আসসালামু আলাইকুম পবিত্র কোরআনের অত্যন্ত মহত্ত্ব, মর্যাদা, ফজিলত, ও গুরুত্বপূর্ণ একটি আয়াত হচ্ছে আয়াতুল কুরসি। এটি পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত।
এ আয়াতের মহত্ব মর্যাদা ও ফজিলত সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিসে অনেক কিছু উল্লেখ হয়েছে।আজকে আমরা বিশেষ বিশেষ কিছু হাদিস আপনাদের সাথে শেয়ার করব আয়াতুল কুরসির ব্যাপারে। যা আয়াতুল কুরসির ফজিলতকে আরো ফুটিয়ে তুলে।
আজকের আলোচনায় যা যা থাকছে
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়াতুল কুরসির ব্যাপারে কি কি বলেছেন।
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখন আয়াতুল কুরসি পড়তেন।
- আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু আয়াতুল কুরসির ব্যাপারে কি ঘটনা বর্ণনা করেছেন।
- সাহাবী উবা ইবনুল ক্বাব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে আয়াতুল কুরসির ব্যাপারে কি জিজ্ঞাসা করেছিল?
- আয়াতুল কুরসি কি ইসমে আজম?
- আয়াতুল কুরসি পড়লে কি সব দোয়া কবুল হয়?
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখন আয়াতুল কুরসি পড়তে বলেছেন।
- আয়াতুল কুরসি পড়লে কি জিন থেকে বাঁচা যায়।
আয়াতুল কুরসির ফজিলত জানার পর জানব
আয়াতুল কুরসিতে বিশেষ দশটি বাক্য রয়েছে যা অত্যন্ত অর্থবোধক তা আমরা তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব যারা ইচ্ছুক তারা পড়তে পারেন লেখাটা একটু দীর্ঘ তবে কেউ ধৈর্য সহকারে পড়লে অনেক কিছু জানতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
আয়াতুল কুরসীর ফজিলত এই আয়াতটি আয়াতুল কুরসী। এটি অত্যন্ত মর্যাদা বিশিষ্ট আয়াত।
আয়াতুল কুরসির ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখ হয়েছে
উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) -কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করেনঃ ‘মহান আল্লাহ্র কিতাবে সর্বাপেক্ষা মর্যাদা বিশিষ্ট আয়াত কোনটি?’ তিনি উত্তরে বলেনঃ ‘মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সবচেয়ে ভালো জানেন।’ তিনি পুনরায় এটাই জিজ্ঞেস করেন। বারবার প্রশ্ন করায় তিনি বলেনঃ ‘আয়াতুল কুরসী।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন তাঁকে বলেনঃ لِيَهْنك الْعِلْمُ أَبَا الْمُنْذِرِ، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنَّ لَهَا لِسَانًا وَشَفَتَيْنِ تُقَدِّسُ الْمَلِكَ عِنْدَ سَاقِ الْعَرْشِ. ‘হে আবুল মুনযির! মহান আল্লাহ্ তোমার জ্ঞানে বরকত দান করুন! যে মহান আল্লাহ্র হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ করে আমি বলছি যে, এর জিহ্বা হবে, ওষ্ঠ হবে এবং এটি বাদাশাহর পবিত্রতা বর্ণনা করবে ও ‘আরশের পায়ায় লেগে থাকবে। (মুসনাদ আহমাদ -৫/১৪, সহীহ মুসলিম-১/২৫৮/৫৫৬
আয়াতুল কুরসির ফজিলত সম্পর্কে
