মাথাপিছু আয় | বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় কত

বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় কত
বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় কত

একটি দেশের মানুষ কতটা স্বাচ্ছন্দপূর্ণ জীবন যাপন করছে তা হিসাব করা যায় সেই দেশের মাথাপিছু আয় দ্বারা। যে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেশি তারা তুলনামূলকভাবে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন করতে পারেন।  একটি কতটা কতটি অর্থনৈতিক শক্তি সম্পন্ন তারপর আসলে মানুষের জীবনযাত্রা নির্ভর করে না। মানুষের জীবনযাত্রা নির্ভর করে তাদের গড় আয়ু উপর অর্থাৎ মাথাপিছু আয় এর উপর।  তাই কোন দেশ সম্পর্কে বা তাদের মানুষের জীবনধারা সম্পর্কে জানতে গেলে মাথাপিছু আয় সম্পর্কে জানা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। আজকে আমাদের আর্টিকেলে আলোচনা করব মাথাপিছু আয় সম্পর্কে। যারা মাথাপিছু আয় সম্পর্কে ধারণা নিতে চান এবং বর্তমান বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় সম্পর্কে জানতে চান তারা নিচের আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

মাথাপিছু আয় কি ?

মাথাপিছু আয় বলতে প্রতিজনের  গড়  আয় কে বুঝায়। অর্থাৎ জনগণের মোট  আয় কে যদি জনগণের সংখ্যা দ্বারা ভাগ করা হয় তবে ওই দেশের মাথাপিছু আয়ের হিসাব করা যায়। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় কে টাকার অঙ্কে প্রকাশ করা হয়। 

বিশ্বের যে সকল দেশের মাথাপিছু আয় সর্বাধিক

বিশ্বের সকল দেশের মাথাপিছু আয় সমান নয়। প্রত্যেকটি দেশের আয় তাদের দেশের সম্পদ এবং জনগণের কর্ম দক্ষতার উপর নির্ভর করে। যেহেতু পৃথিবীর সকল দেশের  প্রাকৃতিক সম্পদ  সমান নয় এবং সবার দক্ষতা ও  সমান নয়  তাই একেক দেশের মাথাপিছু আয় এক এক রকম হয়ে থাকে। বৈশ্বিক বাজারে এই মাথাপিছু আয় কে ডলার এককে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। 

  1. সুইজারল্যান্ড      72 হাজার ডলার
  2.  রওয়ে                 42 হাজার 364 ডলার
  3. যুক্তরাষ্ট্র               41 হাজার 399 ডলার
  4. আয়ারল্যান্ড        40 হাজার 610 ডলার
  5. আইসল্যান্ড         35 হাজার 587 ডলার
  6. ডেনমার্ক             34 হাজার  737 ডলার
  7. কানাডা               34 হাজার 273 ডলার
  8. অস্ট্রিয়া               30 হাজার 615 ডলার
  9. হংকং                  33 হাজার 411 ডলার

বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়

বাংলাদেশ যেহেতু একটি উন্নয়নশীল দেশ তাই এর মাথাপিছু আয় উন্নত দেশগুলোর তুলনায় যথেষ্ট। কিন্তু বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় দিনদিন  খুবই দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। 2020 সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এক হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। তখন সংস্থাটি বলেছিল যে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় 2 হাজার 554 ডলার। তবে সে হিসেবে পিছনে ফেলে 2020-21 অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে  2  হাজার 591 ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় রুপান্তর করলে হয় 2 লক্ষ 19হাজার 738 টাকা।

আরো পড়ুনঃ স্বল্প পুঁজির ৫ টি বিজনেস আইডিয়া

2021-22 অর্থবছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়

এই অর্থবছরের বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এবছর মাথাপিছু আয় 233 ডলার বেড়ে 2 হাজার 824 ডলারে দাঁড়িয়েছে। যা বাংলাদেশী টাকায় রুপান্তর করলে হয় 2 লক্ষ 41 হাজার 470 টাকা। 2021-22 অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে 7 দশমিক 25 শতাংশ 2020-21 অর্থবছরে ছিল 6 দশমিক 94 শতাংশ।

এ বছর মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির কারণ

মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির কারণ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ডক্টর শামসুল আলম বলেন, আমাদের পণ্য রপ্তানি বেড়েছে, রেমিটেন্স বেড়েছে 25 মিলিয়ন ডলার। এসব কারণেই সাধারণত অর্থনীতির আকার বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থাৎ অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ওমিক্রনিক সমূহ পিছিয়ে ছিল না আমাদের রপ্তানি। তাই  ব্যক্তি বিনিয়োগ বেড়েছে 14 শতাংশ। রেভিনিউ বেড়েছে 14%। কাজেই এসব  জিডিপির উপর প্রভাব ফেলেছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ার কারণেই মূলত আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে।

বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়  সম্পর্কে বিতর্ক

অনেক অর্থনীতিবীদ বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এর সহকারী হিসেবে সাধারণত কাগজে-কলমে একটা হিসাব বলে দেখা করে থাকেন। তাদের মতে আসলে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এর প্রকৃত হিসাব সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যায় না। অর্থনীতিবিদ ফাহমিদা খাতুন মনে করেন, বাংলাদেশের এই পরিসংখ্যানে দেশের মানুষের চেয়ে প্রকৃত চিত্র সেটা ফুটে ওঠে না। তিনি অবশ্যই এর পেছনে যুক্তি দাঁড় করান। তিনি বলেন বাংলাদেশে দ্রুত ধনী এবং অতি ধনী হওয়ার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এবং সাথে সাথে গরীব মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে মানুষের মধ্যে যে আরেকটা বৈষম্য তা স্পষ্ট হচ্ছে সাথে সাথে মানুষের অনেক ফারাক তৈরি হচ্ছে। এই তথ্যগুলো বাংলাদেশের সরকারি পরিসংখ্যানে আসছে না বলে বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যানটা মানুষের কাছে ততটা গুরুত্ব পাচ্ছে না বলে মনে করেন ডক্টর ফাহমিদা খাতুন।

