আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা |
আমাদের মধ্যে খুব কম মানুষই আছে যারা আমলকি ফল চিনে না বা কখনো খাইনি। আমাদের মধ্যে প্রত্যেকটি মানুষকে সারা বছর ভালো থাকার জন্য প্রতিদিন একটি করে হলেও আমলকি খাওয়ার দরকার। আমলকিতে রয়েছে ভিটামিন সি-তে ভরপুর। আমলকিতে এমন পুষ্টি উপাদান আছে যা পেয়ারা ও কাগজি লেবুর চেয়েও 3 গুণ ও 10 গুণ বেশি।
আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়টি হলো আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। তবে চলুন কথা না বাড়িয়ে জানা যাক আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা।
আমলকি ফল
আমলকি ফলের ইংরেজি নাম হল আমলা। আমলকি হচ্ছে এক ধরনের ভেষজ ফল। আমলকি দেখতে অনেকটা সবুজ ও হলদে রংয়ের গোলাকৃতি হয়ে থাকে। আমলকি এমন একটি ফল যা কিনা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সক্ষম। এছাড়া আমলকির পাতা ফল গাছের ছাল দিয়ে ঔষধ তৈরি করা যায়। এই ওষুধগুলো যে ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় সেই ক্ষেত্রগুলো হলো ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ও প্রদাহ এর ঔষধ বানানো হয়। আবার আমলকি মানুষের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সক্ষম। আমলকি ফলটি খেতে অনেকটা টক হয়ে থাকে। এই আমলকি ফলের বিভিন্ন ধরনের গুণ রয়েছে। এবং কি আমলকির ফল ও পাতা দুটোই ঔষধ হিসেবে কাজ করে। আমলকীতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের প্রতিদিন 30 মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি খাওয়ার দরকার। যা কিনা দুটো আমলকির সমান। তাই আমরা যদি প্রতিদিন আমলকি খাই তাহলে আমাদের শরীরে ভিটামিন সি এর পরিমাণ ঠিক থাকবে।
আরো পড়ুনঃ ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের নমুনা ভাষণ
আমলকি যে সময় পাওয়া যায়
আমলকি খাওয়ার সবথেকে উপযোগী সময় হল শীতকাল। শীতের ঋতুতে আমলকি খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। আবার আমলকি শীতকালে খুব সহজেই বাজারে পাওয়া যায় তখন সবাই বাজারে আমলকি নিয়ে আসে বিক্রি করার জন্য। তাই আমরা সহজেই আমলকি শীতের মৌসুমে পেয়ে থাকি। আবার শীতের সকালে আমলকি খেলে সারা বছর সুস্থ থাকা যায়। শীতকালে আমাদের দেহের রোগের প্রভাব বেড়ে যায়। তাই সুস্থ থাকার জন্য শীতকালে রোগ প্রতিরোধকারী খাবার খাওয়া বেশি প্রয়োজন। শীতকালে রোগ প্রতিরোধকারী ফলের মধ্যে আমলকি হলো অন্যতম।
আমলকির উপকারিতা
আমরা সকলেই জানি আমলকি হজমশক্তি বাড়ায়। আপনি যদি আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে চান। তাহলে প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস পানি বা দুধের মধ্যে আমলকীর গুঁড়া দিয়ে,সাথে চিনি মিশিয়ে খেলে এসিডিটি সমস্যার সমাধান হবে ইনশাল্লাহ। আমলকি এমন একটি ফল যার কিনা উপকারিতার শেষ নেই। আমলকির উপকারিতা এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর করা এবং দাঁতকে মজবুত করা। আপনি যদি এই আমলকির উপকারিতা টি পেতে চান। তাহলে প্রতিদিন অন্তত একটি হলেও আমলকি খাবেন। আবার আপনি যদি প্রতিদিন সকালে আমলকির রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খান তাহলে আপনার মুখের যেকোনো কালো দাগ দূর হয়ে যাবে এবং আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
আমলকির উপকারিতা চুলের জন্য
আমরা অনেকেই দেখি বাজারে বিভিন্ন ধরনের আমলকি বা আমলা তেল রয়েছে। আর আপনি যদি খাঁটি আমলা তেল টা ক্রয় করেন তাহলে দেখবেন এই তেলটা ব্যবহার করার ফলে আপনার মাথার চুলের গোড়া শক্ত এবং মজবুত হবে। যার ফলে কয়েক দিনের মধ্যেই দেখতে পারবেন আপনার চুল পড়া বন্ধ হয়ে গেছে। কিংবা আর আগের মতো চুল পড়ে না। নিয়মিত এই তেলটি ব্যবহার বা মেসেজ করলে রক্ত চলাচল ভালো থাকে। ফলে চুল দ্রুত বৃদ্ধি পায়। আমলকিতে রয়েছে এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুন যা চুলের খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। আমাদের মধ্যে অনেকের মাথায় খুশকি রয়েছে আর খুশকি চুলের গোড়া নরম করে দেয়। যার কারণে অতিরিক্ত চুল পড়ে। তাই আপনি যদি আমলা তেল ব্যবহার করেন। তাহলে দেখবেন আপনার মাথায় খুশকি হবে না ফলে চুল ও কম পড়বে।
আরো পড়ুনঃ কালোজিরার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
আমলকির রসের উপকারিতা
আমাদের মধ্যে প্রতিটি মানুষেরই সকালে খালি পেটে আমলকির রস খাওয়া দরকার। আপনি যদি আমলকির রস খালি পেটে খেতে না পারেন। তাহলে কমপক্ষে 10 মিলিগ্রাম আমলকির রস প্রতিদিন সকালে খাবেন। আর আস্তে আস্তে এর পরিমাণ বাড়িয়ে 20 মিলিগ্রাম এ আনতে হবে।
ত্বকের উজ্জ্বলতার ক্ষেত্রে আমলকির উপকারিতা
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে এমন কিছু খাদ্যের কথা বলা হয়েছে যেগুলো খেলে ত্বক ভালো থাকে। আবার এগুলো খেলে ত্বক ভালো থাকে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা ও ঠিক থাকে। এই ফলটি হলো আমলকি। আমলকিতে রয়েছে সকল ধরনের মিনারেল উপাদান যা আপনার ত্বক ও শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কেননা আমলকিতে রয়েছে ভিটামিন সি এ ভরপুর যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ক্যান্সার নিরাময়ে আমলকির উপকারিতা
আমরা সকলেই জানি আমলকির মধ্যে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যান্সারের প্রতিরোধ ক্ষমতা। আমলকির মধ্যে এমন একটি গুন রয়েছে যা কিনা ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি করতে বাধা দেয়। আমরা সকলেই জানি আমলকি শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। আমলকি খাওয়ার ফলে শরীরের ওজন কমতে থাকে। আমলকি আরেকটি অন্যতম গুণ হচ্ছে এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
আরো পড়ুনঃ পায়ের গোড়ালি ব্যথার কারণ ও প্রতিকার
রোগ নিরাময় ক্ষেত্রে আমলকির উপকারিতা রয়েছে
আমলকি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আমলকি খেলে আমরা বিভিন্ন দিক থেকে উপকৃত হই। তাই আমাদের উচিত আমলকির সকল গুনাগুন সম্পর্কে ভালো মতন জানা।
- অতিরিক্ত বমি বন্ধ করতে সাহায্য করে আমলকি।
- আমলকি খেলে আমাদের রুচি বৃদ্ধি হয়।
- আমলকি খাওয়ার ফলে আমাদের হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের উপকার হয়।
- আমলকি আমাদের দাঁত, চুল, ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- আমলকি খাওয়ার ফলে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র কাজ করে।
- অনিকের ঘনঘন মূত্র হয়, আমলকি এই বহুমূত্র রোগের কার্যকরী ঔষধ।
- অনেক সময় আমরা দেখি মানুষের চোখ উঠে,চোখে সমস্যা হয়। সেই ক্ষেত্রে আপনি যদি চোখে আমলকির রস দেন তাহলে দেখবেন চোখ ভাল হয়ে গেছে।
- আমলকি আপনি যদি চুলে দেন তাহলে দেখবেন চুল ওঠা বন্ধ হবে।
- আমলকি মাথার খুশকি সমস্যার সমাধান করে।
- অনেক সময় আমাদের পেটে তীব্র ব্যথা করে। আমলকি এই পেটের পীড়া সারাতে কার্যকরী।
- যখন আমাদের সর্দি কাশি হয় তখন আমাদের প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি খাবার দরকার। আর আমলকিতে রয়েছে ভরপুর ভিটামিন সি। তাই সর্দি কাশি সারাতে আমলকির উপকারিতা অপরিসীম।
- দেখা যায় অনেক সময় আমাদের শরীরে রক্তশূন্যতা হয়ে থাকে, এই রক্তশূন্যতা রক্তহীনতার আমলকি খেলে দূর হয়ে যায়।
- লিভারের সমস্যা কিংবা জন্ডিস রোগ সারাতে আমলকির ভূমিকা অপরিসীম।
আমলকির অপকারিতা
আমলকি আকারে খুব ছোট্ট একটি ফল কিন্তু অনেক তেতো এবং কস। যে কোন খাবার বেশি পরিমাণে খেলে অবশ্যই এর কিছু কুফল রয়েছে, আবার কম খেলেও এর কিছু সমস্যা রয়েছে। তাই আমাদের সকলের উচিত সঠিক পরিমাণে খাবার খাওয়া বা যে কোন ফল খাওয়া। তাহলে চলুন জেনে নেই আমলকি খাওয়ার নিয়ম।
- আপনি আমলকি জুস করে না খেয়ে, যদি চিবিয়ে খান তাহলে বেশি উপকার।
- আপনার যদি কোন সার্জারি হয়ে থাকে তাহলে আপনি আমলকি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- আপনি যদি গর্ভবতী হন বা স্তনদানকারী মা হন তাহলে আপনি আমলকি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- আপনি যদি হূদরোগে আক্রান্ত হন তাহলে আপনি আমলকি কম খাবেন। কেননা আপনি যদি বেশি পরিমাণ আমলকি খান তাহলে এটা আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- আপনি যদি অধিক পরিমাণে আমলকি খান তাহলে এটি আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে যেমন অতিরিক্ত অ্যালার্জি হতে পারে পাকস্থলীতে কি বমি বমি ভাব ডায়রিয়া ইত্যাদি রোগ হতে পারে।
- আমলকি শরীরের তাপমাত্রা অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। যার ফলে আপনার শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। আপনি যদি জ্বরে আক্রান্ত হন তাহলে আমলকি খাবেন না। কেননা এটি আপনার শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে ফেলে।
আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়টি ছিল আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা। আশা করি আপনারা সবাই ভালোভাবে জানতে পেরেছেন আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে যে সকল তথ্য এখানে দেওয়া হয়েছে সেগুলো ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা। আপনি অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন এবং সেই অনুযায়ী চলবেন। আপনাকে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।