আবূ আইউব আনসারী (রাঃ) বলেনঃ ‘আমার ধনাগার হতে জিনেরা খেজুর চুরি করে নিয়ে যেতো। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এজন্য অভিযোগ পেশ করি। তিনি বলেন, যখন তুমি তাকে দেখবে তখন بِسْمِاللهِاَجِيْبِيْرَسُوْلَاللهَ পাঠ করবে। যখন সে এলো তখন আমি এটি পাঠ করে তাকে ধরে ফেললাম। সে বললোঃ আমি আর আসবো না। সুতরাং আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে উপস্থিত হলে তিনি আমাকে বললেনঃ ‘তোমার বন্দী কি করেছিলো? আমি বললামঃ তাকে আমি ধরে ফেলেছিলাম, সে আর না আসার অঙ্গীকার করায় তাকে ছেড়ে দিয়েছি। তিনি বললেনঃ সে আবার আসবে। আমি তাকে এভাবে দু’তিন বার ধরে ফেলে অঙ্গীকার নিয়ে নিয়ে ছেড়ে দেই। আমি তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট বর্ণনা করি। তিনি বারবারই বলেন, সে আবার আসবে। শেষবার আমি তাকে বলিঃ এবার আমি তোমাকে ছাড়বো না। সে বললোঃ ‘আমাকে ছেড়ে দিন, আমি আপনাকে এমন একটি জিনিস শিখিয়ে দিচ্ছি যে, কোন জ্বিন ও শায়তান আপনার কাছে আসতেই পারবে না। আমি বললামঃ আচ্ছা, বলে দাও। সে বললো, এটা ‘আয়াতুল কুরসী।’ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এটা বর্ণনা করি। তিনি বললেন, সে মিথ্যাবাদী হলেও এটা সে সত্যই বলেছে।’ (হাদীসটি সহীহ। মুসতাদরাক হাকিম-১/৫৬২, মুসনাদ আহমাদ -৫/৪২২, সহীহ ইবনু হিব্বান-২/৭৯/৭৮১, আল মাজমা‘উযযাওয়ায়িদ-১০/১১৭, ১১৮)
আয়াতুল কুরসির ফজিলত সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বর্ণনা
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুহাজিরদের নিকট গেলে এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করে, হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুর’আনুল কারীমের খুব বড় আয়াত কোনটি? তিনি এই আয়াতুল কুরসি পাঠ করে শুনান। (তাবারানী, আল মাজমা‘উযযাওয়ায়িদ-৬/৩২১, উসদুলগাবাহ-১/৮৯)
আয়াতুল কুরসির ফজিলত সম্পর্কে সাহাবীকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জিজ্ঞাসা
একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীগণের মধ্যে এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি বিয়ে করেছো? তিনি বলেনঃ হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আমার নিকট মাল-ধন নেই বলে বিয়ে করিনি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমার কি قلهوالله মুখস্থ নেই? তিনি বলেন, এটা তো মুখস্থ আছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এটা তো কুর’আনুল কারীমের এক চতুর্থাংশ হয়ে গেলো। قليايهاالكفرون কি মুখস্থ নেই? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ এটাও আছে। তিনি বলেন এটা হলো কুর’আন পাকের এক চতুর্থাংশ। আবার জিজ্ঞেস করেন زلزلتاذا কি মুখস্থ আছে? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ। তিনি বলেন, এটা হলো এক চতুর্থাংশ। اذاجاءنصرالله মুখস্থ আছে কি? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এটা এক চতুর্থাংশ। আয়াতুল কুরসি কি মুখস্থ আছে? তিনি বলেন, হ্যাঁ আছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এটা হলো এক চতুর্থাংশ কুর’আন। (মুসনাদ আহমাদ )
আয়াতুল কুরসী ফজিলত সম্পর্কে সাহাবী
