ইকামত কিভাবে দিতে হয়
আমরা জানি নামাজের ওয়াক্ত শুরু হলে আযান দিতে হয়। আবার যখন সবাই জামাতে নামাজের জন্য দাঁড়ায় তখন ইকামত দেওয়া হয়। যারা সাধারণত ইমাম সাহেবের পিছনে দাঁড়ায় তারাই সাধারণত ইকামত দিয়ে থাকেন। যেহেতু মোয়াজ্জেন সাধারণত ইমাম সাহেবের পিছনে দাঁড়ান তাই মুয়াজ্জিন সাহেব সাধারণত ইকামত দিয়ে থাকেন।
কিন্তু যদি কোনো কারণে নামাজে মুয়াজ্জিন সাহেব অনুপস্থিত থাকেন তবে ইমাম সাহেবের পিছনে যারা দাঁড়ানো আছে তাদের ইকামত দিতে হয়। ইকামত যে শুধু মোয়াজ্জেম সাহেব দিবেন তা নয় ইকামত যে কেউ দিতে পারে। কোন একদিন যদি আপনি ইমাম সাহেবের পিছনে দাঁড়ানো হতে পারে আপনার ঘাড়ে দায়িত্বটি পড়েছে একামত দেওয়ার। কিন্তু আপনি যদি ইকামত দেওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে না জানেন তবে আপনাকে বিরম্বনায় পড়তে হবে। তাই আপনার শিখে নেওয়া উচিত কিভাবে ইকামত দিতে হয়।
আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব কিভাবে ইকামত দিতে হয়। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি ইকামত দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানবেন এবং আপনার মনে কিভাবে ইকামত দেয়া হয় এই প্রশ্নটিই আর থাকবে না বলে মনে করি।
ইকামত কি ?
ইকামত অর্থ দাঁড় করানো। যখন সালাতের জন্য উপস্থিত মুসল্লিদের কে সালাতে দাঁড়িয়ে যাওয়ার জন্য হুঁশিয়ারি করা হয় তাকে ইকামত বলে। নামাজ জামাতে আদায় করা হোক অথবা একা আদায় করা হোক সকল ফরজ নামাজের আগে ইকামত দেওয়া সুন্নত।
আরো পড়ুনঃআল্লাহর ৯৯ নামের ফজিলত বাংলা অর্থসহ
ইকামত দেওয়ার পদ্ধতি
ইকামতে যে কথাগুলো বলা হয় বা উচ্চারণ করা হয় তা নিচে পর্যায়ক্রমে দেওয়া হল।
- আল্লাহু আকবার
- আল্লাহু আকবার
- আল্লাহু আকবার
- আল্লাহু আকবার
- আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহ
- আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহ
- আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ
- আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ
- হাইয়া আলাস সালাহ
- হাইয়া আলাস সালাহ
- হাইয়া আলাল ফালা
- হাইয়া আলাল ফালা
- কদ কামাতিস সালাহ
- কদ কামাতিস সালাহ
- আল্লাহু আকবার
- আল্লাহু আকবার
- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
আরো পড়ুনঃনখ কাটার সুন্নত পদ্ধতি
ইকামতের বাংলা অনুবাদ
ইকামতের প্রত্যেকটি বাক্যকে বাংলায় অনুবাদ করলে যা দাঁড়ায় তা নিম্নে পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হলো
আল্লাহ সর্বশক্তিমান
আল্লাহ সর্বশক্তিমান
আল্লাহ সর্বশক্তিমান
আল্লাহ সর্বশক্তিমান
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই
নামাজের জন্য এসো
নামাজের জন্য এসো
সাফল্যের জন্য এসো
সাফল্যের জন্য এসো
নামাজ আরম্ভ হলো
নামাজ আরম্ভ হলো
আল্লাহ মহান
আল্লাহ মহান
আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই
জামাতের মুসল্লীরা কখন উঠে দাঁড়াবে
ইকামতের পর সকল মুসল্লীরা জামাতের জন্য উঠে দাঁড়াবে। তবে ইকামত মাঝেও উঠে দাঁড়ানো যায়। তবে ইকামত দেওয়া এবং জামাত শুরু করার মাঝখানে জামাত নিয়ে কথা বলা যেতে পারে কিন্তু কোন দুনিয়াবী কথা বলা নিষেধ। তাই ইকামতের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জামাতের জন্য কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে জামাত আদায় করার নিয়ত করায় উত্তম।
মেয়েদের ক্ষেত্রে ইকামত কিভাবে দিতে হয়
মেয়েদের ইকামত কিভাবে দিতে হয় নিয়ে যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে। অনেক জায়গায় নিষেধ করা হয়েছে যে মেয়েদের জামাতে ইকামত দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নেই। আবার অনেকে বলেছেন মেয়েদের জামাতে ইকামত দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নেই এটা মিথ্যা কথা। তবে মেয়েরা জামাতে ইকামত দিতে পারবে এই ব্যাপারটি বিশুদ্ধ বলে মনে হয়।
আরো পড়ুনঃতাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত
ইকামত কে দিবে
জামাত আদায় করে ইমামের পিছনে যে কেউ ইকামত দিতে পারবে। মুক্তাদী হলেই ইকামত দেওয়া যায়। তবে ইমাম সাহেব উপস্থিত হওয়ার আগে ইকামত দেওয়া বৈধ নয়। ইমাম সাহেব যখন জামাত আদায় করার জন্য তার যথাস্থানে উপস্থিত হবেন এরপরেই ইকামত দেওয়া উচিত।
ইকামতের জবাব কিভাবে দিতে হয়
ইকামতের জবাব দেওয়া বাধ্যতামূলক নয় এবং সুন্নত নয়। তবে কোনো ব্যক্তি যদি ইকামতের জবাব দিতে চায় তবে সে দিতে পারে। আর যদি কেউ জবাব দিতে না চায় তবে তার জবাব দেয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। যদি ইকামতের জবাব দেয় তবে ইকামতের শব্দগুলো হুবহু বলবে।
আজান ও ইকামতের মধ্যে পার্থক্য
আযান ও ইকামতের মধ্যে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। আযান দেয়া হয় সাধারণত নামাজের ওয়াক্ত হবার শুরুতে। আবার ইকামত দেওয়া হয় মুসুল্লিরা যখন জামাতের জন্য আসে এবং ইমাম সাহেব যখন জায়নামাজের দাঁড়ায় বা জামাতের জন্য দাড়ায় এই সময়। আযানের পর মুসুল্লিরা নামাজের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে এবং মসজিদ মুখি রওনা হয়। ঠিক মুসল্লীরা যখন মসজিদে আসে অথবা একটা নির্দিষ্ট সময়ে মুসুল্লিরা যখন নামাজে সারিবদ্ধ হয়ে বা কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়ায় তখন ইকামত দেওয়া হয়। ইকামতের ব্যাপারটি হচ্ছে আসলে জামাতবদ্ধ হতে সবাইকে আহবান করা।
ইকামতের জবাব কিভাবে দিবে
মোয়াজ্জেন অথবা যিনি ইকামত দিবেন তার পিছনে যে সকল মুক্তাদির দাঁড়াবে তারা সবাই ইকামতে যে কথাগুলো বলা হবে হুবহু সেই কথাগুলি মনে মনে বলবে। শুধু মোয়াজ্জেম সাহেব যখন কদকমাতিস সালাত বলবে ঠিক সেই মুহূর্তে মুসল্লীদেরকে বলতে হবে আকমাহাল্লাহু ওয়া আদামাহ্। বাদবাকি লাইন হুবহু বললেই চলবে।
ইকামত দিয়ে দেরি করলে নামাজ হবে কি
অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন ইকামত দিতে দেরি করলে নামাজ হবে কিনা। অথবা যদি ইকামত দেওয়ার 5 মিনিট পর ইমাম সাহেব তাকবীরে তাহরীমা বলে নামাজ শুরু করেন তবে নামাজ হবে কি। আসলে এভাবে যদি ইমাম সাহেব আদায় করেন তবে নামাজ হয়ে যাবে কিন্তু ইকামতের পর এভাবে দেরি করা উচিত নয়। এই ব্যাপারটি খুবই অনত্যম।
আরো পড়ুনঃ ঘন ঘন মাথা ব্যথার কারণ কি?
আজকের আর্টিকেলে আমরা জানলাম ইকামত কিভাবে দিতে হয়। এখানে যেহেতু তথ্যগুলো আমরা ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করেছে তাই তথ্যে ভুল থাকা অসম্ভব কিছু নয়। আপনার মনে যদি প্রশ্ন থাকে ইকামত কিভাবে দিতে হয় তবে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে কতটুকু উপকৃত হয়েছেন সেটা জানিনা কিন্তু আপনাকে একটা পরামর্শ দিব সেটা হচ্ছে আপনার মনের এই প্রশ্নগুলো একজন দ্বীনদার ব্যক্তির কাছে করুন। তাহলে ঠিক আপনি যেভাবে প্রশ্ন করবেন সেই অনুযায়ী উত্তর পাবেন। প্রয়োজনে ইসলামিক ব্যাপারগুলো আপনি একাধিক ইসলামিক স্কলার এর কাছে প্রশ্ন করবেন। তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আলোচনা থেকে তুলনামূলক একটি ধারণা আপনি পেয়ে যাবেন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে আপনার কষ্ট হবে না।