5g আসলে কি ? সুবিধা ও অসুবিধা ? কিভাবে আপনার মোবইলে ৫জি চালাবেন?

প্রতিনিয়ত বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কারের ফলে প্রযুক্তির বিশ্ব ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে।  এইতো কিছুদিন আগের কথা মোবাইল ফোনের কথা মানুষ কল্পনাও করতে পারেনি।  কিন্তু আজকাল মোবাইল এর মাধ্যমে কতকিছু করা যাচ্ছে।  এর  অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে 5g এর বিকাশ।  কিন্তু আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা 5g আসলেই কি সে সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণাই রাখিনা।  যদিও হয়তো আমরা 5g ব্যবহার করছি কিন্তু  5g কি সে সম্পর্কে কোন ধারণা নাই।  আজকে আমার এই আর্টিকেলের 5g আসলেই কি সে বিষয়ে সম্পর্কে আপনাদেরকে বিস্তারিত ভাবে জানানোর চেষ্টা করব।  তাহলে যাদের মনে 5g আসলে কি প্রশ্নটিই রয়েছে তারা আমার আর্টিকেলটি পড়ুন এবং 5g আসলে কি সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানুন। 

5g আসলে কি ? 

এখানে g মানে হচ্ছে জেনারেশন।  আর জেনারেশন এর বাংলা হচ্ছে প্রজন্ম।  অর্থাৎ 5g দ্বারা বুঝায় পঞ্চম প্রজন্ম।  প্রজন্ম কথাটি দ্বারা আবার বংশপরম্পরায় বুঝায় না।  এটি হচ্ছে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে একেকটি আবিষ্কারের সময়  ব্যবধান।  যেমন প্রথমে ছিল ওয়ান g, তারপর টুg, থ্রিg, 4g, এখন 5g।  অর্থাৎ বর্তমান প্রজন্মের প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে সেই প্রজন্মটি হচ্ছে পঞ্চম প্রজন্মের

ইলেকট্রনিক্সের ক্ষেত্রে প্রথম সবচেয়ে বেশি উন্নতি হয় 1948 সালে।  কারন সে বছর ইলেক ট্রোনিক্স জগতে ডায়োড ব্যবহার করে ট্রানgস্টর আবিষ্কার করা হয়।  যখন ট্রানgস্টর আবিষ্কার করা হয় তখন ইলেকট্রনিক্স  জগতে একটি  বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়।  এর আগে ভ্যাকুয়াম ডায়োড ব্যবহার করা হতো।  তাই 1948 সালের আগের সময়কে বলা হয় প্রথম প্রজন্ম।  যখন ট্রানgস্টর ব্যবহার করা শুরু হলো অর্থাৎ 1948 সালের পর থেকে এই সময়টাকে বলা হয় দ্বিতীয় প্রজন্ম।  এরপর ট্রানgস্টর ব্যবহার করে যখন আই সি ব্যবহার করা শুরু হলো সেই সময়টাকে বলা হয় তৃতীয় প্রজন্ম।  অনেকগুলো আইসি ব্যবহার করে যখন মাইক্রোপ্রসেসর তৈরি করা হলো সেই সময়টাকে বলা হয় চতুর্থ প্রজন্ম অর্থাৎ ফোরg।  আর যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা শুরু হলো সেই সময়টাকে বলা হচ্ছে পঞ্চম প্রজন্ম বা ফাইভ g।  এখন আপনাদের মনে নিশ্চয়ই 5g  আসলে কী সে সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা হয়েছে।  তবে যদি আরও বিস্তারিত ভাবে 5g সম্পর্কে জানতে চান তবে আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।  আমরা ধীরে ধীরে আপনাদেরকে আরও  বিস্তারিত ভাবে জানাবো 5g আসলে কি। 

5g এর সুবিধা

আপনি যেহেতু জানতে চান 5g আসলে কি,  এই প্রশ্নের মধ্যেই আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে 5g এর সুবিধা সমূহ। ।  5g এর সুবিধা সমূহ যদি আপনি না জানতে পারেন তাহলে কেন আপনি পাবg ব্যবহার করবেন।  তাই 5g এর সুবিধা সমূহ নিচে সংক্ষিপ্তভাবে তুলে  ধরছি। 

  • 5g এর সুবিধা হচ্ছে ইন্টারনেট স্পিড।  5g তে বিপুল পরিমাণ ইন্টারনেট স্পিড পাওয়া যায়।  আপনি খুব দ্রুত গতিতে কোন ভিডিও অথবা অডিও আপলোড অথবা ডাউনলোড করতে পারবেন।  যে সুবিধাটি এবং 3g এবং 4g তে এত দ্রুত করতে পারবেন না। 
  • 5g তে যেহেতু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হয় তাই প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিপুল পরিবর্তন আনবে এই ফাইভ g। 
  • কমিউনিকেশন টেকনোলg বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে, এতে অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে প্রযুক্তিনির্ভর অথবা ইন্টারনেট নির্ভর।  
  • অনেক দ্রুত বড় বড় ফাইল একটি কম্পিউটারের ডিভাইস থেকে অন্য কম্পিউটারে ডিভাইসে ট্রান্সফার করা যাবে। 

4g এবং 5g এর মধ্যে পার্থক্য

 ফোরg এবং 5g এর মধ্যে ইন্টারনেট স্পিড এর কথা যদি বিবেচনা করেন সেটাও তো বিপুল পরিমাণ।  তবে এ ছাড়াও কিছু প্রযুক্তিক পার্থক্য রয়েছে।  যেমন 4g তে আপনার ভয়েজ রিকগনাইজ করে আপনি অনেক কিছুই করতে পারেন।  5g তে এমন কিছু ব্যাপার আসবে যে হয়তো আপনি কোন রেস্টুরেন্টে বসে রয়েছেন এবং কোন মেনুর দিকে তাকিয়েছেন আপনার সেই দৃষ্টিকে লক্ষ্য করেই আপনার অর্ডার চলে যাবে রেস্টুরেন্টে।  অর্থাৎ সবকিছু স্মার্ট হয়ে যাবে।  আমাদের জীবনযাত্রা আরো উন্নত থেকে উন্নততর হবে।  যেহেতু 4g এর সাথেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে 5g তৈরি করা হয়েছে তাই আপনি যখন 5g ব্যবহার করবেন দিনদিন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন নতুন মাত্রা যোগ হবে।  

ভারতে প্রথম 5g  যাত্রা শুরু করে

ভারতে প্রথম 5g টেকনোলg লঞ্চ করে এয়ারটেল।  তারপর শুরু করে রিলায়েন্স জে আই ও।  বর্তমানে 5g ব্যবহার উপযোগী ফোন বেরিয়েছে।  ইতিমধ্যে স্যামসাং এবং রেডমি সহ বিভিন্ন নামিদামি এন্ড্রয়েড ফোন কোম্পানি তাদের 5g মোবাইল লঞ্চ করেছে।  কিন্তু সর্বপ্রথম গোটা বিশ্বে দক্ষিণ কোরিয়া 5g কানেক্টিভিটি নিয়ে আসে।  

বাংলাদেশে প্রথম 5g  যাত্রা শুরু করে

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানিয়েছেন, ১২ ডিসেম্বর ২০২১ ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসের দিনে ৫জি’র যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে সীমিত আকারে টেলিটকের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে এই সেবা চালু করা হচ্ছে। পরবর্তীতে অন্য মুঠোফোন অপারেটরদের জন্য ৫জি তরঙ্গ নিলাম করা হবে।

যে সকল প্রযুক্তি নিয়ে 5g গঠিত

5g প্রযুক্তি মোটামুটি পাঁচটি প্রযুক্তি নিয়ে গঠিত।  5g আসলে কি এটি জানতে হলে নিচের প্রযুক্তিগুলো সম্পর্কে জানতে হবে।  তবে এখানে শুধু প্রযুক্তিগুলোর নাম উল্লেখ করা হলো।  

  • মিলিমিটার ওয়েব
  • স্পিড সেল
  • ম্যাক্সিমাম মিমো
  • ফুল ডুপ্লেক্স
  • 5g নেটওয়ার্ক ফ্রিকুয়েন্সি

 আমরা এখানে প্রশ্ন করেছি 5g আসলে কি।  অপ 5g এর সাথে নেটওয়ার্ক ফ্রিকুয়েন্সি ব্যাপারটা জড়িত।  5g আসলে কি জানতে হলে আপনাকে জানতে হবে 5g কি পরিমান নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছে।  5g সাধারণত বেশ কয়েকটি বর্ণালী ব্যবহার করে।   5g   আল্ট্রা ওয়াইডব্যান্ড,ভেরি জনের মিলিমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্য এর ভিত্তিতে কাজ করে।  5g সাধারণত 28 গিগাহার্জ এবং 39 গিগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সি তে কাজ করে।  5g এর নেটওয়ার্ক সাধারণত ফোরg থেকে অনেকটাই জটিল প্রকৃতির।  5g নেটওয়ার্ক যে কোন ডেটা স্থানান্তর করতে সাধারণত 7 সম্মেলন থেকে 25 মেগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে থাকে।  তাই এটা বলা যায় 5g এর ফ্রিকুয়েন্সি ব্যবহার করার হার অনেক বেশি।  তাই 5g অনেক উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে থাকে। 

