মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। তিনি তার জীবনে 11 জন স্ত্রী কে গ্রহণ করেছিলেন। আজকে আমরা মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর 11 জন স্ত্রী সম্পর্কে জানব।
মহানবী হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একাধিক বিবাহের উদ্দেশ্য
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একাধিক বিয়ে করা নিয়ে অনেক সময়ই প্রশ্ন আসে। এবং অনেকেই এটাও বলে থাকেন যে ইসলামের চারটি বিয়ে করা জায়েজ থাকলেও মহানবী সাল্লাল্লাহু ইসলাম কেন এতগুলো বিয়ে করেছেন। তাই আজকে প্রথমে জানার চেষ্টা করব মহানবী সাঃ এর স্ত্রীদের নাম এবং তাদের বিয়ে করার কারণ সম্পর্কে
- অসহায় বিধবাদের সহায়তা করা
- মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর এবং তার সাহাবীদের মধ্যে পারিবারিক বন্ধনকে দৃঢ় করা
- বিবাহের মাধ্যমে বিভিন্ন গোত্র কে একত্রিত করে ইসলাম প্রচার করা
- তার ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক জীবন কাহিনী উম্মতের মধ্যে জানানোর জন্য বিশ্বাসযোগ্যতা এবং তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করতে অনেকগুলো পারিবারিক বন্ধনের লোকের প্রয়োজন পড়তো।
আল্লাহ সবাইকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের সাথে বিয়ে করতে নিষেধ করেছেন কারণ তিনি মারা যাওয়ার পর তাদের সম্মানার্থে।
- আরো পড়ুনঃ টিন সার্টিফিকেট কি, কিভাবে করবেন
আল্লাহ তা'আলা বলেন,’ আর তোমাদের কারো পক্ষে আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়ার সঙ্গত নয় এবং তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রীদেরকে বিয়ে করাও তোমাদের জন্য কখনও বৈধ নয়। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে এটা গুরুতর অপরাধ।
মহানবী সাঃ এর স্ত্রীদের নাম এর তালিকা
- খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ
- সাওদা বিনতে জামাআ
- আয়েশা বিনতে আবু বক্কর
- হাফসা বিনতে ওমর
- জয়নাব বিনতে খুযায়মা
- উম্মে সালমা হিন্দ বিনতে আবি ওমাইয়া
- রায়হানা বিনতে জায়েদ
- জয়নাব বিনতে জাহশ
- জুয়াইরিয়া বিনতে আল হারিস
- উম্মে হাবিবা বিনতে আবু সুফিয়ান
- সাফিয়া বিনতে হইয়াই
- মাইমুনা বিনতে আল হারিস
- মারিয়া আল কিবতিয়া
এখানে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর 13 জন স্ত্রী এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অনেকে সংখ্যাটাকে 10 অথবা 11 বলে থাকেন। তবে অনেকের মতে আবার এদের মধ্যে দুজনকে দাসি বলে থাকেন। যাই হোক আমরা বিতর্কে না গিয়ে এদের সম্পর্কে যতোটুকু জানা যায় আলোচনা করার চেষ্টা করব।
মহানবী সাঃ এর স্ত্রীদের নাম
খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ
খাদিজা রা: ছিলেন মহানবী সাঃ এর স্ত্রীদের মধ্যে প্রথম। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বয়স যখন পঁচিশ বছর তখন তিনি খাদিজা রা: এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। নবুয়তের পূর্বে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ব্যবসা-বাণিজ্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তারপর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে সততা এবং দক্ষতা দেখে বিবাহের প্রস্তাব পেশ করলে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাচা আবু তালিবের মাধ্যমে প্রস্তাব গ্রহণ করেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহু। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত লাভের পর সর্বপ্রথম খাদিজাতুল কোবরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবীদের স্ত্রীগণকে মা বলে সম্বোধন করার জন্য বলেছেন। বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচারে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সবচেয়ে বেশি সাহস যুগিয়েছেন এবং সহায়তা করেছেন খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহু।
সাওদা বিনতে জামাআ
মহানবী সাঃ এর স্ত্রীদের নাম বলতে গেলে সাওদা বিন্তে জামাআ নাম আসবে। সাওদা বিনতে জামাআ এর পূর্বে আরেকটি বিয়ে হয়েছিল। তার স্বামীর নাম ছিল আস-সাকরান ।কিন্তু তার স্বামী মৃত্যুবরণ করেন। তাদের সংসার একটি ছেলে সন্তান ছিল। তার নাম ছিল আব্দুর রহমান। তিনি যুদ্ধে নিহত হন। এরপর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম তাঁকে বিবাহ করেন। তিনি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের মধ্যে উম্মুল মোমেনিন মর্যাদায় ভূষিত হন।
- আরো পড়ুনঃ আলোর প্রতিফলন কাকে বলে
আয়েশা বিনতে আবু বক্কর
