হযরত আলী (রা) জীবনী |
হযরত আলী (রা) জীবনী
আজকে আমরা এমন একজন ব্যক্তিকে নিয়ে কথা বলবো যিনি কিনা পৃথিবীর বুকে শাসকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শাসক হিসেবে শাসন করেছেন, আর সেই ব্যক্তিটি হল হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু।
আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়টি হলো হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর জীবনী সম্পর্কে। তবে চলুন কথা না বাড়িয়ে জানা যাক হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর জীবনী সম্পর্কে।
হযরত আলী (রা) নামকরণ যেভাবে করা হয়
প্রথম অবস্থায় হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর নাম রাখা হয় আসাদ এবং জায়েদ। পরবর্তীতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) মক্কায় ফিরে আসার পর তার নাম রাখেন হরযত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু। কিন্তু তাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে ডাকা হতো। তার আরেকটি মজার নাম হল আবু তুরাব আর এই নামের অর্থ হল ধুলোবালির আব্বা।
নবী করীম (সা) একদিন মসজিদে প্রবেশের পূর্বে দেখেন হরযত আলী এমন এক জায়গায় শুয়ে আছেন যেখানে ধুলোবালিতে পূর্ণ। সেই সময় মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রসিকতা করে ডাক দেন,হে আবু তুরাব ওঠো। এছাড়া মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) তাকে আসাদ আল্লাহ উপাধিতে ভূষিত করেছেন। যার অর্থ হলো আল্লাহর সিংহ।
হযরত আলী (রা) পরিচয়
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন ইসলামের চতুর্থ খলিফা। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু 600 খ্রিস্টাব্দে মক্কার কুরাইশ বংশের বনু হাশেম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এর চাচা আবু তালিবের পুত্র। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এর উপর তাঁর ছিল অগাধ বিশ্বাস ও আস্থা। তাই দশ বছর বয়সে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী সাহাবী। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরত করে মদীনায় যাওয়ার সময় হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু কে আমানতের দায়িত্ব দিয়ে তার বিছানায় রেখে যান। আর হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু জীবনের কঠিন ঝুঁকে থাকা সত্ত্বেও এ দায়িত্ব যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেন।
হযরত আলী (রাঃ) জ্ঞান সাধনা
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন অসাধারণ মেধার অধিকারী। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বাল্যকাল থেকেই জ্ঞানতাপস ও জ্ঞান সাধক ছিলেন। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু সব সময় জ্ঞানচর্চার নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। কথিত আছে যে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম জ্ঞানের শহর, আর আলী হলেন তার দরজা। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু দেওয়ানী আলী নামক একটি কাব্যগ্রন্থ রচিত করেন। এই কাব্যগ্রন্থটি আরবি সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হাদীস, তাফসীর আরবী সাহিত্য, আরবি ব্যাকরণ এ তার যুগের সেরা ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
হযরত আলী (রাঃ) এর বিবাহ এবং সন্তান
সময়টা ছিল হিজরতের নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু কে বলেন আল্লাহর নির্দেশ যেন হযরত ফাতেমা রাঃ এর বিবাহ কার্য হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু সাথে সম্পাদন করা হয়। এরপর হযরত খাদিজা রাঃ এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এর সবচেয়ে প্রিয় আদরের কন্যা হযরত ফাতেমার সাথে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বিবাহ সম্পন্ন হয়। তারপর তাদের দুজনের কোলজুড়ে আগমন হয় ইমাম হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং হরযত ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু। হযরত ফাতেমা রাঃ মৃত্যুর পর হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু দ্বিতীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দ্বিতীয় সংসারের জন্ম নেয় মুহাম্মদ ইবনে আল সহ আরো একজন।
ইসলামের সেবায় হযরত আলী (রাঃ)
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু আর্থিকভাবে সচ্ছল না হওয়ায় ধনসম্পত্তি ইসলামের সেবা করতে পারেনি। কিন্তুহযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু সহ্য ধৈর্য, সাহসিকতা ও বিভিন্ন বিখ্যাত লেখনীর মাধ্যমে তিনি ইসলামের সেবা করেছেন।
হযরত আলী (রাঃ) যুদ্ধে অংশগ্রহণ