5g ব্যবহার করার জন্য যে সিম প্রয়োজন

এদেশে 5g নেটওয়ার্ক সার্ভিস আসার আগেই 5g সার্ভিস দেওয়ার মতো মোবাইল ফোন চলে এসেছে বাজারে।  তবে 5g ব্যবহার করার জন্য শুধু 5g ব্যবহার উপযোগী মোবাইল ফোন করলেই চলবে না সেই সাথে 5g ব্যবহার উপযোগী সিমকার্ড ও লাগবে।  বর্তমানে আমরা সাধারণত টুg থ্রিg এবং 4g সিম ব্যবহার করছি।  তবে বাজারে যে 5g সিম আসবে তাতে 4g এর আকারের সাথে তেমন কোন পার্থক্য থাকবে না।  তবে এটা জানা যাচ্ছে যে আমরা বর্তমানে যে ফোরg সিম ব্যবহার করছি তার মাধ্যমেই নাকি ফাইভ g সেবা ব্যবহার করা যাবে।  কারণ সিমের ভিতর আসলে তেমন কোন প্রযুক্তি থাকে না।  সিমের ভিতরে শুধু একটাই উনিক আইডি থাকে।  এই ইউনিক আইডি ব্যবহার করে সাধারণত আমরা মোবাইল ফোনের প্ল্যান্টি এক্টিভেট করি।  এমন হতে পারে যে 5g ব্যবহার করার জন্য আমাদের নতুন কোন সিম নাও লাগতে পারে। 

5g এর ক্ষতিকারক দিক সমূহ

5g ব্যবহারের ফলে যেমন আমাদের বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে তেমনি কিছু অসুবিধাও রয়েছে।  আমরা জানতে চেয়েছি 5g আসলে কি।  5g আসলে কি তা জানার সাথে সাথে আমরা জানবো 5g এর কি কি ক্ষতিকর দিক রয়েছে।  সব ক্ষতিকর দিক তো আর এখানে উল্লেখ করা সম্ভব হবে না।  তবে বিশেষ বিশেষ কয়েকটি ক্ষতিকর দিক এখানে উল্লেখ করা হলো। 

  • একটি গবেষণা বলছে যে মোবাইল ফোন প্রযুক্তিতে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন ব্যবহার করা হয় তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং 5g ব্যবহারের ফলে সেটা আরো বিপুল পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।  5g ব্যবহারের ফলে এই উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রেডিয়েশন এর মাধ্যমে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। 
  • 2018 সালের মার্কিন স্বাস্থ্য বিভাগের প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে যেসকল ইঁদুর উচ্চমাত্রার ফ্রিকোয়েন্সি রেডিয়েশনের সংস্পর্শে রয়েছে তাদের কিছু ক্যান্সার টিউমার হয়েছে।  বিজ্ঞানীদের ধারণা  যে 5g এর রেডিয়েশন এর মধ্যে ইঁদুরগুলোকে রাখার কারণে সাধারণত তাদের এ ধরনের ক্যান্সার হয়েছে। 

আর্টিকেল এর মূল বিষয়বস্তু ছিল 5g আসলে কি।  যেহেতু 5 একটি নতুন প্রযুক্তি সেজন্য এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট গবেষকগণ ব্যতীত কেউ খুব ভালো ধারণা দিতে পারবে না।  তবে ইন্টারনেটের বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে যতটুকু সম্ভব আমি জানানোর চেষ্টা করেছি 5g আসলে কি। 


Md.Mahmud

আমার নাম মোঃ মাহমুদুল হাসান বাবু । আমি পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি। এবং ইনফরমেশন টেকনোলজি বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি । আমি বিজ্ঞান এবং টেকনোলজি নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি । আমি আমার কাজের ফাঁকে ফ্রিল্যান্সিং ব্লগে লেখালেখি করি। 01921822498

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads