ইউনিক আইডি কি?
বাংলাদেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের সাধারণত জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয় অর্থাৎ যখন প্রত্যেকটি নাগরিকের বয়স 18 বছর পূর্ণ হয় তখন তাদেরকে একটি জাতীয় পরিচয় পত্র প্রদান করা হয়। এছাড়াও পাসপোর্ট এর জন্য আলাদা নাম্বার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বর্তমান সরকার একটি ইউনিক আইডি তৈরির প্রক্রিয়া চালু করেছে। এই ইউনিক আইডির বিতর প্রত্যেকটি নাগরিকের সমস্ত তথ্য থাকবে।
একটি শিশু যখন জন্ম গ্রহণ করবে জন্মের সাথে সাথে তার একটি ইউনিক আইডি প্রদান করা হবে। এই ইউনিক আইডির মাধ্যমেই শিশুটি স্কুলে ভর্তি হবে। কারো যদি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন পড়ে তবে এই ইউনিক আইডির মাধ্যমে হাসপাতালে ভর্তি হতে পারবে। এই ইউনিক আইডির মাধ্যমে হাসপাতালে তার যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। প্রয়োজনীয় মুহূর্তে যেকোনো সময় এই ইউনিক আইডি এর মাধ্যমে হাসপাতাল থেকে সমস্ত তথ্য উত্তোলন করা যাবে। অর্থাৎ একটি নাগরিকের যাবতীয় সমস্ত তথ্য একটি ইউনিক আইডি এর মাধ্যমে সম্পাদন করা হবে।
- আরো পড়ুনঃ ওমরা হজ্জ করতে কত টাকা লাগে ২০২২
বর্তমান সরকার শিক্ষার্থীদের জন্য ইউনিক আইডি চালুর ব্যবস্থা করেছে। অর্থাৎ প্রাথমিকভাবে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য ইউনিক আইডির ব্যবস্থা করা হবে। এই প্রকল্পের ম্যাচ ছিল ২০১৯ সাল পর্যন্ত কিন্তু এর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। এই ইউনিক আইডির মাধ্যমে একটি শিক্ষার্থী তার যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করবে, শিক্ষার্থীর যাবতীয় তথ্য অর্থাৎ তার এডুকেশনাল কোয়ালিফিকেশনের যাবতীয় তথ্য এই ইউনিক আইডির মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হবে।
শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি সম্পর্কে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য
ইউনিক আইডি কি এবং ইউনিক আইডি কি কাজে লাগবে সে বিষয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বেশ কিছু তথ্য শেয়ার করেছেন। যেমন তারা বলেছেন এ বছরই ইউনিক আইডি তৈরীর কাজ পুরোদমে শুরু হয়ে গিয়েছে এবং আগামী বছরের মধ্যেই ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীদের হাতে ইউনিক আইডি তুলে দেয়া হবে। যে সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় এক কোটি 60 লক্ষ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ডাটা এন্ট্রি শুরু হওয়ার কথা চলছে। প্রথম পর্যায়ে প্রায় 80 টি বিদ্যালয়ের ইউনিক আইডি তৈরির প্রকল্প শুরু হবে। তারপর প্রকল্প যদি সফলতা লাভ করে তবে ধীরে ধীরে দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইউনিক আইডি তৈরির কাজ শুরু হয়ে যাবে। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি তৈরির বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মুহাম্মদ শামসুল আলম সাহেব বলেন কভিদ 90 পরিস্থিতির জন্য ইউনিক আইডি তৈরির কাজ কিছুটা বিলম্ব হলেও ধীরে ধীরে আমরা কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি এবং আগামী বছরের শুরুতেই 16000000 শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইউনিক আইডি তুলে দেয়া সম্ভব হবে।
- আরো পড়ুনঃ মোবাইলে আবহাওয়ার খবর
ইউনিক আইডি তৈরিতে দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠান
ইউনিক আইডি তৈরিতে দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠানটি। তাদের মধ্যে একটি হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং অন্যটি হচ্ছে ব্যানবেইস।
ইউনিক আইডি সম্পর্কিত ডাটা এন্ট্রির জন্য ব্যানবেইসের নির্দেশনা
ব্যানবেইস ইউনিক আইডি তৈরীর জন্য যে সকল ডাটা এন্টি তৈরি করতে হবে সে বিষয়ে চারটি নির্দেশনা দিয়েছেন। নিচে সংক্ষিপ্ত ভাবে নির্দেশনা গুলো দেওয়া হল।
- 2022 সালের ষষ্ঠ শ্রেণীতে যারা অধ্যয়ন রয়েছে সে সকল শিক্ষার্থীদের তথ্য ফরম পূরণ করার কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
- 2021 সালে যে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে পড়াশোনা করেছে সেই ক্লাস থেকে তার ডাটা এন্ট্রি করতে হবে। অর্থাৎ যে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আছে সেই ক্লাসেই তার বিবেচনা করা হবে। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ জানান প্রকল্প পুরোপুরি কাজটা শেষ করতে 160 কোটি টাকার মতো প্রয়োজন হবে এবং পুরো টাকাটা সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে কোনো বিদেশী দাতা সংস্থা বা অন্য কোনো সরকারের তহবিল নেই। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ জানান যে সাধারণত 17 বছর বয়স পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর ইউনিক আইডি তৈরি করা হবে এবং 18 বছর বয়সের প্রাপ্ত হলে জাতীয় পরিচয় পত্র হিসেবে গণ্য হবে।