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু সালাম যতদিন জীবিত ছিলেন হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ততদিন তার সাথে সংগঠিত সব যুদ্ধে সশরীরে অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু যুদ্ধগুলো হল। বদরের যুদ্ধ
- ওহুদের যুদ্ধ
- খন্দকের যুদ্ধ এবং জুলফিকার তরবারি প্রাপ্তি
- খায়বারের যুদ্ধ
- উটের যুদ্ধ
- সিফফিনের যুদ্ধ
কোরআন সংরক্ষন ও সংকলন এর ক্ষেত্রে হযরত আলী (রা) ভূমিকা
যখন কোরআনের কোন আয়াত নাযিল হতো তখন নবীজি বারবার তা তেলাওয়াত করতেন এবং সাহাবীদের শোনাতে। এবং সাহাবীরাও তেলাওয়াত করতে করতে তা মুখস্ত করে নিতেন। সেই সময় দশজন ব্যক্তি কুরআনকে অন্তরে ধারণ করেছিল যার মধ্যে অন্যতম হলো হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু।
হযরত আলী (রা) এর অনাড়ম্বর জীবনযাপন
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু সারাজীবন জ্ঞান-সাধনার ব্যস্ত ছিলেন। সম্পদ উপার্জন করার মত তেমন সুযোগ পাননি। তিনি অনাড়ম্বর জীবন যাপন করে। নিজের কাজ নিজের হাতে করেছেন এবং কঠোর পরিশ্রম করেছেন। কখনো কখনো না খেয়ে দিন কাটিয়েছেন তবু কখনো তাকে আক্ষেপ করতে দেখা যায়নি। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কোনো কাজের লোক ছিল না। তার স্ত্রী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফাতেমা (রা) নিজ হাতে সংসারের যাবতীয় কাজ করতেন এমনকি নিজ হাতে গম ভাঙানোর যাতা পিসে গম থেকে আটা বের করতেন।
হযরত আলী (রা) এর বাণী
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু যেহেতু জ্ঞান সাধনায় নিজেকে নিমগ্ন রাখতেন তাই জ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে তার দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়। তার কিছু কথা বাবানি এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
ক্ষমাই সর্বোৎকৃষ্ট প্রতিশোধ।
তাদের কখনো নিরাশ করো না যাদের শেষ ভরসা তুমি।
বোকাদের সঙ্গে তর্ক করা নিরর্থক।
অসৎ লোক কাউকে সৎ মনে করে না। সবাইকে সে নিজের মত ভাবে।
যে সম্মুখে তোমার তারিফ করে সে তোমার দুশমন।
হযরত আলী (রা) এর মৃত্যু
661 খ্রিস্টাব্দ, দিনটি ছিল 17 বা 19 রমজান, এবং বার ছিল শুক্রবার। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু নামাযের জন্য কুফা শাহী মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হলো । উৎপেতে থাকা ইবনে মুলজাম বিষ মাখা তরবারি দ্বারা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনোয়ার মাথায় আঘাত করেন। এমনে মোজামের একজন সরকারি ছিল ওয়ার্দান। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর মৃত্যুর পর বরদান দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে যান এবং সেখানে গিয়ে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর মৃত্যুর ঘটনা এবং দায় স্বীকার করেন এবং পরবর্তীতে তার সেই আত্মীয়ের কাছে তিনি আশ্রয় চান। কিন্তু তার আত্মীয় আব্দ বিন নাজাবা বিন ওবায়েদ তার উপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত হন এবং তাকেও হত্যা করেন। এছাড়া পরবর্তীতে ইবনে মূল জনকে আটক করা হয়।
হযরত আলী (রা) এর কবর
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে কুফার নিকট নাজাফ নামক একটি স্থানে দাফন করা হয় এবং প্রায় একশত বছর পর্যন্ত এই স্থানটিকে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর কবর স্থান হিসেবে প্রকাশ করা হয়নি। ইমাম সাদিক রাঃ এর সময় হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর যারা বিরোধী ছিলেন তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার পর সাফওয়ান (রহঃ) কে নির্দেশ প্রদান করলেন হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর কবরস্থানের উপর একটি গাছ লাগিয়ে সেই স্থানটিকে চিহ্নিত করে রাখতে। পরবর্তীতে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর কবর গোপন রাখার বিষয়টি জানা যায়। আসলে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর কবর গোপন রাখার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে যদি তার বিরোধীরা কবরের খবর সম্পর্কে জানতে পারে তারা অবমাননাকর পরিস্থিতি তৈরী করতে পারে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর সম্মানের জন্য হুমকি হতে পারে।
এই আর্টিকেলে আমরা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর জীবনী সংক্ষিপ্ত ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এখানে যে তথ্য গুলো রয়েছে সেগুলো ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। আপনি যদি তার জীবনী নিয়ে কোনো ডকুমেন্টারি তৈরি করতে চান তবে অবশ্যই আপনাকে তথ্যের উৎস সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিয়ে তারপর হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ব্যাপারে ডকুমেন্টারি তৈরি করতে হবে।