সিভি এর ফুল মিনিং হচ্ছে কারিকুলাম ভিটা। আর এর বাংলা হচ্ছে জীবন বৃত্তান্ত। আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সিভি এর প্রয়োজন হয়ে থাকে। যেমন আপনি যদি কোথাও চাকরির এপ্লাই করতে চান তখন আপনাকে সিভি এর প্রয়োজন হবে। এছাড়াও নিজেকে কারো কাছে উপস্থাপন করতে গেলে সিবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই আজকে আমাদের আর্টিকেল হচ্ছে সিভি লেখার নিয়ম সম্পর্কে। যারা সিভি লেখার নিয়ম সম্পর্কে জানেন না তারা আমাদের এই আর্টিকেলটি আজকে পড়ে দেখতে পারেন। যদি আপনি সিভি লেখার নিয়ম এই পুরো আর্টিকেলটি পড়েন তাহলে অবশ্যই আপনি সিভি লিখতে পারবেন বলে মনে করি ।
সিভি লেখার নিয়ম
আপনি অনেক যোগ্যতা অর্জন করেছেন কিন্তু তা যদি উপস্থাপন করতে না পারেন তাহলে আপনি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আপনি নিজেকে অন্যের কাছে গ্রহণযোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করার উত্তম একটি মাধ্যম হচ্ছে সিবি। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই সিভি কিভাবে লিখতে হয় সেটা না জেনে নিজেকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে এবং গ্রহন যোগ্যতা হারায়। যেহেতু যারা চাকরি তে লোক নিয়োগ করে থাকেন তারা অল্প সময়ের মধ্যে অধিক সংখ্যক সিভি দেখে থাকেন। তাই তাদের হাতে সময় থাকে না আছে প্রত্যেকটা ছবি খুব সুন্দর করে দেখার। তাই আপনার সিভি লেখার নিয়ম এমন হতে হবে যেন অল্প সময়ের মধ্যেই একজন নিয়োগকারী আপনার সমস্ত তথ্য দেখে নিতে পারে এবং আপনার প্রতি খুশি হন।
আরো পড়ুনঃ অফিসিয়াল ফোন চেনার উপায়
সিভির ফরমেট
- চাকরির জন্য অসাধারণ তো এক অথবা দুই পেজের সিভি বানানোর যথেষ্ট
- ফন্টের আকার বেছে নিন 11 অথবা 12 এর মধ্যে
- এ ফোর সাইজের কাগজ ব্যবহার করুন
- যদি বিশেষ কোনো দরকার না থাকে তবে সিভির ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা রাখুন
নাম ও যোগাযোগের ঠিকানা
আপনি সিভি শুরু করার প্রথমেই আপনার নাম এবং যোগাযোগের ঠিকানা দিয়ে দিতে পারেন। অনেকেই সিভি এর উপরে সিভি বা কারিকুলাম ভিটা কথাটি লিখে দেয়। এটি করা ঠিক নয়। হতে পারে যে আপনি আপনার নিজের নাম বড় করে সিভির উপরে লিখে দেন। আপনি যে যোগাযোগের ঠিকানা টি দিবেন সেটি যেন স্পষ্ট হয় এবং সঠিক হয়। সিভির উপরে যে নাম লিখবেন এবং সে নামের ফন্ট যেন সুন্দর হয় এবং একটু বোল্ড করা বা বড় করা থাকে তাহলে সহজেই বুঝা যায়। আপনার সিভি তে যদি কোন মোবাইল নাম্বার দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে তবে মোবাইল নাম্বার দিয়ে দিন। তাহলে তাদের যোগাযোগ করতে সুবিধা হবে। এছাড়া যদি কোন লিংক দিতে চান তবে লিংক দিয়ে দিতে পারেন। সেই লিঙ্কে গিয়ে তারা আপনার সম্পর্কে আরো ভালোভাবে ধারণা নিতে পারবে।
ছবি
আপনি আপনার সিভি তে সাম্প্রতিক তুলা একটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি দিয়ে দিবেন। কখনোই ফেসবুকে ব্যবহার করা বা অন্য কোথাও ব্যবহার করা তুলা ছবি দিবেন না। ছবিটা অবশ্যই স্পষ্ট হতে হবে এবং ঝকঝকে হতে হবে হবে। ছবিতে খুব বেশি এডিটিং করতে যাবেন না যেন আপনার চেহারাই বোঝা না যায়। এবং ছবিতে আপনার পোশাক যেন সুন্দর হয়।
শিক্ষাগত যোগ্যতা
সিভি লেখার নিয়ম সম্পর্কে আমরা আলোচনা করছি। কারণ ছবিটা যেন অনেক সুন্দর হয় এবং আপনি যে চাকরিতে সেটা দিচ্ছেন সেখানে জন্য গ্রহণযোগ্য হয়। কিন্তু এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো তারা আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার ব্যাপারটা আগে দেখবে। তাই আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়ে তথ্যগুলো উপস্থাপন করবেন তা যেন অনেক সুন্দর হয়। আপনি সর্বশেষ যে প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা লাভ করেছেন সেই প্রতিষ্ঠান শিক্ষা আপনি সবার উপরে দিবেন এবং ধীরে ধীরে আপনি ক্রমানুসারে এর আগের শিক্ষার তথ্য গুলো দিবেন। যখন আপনি আপনার কোনো সার্টিফিকেট এর কথা উল্লেখ করবেন তখন সেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার সাল, জিপিএ, কোন ভোর থেকে পড়াশোনা করেছেন সবগুলো তথ্যই সুন্দরভাবে দিয়ে দিবেন।
আরো পড়ুনঃ ফেসবুক আইডি নিরাপদ রাখার উপায়
ভাষা দক্ষতা
একটি কর্পোরেট অফিসে যদি আপনি চাকরি করতে চান সে ক্ষেত্রে ভাষা দক্ষতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মনে করি ইংরেজিতে কথা বলতে পারি তবে আর কি চাই। কিন্তু মনে করুন আপনি যে বাংলা ভাষায় কথা বলছেন সেখানে আঞ্চলিকতা চলে আসছে। আপনি সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারছেন না। এমন আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা বাংলা ভাষার উপর বিভিন্ন কোর্স সম্পন্ন করেছে যেন প্রমিত বাংলা বলতে লিখতে এবং পড়তে পারে খুব সুন্দর ভাবে। এছাড়া ইংরেজি ভাষা দক্ষতার ক্ষেত্রে অনেকেই আইএলটিএস সহ বিভিন্ন ধরনের কোর্স সম্পন্ন করেছে। ভাষাগত দক্ষতা বিচারে আপনার চাকরির যোগ্যতার ক্ষেত্রে এই পোস্ট গুলোর নাম দিয়ে দিতে পারেন।
কম্পিউটার দক্ষতা
বর্তমান সময়টা এমন হয়েছে যে কম্পিউটার ছাড়া আসলে কোন অফিস কল্পনা করা যায় না। তাই যদি কোন চাকরির সার্কুলারে কম্পিউটার দক্ষতার কথা উল্লেখ করে নাও থাকে তারপরও তারা চায় যে লোককে আমরা নিয়োগ দেবো সেই যেন কম্পিউটারে পারদর্শী হয়ে থাকে। তাই কম্পিউটার সম্পর্কে জানতে হবে এবং কম্পিউটার চালনায় দক্ষ হতে হবে। তাই আপনি আপনার সিভি লেখার সময় কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কম্পিউটার কোর্স সম্পন্ন করেছেন সেই কম্পিউটার কোর্সের নাম সময় উল্লেখ করে দিতে পারেন। এবং সেখান থেকে কী কী শিখেছেন যেমন মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এক্সেল পাওয়ার পয়েন্ট ইত্যাদির নাম দিয়ে দিতে পারেন। এছাড়া ভিডিও এডিটিং বা ফটোশপের উপর ভালো দক্ষতা আছে তখন এগুলো দিয়ে দিতে পারেন।
রেফারেন্স
যদি আমরা অনেকেই ব্যাপারটা কি গুরুত্ব দেই না তারপরও রেফারেন্স অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। আমরা শুধু মনে করি আমাদের যোগ্যতায় আমাদের চাকরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আপনি যোগ্যতা অর্জন করেছেন কিন্তু কারো রেফারেন্স দিলেন না সে ক্ষেত্রে কোম্পানি আপনার ওপর যথেষ্ট বিশ্বাস আনতে পারবে না। কারণ কোম্পানির এত বড় বড় হিসাব আপনার কাছে থাকবে সেক্ষেত্রে আপনাকে বিশ্বাস করার জন্য একজন বিশ্বাসী লোক অথবা গুরুত্বপূর্ণ লোকের সাথে আপনার সম্পর্ক সম্পর্কে জানতে চাইতে পারে। তাই একজন বিশ্বস্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির রেফারেন্স দেন যেন আপনার প্রতি তাদের বিশ্বাস আরো বেড়ে যায়। তবে যা রেফারেন্স দিবেন তার কাছ থেকে অবশ্যই অনুমতি নিয়ে তারপর তার রেফারেন্স দিবেন। রেফারেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে তার নাম ফোন নাম্বার ইমেইল ও তার প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ ফুটবল খেলার নিয়ম, ইতিহাস বিস্তারিত আলোচনা
প্রাসঙ্গিকতা
সিভি লেখার নিয়ম এর ক্ষেত্রে প্রসঙ্গে কথা হচ্ছে আপনি যে প্রতিষ্ঠান যে বিষয়ে চাকরি করতে চান আপনার যোগ্যতা যেন সেই বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়। আপনি যে বিষয়ে তাদের কর্মী দরকার নেই সেই বিষয়ে আপনার পারদর্শিতা প্রকাশ করেন সেক্ষেত্রে আপনি তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। তাই তাদের চাওয়ার সাথে আপনার লেখার বিষয়গুলো মিল রাখুন।
অভিজ্ঞতা
অভিজ্ঞতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানই চায় তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য অভিজ্ঞ লোক থাকে এবং প্রতিষ্ঠান সাফল্যের সাথে তারা জড়িত থাকেন। তাই আপনি আগে আপনি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন সেখানে অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বর্ণনা করতে পারেন। সেখানে কোন পদে চাকরি করেছেন এবং কতদিন চাকরি করেছেন সেগুলো অবশ্যই উল্লেখ করবেন।
সিভি লেখার ক্ষেত্রে সর্তকতা
সিভি লেখার সময় আপনার বানানের প্রতি এবং কোন ফন্টে সিভি লিখছেন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ ত্রুটিপূর্ণ সিবি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সিভিতে অতিরিক্ত বিশেষণ লাগাতে যাবেন না। কারণ অতিরিক্ত বিশেষণ আপনাকে চাটুকারিতার জায়গায় নিয়ে যেতে পারে। আরসিবি তে আপনি যে তথ্যগুলো দিবেন যেমন ফেসবুকের তথ্য দিলে আপনার ফেসবুকটা এমন হতে হবে যেন সেটা আপনার সিভিকে সহায়তা করে। আপনি ফেসবুকে কি ধরনের প্রোফাইল পিকচার দিয়ে রেখেছেন এবং কি ধরনের বিষয়গুলো পোস্ট করেন সেই ব্যাপার গুলো তারা নজরদারি করতে পারে। তাই ফেসবুকে আপনার দ্বিতীয় প্রোফাইল হিসেবে নিতে পারেন।