জুনায়েদ বাবুনগরী |
জুনায়েদ বাবুনগরী
বাংলাদেশের জনপ্রিয় যতজন ইসলামী ব্যক্তিত্ব রয়েছে তাদের মধ্যে জুনায়েদ বাবুনগরী অন্যতম। সাধারণত হেফাজত ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর জুনায়েদ বাবুনগরী আলোচনায় আসেন। বাংলাদেশ কউমি মাদ্রাসা এক জগতে তিনি ব্যাপক ভাবে জনপ্রিয় এবং আলোচিত একজন ব্যক্তিত্ব । ইসলামী শিক্ষার বিকাশ,দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ,হকেরপক্ষে আওয়াজ দেওয়া এবং নাস্তিক্যবাদবিরোধী গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাই আজকে জুনায়েদ বাবুনগরী সম্পর্কে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব।
জুনায়েদ বাবুনগরীর জন্ম ও বংশ পরিচয়
জুনায়েদ বাবুনগরী 1953 সালের 8 অক্টোবর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার বাবুনগর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জুনায়েদ বাবুনগরীর পিতার নাম আবুল হাসান এবং মায়ের নাম ফাতেমা খাতুন। তার নানার নাম হাসান বাবুনগরী।
জুনায়েদ বাবুনগরীর শিক্ষাজীবন
তার প্রাথমিক পড়াশোনা শুরু হয় আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম মাদ্রাসায়। 1976 সালে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে দাওরা হাদিস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। তারপর উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি পাকিস্তানে গমন করেন এবং সেখানে হাজার 976 সালে করাচিতে জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়া মাদ্রাসার উচ্চতর হাদিস গবেষণার জন্য ভর্তি হন। দুই বছর পর সেখানে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী হন।
আরো পড়ুনঃ ২০২৩ বিপিএল সময়সূচী
জুনায়েদ বাবুনগরী কর্মজীবন
হাজার 978 সালের শেষের দিকে তিনি বাংলাদেশে এসে মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। 2003 সালে তিনি দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসায় যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হন। 2020 সালের মাদ্রাসার কমিটি সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। 2020 সালে যখন মাদ্রাসার ছাত্র আন্দোলন শুরু হয় তখন শাহ আহমদ শফী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে মাদ্রাসার দায়িত্ব মজলিসে শুরা কি দেন। পরবর্তীতে বাবুনগরীসহ তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি গঠিত হয় এবং সেই কোম্পানিতে জুনায়েদ বাবুনগরী শাইখুল হাদিস শিক্ষা সচিব হিসেবে যোগদান করেন।
জুনায়েদ বাবুনগরীর পরিবারবর্গ
জুনায়েদ বাবুনগরীর বিবাহিত জীবনে 5 মেয়ে ও এক ছেলের জনক। তিনি ছেলের নাম রাখেন মোহাম্মদ সালমান। তার পরিবারকে তিনি ইসলামিক বিষয় শিক্ষা দীক্ষা প্রদান করেছেন। পরিবারের সকলেই ইসলামিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত।
জুনায়েদ বাবুনগরীর লেখা বই
জুনায়েদ বাবুনগরী বাংলা উর্দু আরবি ভাষায় প্রায় 30 টি গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনা করেন। তার বেশ কয়েকটি বক্তিতা সংকলন রয়েছে।
হাদিস বিষয়ে জুনায়েদ বাবুনগরীর গভীর জ্ঞান
হাদিস জুনায়েদ বাবুনগরী গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। কেউ যদি হাদিস বিষয়ে তাকে জটিল কোনো প্রশ্ন করত তিনি সেই প্রশ্নগুলো সহজ সরল উত্তর প্রদান করতেন। উর্দু ভাষায় তাঁর লিখিত শরীয়তের দৃষ্টিতে দাড়ি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।
ভাস্কর্য বিরোধী আন্দোলন
আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর জুনায়েদ বাবুনগরী যখন হেফাজতে ইসলামের দায়িত্বে আসেন তখন থেকেই সরকারের সাথে হেফাজত ইসলামের দূরত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ সময় তাদের বিভিন্ন বক্তব্য আলোচনায় আসে। বাংলাদেশ ইসলামী দলগুলোর ভাস্কর্য বিরোধী আন্দোলনের সময় জুনায়েদ বাবুনগরীর জোরালো সমর্থন ছিল। তিনি বাস করছে বিরোধী আন্দোলনে সরাসরি যোগ দিয়েছিলেন এবং নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই ভাস্কর্যের বিরোধী আন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য ছিল যার নির্মাণে তিনি বিরোধিতা করেছিলেন।
আহমদ শফী ও হেফাজতের সাথে সম্পর্ক
2013 সালে ইসলামবিদ্বেষী বিভিন্ন নাস্তিকদের আগ্রাসী আস্ফালন নাস্তিকদের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন জুনায়েদ বাবুনগরী। এসময় হেফাজত ইসলামের প্রধান আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সাথে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন সংগঠনের দায়িত্বে থাকাকালে। তাদের নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে এবং 13 দফা দাবির জন্য শাপলা চত্বরে লংমার্চের নেতৃত্ব দিয়েছেন আল্লামা শাহ আহমদ শফীর পাশে থেকে।
