আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা প্রত্যেকে খুবই সচেতন। কিন্তু দিন যত এগিয়ে যাচ্ছে নিরাপত্তার ব্যাপারটা আরো বেশি আলোচনায় আসছে। কারণ এখন আপনি ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে পারেন। আমরা প্রতিনিয়ত ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করছি এবং আমাদের তথ্যগুলোকে বিভিন্ন প্রযুক্তি-সংশ্লিষ্ট ডিভাইসে সেভ করে রাখছি। এখানে আমাদের অনেক মূল্যবান তথ্য থাকতে পারে যে তথ্যগুলো আমাদের পরবর্তীতে খুবই কাজে লাগে। সেটা হতে পারে কোন পাসওয়ার্ড অথবা কোনো গোপন নথি পত্র। কিছু অসাধু চক্র এসব ডিজিটাল ডিভাইস এ নেটওয়ার্ক ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রবেশ করে আমাদের তথ্যগুলোকে চুরি করতে পারে অথবা তথ্যের পরিবর্তন ঘটে আমাদের ক্ষতিসাধন করতে পারে। এই ধরনের অপরাধকে সাইবার অপরাধ বলে।এই ধরনের সাইবার অপরাধীদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমরা যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করি সেই ব্যাপারটি নাম হচ্ছে সাইবার সিকিউরিটি।
যেহেতু সাইবার সিকিউরিটি অতীব জরুরী আপনার ডিজিটাল নিরাপত্তা রক্ষার জন্য, তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
সাইবার সিকিউরিটি
সাইবার সিকিউরিটি বলতে বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটারাইজড ডিভাইস, নেটওয়ার্কিং সিস্টেম, সফটওয়্যার ইত্যাদি এর সুরক্ষার জন্য ব্যবহৃত প্রসেস এবং টেকনোলজি কে বোঝায়। বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধীরা এই সমস্ত ডিভাইসগুলোকে বাস সার্ভিস গুলোকে চুরি করার জন্য ওত পেতে বসে থাকে। এই ধরনের অপরাধের কে হ্যাকার বলে। তাহলে সাইবার সিকিউরিটি বলতে আমরা বুঝলাম কম্পিউটার এবং কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ডিভাইসকে প্রবেশাধিকার ব্যতীত ব্যক্তিদের থেকে রক্ষা করা।
- আরো পড়ুনঃ সেম্ফনি মোবাইলের দাম
যেমন আমরা উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি আপনি আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এর শুধু আপনি নিজেই প্রবেশ করতে চান। এক্ষেত্রে আপনি একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন যাতে অন্য কেউ আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে না পারে। কিন্তু যদি কেউ আপনার পাসওয়ার্ড জেনে নিতে পারে তাহলে আপনার ফেসবুকে প্রবেশ করতে পারবে। এছাড়া আরেকটি সহজ উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। যেমন আপনি যে বিকাশ একাউন্টে টাকা লেনদেন করেন সেই বিকাশ একাউন্টের পাসওয়ার্ড যদি কেউ হ্যাক করতে পারে তবে সে আপনার পিন ব্যবহার করে আপনার লেনদেনের সমস্ত তথ্য জানতে পারবে এবং আপনার টাকা চুরি করতে পারবে। এই ধরনের বিপদ থেকে আপনার একাউন্ট কে রক্ষা করাই হচ্ছে সাইবার সিকিউরিটি।
সাইবার সিকিউরিটি এর প্রয়োজনীয়তা
বর্তমান বিশ্বে সাইবার সিকিউরিটি এর প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ প্রতিটি অফিসের তথ্য এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়। প্রতিটি ব্যাংক তাদের লেনদেনের হিসাব ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া প্রতিটি দেশের সামরিক বাহিনী তাদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে এই ডিজিটাল ডিভাইস এর মাধ্যমে। এখন এই ডিজিটাল ডিভাইস থেকে যদি তথ্যগুলো চুরি হয়ে যায় তবে বড় ধরনের বিপদ হতে পারে। এজন্য ক্রমান্বয়ে সাইবার সিকিউরিটি এর প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সাইবার হামলার ধরন