নবীর তৃতীয় স্ত্রী হচ্ছেন আয়েশা বিনতে আবু বক্কর। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু এর পিতা ছিলেন ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বক্কর রাদিয়াল্লাহু আনহু। মা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ইসলামিক অনেক অবদান রয়েছে। তার অবদান গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অবদান হচ্ছে হাদিস সংগ্রহ করা। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে যখন তার বিবাহ হয় তখন তার বয়স ছিল নয় বছর। তিনি মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন। তাই আল্লাহ তাআলা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মর্যাদা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছেন।
হাফসা বিনতে ওমর
হাফসা বিনতে ওমর ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মেয়ে। মা হাফসা বিনতে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর পূর্বে আরেকটি বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই স্বামীর মৃত্যুবরণ ঘটে। এরপর মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেন। হযরত হাফসা বিনতে ওমর ছিলেন একজন নারী। ইসলামের জন্য তারা প্রত্যেক ছিল আদর্শ স্বরূপ।
জয়নাব বিনতে খুযায়মা
আবদুল্লাহ ইবনে জাহাশ ছিল জয়নব বিনতে খুযায়মা রা: প্রথম স্বামী । তিনি সাহাবীদের সাথে উহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং সেখানে শাহাদাত বরণ করেন। এরপর প্রস্তাবের মাধ্যমে 400 দিরহাম মোহরানা দিয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। কিন্তু এর মাত্র তিন মাস পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
উম্মে সালমা হিন্দ বিনতে আবি ওমাইয়া
তাঁর প্রথম স্বামীর নাম হলো আবু সালামা ইবনে আল আসাদ। তার স্বামী একজন সাহাবী ছিলেন।ইসলামের প্রাথমিক যুগে তিনি এবং তাঁর স্বামী ইসলাম গ্রহণ করেন। তার স্বামী ছিলেন একজন মুজাহিদ। তিনি উহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং মারাত্মকভাবে আহত হয়ে কিছুদিন পর মৃত্যুবরণ করেন। তার চারজন সন্তান থাকায় তিনি খুবই অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। তারপর মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেন।মহানবী হযরত সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ছিলেন তার দ্বিতীয় স্বামী।
- আরো পড়ুনঃ বিজয় দিবসের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা
রায়হানা বিনতে জায়েদ
রায়হানা বিনতে জায়েদ মূলত ছিলেন একজন ইহুদী গোত্রের নারী। কিন্তু তিনি যখন ইসলাম কবুল করলেন তখন মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম তাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেন। তিনি খুব সুন্দর ভাবে ইসলাম প্রচার করেছেন যা নারীদের জন্য আদর্শ।
জয়নাব বিনতে জাহশ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বয়স যখন 57 বছর তখন তিনি 36 বছর বয়স্ক জয়নাব বিনতে জাহশ কে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফুফাতো বোন ছিলেন। জয়নাব বিনতে জাহশ মোট 11 টি হাদিস বর্ণনা করেন।
জুয়াইরিয়া বিনতে আল হারিস
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম 57 বছর বয়সে 20 বছর বয়স্ক এই নারীকে বিবাহ করেন ।তিনি মুস্তালিক যুদ্ধ বন্দী হন। তারপর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তাকে বিয়ে করেন।
উম্মে হাবিবা বিনতে আবু সুফিয়ান
উম্মে হাবিবা বিনতে আবু সুফিয়ান কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ানের কন্যা ছিলেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বয়স যখন 18 বছর তিনি এই 36 বছর বয়সের নারীকে বিয়ে করেন। তাদের দাম্পত্য জীবন ছিল চার বছর। তিনি 65 টি হাদিস বর্ণনা করেন।
সাফিয়া বিনতে হইয়াই
তিনি খাইবার যুদ্ধে পরাজিত হন এবং বন্দী হলে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিবাহ করেন।
মাইমুনা বিনতে আল হারিস
ইনি উম্মুল মুমিনীন হযরত যয়নবের সহোদর বৈপিত্রেয় বোন ছিলেন।মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর বয়স যখন 59 বছর তখন তিনি মায়মুনার বিনতে হারেস কে বিবাহ করেন। তখন মায়মুনা বিনতে আল-হারিস বয়স ছিল 36 বছর। তিনি সর্বমোট 76 টি হাদিস বর্ণনা করেছেন।
মারিয়া আল কিবতিয়া
তিনি মিশরীয় নারী ছিলেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিশরের সম্রাট এর পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে তাকে পাঠানো হয়েছিল।
একথা আমাদের দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস রাখতে হবে যে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন সাধারণ ব্যক্তি ছিলেন না। তিনি নবী এবং আমাদের জন্য আদর্শ । মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদিও একাধিক বিয়ে করেছেন তা আমাদের আলোচনার বিষয় নয়। কারণ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর সাথে যে নারীদের বিয়ে হয়েছে সেগুলো আল্লাহতালার ইশারায় হয়েছে। আমরা শুধু আমাদের নিজেদের মধ্যেমহানবী সাঃ এর স্ত্রীদের নাম বলতে পারি। তারা প্রত্যেকেই বিশেষ গুণের অধিকারী ছিলেন।