মাথাপিছু আয় এর হিসাব  যেভাবে তৈরি করা হয়

বাংলাদেশ সরকারের মাথাপিছু আয় হিসাবটা স্বাগতম পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএস করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা বলেছেন এক বছরে বাংলাদেশের  উৎপাদন থেকে যে আয় হয় এবং সে আই এর সাথে রেমিটেন্স যোগ করে সর্ব মোট জাতীয় আয়ের বের করা হয়। এর উপর সর্বমোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে গড় মাথাপিছু বের করা হয়। এ জন্য সাধারণত অর্থনীতিবিদদের কাছে মাথাপিছু আয় নির্ণয় ব্যাপারে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু মন্ত্রী এম এ মান্নান  বলেন, এই পদ্ধতি হচ্ছে জাতিসংঘ স্বীকৃত। বিশ্বের সকল দেশের মাথাপিছু আয় নির্ণয় পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় বলে তিনি বলেন।

আরো পড়ুনঃ ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা

এ বছর মাথাপিছু আয় সম্পর্কে বিতর্ক বৃদ্ধির কারণ

এবছর বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় সম্পর্কে বিতর্ক আরো অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এক লাফে প্রায় 15 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেহেতু ধনী এবং দরিদ্রদের মধ্যে ব্যাপক পরিমাণে ফারাক পরিলক্ষিত হচ্ছে তাই ডক্টর ফাহমিদা খাতুন মনে করেন এখানে প্রকৃত চিত্র দেখানো হয়েছে তাতে বিতর্ক রয়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্মকর্তাদের  মত হচ্ছে, একটি দেশের অর্থনৈতিক সূচক বৃদ্ধি পরিবর্তন করা হয় 10 বছর পর পর। সেই হিসাব অনুযায়ী 2015 -16  বছরকে ভিত্তি বছর হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এর 10 বছর আগের বছর ছিল 2005-06।

বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির কারণ

 কর্মকর্তারা মনে করেন , এই বছরে কৃষি, শিল্প এবং  ডিজিটাল উৎপাদন আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এর সাথে যোগ হয়েছে রেমিট্যান্স। এইসব কারণে জাতীয় আয় বেড়ে যাওয়ার ফলে গড় মাথাপিছু আয় বেড়েছে। কর্মকর্তারা বলেন এখানে যে হিসাবগুলো করা হয়েছে অন্যান্য দেশেও একই রকম হিসাব করা যায় এবং একইভাবে তুলনা করা যায়। এছাড়াও মাথাপিছু আয় সম্পর্কে রাজনৈতিক  অঙ্গনে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে।

আরো পড়ুনঃ বঙ্গবন্ধুর জীবনী রচনা

মাথাপিছু আয়  আয় এবং ব্যক্তিগত  আয়

যেহেতু মাথাপিছু আয় নির্ভর করে একটি দেশের সকল উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিদের কাছ থেকে আশা সমগ্র  আয় এবং তার সাথে রেমিটেন্স যোগ হয়। তাই একটি দেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হিসাব দিয়ে ব্যক্তির আয় বৃদ্ধি পাবে তা হিসাব করা যাবে না। কারণ একজন ব্যক্তি কি পরিমান আয় করল সেটি তার ব্যক্তিগত ভাবে হিসাব হবে। কিন্তু একটি দেশের সামগ্রিক আয় বৃদ্ধির মানেই তার নিজস্ব বৃদ্ধি নয়। 

দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়

ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন বেশি বলে মনে করেন অনেক অর্থনীতিবীদ। তাই অনেক অর্থনীতিবীদ মনে করেন আগামী দশকে বাঙালিরা ভারতীয়দের থেকে বেশি ধনী হবে। ভারত একটি বিশাল রাষ্ট্র এবং তার সরকারের অর্থনীতির পরিমাণ অনেক বেশি। কিন্তু সে তুলনায় বাংলাদেশ এর অর্থনীতির  পরিমাণ দুর্বল। তবে মাথাপিছু আয় যেহেতু  সর্বমোট আয় এর সাথে সর্বমোট জনসংখ্যা এর অনুপাত তাই ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু  ভারতের চেয়ে বেশি।

আজকে আর্টিকেল এর বিষয় ছিল মাথাপিছু আয় সম্পর্কে। আমরা মাথাপিছু আয় সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তবে মাথাপিছু আয় যেহেতু পরিবর্তনশীল তাই প্রতিনিয়ত মাথাপিছু আয় পরিবর্তন হচ্ছে। আপনি আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে বিশ্লেষণধর্মী কোন সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারবেন না। শুধু মাথাপিছু আয় সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকে তার জন্য এই আর্টিকেলটি তৈরি করা হয়েছে। মাথাপিছু আয় সম্পর্কে বিশ্লেষণধর্মী যদি কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চান তবে আপনাকে পরিসংখ্যান ব্যুরো এর অফিসে যেতে হবে এবং সেখানকার কর্মকর্তাদের সাহায্য নিতে হবে। 


Md.Mahmud

আমার নাম মোঃ মাহমুদুল হাসান বাবু । আমি পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি। এবং ইনফরমেশন টেকনোলজি বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি । আমি বিজ্ঞান এবং টেকনোলজি নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি । আমি আমার কাজের ফাঁকে ফ্রিল্যান্সিং ব্লগে লেখালেখি করি। 01921822498

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads