিরে পাওয়ার সুযোগ আছে। আপনার পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে যা করণীয় এখানে দেয়া হলো।
দেশে পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে করণীয়
জিডি
প্রথমেই একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হবে। জিডিটা করতে হয় মূলত যে থানা এলাকায় পাসপোর্টটি হাটিয়েছে বা চুরি হয়েছে সে এলাকার থানায়। এ ক্ষেত্রে আপনাকে হারানো পাসপোর্টের নাম্বার ও ফটোকপি সরবরাহ করতে হবে। তাই পূর্ব থেকে পাসপোর্টের ফটোকপি করা থাকলে আপনার অনেক কাজ সহজ হয়ে যায়।
আরো পড়ুনঃ
থানার পদক্ষেপ
জিডি হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট থানা ইমিগ্রেশন ডাটাবেইজে আপনার পাসপোর্টের বিষয়ে সতর্কতা জারি করবে বা কালো তালিকাভুক্ত করবে। যেন অন্য কেউ এটি ব্যবহার করে বিদেশ গমন করতে না পারে। এটি মূলত সংশ্লিষ্ট থানার কাজ।
পুনরায় পাসপোর্টের আবেদন
হারানো পাসপোর্ট উদ্ধার করা না গেলে নতুন করে পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করলে নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে আপনাকে নতুন একটি পাসপোর্ট সরবরাহ করবে।
আবেদনের সময় যা লাগবে
নতুন করে পাসপোর্টের সময় লাগবে- সদ্য তোলা ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, সাধারণ ডায়েরির মূল কপি, হারিয়ে যাওয়া পাসপোর্টের ফটোকপি (যদি থাকে)।আর হ্যা, আবেদনের জন্য আপনাকে পাসপোর্টের পুরো ফি গুণতে হবে! জরুরির জন্য জরুরি ফি অথবা সাধারণ সময় হলে সাধারণ ফি প্রদান করতে হবে। রি-ইস্যু সংক্রান্ত সকল তথ্য পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে।একটু সতর্ক থাকলে আইনী বিষয়গুলো সহজ হবে। এজন্য পাসপোর্টের একাধিক রঙিন ফটোকপি সংগ্রহে রাখুন। কোন দেশের ভিসা লাগানো থাকলে সেটিও ফটোকপি করে রাখুন। এসব সংরক্ষণে প্রযুক্তির ব্যবহার করাতে পারেন। গুগল ড্রাইভ, ক্লাউড স্টোরেজ কিংবা পেনড্রাইভে সংরক্ষণ করতে পারেন।
বিদেশে পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে করণীয়
অনেকে বিদেশে ঘুরতে গিয়ে পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেন। কেউ যদি বলেন বিদেশে গিয়ে পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে করণীয় কি? তাহলে সর্বপ্রথম তাকে সে দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসে চলে যেতে হবে। তারপর সরাসরি সেখানে গিয়ে উপস্থিত হোন এবং পাসপোর্ট হারানোর কথা বলুন। এক্ষেত্রে বিদেশের যে এলাকায় বা থানায় পাসপোর্ট হারিয়েছে সেখানকার থানায় একটি জিডি করতে হবে। জিডি করার পর সে জিডি কপি সহ আপনি বাংলাদেশ দূতাবাসে গিয়ে অন্যান্য কাজগুলো জমা দেবেন। সমস্ত কাগজ জমা দেওয়ার পর তারা মূলত আপনাকে ট্রাভেল পারমিট দেবেন। ট্রাভেল পারমিট মূলত পাসপোর্টের বিকল্প পরিচয়পত্র, যেটি বহন করে আপনি নির্দিষ্ট সময় ভ্রমণ করতে পারবেন।
ট্রাভেল পারমিটের জন্য যেসব কাগজপত্র দূতাবাসে জমা দিতে হবে
- হারানো পাসপোর্টের ফটোকপি
- হারানো পাসপোর্টের ভিসা এরাইভাল হওয়ার কপি
- কয়েক কপি ছবি
- থানার জিডি কপি
- C Form/সি ফর্ম তথা যে দেশে থাকছেন সেখানকার ঠিকানা ও তার প্রমাণপত্র।
সব কাগজের সঙ্গে পাসপোর্ট হারিয়ে গেছে জানিয়ে একটি ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করার জন্য আবেদন লিখতে হবে মিনিস্টার কাউন্সিলর বরাবর।সাধারণত সমস্ত আবেদন সম্পন্ন করার কোনো সমস্যা না থাকলে সেদিনই ট্রাভেল পারমিট প্রদান করবে।
ভারতে পাসপোর্ট হারিয়ে ফেললে আরেকটি কাজ করতে হবে সেটি হলো, বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাওয়া ট্রাভেল পারমিট নিয়ে ইন্ডিয়ার Foreign Regional Registration Office (FRRO) এ গিয়ে এক্সিট পারমিট নিতে হবে। সেটার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আবেদন করার জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসে গিয়ে সমস্যা গুলো খুলে বলতে হবে। সাধারণত এক্সিট পারমিট দুদিন সময় নিতে পারে। এভাবে এক্সিট পারমিট নেওয়ার পর তবে আপনি দেশে ফিরে আসতে পারবেন। এক্সিট পারমিট ব্যতিত ইন্ডিয়া থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসা যাবে না।
কাজেই পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলাটা, বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে পাসপোর্ট হারানো অত্যন্ত ঝামেলাপূর্ণ একটি কাজ। যে ধকল পোহাতে হয় তার রেষ থেকে যায়। পরবর্তীতে দেশে এসে নতুন করে পাসপোর্ট করার সময়ও দেশের কোনো থানায় পুনরায় জিডি করতে হয়। তারপর সে জিডি সহ ভারতে করা জিডি, ট্রাভের পারমিট, এক্সিট পারমিট সহ বাকি যাবতীয় কাজ জমা দিয়ে নতুন করে পাসপোর্ট এর আবেদন করতে হয়। প্রকৃতপক্ষে পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে আরেকটা যে কষ্টের কাজ হয় সেটি হলো, পাসপোর্টে থাকা কোনো ভিসা-সিল আর ফিরে পাওয়া যায় না নতুন পাসপার্টে। তবে পুরনো পাসপোর্টের নাম্বারটি তারা নতুন পাসপোর্টে উল্লেখ করে দেবে।
বিদেশে চাকরির সময় পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে করণীয়
মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে যারা চাকরি নিয়ে যান তাঁদের অনেককে মালিকের কাছে পাসপোর্ট জমা দিতে হয়। মালিক পক্ষ থেকে তাদের সরকারি বিভিন্ন অনুমোদ করিয়ে দেওয়া হয়। তবে নিজের প্রয়োজনে পাসপোর্টের ফটোকপি সঙ্গে রাখতে হবে। কিন্তু কেউ যদি ব্যবসা, ফ্রি ভিসায় চাকরি করতে যান তাঁদের উচিত পাসপোর্ট সব সময় সঙ্গে রাখা।তারপরও দুর্ঘটনাবশত পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে সে ক্ষেত্রে আপনাকে বাংলাদেশের দূতাবাসে যোগাযোগ করতে হবে। পাসপোর্টের ফটোকপি ও রোডপাস বা রাস্তায় চলাচলের প্রত্যয়নপত্র (যদি সঙ্গে থাকে) নিয়ে যোগাযোগ করলে দূতাবাসের পক্ষ থেকে আপনাকে নতুন পাসপোর্ট তৈরিতে সহায়তা করা হবে।
ভ্রমণের সময় পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে করণীয়
আপনার বিদেশ ভ্রমণের পুরো আনন্দটাই মাটি হতে পারে যদি আপনি পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেন। কোনো কারণে যদি তা হারিয়েই ফেলেন তাহলে সবার আগে আপনাকে যোগাযোগ করতে হবে বাংলাদেশ হাই কমিশনে। কোনো ট্যুর অপারেটর বা ট্র্যাভেল এজেন্সি যদি আপনার ভ্রমণে সহায়তা করে থাকে তবে তারাই আপনাকে বাংলাদেশ হাই কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সহায়তা করবে। এরপর আপনাকে সহায়তা করবে বাংলাদেশ হাই কমিশন। বাংলাদেশের পাসপোর্ট অফিস ও ইমিগ্রেশন আপনার সব তথ্য পর্যবেক্ষণ করে বাংলাদেশ হাই কমিশনকে একটি পত্র বা দরখাস্ত পাঠাবে। এ পত্র বা দরখাস্তই আপনাকে সুন্দরভাবে দেশে ফিরে আসতে সহায়তা করবে।
পাসপোর্ট নিয়ে জালিয়াতি হলে যা করবেন
বিদেশে নিজের বৈধতার সনদ হচ্ছে পাসপোর্ট। এই পাসপোর্টের ভিত্তিতেই নির্ধারণ করা হবে আপনি বৈধ, না অবৈধ। তাই পাসপোর্ট যত্ন করে রেখে দেবেন। কোনোভাবেই হাতছাড়া করবেন না। বিদেশে বৈধ পাসপোর্ট অনেকে অবৈধভাবে বেচাকেনা করে। টাকার বিনিময়ে একজনের বৈধ পাসপোর্ট অবৈধ ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেয়। তাই পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে দ্রুত পদক্ষেপ নিন। অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান কর্মীদের পাসপোর্ট রেখে এর বিনিময়ে একটি 'পাস' বা কার্ড দেয়। কর্মীরা যাতে পালিয়ে গিয়ে অন্য কোথাও কাজ করতে না পারে, তার জন্য এমনটি করা হয়। বাস্তবতা যাই হোক না কেন বিদেশে গেলে পাসপোর্টের প্রতি আপনাকে বাড়তি সতর্ক হতেই হবে।