- প্রতিটি শিক্ষার্থীর অভিভাবক এর জন্ম নিবন্ধন অবশ্যই 17 ডিজিটের হতে হবে। অর্থাৎ যাদের জন্ম নিবন্ধনের 13 ডিজিট রয়েছে তারা 13 ডিজিটের সামনে জন্মসাল দিয়ে দিলেই হয়ে যাবে।
- শিক্ষার্থীর জন্ম তারিখের পর যদি তার নাম প্রদর্শিত না হয়তো অন্য কোন তথ্য দেয়া যাবে না অর্থাৎ সেভ হবে না।
শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি তৈরি করার জন্য যে সকল তথ্য দিতে হয়
- শিক্ষার্থীর সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের 2 কপি ছবি। ছবিটা এমন ভাবে তুলতে হবে যেন দুটি চোখে দৃশ্যমান হয় এবং ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড অবশ্যই সাদা কালার থাকতে হবে। ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ে তোলা হতে হবে।
- শিক্ষার্থীর জন্ম নিবন্ধন এর সনদ অথবা তার ফটোকপি দিতে হবে
- শিক্ষার্থীর পিতামাতা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে যে অভিভাবক রয়েছে তাদের পরিচয় পত্রের ফটোকপি দিতে হবে
- শিক্ষার্থীর পিতামাতা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে তাদের জমি বন্ধক রয়েছে তাদের জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি দিতে হবে।
ইউনিক আইডি তৈরি করতে যে সকল তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করতে হয়
আমাদের প্রশ্ন ছিল ইউনিক আইডি কি। আমরা সকলেই মোটামুটি বুঝতে পেরেছি ইউনিক আইডি কি। এখন ইউনিক আইডি তৈরি করতে কি কি তথ্য দিতে হয় সে সম্পর্কে যদি আপনার জানতে ইচ্ছা হয় তবে নিচের তথ্যগুলো পড়তে পারেন।
- আরো পড়ুনঃ মোবাইল নাম্বার দিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্র
ইউনিক আইডি তৈরি করার জন্য যেফরম দেয়া হবে সেই ফর্মে শিক্ষার্থীর নাম, শিক্ষার্থীর জন্ম নিবন্ধন নম্বর, শিক্ষার্থীর বাসস্থান, জেন্ডার, জাতীয়, ধর্ম, অধ্যায়নরত শ্রেণি, রোল নাম্বার, বৈবাহিক অবস্থা, রক্তের গ্রুপ, কোন ক্ষুদ্রনীগোষ্ঠী কিনা, এবং বাবা-মা সহ বেশকিছু খালিঘর পূরণ করতে হবে, ফর্মে যে বৈবাহিক অবস্থা অপশনটি রয়েছে সেই অপশনে বেশকিছু তথ্য থাকবে যেখানে আপনাকে বাছাই করতে হবে। যেমন বৈবাহিক অবস্থা ক্ষেত্রে রয়েছে অবিবাহিত, বিবাহিত, বিধবা, বিপত্নীক, স্বামী স্ত্রী সহবাস, এছাড়াও তালাকপ্রাপ্ত এবং বিচ্ছেদ জনিত যদি কোন সমস্যা থাকে সেই ঘর রয়েছে এই ফর্মে।
ইউনিক আইডি সম্পর্কিত কয়েকটি সাধারণ প্রশ্ন
** ইউনিক আইডি তৈরি করতে কী জন্ম নিবন্ধন এর প্রয়োজন হয়?
অবশ্যই ইউনিক আইডি তৈরি করার জন্য শিক্ষার্থীর জন্ম নিবন্ধন সনদ জমা দিতে হবে। এই জন্ম নিবন্ধন সনদ অনলাইন কপি হলেও চলবে। যদি কারো জন্ম নিবন্ধন না থাকে তবে দ্রুত সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে গিয়ে জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি করা জরুরী।
** পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে কি ইউনিক আইডি হবে না?
সাধারণত পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র যদি না থাকে তবে ইউনিক আইডি করা যাবে না।
**ইউনিক আইডি দিয়ে কি সিম কেনা যাবে?
না ইউনিক আইডি সাধারণত সিম কেনার জন্য নয়
**ইউনিক আইডি এবং জাতীয় পরিচয় পত্র কি একই জিনিস?
না। ইউনিক আইডি এবং জাতীয় পরিচয় পত্র একই জিনিস না। ইউনিক আইডি সাধারণত প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থী থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা পাবে। পর্যায়ক্রমে ইউনিক আইডি তাদের জন্য জাতীয় পরিচয় পত্রে রূপান্তরিত হবে।
**ইউনিক আইডি কি বাংলাদেশের সকল শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক
হ্যাঁ। ইউনিক আইডি বাংলাদেশের সকল শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ইউনিক আইডি গ্রহণ করতে হবে কারণ এই ইউনিকোডের মাধ্যমে তার সকল তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। এমনকি শিক্ষার্থীকে যে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে সেই সার্টিফিকেট ও তার পরিচয় হিসেবে তার ইউনিক আইডি নাম্বার ব্যবহার করা হবে।
আজকের আর্টিকেলে আমরা জানলাম ইউনিক আইডি কি সম্পর্কে। যেহেতু ইউনিক আইডি একটি নতুন ধারণা তাই ইন্টারনেটে খুব বেশি একটা তথ্য পাওয়া যায় না। তারপরেও বিভিন্ন ভাবে আমি আপনাদের ইউনিক আইডি সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করলাম। ইউনিক আইডি কি সম্পর্কে যদি কোনো অসঙ্গতি থাকে তবে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর ইউনিক আইডি কি এব্যাপারে ধীরে ধীরে আরও বেশি তথ্য জনসাধারণের সামনে আসবে যেহেতু খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ইউনিক আইডি।