আবূ যার (রা) বলেন,আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে দেখি যে, তিনি মাসজিদে অবস্থান করছেন। আমিও বসে পড়ি। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি সালাত আদায় করেছো? আমি বলি, না। তিনি বলেনঃ উঠো, সালাত আদায় করে নাও। আমি সালাত আদায় করে আবার বসে পড়ি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন আমাকে বলেন, হে আবূ যার! মানুষ শায়তান, জ্বিন শায়তান হতে আশ্রয় প্রার্থনা করো। আমি বলি, হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! মানুষ শায়তানও হয় নাকি? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ আমি বলি, হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! সালাত সম্বন্ধে আপনি কি বলেন, তিনি বলেনঃ এটার সবই ভালো। যার ইচ্ছে হবে কম অংশ নিবে এবং যার ইচ্ছে হবে বেশি অংশ নিবে। আমি বলি, হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আর সাওম? তিনি বলেনঃ এটা এমন ফরয যা যথেষ্ট হয়ে থাকে এবং মহান আল্লাহ্র নিকট অতিরিক্ত থাকে। আমি বলি, আর দান-খয়রাত? তিনি বলেন, বহুগুণ বিনিময় আদায়কারী। আমি বলিঃ সবচেয়ে উত্তম দান কোনটি? তিনি বলেন, যে ব্যক্তির মাল অল্প রয়েছে তার সাহস করা কিংবা গোপনে অভাবগ্রস্তের অভাব দূর করা। আমি জিজ্ঞেস করি, সর্বপ্রথম নবী কে? তিনি বলেনঃ আদম (আঃ) আমি বলি, তিনি কি নবী ছিলেন? তিনি বলেনঃ তিনি নবী ছিলেন এবং মহান আল্লাহ্র সাথে কথা বলেছিলেন। আমি জিজ্ঞেস করি, রাসূলগণের সংখ্যা কতো? তিনি বলেনঃ তিনশ’ এবং দশের কিছু বড় দল। একটি বর্ণনায় তিনশ’ পনের জন শব্দ (সংখ্যা) রয়েছে। আমি বলিঃ হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনার ওপর সবচেয়ে মর্যাদা সম্পন্ন কোন আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে? তিনি বলেন, আয়াতুল কুরসি اللهلاالهالاهوالحيالقيوم। সহীহুল বুখারীতে كِتَابُالْوَكَالَةِ،كِتَابُفَضَائِلِالْقُرْاَنِ এবং صِفَةُاِبْليْس- এর বর্ণনা।
আয়াতুল কুরসির ফজিলত সম্পর্কে সাহাবী
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে। তাতে রয়েছে যে, আবূ হুরাইহরা (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে রামাযানের যাকাতের ওপর প্রহরী নিযুক্ত করেছেন। আমার নিকট একজন আগমনকারী আসে এবং ঐ মাল হতে কিছু কিছু উঠিয়ে সে তার চাদরে জমা করতে থাকে। আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললামঃ ‘তোমাকে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট নিয়ে যাবো। সে বলেঃ আমাকে ছেড়ে দিন। আমি অত্যন্ত অভাবী, আমার অনেক পোষ্য রয়েছে। আমি তখন তাকে ছেড়ে দেই। সকালে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করেনঃ ‘তোমার রাতের বন্দী কি করেছিলো?’ আমি বললামঃ ‘হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! সে তার ভীষণ অভাবের অভিযোগ করে এবং বলে তার অনেক পোষ্য আছে। তার প্রতি আমার করুণার উদ্রেক হয়। কাজেই আমি তাকে ছেড়ে দেই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘সে তোমাকে মিথ্যা কথা বলেছে। সে আবার আসবে। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কথায় বুঝলাম যে, সে সত্যিই আবার আসবে। আমি পাহারা দিতে থাকলাম। সে এলো এবং খাদ্য উঠাতে লাগলো। আবার আমি তাকে ধরে ফেলে বললামঃ ‘তোমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে নিয়ে যাবো। ‘সে আবার ঐ কথাই বললো। আমাকে ছেড়ে দিন। কেননা আমি অত্যন্ত অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি, আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে, আমি আর চুরি করতে আসবো না।’ তার প্রতি আমার দয়া হলো। সুতরাং তাকে ছেড়ে দিলাম। সকালে আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আবূ হুরায়রাহ্! তোমার রাতের বন্দিটি কি করেছে? আমি বললামঃ ‘হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! সে অভাবের অভিযোগ করায় আমি তাকে দয়া করে ছেড়ে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘সে তোমাকে মিথ্যা কথা বলেছে। সে আবার আসবে।’ আবার আমি তৃতীয় রাতে পাহারা দেই। অতঃপর সে এসে খাদ্য উঠাতে লাগলো। আমি তাকে বললামঃ ‘এটাই তৃতীয় বার এবং এবারই শেষ। তুমি বার বার বলেছো যে, আর আসবে না, অথচ আবার এসেছো। সুতরাং আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে নিয়ে যাবোই।’ তখন সে বললোঃ আমাকে ছেড়ে দিন, আমি আপনাকে এমন কতোগুলো কথা শিখিয়ে দিচ্ছি যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ আপনার উপকার সাধন করবেন।’ আমি বললামঃ ঐগুলো কি? সে বললোঃ ‘যখন আপনি বিছানায় শয়ন করবেন তখন আয়াতুল কুরসী পড়ে নিবেন।’ তাহলে মহান আল্লাহ্ আপনার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত করবেন এবং সকাল পর্যন্ত শায়তান আপনার নিকটবর্তী হতে পারবে না। সুতরাং তাকে আমি ছেড়ে দিলাম। পরদিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ গতরাতে তোমার বন্দী কি করেছে? আমি উত্তরে বললামঃ হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! সে আমাকে কিছু কথা বলেছে যা বললে আমি মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে সাহায্যপ্রাপ্ত হবো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ তা কি? আমি বললামঃ সে আমাকে বলেছে যে, যখন তুমি বিছানায় ঘুমাতে যাবে তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে। তাহলে মহান আল্লাহ্ তোমার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত করবেন যে তোমার কাছে অবস্থান করবে, ফলে ভোর পর্যন্ত শায়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘সে চরম মিথ্যাবাদী হলেও এ ব্যাপারে সে সত্য কথাই বলেছে। হে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) ! তিন রাত তুমি কার সাথে কথা বলেছো তা জানো কি? আমি বললামঃ না। তিনি বললেনঃ সে শায়তান। (ফাতহুল বারী ৮/৬৭২, ৪/৫৬৮, ৬/৩৮৬) ইমাম নাসাঈ (রহঃ)
আয়াতুল কুরসি ফজিলত সম্পর্কে নাসায়ী শরীফের এক বর্ণনাতে রয়েছে যে, হুযুরে আকরাম (সাঃ) এরশাদ করেছেন, "যে লোক প্রত্যেক ফরয নামাযের পর আয়াতুল-কুরসী নিয়মিত পাঠ করে, তার জন্য বেহেশতে প্রবেশের পথে একমাত্র মৃত্যু ছাড়া অন্য কোন অস্তরায় থাকে না।' অর্থাৎ, মৃত্যুর সাথে সাথেই সে বেহেশতের ফলাফল এবং আরাম-আয়েশ উপভোগ করতে শুরু করবে।
আয়াতুল কুরসির ফজিলত ও বিশেষ মর্যাদা
আয়াতুল কুরসীতে রয়েছে মহান আল্লাহ্র ইস্মে ‘আযম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তিনটি আয়াতের মধ্যে মহান আল্লাহ্র ইস্মে ‘আযম রয়েছে।
একটিতো হচ্ছে আয়াতুল কুরসী। ﴿ اَللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ١ۚ اَلْحَیُّ الْقَیُّوْمُ ﴾ ‘মহান আল্লাহ্! তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি স্বাধীন ও নিত্য নতুন ধারক, সবকিছুর ধারক।’
(২নং সূরাহ বাকারাহ, আয়াত নং ২৫৫)
দ্বিতীয়টি হচ্ছেঃ ﴿ الٓمَّٓۙ۱ اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ١ۙ الْحَیُّ الْقَیُّوْمُ﴾ ‘আলীফ, লাম, মীম। মহান আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ বা উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব ও নিত্য বিরাজমান।’
(৩ নং সূরাহ্ আলি ‘ইমরান, আয়াত নং ১-২)
আরো পড়ুনঃ স দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম
তৃতীয়টি হচ্ছেঃ ﴿ وَ عَنَتِ الْوُجُوْهُ لِلْحَیِّ الْقَیُّوْمِ١ؕ وَ قَدْ خَابَ مَنْ حَمَلَ ظُلْمًا ﴾ ‘স্বাধীন, স্বধিষ্ঠ পালনকর্তার নিকট সকলেরই হবে অধোবদন এবং সেই ব্যর্থ হবে যে যুলমের ভার বহন করবে।’ (২০ নং সূরাহ্ তা-হা, আয়াত নং ১১১। মুসনাদ আহমাদ ৬/৪৬১) ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) , তিরমিযী (রহঃ) এবং ইবনু মাজাহও (রহঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ-২/১২৬৭/৩৮৫৬, হাদীস নং২/১৬৮, ৯/৪৪৭, ২/১২৬৭) তিরমিযী (রহঃ) এ হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।
আয়াতুল কুরসির ফজিলত হলো সব দোয়া কবুল হবে
এ ছাড়া ইবনু মারওদুয়াই (রহঃ) আবূ উমামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি কেউ মহান আল্লাহ্র ইসমে ‘আযমসহ তাঁর কাছে প্রার্থনা করে তাহলে তিনি সেই প্রার্থনা কবূল করেন। তা রয়েছে এই তিনটি সূরায়। সূরাহ্ বাকারাহ, সূরাহ্ আলি ‘ইমরান ও সূরাহ্ তা-হা। (তাবারানী ৮/২৮২)
আর্টিকেলটি অনেক বড় হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও আমরা এখানে তাফসীর ইবনে কাসীর থেকে আয়াতুল কুরসির একটি বিশাল তাফসীর উল্লেখ করলাম যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যদি ধৈর্য সহকারে পড়তে পারেন তাহলে অনেক কিছু জানতে পারবেন।
আয়াতুল কুরসির ফজিলত সম্পর্কে তাফসীরে ইবনে কাসীরে যা উল্লেখ হয়েছে
আয়াতুল কুরসীতে রয়েছে ১০টি পূর্ণাঙ্গ বাক্য এই আয়াতে পৃথক পৃথক অর্থ সম্বলিত দশটি বাক্য রয়েছে। ১। প্রথম বাক্যে মহান আল্লাহ্র একাত্মবাদের বর্ণনা রয়েছে যে, ﴿اَللّٰهُلَاۤاِلٰهَاِلَّاهُوَ﴾সৃষ্টজীবের তিনিই একমাত্র মহান আল্লাহ্।
২। দ্বিতীয় বাক্যে রয়েছে যে, ﴿اَلْحَیُّالْقَیُّوْمُ﴾ তিনি চিরঞ্জীব, তাঁর ওপর কখনো মৃত্যু আসবেনা। তিনি চির বিরাজমান। কাইউমুন শব্দটির দ্বিতীয় পঠন কাইয়্যামুনও রয়েছে। সুতরাং সমস্ত সৃষ্টজীব তাঁর মুখাপেক্ষী এবং তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তাঁর অনুমতি ব্যতীত কোন লোকই কোন জিনিস প্রতিষ্ঠিত রাখতে পারে না। যেমন অন্য জায়াগয় রয়েছেঃ ﴿ وَ مِنْ اٰیٰتِهٖۤ اَنْ تَقُوْمَ السَّمَآءُ وَ الْاَرْضُ بِاَمْرِهٖ ﴾ তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তাঁরই আদেশে আকাশ ও পৃথিবীর স্থিতি। (৩০নংসূরাহ্রুম, আয়াত নং ২৫)
৩। তৃতীয় বাক্যটিতে বলা হচ্ছেঃ ﴿ لَا تَاْخُذُهٗ سِنَةٌ وَّ لَا نَوْمٌ ﴾ ‘না কোন ক্ষয়-ক্ষতি তাঁকে স্পর্শ করে না, না কোন সময় তিনি স্বীয় জীব হতে উদাসীন থাকেন। বরং প্রত্যেকের কাজের ওপর তাঁর সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। প্রত্যেকের অবস্থা তিনি দেখছেন। সৃষ্টজীবের কোন অণু-পরমাণুও তাঁর হিফাযত ও জ্ঞানের বাইরে নেই। তন্দ্রা ও নিদ্রা কখনো তাঁকে স্পর্শ করে না।’ সুতরাং তিনি ক্ষনিকের জন্যও সৃষ্টজীব হতে উদাসীন থাকেননা।
বিশুদ্ধ হাদীসে রয়েছেঃ একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে সাহাবীগণকে চারটি কথার নির্দেশ দেন। তিনি বলেনঃ
(১) মহান আল্লাহ্ কখনো ঘুমাননা আর পবিত্র সত্ত্বার জন্য নিদ্রা আদৌ শোভনীয় নয়।
(২) তিনি দাঁড়ি-পাল্লার রক্ষক। যার জন্য চান ঝুঁকিয়ে দেন এবং যার জন্য চান উঁচু করে দেন।
(৩) সমস্ত দিনের কার্যাবলী রাতের পূর্বে এবং রাতের ‘আমল দিনের পূর্বে তাঁর নিকট উঠিয়ে নেয়া হয়।
(৪) তাঁর সামনে রয়েছে আলো বা আগুনের পর্দা। সেই পর্দা সরে গেলে যতোদূর পর্যন্ত তাঁর দৃষ্টি পৌঁছে ততোদূর পর্যন্ত সমস্ত জিনিস তাঁর চেহারার ঔজ্জ্বল্যে পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। (সহীহ মুসলিম ১/১৬১)
৪। চতুর্থ বাক্যটিতে মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ﴿ لَهٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الْاَرْضِ ﴾ নভোমন্ডল ও ভূমণ্ডলে যা কিছু রয়েছে সবই তাঁর।
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন অন্যত্র বলেনঃ ﴿اِنْ كُلُّ مَنْ فِی السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ اِلَّاۤ اٰتِی الرَّحْمٰنِ عَبْدًاؕ۹۳ لَقَدْ اَحْصٰىهُمْ وَعَدَّهُمْ عَدًّاؕ۹۴ وَكُلُّهُمْ اٰتِیْهِ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ فَرْدًا ﴾ আকাশসমূহ ও পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যে দয়াময়ের নিকট উপস্থিত হবে না বান্দা রূপে। তিনি তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন এবং তিনি তাদেরকে বিশেষভাবে গণনা করে রেখেছেন এবং কিয়ামতের দিন তাদের সকলেই তাঁর নিকট আসবে একাকী অবস্থায়। (১৯ নং সূরাহ্ মারইয়াম, আয়াত নং ৯৩-৯৫)
৫। পঞ্চম বাক্যে মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ﴿ مَنْ ذَا الَّذِیْ یَشْفَعُ عِنْدَهٗۤ اِلَّا بِاِذْنِهٖ﴾ কে আছে এমন যে, তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে?’ এ ধরনের অন্য একটি আয়াতে বলা হয়েছেঃ ﴿وَكَمْ مِّنْ مَّلَكٍ فِی السَّمٰوٰتِ لَا تُغْنِیْ شَفَاعَتُهُمْ شَیْـًٔا اِلَّا مِنْۢ بَعْدِ اَنْ یَّاْذَنَ اللّٰهُ لِمَنْ یَّشَآءُ وَ یَرْضٰى﴾ আকাশে কতো ফিরিশতা রয়েছে, তাদের কোন সুপারিশ ফলপ্রসু হবে না যতোক্ষণ মহান আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা এবং যার প্রতি সন্তুষ্ট তাকে অনুমতি না দেন। (৫৩ নং সূরাহ্ আন নাজম, আয়াত নং ২৬)
অপর আয়াতে মহান আল্লাহ্ আরো বলেনঃ ﴿ وَ لَا یَشْفَعُوْنَ١ۙ اِلَّا لِمَنِ ارْتَضٰى﴾ তারা সুপারিশ করে শুধু তাদের জন্য যাদের প্রতি তিনি সন্তুষ্ট। (২১নং সূরাহ্ আম্বিয়া, আয়াত নং ২৮) কিন্তা তাদের সুপারিশ কোন কাজে আসবেনা। তবে মহান আল্লাহ্র ইচ্ছা ও সন্তুষ্টি হিসেবে যদি কারো জন্য অনুমতি দেয়া হয় সেটা ভিন্ন কথা। এখানেও মহান আল্লাহ্র শ্রেষ্ঠত্ব ও মহা-মর্যাদার কথা বর্ণিত হচ্ছে। তাঁর অনুমতি ও সম্মাতি ছাড়া কারো সাহস নেই যে, সে কারো সুপারিশের জন্য মুখ খোলে।
হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘আমি মহান আল্লাহ্র ‘আরশের নীচে গিয়ে সাজদায় পড়ে যাবো। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা যতোক্ষণ চাবেন আমাকে এই অবস্থায় রাখবেন। অতঃপর বলবেনঃ ‘মাথা উত্তোলন করো। তুমি বলো, তোমার কথা শোনা হবে, সুপারিশ করো, তা গৃহীত হবে।’ তিনি বলেনঃ ‘আমাকে সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়া হবে এবং তাদেরকে আমি জান্নাতে নিয়ে যাবো। (সহীহ মুসলিম ১/১৮০)
৬। ষষ্ঠ বাক্যে রয়েছেঃ ﴿ یَعْلَمُ مَا بَیْنَ اَیْدِیْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ﴾ সম্মুখের অথবা পশ্চাতের সবই তিনি অবগত আছেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্বন্ধে জ্ঞাত। তাঁর জ্ঞান সমস্ত সৃষ্টজীবকে ঘিরে।’ যেমন অন্য জায়গায় ফিরিশতার উক্তি নকল করা হয়েছেঃ ﴿ وَ مَا نَتَنَزَّلُ اِلَّا بِاَمْرِ رَبِّكَ١ۚ لَهٗ مَا بَیْنَ اَیْدِیْنَا وَ مَا خَلْفَنَا وَ مَا بَیْنَ ذٰلِكَ١ۚ وَ مَا كَانَ رَبُّكَ نَسِیًّا﴾ আমরা আপনার রবের আদেশ ব্যতীত অবতরণ করি না; যা আমাদের অগ্রে ও পশ্চাতে আছে এবং যা এই দু’য়ের অন্তবর্তী তা তাঁরই এবং আপনার রাব্ব কোন কিছু ভুলেননা। (১৯নং সূরাহ্ মারইয়াম, আয়াত নং ৬৪)
৭। সপ্তম বাক্যে মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ﴿ وَلَا یُحِیْطُوْنَ بِشَیْءٍ مِّنْ عِلْمِهٖۤ اِلَّا بِمَا شَآءَ ﴾ একমাত্র তিনি যতোটুকু ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত, তাঁর অন্তর জ্ঞানের কোন বিষয়েই কেউ ধারণা করতে পারে না। মহান আল্লাহ্ যে অসীম জ্ঞানের মালিক তা থেকে তিনি যদি কাউকে জানানোর ইচ্ছা করেন তাহলে তিনি তাকে তা জানান। মহান আল্লাহ্ যাকে যে জ্ঞান বা প্রজ্ঞা দান করেন তার অধিক জ্ঞাত হওয়ার ক্ষমতা কারো নেই। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ﴿ وَ لَا یُحِیْطُوْنَ بِهٖ عِلْمًا ﴾ কিন্তু তারা জ্ঞান দ্বারা তাঁকে আয়ত্ত করতে পারে না। (২০ নং সূরাহ্ তা-হা, আয়াত নং ১১০)
৮। অষ্টম বাক্যে মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ﴿ وَسِعَ كُرْسِیُّهُ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضَ ﴾ তাঁর আসন আসমান ও যমীনকে পরিব্যাপ্ত। ওয়াকী‘ (রহঃ) তার তাফসীরে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেনঃ কুরসী হলো মহান আল্লাহ্র পা রাখার স্থান এবং তাঁর সিংহাসন কি ধরনের তা চিন্তা করাও কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। (তাবারানী ১২/৩৯) ইমাম হাকিম (রহঃ) তার মুসতাদরাক গ্রন্থেও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (২/২৮২) ইমাম হাকিম (রহঃ) বলেন যে, এ হাদীসটি সহীহাইনের শর্তে সঠিক। যাহহাক (রহঃ) বর্ণনা করেছেন যে, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, ‘আকাশসমূহ ও পৃথিবীতে যদি ছড়িয়ে দেয়া হয় এবং সবাইকে মিলিত করে এক করে দেয়া হয় তাহলে তা কুরসীর তুলনায় ঐরূপ যেরূপ জনশূন্য মরু প্রান্তরে একটি বৃত্ত।’ (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ৩/৯৮১)