হেফাজতের নতুন কমিটি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ আসার সময় মোদি বিরোধী আন্দোলনে হেফাজত আন্দোলন অংশগ্রহণ করে। এ সময় হেফাজত ইসলামের বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যাপক সহিংসতা এবং করে সংগঠনটি যথেষ্ট চাপের মুখে পড়ে। নানা আলোচনা-সমালোচনা বিতরকের মুখে হেফাজত ইসলামের কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে বলেছিলেন জুনায়েদ বাবুনগরী এডহক কমিটি করেছিলেন ।
যেসব প্রতিষ্ঠান এর দায়িত্ব পালন করেছেন
জুনায়েদ বাবুনগরী ছিলেন ইসলামী ব্যক্তিত্ব গণের মধ্যে অন্যতম। তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর আমীরের দায়িত্ব পালন করেছেন। দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসা শিক্ষা সচিব সাইকুল হাদিস ছিলেন। জুনায়েদ বাবুনগরী বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ এর সহ-সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। জুনায়েদ বাবুনগরী চট্টগ্রাম নূরানী তা'লীমুল কুরআন বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং মাসিক মুঈনুল ইসলামের প্রধান সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও তিনি নজিরহাট বড় মাদ্রাসার মুতাওয়াল্লি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দাওয়াতুল হকের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
আরো পড়ুনঃ অঙ্গীকারনামা বা দলিল লেখার নিয়ম
জুনায়েদ বাবুনগরীর জীবনযাপন
জুনায়েদ বাবুনগরী একেবারেই সহজ জীবন যাপন করতেন। তিনি দেশের বিভিন্ন মাহফিলে বক্তব্য রাখেন। বিভিন্ন বক্তব্যে তিনি বলতেন” হক্বের উপর যেন থাকতে পারি, হক্বের উপর যেন মরতে পারি, হক্বের উপর থাকলে জেল-জুলুম সহ্য করতে হয়। আমার বিরুদ্ধে অনেক মামলা। আমিও জেল খেটেছি”।
গ্রেফতার
হেফাজতে আন্দোলনের সময় তাকে বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে বলা হয় তিনি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কে হত্যা করেছেন। এরকম বিভিন্ন অভিযোগে তাকে 2013 সালের 7 ই মে পুরান ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার করার পর জুনায়েদ বাবুনগরীকে 13 দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তিনি মুক্তি পান। কিন্তু রিমান্ডের সময় তাকে অমানুষিক নির্যাতন চিরতরে পঙ্গু করে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল বলে তিনি দাবি করেছেন।
জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যু
জুনায়েদ বাবুনগরী 2021 সালের 19 আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। এ সময় তার বয়স হয়েছিল 67 বছর। এর আগে তিনি দীর্ঘদিন ধরে হূদরোগ, কিডনি, ডায়াবেটিস সহ বিভিন্ন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। তারপর তিনি চট্টগ্রামের সিএসসিআর হাসপাতালে ভর্তি হলে সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে জুনায়েদ বাবুনগরীর বয়স হয়েছিল 68 বছর।
জুনায়েদ বাবুনগরীর নামাজে জানাজা
রাত সাড়ে এগারোটায় জুনায়েদ বাবুনগরীর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এই নামাজে জানাজায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এত এত মানুষের এত রাতে নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণ এর মাধ্যমে মরহুমের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণ যোগ্যতার প্রমাণ বহন করে ।
জুনায়েদ বাবুনগরীর জনপ্রিয়তা
জুনায়েদ বাবুনগরী এদেশের মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন। হেফাজতে ইসলামে আসার পর থেকেই তিনি শাহ আহমদ শফীর সাথে তিনি আলোচনায় থাকতেন। হেফাজতে ইসলামের কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য তিনি দৃঢ় ভূমিকা পালন করেছেন। হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন কে গণ আন্দোলনে রূপ দিতে পেরেছেন। তিনি নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন বলে এদেশের ইসলাম প্রিয় সাধারণ মুসলমানগন সাদরে গ্রহণ করে।
শেষ কথা
আজকে আর্টিকেল এর বিষয় ছিল জুনায়েদ বাবুনগরীর সম্পর্কে। আমরা জুনায়েদ বাবুনগরী সম্পর্কে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যতটুকু জানা যায় তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যেহেতু ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছি তাই তথ্যে কিছুটা ভুল হাওয়া অবাঞ্ছিত কিছু নয়। আপনি যদি জুনায়েদ বাবুনগরীর জীবনী নিয়ে গবেষণা করতে চান তখন আপনাকে মৌলিক তথ্য প্রয়োজন হতে পারে।