আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়টি হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে। আজকে আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে সবকিছু আলোচনা করব। আমাদের মধ্যে এমন অনেক ভাই এবং বোনেরা আছেন যারা কিনা ইন্টারমিটেড কমপ্লিট করে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছেন। তাই এই ভাই এবং বোনদের মধ্যে একটি কৌতূহল সৃষ্টি হয় সেই কৌতূহলটা হল কোন ইউনিভার্সিটি ভালো, কোন ইউনিভার্সিটি সম্পূর্ণ আবাসিক, ইত্যাদি এই সকল বিষয়।
তাই আজকে আমরা আলোচনা করব একটি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে। সেই বিশ্ববিদ্যালয় নাম হল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
তবে চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক আমাদের আজকের আর্টিকেল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হল বাংলাদেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় । একমাত্র এই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কে হলে আবাসিক হিসেবে থাকতে হয় এবং হলে উপস্থিত না থাকলে নামমাত্র জরিমানা প্রদান করতে হয় । জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গভীর ইতিহাস রয়েছে। আজকে আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস সম্পর্কে জানব।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর ইতিহাস
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়১৯৭০ সালে পাকিস্তান আমলে জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় অর্ধ দেশ ১৯৭০ ধারা এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম ছিল জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়। তারপর যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হয় এবং ১৯৭৩ ধারা বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠা পূর্ণতা পায়, এবং নাম ও পরিবর্তিত হয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম রাখা হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভাইস চ্যান্সেল ছিলেন অধ্যাপক মফিজ উদ্দিন আহমদ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচে চারটি বিভাগে ১৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এ বাংলাদেশের প্রথম নৃবিজ্ঞান ও ব্যবসায়ী প্রশাসন বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রথম খোলা হয়েছিল। শুধু তাই নয় এখনও পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একমাত্রপ্রতত্ত্ব বিভাগ রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর অনুষদসমূহ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এ মোট ছয়টি অনুষদ রয়েছে। এই ছয়টি অনুসাদের অধীনে ৩৫ টি বিভাগ রয়েছে।
আইন অনুষদ
- আইন ও বিচার বিভাগ
ব্যবসায়ী শিক্ষা অনুষদ
- ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগ
- একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগ
- মার্কেটিং বিভাগ
- ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ
সমাজবিজ্ঞান অনুষদ
- অর্থনীতি বিভাগ
- ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ
- সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
- নৃবিজ্ঞান বিভাগ
- নগরও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ
- লোক প্রশাসন বিভাগ
গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদ
- গণিত বিভাগ
- পরিসংখ্যান বিভাগ
- রসায়ন বিভাগ
- পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ
- ভূতাত্বিক বিজ্ঞান বিভাগ
- কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
- পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ
কলা ও মানবিক অনুষদ
- বাংলা বিভাগ
- ইংরেজি বিভাগ
- ইতিহাস বিভাগ
- দর্শন বিভাগ
- নাটক ও নাট্যত্রন্ত বিভাগ
- প্রত্ন ত্রন্ত বিভাগ
- আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
- জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিস বিভাগ
- চারুকলা বিভাগ
জীববিজ্ঞান অনুষদ
- উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ
- প্রাণীবিদ্যা বিভাগ
- ফার্মেসি বিভাগ
- প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ
- মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ
- বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
- পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর ইনস্টিটিউট সমূহ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে চারটি উচ্চতর গবেষণা ইনস্টিটিউট। এই ইনস্টিটিউট গুলো হল-
- ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট
- ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি
- ইনস্টিটিউট অফ রিমোট সেন্সিং এন্ড জিআইএস
- বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট
অন্যান্য ইনস্টিটিউট
- ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র
- ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র
- ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র
- সেন্টার অফ এক্সিলেন্ট ইন টিচিং এন্ড লার্নিং
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর ক্যাম্পাস
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজধানী থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে ঢাকা আরিচা মহাসড়কের পশ্চিমে অবস্থিত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ৬৯৭ দশমিক ৫৬ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটি উত্তরে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, উত্তর-পূর্বে সাভার সেনানিবাস, দক্ষিণে বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, এবং পূর্বে একটি বৃহৎ দুগ্ধ উৎপাদন খামার দ্বারা পরিবেষ্টিত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়টির শ্যামল পরিবেশ এবং জীব বৈচিত্র অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য জলাশয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হল বাংলাদেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সর্বজনীন স্বীকৃত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আগমন ঘটে বিভিন্ন ধরনের বিদেশী পাখির। এবং শীতের মৌসুমে এই সকল পাখিদের আগমন আরো বেড়ে যায়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর হল সমূহ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এ ছাত্রদের জন্য সাতটি এবং ছাত্রীদের জন্য পাঁচটি আবাসিক হল রয়েছে।
ছাত্র হল
- আল বিরুনী হল
- মীর মোশাররফ হোসেন হল
- শহীদ সালাম বরকত হল
- আ ফ ম কামাল উদ্দিন হল
- মাওলানা ভাসানী হল
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল
- রফিক জব্বার হল
ছাত্রী হল
- নবাব ফয়জুন্নেসা হল
- ফজিলাতুন্নেসা হল
- জাহানারা ইমাম হল
- প্রীতিলতা হল
- বেগম খালেদা জিয়া হল
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর লাইব্রেরী
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী টি শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল এবং একাডেমিক ভবন গুলোর মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত। এই লাইব্রেরীটিতে রয়েছে প্রায় ৯০ হাজার বই। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর এই লাইব্রেরী টিতে নিয়মিত জার্নাল রাখা হয় ১২৮ রকমের। বিশ্ববিদ্যালয়টির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীতে ই লাইব্রেরি সুবিধা রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টারের নিচের ভাষাগুলো শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে।
দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য যে সকল ভাষা
- জাপানি
- ইংরেজি
- ফরাসি
- জার্মান
- স্প্যানিশ
- সংস্কৃত
বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য যে সকল ভাষা
- বাংলা
- ইংরেজি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর মেডিকেল সেন্টার
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এ শিক্ষার্থী ও শিক্ষক এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য একটি মেডিকেল সেন্টার আছে। এই মেডিক্যাল সেন্টারটির ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে। এবং ২৪ ঘন্টা এই মেডিকেল সেন্টারটি তে সেবা প্রদান করা হয়। শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার জন্য সেন্টারে কোন ফি প্রদান করতে হয় না। তবে শিক্ষক কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ ছাড়া যে কোন চিকিৎসা সেবার জন্য ফ্রি প্রদান করতে হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর ভাস্কর্য সমূহ
- অমর একুশে,প্রতিষ্ঠা ১৯৯১, সেন্ট্রালঅডিটরিয়াম এর পাশে অবস্থিত।
- কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, প্রতিষ্ঠা ২০০৮, আর্কিটেক্ট রবিউল ইসলাম,শহীদ মিনারের কলম তিনটির উচ্চতা ৭১ ফুট, বেসের দৈর্ঘ্য ৫২ ফুট । সিঁড়ি এবং ধাপের সংখ্যা হল আটটি।
- সংশপ্তক ভাস্কর, হামিদুজ্জামান, উদ্বোধন ১৯৯০, এটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে অবস্থিত,
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর সাংস্কৃতিক সংগঠন
জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার
- ধ্বনী
- চলচ্চিত্র আন্দোলন
- জলসিড়ি
- জহির রহমান চলচ্চিত্র সংসদ
- আনন্দন
- চারণ সংস্কৃতি কেন্দ্র
- জাহাঙ্গীরনগর ফটোগ্রাফিক্স সোসাইটি
জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি ডিবেট অর্গানাইজেশন
- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি
- উত্থান পাঠ
- জাহাঙ্গীরনগর স্টুডেন্ট ফিল্ম সোসাইটি
- কহনকথা
- অস্তিত্ব
- মনন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর স্নাতক পর্যায় শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এ প্রতিটি বিভাগের অর্ধেক শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিবছরের ফলাফলের ভিত্তিতে এই বৃত্তি প্রদান করা হয়। তাছাড়া বিভিন্ন ট্রাস্ট ফান্ডের বৃত্তি ও স্বর্ণপদক ও প্রদান করা হয়। এই ফান্ডগুলো দেশ-বিদেশের অর্থায়ন দ্বারা পরিচালিত হয়। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এ ট্যালেন্ট বৃত্তি প্রদান করা হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর অন্যান্য সুবিধা
- টিচার স্টুডেন্ট সেন্টার
- ক্যাফেটেরিয়া
- সাইন্স ওয়ার্কশপ
- জিমনেসিয়াম
- সুইমিং পুল
- নিজস্ব চিকিৎসা কেন্দ্র
আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়টি ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে। আমাদের মধ্যে এমন অনেক ভাই বোন আছেন যারা এই বিশ্ববিদ্যালয় পড়তে চান। এ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার জন্য আপনাকে একটি ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণ হতে হবে। এই ভর্তি পরীক্ষার্থী হয় লিখিতভাবে এবং এই পরীক্ষার প্রশ্নের ধরন হয় mcq আকারে। আর এই প্রশ্নগুলা করা হয় আপনার ইন্টারমিডিয়েট এর বইগুলো থেকে। এই ভর্তি পরীক্ষায় 20 মার্ক নির্ভর করে আপনার এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের উপর। আপনি যদি এই দুইটা পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ পেয়ে থাকেন তাহলে আপনি নিশ্চিত যে আপনি 20 মার্ক পেয়ে গেছেন।
আশা করি আমাদের আজকের আর্টিকেল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। আপনাকে আমাদের আজকের আর্টিকেল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে সম্পূর্ণ পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
Source: https://juniv.edu/