৯। নবম বাক্যে বলা হয়েছেঃ ﴿ وَ لَا یَـُٔوْدُهٗ حِفْظُهُمَا ﴾ এতদুভয়ের সংরক্ষণে তাঁকে বিব্রত হতে হয় না। বরং এগুলো সংরক্ষণ তার নিকট অতীব সহজ। তিনি সমস্ত সৃষ্টজীবের কার্যাবলী সম্বন্ধে সম্যক অবগত। সবকিছুর ওপর তিনি রক্ষকরূপে রয়েছেন। কোন কিছুই তাঁর দৃষ্টির অন্তরালে নেই। সমস্ত সৃষ্টজীব তাঁর সামনে অতীব তুচ্ছ। সবাই তাঁর মুখাপেক্ষী এবং সবাই তাঁর নিকট অতি দরিদ্র। তিনি ঐশ্বর্যশালী এবং অতীব প্রশংসিত। তিনি যা চান তাই করে থাকেন। তাঁকে হুকুমদাতা কেউ নেই এবং তাঁর কাজে হিসাবগ্রহণকারীও কেউ নেই।
১০। দশম বাক্যে মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ﴿ وَهُوَ الْعَلِیُّ الْعَظِیْمُ ﴾ তিনিই সর্বোচ্চ, মহীয়ান প্রত্যেক জিনিসের ওপর ব্যাপক ক্ষমতাবান। সবকিছুরই মালিকানা তাঁর হাতে রয়েছে। এ জন্যই তিনি বলেনঃ ﴿ الْكَبِیْرُ الْمُتَعَالِ ﴾ তিনি সমুন্নত ও মহীয়ান। (১৩নং সূরাহ্ রা‘দ, আয়াত নং ৯) এই আয়াতটিতে এবং এই প্রকারের বহু আয়াতে ও সহীহ হাদীসমূহ মহান আল্লাহ্র গুণাবলী সম্বন্ধে যা কিছু বলা হয়েছে এগুলোর অবস্থান জানার চেষ্টা না করে এবং অন্য কিছুর সাথে তুলনা না করে এবং ঐগুলোর ওপর বিশ্বাস রাখাই আমাদের অবশ্য কর্তব্য। আমাদের পূর্ববর্তী মহা মনীষীগণ এই পন্থাই অবলম্বন করেছিলেন।
আয়াতুল কুরসির ফজিলত সারসংক্ষেপ
এ আয়াতে মহান পরওয়ারদেগার আল্লাহ্ জাল্লা শানুহুর একক অস্তিত্ব, তওহীদ ও গুণাবলীর বর্ণনা এক অত্যাশ্চর্য ও অনুপম ভঙ্গিতে দেয়া হয়েছে, যাতে আল্লাহ্র অস্তিত্ববান হওয়া, জীবিত হওয়া, শ্রবণকারী হওয়া, দর্শক হওয়া, বাকশক্তিসম্পন্ন হওয়া, তাঁর সত্তার অপরিহার্যতা, তাঁর অসীম-অনন্তকাল পর্যন্ত থাকা, সমগ্র বিশ্বের স্রষ্টা ও উদ্ভাবক হওয়া, যাবতীয় ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়া, সমগ্র বিশ্বের একচ্ছত্র অধিপতি হওয়া, এমন শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্বের অধিকারী হওয়া যাতে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর সামনে কেউ কোন কথা বলতে না পারে, এমন পরিপূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী হওয়া যাতে সমগ্র বিশ্ব ও তার যাবতীয় বস্তুনিচয়কে সৃষ্টি করা এবং সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ এবং তাদের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গিয়ে তাঁকে কোন ক্লান্তি বা পরিশ্রান্তির সম্মুখীন হতে হয় না। এবং এমন ব্যাপক জ্ঞানের অধিকারী হওয়া, কোন প্রকাশ্য কিংবা গোপন বস্তু কিংবা কোন অণু-পরমাণুর বিন্দু-বিসর্গও যাতে বাদ পড়তে না পারে। এই হচ্ছে আয়াতটির মোটামুটি ও সংক্ষিপ্ত বিষয়বস্তু।
আয়াতুল কুরসি ফজিলত শেষ কথা
আয়াতুল কুরসি ফজিলত সম্পর্কে জেনে বুঝে নিয়মিত ভাবে আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে আমল করার মত তৌফিক দান করুন।