সাইবার হামলার ধরন বিভিন্ন রকম হতে পারে:
তাদের মধ্যে নিচে কয়েকটি আলোচনা করা হলো
ম্যালওয়্যার
মেলার হচ্ছে একটি ক্ষতিকর কম্পিউটার প্রোগ্রাম। এগুলো যে কম্পিউটারগুলোকে টার্গেট করা হয় সেই কম্পিউটারগুলোতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রবেশ করে সেই কম্পিউটারে ব্যবহৃত সফটওয়্যার গুলোর ক্ষতিসাধন করে। এবং তাদের তৈরীকৃত সিস্টেমের ডিজাইন এর ক্ষতি করে।
ফিশিং
ফিশিং হচ্ছে এক ধরনের সাইবার আক্রমণ, যেখানে যিনি আক্রমণ করেন তিনি এক ধরনের ফেক ইমেইল আইডি থেকে ইমেইল পাঠান। এবং যিনি রিসিভার তিনি তার ব্যক্তিগত তথ্য এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সেখানে প্রবেশ করেন। এবং তার ক্রেডিট কার্ড ডেবিট কার্ডের বিবরণ সহ ব্যক্তিগত তথ্য এভাবে চুরি হয়ে যেতে পারে।
আরো পড়ুনঃ কম্পিউটারের ভাইরাস থেকে মুক্তির উপায়
এসকিউএল ইনজেকশন
এসকিউএল ইনজেকশন এমন ধরনের ক্রাইম যেখানে একজন হ্যাকার সাইবার আক্রমণ করে অন্যজনের কম্পিউটার থেকে বিভিন্ন ধরনের ডাটা বা তথ্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
0 ডে
এটি এমন ধরনের সাইবার আক্রমণ যাতে একটি সফটওয়্যার এর ত্রুটি খুঁজে বের করা হয় প্রথমে। তারপর সেই ত্রুটিকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়।
এই ধরনের সাইবার অপরাধের বাইরে বিভিন্ন ধরনের হামলার কৌশল রয়েছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন হেকার সৃষ্টি হচ্ছে এবং নতুন নতুন সাইবার আক্রমণের আবিষ্কার হচ্ছে। এগুলো এখনো বিশ্ববাসীর সামনে আসেনি।
কিভাবে সিকিওর থাকবেন
সফটওয়্যার এবং অপারেটিং সিস্টেম আপডেট
সাইবার সিকিউরিটি হিসাবে আপনি যে পদক্ষেপগুলো নিবেন তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সফটওয়্যার এবং অপারেটিং সিস্টেমকে আপডেট রাখা। আপনি যে অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করছেন সেই অপারেটিং সিস্টেমের সর্বশেষ ভার্সনটি আপডেট রাখবেন । এবং অবশ্যই কপি করা অপারেটিং সফটওয়্যার ব্যাবহার করবেন না। এছাড়া আপনি যে সফটওয়্যার ব্যবহার করবেন সেই সফটওয়্যারের সর্বশেষ ভার্সন আপডেট রাখবেন।
এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন
এন্টিভাইরাস হলো এক ধরনের কম্পিউটার সফটওয়্যার যা ভাইরাস স্ক্যান করতে পারে, শনাক্ত করতে পারে, প্রতিরোধ করতে পারে এবং ডিলিট করতে পারে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার পাওয়া যায়।আপনার সিস্টেমের সব সময় ভালো মানের এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন। এই এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার আপনার ডিভাইস থেকে ভাইরাসকে যেমন দূর করবে এবং আপনার প্রোগ্রামকে নিরাপদ রাখবে। এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার অনিরাপদ ওয়েবসাইট এবং প্রোগ্রামগুলোকে ব্লক করে দেয়।
শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন
আমরা আমাদের একাউন্টগুলোকে প্রবেশ করার জন্য লগইন করি। এবং লগইনের সময় একটি পাসওয়ার্ড প্রয়োজন পড়ে। এই পাসওয়ার্ডটি আমরা দিয়ে থাকি একাউন্ট খোলার সময়। এই পাসওয়ার্ড আমাদেরকে অন্যদের প্রবেশ করা থেকে বাঁচিয়ে দেয়। তাই আপনার সিস্টেমকে নিরাপদ রাখার জন্য শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। তাহলে অন্য কেউ যখন আপনার সিস্টেমে লগ-ইন হতে যাবে তখন সে বাধাগ্রস্ত হবে। আপনার পাসওয়ার্ড বিভিন্ন ধরনের অক্ষর চিহ্ন সংখ্যা ইত্যাদির সংমিশ্রণ ঘটিয়ে একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করুন। এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না যেটা খুব সহজেই বুঝা যায়, যেমন হতে পারে আপনার নাম অথবা আপনার মোবাইল নাম্বার। এই ধরনের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করলে যে কেউ সহজে আপনার পাসওয়ার্ড নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
আরো পড়ুনঃ ইমেইল আইডি খোলার নিয়ম
অজানা কোন লিংকে ক্লিক করবেন না
যদি কোন অজানা ব্যক্তির কাছ থেকে ইমেইল আসে তবে সেখানে ক্লিক করবেন না। অথবা কোন ওয়েব সাইটে ঢোকার পর যদি দেখেন কোন অজানা লিঙ্ক দেওয়া রয়েছে তবে সেখান থেকে দূরে থাকুন।
অজানা ওয়াইফাই থেকে দূরে থাকুন
অনেক সময় এমন কিছু ওয়াইফাই রয়েছে যা সার্বজনীনভাবে ব্যবহার করা হয়। যেখানে সকলের উপস্থিতি সহজ সেখানে আপনার সিস্টেম ডেমেজ হতে পারে। তাই এমন ধরনের ওয়াইফাই ব্যবহার থেকে দূরে থাকুন।
আপনি যদি সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ হতে চান
আপনি যদি সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ হতে চান তবে আমাদের দেশে অনেকগুলো ভাল প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখান থেকে সাইবার সিকিউরিটি উপরে বিভিন্ন ধরনের কোর্স করানো হয়। আপনি সাইবার সিকিউরিটি শিখার জন্য সেই কাজগুলো করতে পারেন। ইন্টারনেট থেকেও সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। তবে ভালো হয় যে আপনি যদি ইন্টারনেট থেকে সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে নিজেকে কোন কোর্সে ভর্তি করতে চান সেটি দেখে নিতে পারেন তবে আপনার জন্য ভালো হবে। সাইবার সিকিউরিটি কোর্স সম্পন্ন করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাইবার সিকিউরিটি সংশ্লিষ্ট বড় ধরনের দায়িত্ব পালন করে ইনকাম করতে পারেন।
আজকের আর্টিকেল পড়ে আমরা জানতে পারলাম সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে। তবে শুধু এই একটি আর্টিকেল পড়ে সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা অর্জন করা কোন মতেই সম্ভব নয়। সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে অভিজ্ঞ হতে হলে আপনাকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে। তবে আপনি আজকে আর্টিকেলে যে বিষয়গুলো আলোচনা করা হল সেগুলো যদি ভালোভাবে পালন করতে পারেন তবে আপনি নিজেকে মোটামুটি নিরাপদ রাখতে পারবেন। কিন্তু যদি একজন ভাল মানের সাইবার সিকিউরিটি পদে চাকরি করতে চান তবে আপনাকে বিভিন্ন কোর্স করতে হবে। ইন্টারনেটের সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে অনেক পাওয়া যায়। সেই সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে কোর্স গুলো দেখে নিতে পারেন। এবং প্রয়োজনে সাইবার সিকিউরিটি শেখানো হয় এমন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রেনিং নিয়ে সাইবার সিকিউরিটি এর জন্য নিজেকে একজন দক্ষ মানব শক্তিতে রূপান্তর করতে পারেন।